চুলের স্টাইল-এর ব্যপারে সচেতন নয়, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।
হেয়ার কাটিং যেমন বদলে দিতে পারে একটি মেয়ের আউটলুক, ঠিক তেমনি বদলে দিতে পারে তার পার্সোনালিটিও।
চুলের ডিজাইন পাল্টে ফেলে হঠাৎ করেই বয়স যেন প্রায় ৫ বছর কমিয়ে ফেলা যায়, আবার আউটলুকের সাথে মানানসই চুলের স্টাইলে চলে আসতে পারে মার্জিত ভাবও।
একই ধরণের চুলের ডিজাইন দুইজন ভিন্ন ভিন্ন মেয়ের জন্যই যে মানানসই হবে, এমন কোন কথা নেই।
অবশ্য চুলের লেন্থ-এর ভিন্নতার সাথে বদলে যেতে পারে চুলের ডিজাইনও।
কারো কারো পছন্দ একটু ঢেউ খেলানো দীঘল কালো চুল, কারো হয়তো পছন্দ ছোট ছাঁচে ছাঁটা একটু কোঁকড়ানো চুল।
এক্ষেত্রে প্রধানত যেটি মাথায় রাখা প্রয়োজন, তাহলো মুখের শেপ বা ধরণ।
তাই কোন বিখ্যাত সেলিব্রিটি-কে দেখে অত্যন্ত ইন্সপায়ার্ড হয়ে ঝোঁকের মাথায় তার মতো হেয়ারস্টাইল ট্রাই করে ফেলাটা অনেক সময়ই বিফলে যায়।
মনে রাখবেন, আপনার হেয়ার স্টাইল, আপনারই পার্সোনালিটি।
হাজারও চুলের কাটিং-এর ভীড় থেকে চলুন দেখে আসি, বর্তমান সময়ের মেয়েদের কাছে জনপ্রিয় ও ট্রেন্ডি কিছু চুলের স্টাইল।
আপনার মুখায়বের সাথে কোন ধরণের চুলের ডিজাইন মানানসই সেটি বেছে নিয়ে হেয়ার স্টাইল-এ ফুটিয়ে তুলুন আপনার আইডেন্টিটি।
লম্বা চুলের বাঙালিয়ানা
আটপৌরে বাঙালি নারী মানেই দীঘল কালো চুল।
জীবনানন্দ দাস-এর ভাষায়- “চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা”।
লম্বা চুলের ধাঁচেও এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। চুলের সিঁথির পরিবর্তন করেই লুক-এ পরিবর্তন নিয়ে আসা যায় সহজেই।
মাঝে সিঁথির ক্লাসিক লুক আজকাল একটু কমই দেখা যায়। কাঁধ পর্যন্ত চুল রেখে এক পাশে সিঁথি করার এক্সপেরিমেন্ট-ই এখন সত্যিই ট্রেন্ডি।
যাদের চুল একটু ঘন, তারা চুলগুলো একটু ফুলিয়ে নিয়ে পেছনের দিকে টেনে হেয়ার ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখতে পারেন সহজেই।
আর যারা টিনএজার, তারা হেয়ার ব্যান্ড ব্যবহার করে পনিটেইল-ও করতে পারেন।
লম্বা চুলের লেন্থ-এ ভিন্নতা নিয়ে আসতে পারেন লেয়ার কাটিং-এর মাধ্যমেও।
আপনার পছন্দ এবং স্টাইল অনুযায়ী লেয়ার, ব্যাংস, ভলিউম লেয়ার, স্টেপ-এর সাথে পছন্দসই চুল কালার করে নিয়ে আসুন আপনার নিজস্বতা।
ছোট ছাঁচের বব কাট হেয়ার স্টাইল
বব কাট মানেই শত রকমের এক্সপেরিমেন্ট।
মুখের শেপ-এর সাথে মানিয়ে নিয়ে আপনিও ট্রাই করতে পারেন বিভিন্ন ধরণের বব কাট।
বিশেষ করে যারা ‘ফ্রেন্ডস’ টিভি সিরিজ থেকে জেনিফার অ্যানিস্টন অভিনীত র্যাচেল চরিত্রটির ভক্ত।
এক্ষেত্রে একটু গোলগাল মুখের মেয়েদের জন্য এ-লাইন বব কাট (যা র্যাচেল কাট নামেও পরিচিত) হতে পারে পারফেক্ট।
এ-লাইন বব কাটের জন্য সামনের দিকে প্রায় থুতনি পর্যন্ত চুল রেখে পেছনের দিকে কিছুটা ছোট করে চুল কাটতে হবে।
আউটলুক অনুযায়ী কখনো মাঝ বরাবর আবার কখনো একটু পাশে সিঁথি করে আনতে পারেন ভিন্নতা।
এ-লাইন বব কাটের বাইরে, সামনের দিকের চুলগুলো প্রায় কাঁধ পর্যন্ত লম্বা রেখে পেছনের চুলগুলো বেশ খানিকটা ছোট করেও বাজ কাটও ট্রাই করতে পারেন।
যেহেতু সামনের দিকের চুলগুলো তুলনামূলকভাবে বড় থাকে, তাই একটু ব্যাংস করে হেয়ার স্টাইলে আনতে পারেন নিজস্বতা।
যারা খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট-এর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, তারা শোল্ডার লেন্থ বব কাট অর্থাৎ কাঁধ পর্যন্ত সমান করে ছেঁটে নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে খুব বেশি লেয়ার ব্যবহার না করে, চুলগুলো একদম সোজা রাখাটাই ভালো।
আর ভিন্নতা নিয়ে আসুন আপনার সিঁথি কোন পাশে করছেন তার উপর ভিত্তি করে।
চাইলে আরও একটু ছোট করে থুতনি পর্যন্ত ছেঁটে নিয়ে চিন লেন্থ বব কাট হেয়ার স্টাইলও ট্রাই করে দেখতে পারেন, যদি আপনার মুখায়ব একটু লম্বাটে হয়ে থাকে।
শোল্ডার লেন্থ বব কাটের পর কাঁচি দিয়ে কিছুটা এলোমেলোভাবে কেটে ট্রাই করুন শ্যাগি বব।
এক্ষেত্রে একটু সিম্পল হেয়ার কাটিং-এই আপনি বৈচিত্র্যতা আনতে পারেন হেয়ার ডিজাইন-এর উপর ভিত্তি করে।
তবে খেয়াল রাখবেন, অবিন্যস্তভাবে ছাঁটতে গিয়ে কোথায় যেন খুব বেশি ছোট অথবা খুব বেশি বাঁকা না হয়ে যায়।
শ্যাগি বব-এর জন্য চুলের ডিজাইন একটু ফুলিয়ে রাখতে পারলে সত্যিই সুন্দর লাগবে।
পিক্সি হেয়ার স্টাইল
একদম ছোট চুলের পিক্সি হেয়ার স্টাইলের ট্রেন্ড ৯০ দশকে শুরু হলেও, ইদানিং তা আবার ফ্যাশন-এ পরিণত হচ্ছে।
যাদের ফেস শেপ একটু ছোট ধাঁচের, তাদের পিক্সি হেয়ার স্টাইলে কিন্তু বেশ দারুণ মানিয়ে যায়।
পিক্সি হেয়ার স্টাইলের জন্য প্রথমেই খেয়াল রাখবেন, চুলের যেন কোন ধরণের ক্ষতি না হয়।
চুলের ডিজাইন-এ ভিন্নতা নিয়ে আসুন- পেছন থেকে আন্ডারকাট করে সামনের দিকে কপালের উপর একটু কোঁকড়া করে নিয়ে।
এছাড়া লেয়ার করে কপালে ও ঘাড়ের উপর ছড়িয়ে দিয়েও আনতে পারেন এলিগেন্ট লুক।
পিক্সি হেয়ার স্টাইলে আপনার মুখের শেপ অনুযায়ী একটু ওয়েভ অথবা কার্ল করেও আনতে পারেন নতুনত্ব।
অনেক সময় কিছুটা অবিন্যস্তভাবে ছেঁটে নিয়ে, অর্থাৎ চপ করে নিলেও হেয়ার স্টাইল-এ চলে আসে ট্রেন্ডি লুক।
চাইলে হেয়ার কালার করেও আনতে পারেন ভিন্নতা।
চুল কাটানোর আগে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি
হেয়ার স্টাইল যেটিই হোক, অবশ্যই এক্সপার্ট বিউটিশিয়ান অথবা হেয়ার স্টাইলার-দের কাছ থেকেই করাবেন।
প্রয়োজনে চুল কাটা শুরু করার আগেই হেয়ার এক্সপার্ট-এর সাথে আপনি যেই স্টাইলটি করতে চাইছেন তা নিয়ে আলোচনা করে নিন।
সেই স্টাইলে আপনাকে মানাবে কি না অথবা তার কোন সাজেশন থাকলে সেটিও জেনে নিন।
আর চুল কাটা শুরু করার আগেই আলোচনা করে নিন, কীভাবে তিনি চুল কাটতে যাচ্ছেন।