ভেষজ ফলের একটি হলো আমলকী। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় আমলা, সংস্কৃতে বলা হয় আমালিকা।
আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica বা Emblica officinalis। আমলকীতে আছে ভেষজগুন।
ভিটামিন সি থাকে আমলকীতে। আমলকী গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয় ওষুধ হিসেবে।
আমলকী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জন্মায় বেশি। সবচেয়ে ভালো আমলকীর চাষ হয় পাহাড়ে।
আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে। যা মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।
পুষ্টিকর উপাদান
আমলকীতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে। আমলকী এন্টি-অক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে।
কারন এতে এলাজিটানিন নামক উপাদান আছে। এমব্লিকানিন-এ ৩৭%, এমব্লিকানিন-বি ৩৩%, পানিগ্লুকোনিন ১২% এবং পেডাংকুলাগিন ১৪%।
এছাড়া আছে পানিক্যাফোলিন, ফিলানেমব্লিনিন-এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ। পলিফেনলও আমলকীতে থাকে। যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড, কেমফেরল, এলাজিক এসিড ও গ্যালিক এসিড।
আমলকীর চাষ
ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও চীনে আমলকীর চাষ হয়।
বাংলার গ্রাম-গঞ্জের প্রায় সব এলাকাতেই আমলকীর গাছ দেখা যায়।
আমলকী খেয়ে মাংসল অংশ থেকে শক্ত আবরণসহ বীজ রোদে শুকাতে হয়। শুকিয়ে গেলে ফল ফেটে বীজ বের হয়।
আমলকীর বীজ নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী মাসে সংগ্রহ করতে হয়। প্রতি কেজিতে ৪০০০-৪৫০০০টি পাওয়া যায়।
বীজ সংগ্রহের সাথে সাথে বীজ মাটিতে বপন করতে হয়। এ অবস্থায় ১৫ দিনে বীজ গজাতে শুরু করে, তবে অঙ্কুরোদগম হার মাত্র ৪০ ভাগ।
এক্ষেত্রে বীজ ৮০ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বপন করলে ১০ দিনে বীজ গজাতে শুরু করে।
বীজ এবং কলম দুই পদ্ধতিতে এ গাছের বংশ বিস্তার হয়।
এ গাছ কেটে ফেললে আবার কাটা স্থান থেকে কুশি জন্মায় এবং ক্রমে তা পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হয়।
আমলকী গাছ লাগানোর ৪ থেকে ৫বছরের মধ্যে তাতে ফল হয়।
তবে পরিপূর্ণভাবে ফলবান হতে আমলকী গাছের সময় লাগে ৭ থেকে ৮ বছর লাগে।
আমলকীর গুনাগুণ
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে।
আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে।
রোগ-ব্যাধিতে শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দূর করে থাকে আমলকী।
ভিটামিন সি এর অভাবে যেসব রোগ হয়, যেমন – স্কার্ভি, মেয়েদের লিউকরিয়া, অর্শ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমলকি খেলে উপকার পাওয়া যায় দ্রুত।
সাধারণত ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি নামক রোগ আমাদের শরীরে হয়।এর ফলে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে।
দাঁতের মাড়িতে ঘা হয়। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হয়। চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
ফলে হাড়ের মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। অথচ প্রতিদিন মাত্র ১-২টি আমলকী খেলে এসব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে। বমি বন্ধে কাজ করে আমলকী।
দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর খাওয়া যেতে পারে।
আমলকী হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক রুপে কাজ করে। দাঁত,চুল ও ত্বক ভাল রাখে আমলকী।
এটি খাওয়ার রুচি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল,রক্তাল্পতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে আমলকী।
বহুমূত্র রোগের জন্য উপকারি আমলকী। চোখে ইনফেক্সান হলে কাঁচা আমলকীর রস দিনে ২ ফোটা করে দুবার চোখে দিলে ইনফেক্সান ঠিক হয়ে যায়।
চুল ওঠা দূর করতে আমলকী বেশ উপকারী কার্যকরী। চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে আমলকী মাথাকে পরিষ্কার রাখে।
আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। আমলকী ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
তাছাড়া প্রতিদিন সকালে আমলকীর জুস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে খুব ভালো ভাবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকীর গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
আমলকী শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।