Search
Close this search box.

বলিরেখা দূর করার ফেসিয়াল

আয়নার সামনে দাঁড়ালেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন চোখের চারপাশে, কপালে কুঁচকে যাওয়া আর দাগ? বয়স হওয়া তো স্বাভাবিক ঘটনা।

তাকে আটকাবেন কীভাবে! কিন্তু বয়স হলেই যে ত্বক কুঁচকে যেতেই হবে তার তো কোনও মানে নেই।

আর এখন বলিরেখা বা রিঙ্কলস অনেক কম বয়সেও আসতে পারে। আপনি হয়তো বাজার থেকে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, অ্যান্টি এজিং কোনও ক্রিম আনবেন।

কিন্তু সবও সময়ে ব্যবহারের জন্য সেগুলি একটু দামী হয়ে যায় বৈকি! তাহলে উপায়? আমরা বলব তো ফেস মাস্কের কথা, যা রিঙ্কলস সহজেই কমিয়ে দেবে।

সঙ্গে থাকবে আরও অনেক উপকার।

ফেস মাস্ক কেন ব্যবহার করবেন

শতকের পর শতক ধরে ফেস মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য।

রিঙ্কলস দূর করার জন্যও ফেস মাস্ক খুব কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।

কিন্তু রিঙ্কলস দূর করা ছাড়াও ফেস মাস্ক আরও অনেক দিক থেকে আমাদের উপকারে আসে।

  • ফেস মাস্ক আমাদের ব্লাড সার্কুলেশন ভাল করে।
    ফেস মাস্ক ব্যবহার করার আগে আপনাকে খানিক ক্ষণ স্কিনে ম্যাসাজ করে নিতে হয় হাল্কা হাতে।
    এতে ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হয়। ফলে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ে। স্কিনে সতেজতা আসে।
  • স্কিনের টানটান ভাব বজায় রাখে ফেস মাস্ক। ফলে সহজে চামড়া কুঁচকে যায় না।
  • স্কিনের পোর্স ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে আর খোলা রাখে।
    অনেক সময়ে ময়লা জমে স্কিন পোর্স বন্ধ হয়ে যায়। ফেস মাস্ক এই সমস্যাও দূর করে।
  • যদি আপনার চোখের তলায় কালি হয়ে থাকে বা ব্রণর জন্য দাগ হয়ে থাকে, তাহলে ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন। অভাবনীয় ফল পাবেন।
  • স্কিনে সঙ্গে সঙ্গে একটা অনবদ্য জেল্লা দেখতে পাবেন ফেস মাস্ক ব্যবহার করার পর।
  • স্কিনকে খুব সুন্দর ভাবে কোমল রাখে ফেস মাস্ক।
  • স্কিনের বেশির ভাগ সমস্যার প্রধান কারণ হল ডেড স্কিন সেল বা বলতে পারেন মড়া চামড়া।
    এই মড়া চামড়ার জন্য স্কিনে যতই প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হোক না কেন তা যেতে চায় না।
    স্কিন অনুজ্জ্বল লাগে। ফেস মাস্ক স্কিনের এই মড়া চামড়া দূর করে দেয়।
  • ফেস মাস্ক স্কিন টেক্সচার ঠিক করবে। স্কিন টেক্সচার অর্থাৎ স্কিনের রঙ নয়।
    আপনার স্কিন অয়েলি হোক, ড্রাই হোক বা নর্মাল, সেই টেক্সচার আরও ভাল করে ফেস মাস্ক।
  • ফেস মাস্ক স্কিন হাইড্রেট করে। স্কিনের আর্দ্রতা বজায় রাখে। স্কিনের পি.এইচ লেভেল ঠিক রাখে।
  • স্কিনের যদি কোনও দাগ ছোপ থেকে থাকে তাহলে তাও দূর হয়ে যায় ফেস মাস্ক ব্যবহারের ফলে।

এখন দেখে নেওয়া যায় ফেস মাস্ক তৈরি করতে আপনাদের হাতের কাছে থাকা ঠিক কোন কোন উপকরণ আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এই সব উপকরণ হাতের কাছে থাকলেই আপনি ফেস মাস্ক তৈরি করে ফেলতে পারবেন।

১. অরেঞ্জ পিল

অরেঞ্জ পিল অর্থাৎ কমলালেবুর খোসা। এই অরেঞ্জ পিল শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়ো করে রেখে দিলে ফেস মাস্কে ব্যবহার করা যায়।

এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রিঙ্কলস দূর করে স্কিন টানটান করতে সাহায্য করে।

২. হলুদ

রক্ত পরিষ্কার করা, স্কিন থেকে দাগ তুলে দেওয়া, হলুদের এই সমস্ত গুণের কথা তো আমরা জানি।

হলুদ কিন্তু রিঙ্কলস দূর করতেও খুব ভাল কাজ দেয়। স্কিনের টানটান ভাব ধরে রাখে হলুদ। সঙ্গে ফিরিয়ে আনে ত্বকের জেল্লা।

৩. গ্রিন টি

গ্রিন টি অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে আছে পলিফেনোলিক, যা ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

এর পাশাপাশি গ্রিন টির মধ্যে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা বার্ধক্যের চিহ্ন দূরে রাখে।

৪. স্যান্ডলউড বা চন্দন

স্যান্ডলউড স্কিনকে টোনড করে। স্কিন টেক্সচার নর্মাল করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে একটা বুড়িয়ে যাওয়া অনুজ্জ্বল ভাব আসে, সেটাও চন্দন দূরে রাখে।

চন্দন স্কিন টাইট রাখে। সঙ্গে ব্রণ বা দাগ ছোপ আসতে দেয় না।

৫. টক দই

টক দই স্কিন টানটান রাখতে, ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে খুব ভাল কাজ দেয়।

ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে, সঙ্গে ত্বকে আনে উজ্জ্বলতা। টক দইয়ের মধ্যে থাকা সেলেনিয়াম রিঙ্কলস বা বার্ধক্যের চিহ্ন সহজে আসতে দেয় না।

৬. নিম তেল

নিমের মধ্যে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান, যা ত্বকের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে। তাই সহজে ত্বক ঝুলে যায় না।

ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে ত্বক রক্ষা করে আর অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকেও স্কিন উদ্ধার করে।

৭. কফি

কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইনে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। ক্যাফেইন ত্বকের মধ্যে ব্লাড সার্কুলেশন ভাল করে।

তাই ত্বক কোমল থাকে আর রিঙ্কল, দাগ, স্কিন ঝুলে যাওয়ার মতো বুড়িয়ে যাওয়ার ছাপ সহজে আসে না।

৮. লেবু

লেবুর মধ্যে আছে ফাইটোকম্পাউন্ড, যা অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে খুব ভাল কাজ করে।

ত্বকের চামড়া ঝুলে গেলে লেবু খুব তাড়াতাড়ি স্কিনের ইলাস্টিসিটি ফিরিয়ে এনে ফিরিয়ে আনে তারুণ্য।

৯. অ্যাপেল

আপেলে আছে হাইড্রোক্সি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড তারুণ্য বজায় রাখতে আর সহজে যাতে বার্ধক্য না আসে তার জন্য কাজ করে।

আপেল আমাদের স্কিন এক্সফোলিয়েট করে আর ডেড স্কিন সেল দূর করে দেয়। ত্বক অনেক স্মুদ থাকে।

১০. অলিভ তেল

অলিভ অয়েলে আছে ফেনোলিক অ্যাসিড, যা অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ।

অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন ই-এর থেকেও বেশি ভাল কাজ দেয়। অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে স্কিন, স্কিনের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

১১. দুধ

স্কিনের বার্ধক্য দূর করে স্কিনকে তারুণ্যে ভরিয়ে তুলতে দুধের জুড়ি মেলা ভার।

দুধ বুড়িয়ে যাওয়ার হার বা মাত্রা কমিয়ে আনে। এতে আছে আলট্রা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, যা বার্ধক্যের ছাপ আসতে দেয় না।

এবার আমরা জানবো কীভাবে তৈরি করতে হয় এই ফেস মাস্ক।   

১. দই আর হলুদের ফেস মাস্ক

উপকরণ

১ টেবিল চামচ টক দই, এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো।

পদ্ধতি

একটি পাত্রে টক দই আর হলুদ গুঁড়ো নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। হার্বাল হলুদ গুঁড়ো পেলে ভাল হয়।

এই মিশ্রণ মুখে মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে আসলে সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।

এটা সপ্তাহে এক দিন করে করুন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তফাৎ বুঝতে পারেন।

২. মুসুরির ডালের ফেস মাস্ক

উপকরণ

২ টেবিল চামচ মুসুরি ডাল, ৩ টেবিল চামচ জল।

পদ্ধতি

আগের দিন রাতে মুসুরির ডাল অল্প করে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন বেটে নিন ভাল করে।

মুখে মেখে অপেক্ষা করুন ৩০ মিনিট। যখন দেখবেন শুকিয়ে আসছে, মুখে অল্প টান ধরছে, তখন মুখ ধুয়ে নিন সাধারণ ঠাণ্ডা জল দিয়ে।

১০ দিন ছাড়া ছাড়া করতে পারেন। এতে স্কিন টাইট থাকবে।

৩. লেবুর রস আর মিল্ক ক্রিমের ফেস মাস্ক

উপকরণ

২ টেবিল চামচ লেবুর রস, অল্প মিল্ক ক্রিম।

পদ্ধতি

লেবুর রস আর মিল্ক ক্রিম নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখে মেখে ২০ মিনিট মতো অপেক্ষা করুন।

তারপর সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন করতে পারেন।

খুব ভাল উপকার পাবেন মিল্ক ক্রিমের জন্য। এতে স্কিন টানটান থাকবে।

৪. অলিভ অয়েল আর লেবুর রসের ফেস মাস্ক

উপকরণ

২ চামচ অলিভ অয়েল, ১ চামচ লেবুর রস।

পদ্ধতি

লেবুর রস আর অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।

তারপর ঠাণ্ডা সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এক দিন ছাড়া ছাড়া করতে পারেন। খুব ভাল উপকার পাবেন।

৫. অ্যাপেল ফেস মাস্ক

উপকরণ

একটা আপেল, এক চামচ গুঁড়ো দুধ, ১ চামচ মধু।

পদ্ধতি

একটা আপেল নিন আর সেদ্ধ করে নিন। আপেল ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার বীজ বের করে আপেল ভাল করে চটকে নিন।

এর মধ্যে গুঁড়ো দুধ আর মধু দিয়ে ভাল করে একটা পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট মুখে মেখে নিন আর অপেক্ষা করুন ১৫ মিনিট।

সাধারণ জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এটা মাসে এক দুইবার করতে পারেন।

এই পাঁচটির মধ্যে যে কোনও একটি বা দুটি ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন আপনার পছন্দ মতো।

যে কোনও ত্বকের জন্য এই সব ফেস মাস্ক প্রযোজ্য। তবে শুধু ফেস মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে না।

এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। তবেই রিঙ্কলসের হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেয়ে তারুণ্যে ভরপুর থাকবে আপনার ত্বক।

জেনে রাখুন কিছু বিশেষ টিপস

১. রাতে স্কিন কেয়ার রুটিন মাস্ট। অবশ্যই স্কিন কেয়ার রুটিন মানে বিশাল কোনও ব্যাপার নয়। রাতে আমাদের স্কিন বিশ্রাম চায়।
তাই ক্লিনসিং, টোনিং অবশ্যই করবেন। এর পাশাপাশি সঙ্গে রাখবেন ময়েশ্চারাইজিং। রাতে স্কিনে ময়েশ্চার দেওয়া মাস্ট।

২. সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করুন। সূর্যের কড়া রোদে স্কিন ড্যামেজ হয়। তাই স্কিন কেয়ার রুটিনের মধ্যে সানস্ক্রিন মেখে বাইরে যাওয়া মাস্ট।

৩. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা তো উচিত। কিন্তু কোন ধরণের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন!
নরমাল স্কিন টাইপ হলে যে কোনও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
কিন্তু যদি অয়েলি বা কম্বিনেশন টাইপ হয় তাহলে ওয়াটার বেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে স্কিনের ইলাস্টিসিটি ভাল থাকে।

৪. ফেস মাস্ক অন্তত সপ্তাহে এক বার ব্যবহার করতেই হবে। এতে যেমন এজিং সমস্যা প্রায় হবে না, তেমনই অনেক ভাল থাকবে স্কিন।

৫. স্কিনের ধরণ অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। সব প্রোডাক্ট সবার জন্য নয়। আগে জানুন আপনার স্কিন টাইপ।
তারপর সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ভুল প্রোডাক্ট কিন্তু অনেক সময়ে স্কিনের ক্ষতি ডেকে আনে।

৬. সময় করে দিনে দু’বার অন্তত মুখ ভাল করে পরিষ্কার করুন। দু বার মুখ না ধুলে বা ডিপ ক্লিনসিং না করলে মুখে ময়লা জমতে শুরু করে।
অয়েল সিক্রিয়েশনে সমস্যা হয়। এতে পরবর্তী অনেক সমস্যার জন্ম হয়।

৭. সব কিছুর মূল শরীরের ভিতর। তাকে ভাল রাখার জন্য দরকার হেলদি ডায়েট। ভাল পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
অতিরিক্ত তেলতেলে খাবার স্কিনের জন্য ভাল নয়। তাই তেলতেলে খাবার বন্ধ করুন।

৮. যে কোনও এক্সারসাইজ স্কিন ভাল রাখে, টানটান রাখে। এক্সারসাইজ করলে ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হয়।
তাই অনেক দিন পর্যন্ত আপনাকে সুন্দর দেখায়। 

সবশেষে একটাই কথা বলার। বয়স বাড়া খুব স্বাভাবিক একটা জিনিস। কিন্তু বয়স বাড়লেই যে চামড়া কুঁচকে বুড়িয়ে যেতে হবে তার কোনও মানে নেই।

বয়স বাড়ুক তার মতো, আপনি তরুণ থাকুন শরীরে, মনে আর স্কিনের দিক থেকেও। বয়সের ছাপ যেন মুখে না দেখা যায়।