Search
Close this search box.

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ১০টি অ্যান্টি এজিং ফেস মাস্ক বানানোর উপায়

দিনকে দিন বয়স তো সবারই বেড়ে চলেছে। সেই সাথে চেহারাও যাচ্ছে বুড়িয়ে। বয়স কমানোর কিংবা থামিয়ে রাখার নেই কোনো উপায়।

তাই চেহারাতে পরছে বয়সের ছাপ। অনেককে আবার কম বয়সেই দেখতে লাগে বেজায় বয়স্ক।

বাজারে আছে অ্যান্টি-এজিং নানান প্রোডাক্ট, কিন্তু ব্যবহার করতে লাগে ভয়…যদি সাইড এফেক্ট হয়! তাহলে উপায়?

উপায় আছে। আপনার ত্বক অয়েলি হোক বা ড্রাই কিংবা সেনসেটিভ, ঘরে বসেই তৈরি করে নিতে পারেন অ্যান্টি-এজিং ফেস মাস্ক।

খরচ? নেই বললেই চলে। আর উপাদানগুলোও পাবেন হাতের নাগালেই।

চলুন তাহলে জেনে নেই ঘরোয়া অ্যান্টি-এজিং ফেস মাস্ক বানানোর ১০টি কৌশল।

১. ডিম, দই ও মধুর ফেস মাস্ক

ডিমের কুসুম বেশ ভালো ময়েশ্চারাইজার। মধু ত্বককে স্নিগ্ধ করে তোলে। দই ত্বকের মরা চামড়া উঠিয়ে ফেলে করে আর আমন্ড অয়েল ত্বককে করে তোলে আরো সতেজ।

এই সবকটি উপাদান একসাথে করে ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন অ্যান্টি-এজিং ফেস মাস্ক। শুষ্ক (ড্রাই) ত্বকের জন্য এটি বেশ কার্যকরী।

প্রক্রিয়া

একটি ডিমের কুসুম, এক চামচ দই ও এক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এতে আধা চামচ আমন্ড অয়েল যোগ করুন।

যতক্ষন পর্যন্ত মিশ্রণটি ঘন ও আঠালো না হয় ততক্ষন পর্যন্ত নাড়াতে থাকুন। মিশ্রণ তৈরি হয়ে গেলে এটি মুখে লাগিয়ে দশ থেকে পনের মিনিট অপেক্ষা করুন।

এবার ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

২. মধু ও গাজরের ফেস মাস্ক

গাজরে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

মধু ত্বককে রাখে স্নিগ্ধ ও লাবণ্যময়, ফলে বয়সের ছাপ যায় কমে।

আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত (অয়েলি) হয় তবে শুধু এই দুটি উপাদান দিয়েই ঘরে বসে তৈরি করে নিতে পারেন আপনার ফেস মাস্কটি।

প্রক্রিয়া

সিদ্ধ করা গাজর ভালোভাবে চটকে বা ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এর সাথে মধু মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন।

মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে এলে ফ্রিজ থেকে বের করে ত্বকে লাগিয়ে নিন। পনের-বিশ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৩. কলা, মধু, ডিম ও দুধের ফেস মাস্ক

ত্বকের দাগ দূর করতে কলা দারুন কার্যকর এটা আমরা সবাই জানি।

কিন্তু বয়সের ছাপ দূর করতেও যে কার্যকর তা কি জানি? কলায় থাকা ভিটামিন ও মিনারেলস ত্বকের বলিরেখা কমায়।

ত্বকের গভীরে থাকা ময়লা-ধুলো পরিষ্কার করে। ডিম ত্বককে বুড়িয়ে যাবার হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। আর মধু? মধুর কাজ তো সবাই জানে।

এই উপাদানগুলো দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক সংবেদনশীল (সেনসিটিভ) ত্বকের জন্য দারুন উপকারী।

প্রক্রিয়া

কলা, মধু, ডিম ও দুধ একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। অনুপাত এমন রাখবেন যাতে এটি পেস্টের মত হয়।

এই মাস্কটি আপনি মুখ ছাড়া ঘাড় ও গলাতেও লাগাতে পারেন। মিশ্রণ তৈরি হয়ে গেলে লাগিয়ে নিন। বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৪. ডিম, অ্যাভোকেডো ও মধুর ফেস মাস্ক

অ্যাভোকেডোর এই মিশ্রণটি অ্যান্টি-এজিংয়ের পাশাপাশি ত্বক লাইটেনিং করতেও ভূমিকা রাখে।

প্রক্রিয়া

ডিম, মধু ও অ্যাভোকেডো একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন অথবা হাত দিয়ে খুব ভালোভাবে চটকে নিন যেন মিশ্রণটি পেস্টের মত হয়।

মুখের ত্বকে এই পেস্ট মাস্ক আকারে লাগিয়ে নিন। ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন।

৫. মধু ও ল্যাভেন্ডার অয়েলের ফেস মাস্ক

সব ধরনের ত্বকেই ল্যাভেন্ডার স্যুট করে। তাই এই মাস্ক নিয়ে নেই কোনো টেনশন। ল্যাভেন্ডার অয়েল ত্বকের বলিরেখা ও বুড়িয়ে যাওয়া দূর করতে খুব কার্যকর।

প্রক্রিয়া

মধুর সাথে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ত্বকে লাগিয়ে পনের মিনিট অপেক্ষা করুন।

এরপর হালকা একটু গরম (যতটুকু গরম ত্বক সহ্য করতে পারে) পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৬. মধু ও মসুর ডালের ফেস মাস্ক

মধুর গুণাগুণ তো সকলেই জানি। ত্বকের যত্নে ডালের ব্যবহারও সবাই জানে।

কিন্তু যেটা অনেকেই জানে না সেটা হচ্ছে, এই দুটি উপাদান একসাথে কিন্তু অ্যান্টি-এজিংয়ে দারুন কাজ করে।

প্রক্রিয়া

মসুর ডাল কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে বেটে নিন অথবা শুকনো মসুর ডাল ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বা পিষে গুড়ো করে নিন।

এবার এর সাথে এক চামচ মধু যোগ করুন। ত্বকে লাগিয়ে বিশ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।

৭. আম, মুলতানি মাটি ও দুধের ফেস মাস্ক

কি? অবাক হলেন আমের নাম দেখে? অবাক হবার কিছুই নেই। আম খাওয়া যেমন উপকারী, তেমনি ত্বকের যত্নেও আম অত্যন্ত কার্যকরী।

ত্বকের উজ্জ্বলভাব ধরে রাখতে, ত্বককে ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করতে আমের জুড়ি নেই।

ত্বকে ব্রণের প্রবণতা দূর করার পাশাপাশি অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্যও এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।

প্রক্রিয়া

আমের শাঁসের সাথে মুলতানি মাটি ও দুধ মিশিয়ে ভালো করে মিশ্রণ বানিয়ে নিন। এটি কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন।

এবার মাস্কের মত করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

৮. মধু, গ্রিন-টি ও চিনির ফেস মাস্ক

স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গ্রিন-টি।

ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করা থেকে শুরু করে ব্রণ কমানো, বয়সের ছোপ পড়তে না দেয়া, ত্বক টানটান রাখার পাশাপাশি ত্বকের মৃতপ্রায় কোষগুলোকেও সজীব করে তোলে গ্রিন-টি।

আর ত্বক এক্সফোলিয়েশনের কাজ করে চিনি।

প্রক্রিয়া

গ্রিন-টি ব্যাগ গরম পানিতে ঘন্টাখানেক ভিজিয়ে রাখুন। পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে টি ব্যাগ কেটে ভেতরে থাকা চা পাতাগুলো বের করে বাটিতে নিয়ে নিন।

এতে চিনি, মধু আর কয়েক ফোঁটা জল মিশিয়ে পেস্টের মতো মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি যতটা সম্ভব সমান করে পুরো মুখে মাস্কের মত লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন।

পনের মিনিট পর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

৯. অ্যালোভেরা, চালের গুড়া ও দুধের ফেস মাস্ক

অ্যান্টি-এজিংয়ে অ্যালোভেরা যে কতটা কাজ করে তা আর নতুন করে বলার নেই। আর চালের গুড়া ত্বকের টোনিংয়ে খুব ভালো কাজ করে।

এই দুটি উপাদানের সাথে দুধ মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন আপনার ফেস মাস্ক।

প্রক্রিয়া

চালের গুড়াতে কাঁচা দুধ ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। অল্প পরিমান পেস্ট নিয়ে মুখে স্ক্রাব করুন।

এরপর বাকি মিশ্রণটি সমানভাবে মাস্কের মত মেখে নিন। দশ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

১০. টমেটো ও চালের গুড়ার ফেস মাস্ক

টমেটোর রস ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং বয়সের ছাপ কমায়। পাশাপাশি ত্বকের কোষগুলোকে রাখে সজীব।

এর সাথে চালের গুড়া মিশিয়ে সহজেই তৈরি করে নেয়া যায় অ্যান্টি-এজিং ফেস মাস্ক।

প্রক্রিয়া

পাকা টমেটো চটকে রস আলাদা করে ছেঁকে নিন। টমেটোর রসের সাথে চালের গুড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন।

চাইলে সাথে কয়েক ফোঁটা মধুও দিতে পারেন। ত্বকে মিনিট বিশেক রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

তবে এখানকার কোনো উপাদানে যদি আপনার এলার্জি থেকে থাকে তবে সেটা এড়িয়ে চলুন।

এবং ভালো ফলাফল পেতে ফেস মাস্ক মুখে লাগানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন।

তো এবার ঘরে বসেই স্বল্প খরচে ও সহজলভ্য উপাদানের সাহায্যে নিজেই তৈরি করে নিন আপনার পছন্দসই অ্যান্টি-এজিং ফেস মাস্ক।

আর হয়ে উঠুন লাবণ্যময় ত্বকের অধিকারী।