Search
Close this search box.

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার যেভাবে শুরু করবেন

হলিউড কিংবা বলিউড অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রীদের দেখে কি কখনও মনে হয়েছে যে, ঐ বয়সেও তারা কীভাবে এতোটা আকর্ষণীয়।

এর পেছনে যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সেটা হচ্ছে অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার।

যার ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদেরকে তুলনামূলক কম বয়স্ক দেখাচ্ছে।

অর্থাৎ, আপনি যত তাড়াতাড়ি ফিটনেসের দিকে নজর দেবেন, যত দ্রুত ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করবেন, তত বেশিদিন আপনার তারুণ্য অটুট থাকবে।

যেহেতু বয়স বাড়া আটকানো যাবে না কোনও মতেই, তাই বয়স বেড়ে যাওয়াকে ভয় না পেয়ে বরং বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ, তাতে বয়স বাড়লেও সুন্দর থাকা যায়।

ফলে বুঝতেই পারছেন, যত তাড়াতাড়ি অ্যান্টি-এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলতে শুরু করবেন, ততই ভালো কাজ দেবে!

আপনাদের কাছে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট করার জন্য কখন আর কীভাবে অ্যান্টি-এজিং ত্বক পরিচর্যা শুরু করতে হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করছি।

বয়স নির্বিশেষে যারা নিজেদের সুন্দর করে রাখতে চান, তাদের কাছে অ্যান্টি-এজিং একটা চিন্তার বিষয়।

আজকাল সব বয়সের মানুষই যে প্রশ্ন সাধারণত করেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো, “অ্যান্টি-এজিং স্কিনকেয়ার শুরু করার সঠিক বয়স কোনটা!”

অ্যান্টি-এজিং স্কিনকেয়ার শুরু করার আদর্শ সময় কোনটা?

কৈশোরে অর্থাৎ মোটামুটি তেরো-চোদ্দ বছর বয়স থেকে শুরু করে বছর দশেক আপনার ত্বক তার শ্রেষ্ঠ অবস্থায় থাকে।

ওই সময়ে কারও কারও ব্রণর সমস্যা হয়, এ বাদে ত্বকের আর কোনও বড়ো সমস্যা সাধারণত হয় না। তাই এই সময়টায় আলাদা করে অ্যান্টি-এজিং প্রডাক্ট ব্যবহার করার দরকার সাধারণত হয় না।

যদিও অনেকে কুড়ির কোঠায় পা দেওয়ার পর পরই অ্যান্টি-এজিং ক্রিম মাখতে শুরু করে দেন, তবে সব দিক বিবেচনা করলে পঁচিশ বছর বয়সটাই অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার করতে শুরু করার সবচেয়ে আদর্শ সময়।

কুড়ির কোঠার শুরুতে বা তিরিশে পৌঁছে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম মাখা শুরু করলে যে ফল পাওয়া যায়, তার চেয়ে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায় পঁচিশ থেকে শুরু করলে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, অ্যান্টি-এজিং ক্রিম সে সব পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বককে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

২৫ বছর বয়সের আগে আমাদের ত্বকে পর্যাপ্ত কোলাজেন আর ইলাস্টিন টিস্যু তৈরি হয়, ত্বকের ক্ষতিও কম হয়। তার পরে কিন্তু কোলাজেন আর ইলাস্টিনের পরিমাণ কমতে থাকে, ফলে সূক্ষ্ম রেখা, বলিরেখা পড়া শুরু হয়।

ফলে অ্যান্টি-এজিং স্কিনকেয়ার শুরু করার আদর্শ বয়স হিসেবে ২৫ বছরকে ধরা যেতে পারে। মনে রাখবেন ৩৫ বছর বয়সের পরে কোলাজেন আর ইলাস্টিন তৈরির পরিমাণ আরও কমে যায়, ত্বকে কুঞ্চন পড়তে থাকে।

ফলে আপনার বয়স যদি ২৫ বছরের বেশি হয় আর এখনও অ্যান্টি-এজিং ত্বক পরিচর্যা শুরু না করে থাকেন, তা হলে আর দেরি না করে শুরু করে দিন!

আদর্শ অ্যান্টি-এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন

মুখে শুকনোভাব, কালো দাগছোপ, বলিরেখা, কুঞ্চনের ছাপ প্রতিরোধ করতে রোজ দিনে এবং রাতে নিয়মিত ত্বক পরিচর্যার রুটিন মেনে চয়া উচিত।

প্রথম ধাপ ক্লিনজার

সকালে উঠে কোমল ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এমন ক্লিনজার ব্যবহার করবেন যাতে ত্বক থেকে আর্দ্রতা নষ্ট না হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ধাপ সিরাম

ক্লিনজার পর মুখে ভিটামিন সি সিরাম মেখে নিন, এতে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল জনিত ক্ষতি সামাল দিতে পারবেন।

তৃতীয় ধাপ ময়শ্চারাইজার

এর পরের ধাপে ময়শ্চারাইজার আর সানস্ক্রিন! মুখে ময়শ্চারাইজার মাখার পর সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না!

প্রতিদিন সানস্ক্রিন মাখুন, এমনকী বাড়িতে থাকলেও! অন্তত এসপিএফ ৫০ রয়েছে এমন সানস্ক্রিন মাখতে হবে।

আঙুলের মাথার মাপ অনুযায়ী ২.৫ ইউনিট মতো নিন, সারা মুখে আর গলায় ছোট ছোট ফোঁটায় লাগিয়ে মেখে নিন।

রাতের বেলার স্কিনকেয়ার

মোমের মতো মসৃণ, পালিশ করা ত্বক চাইলে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিয়মিত ত্বকের যত্ন করুন।

মুখ ধুয়ে নিয়ে প্রথমে রেটিনল যুক্ত সিরাম মাখুন, তারপর এমন একটা ময়শ্চারাইজার মেখে নিন যাতে সেরামাইড, গ্লিসারিন আর হ্যালিউরনিক অ্যাসিড রয়েছে।

এতে আর্দ্রতা ত্বকের গভীরেই আটকে থাকবে,

অ্যান্টি-এজিং ত্বক পরিচর্যার রুটিন শুরু করার বিশেষ টিপস

কীভাবে শুরু করবেন অ্যান্টি-এজিং ত্বক পরিচর্যার রুটিন? কিছু বিশেষ টিপস রয়েছে আমাদের কাছে।

অ্যান্টি-এজিং স্কিনকেয়ার শুরু করার প্রথম ধাপ হলো ত্বক যতটা সম্ভব আর্দ্র রাখা।

এই প্রাথমিক চাহিদাটুকু পূরণ করার পর মেনে চলুন আরও কিছু নিয়ম

  • আদর্শ অ্যান্টি-এজিং রুটিনে এমন উপাদান বা প্রোডাক্ট থাকা চাই যা ত্বকে কোলাজেনের পরিমাণ বাড়ায়।
    এসব প্রোডাক্টে রেটিনয়েড, এএইচএ, হ্যালিউরনিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, গ্লুটাথিওন, পেপটাইড আর স্টেম সেলের নির্যাসের মতো অ্যান্টিঅক্সিডান্ট থাকতে হবে।
    এসব উপাদান ত্বকের এক্সফোলিয়েশনে সাহায্য করে, ত্বক আর্দ্র রাখে, ত্বকের নতুন কোষ তৈরিতেও সাহায্য করে।
  • ত্বকে বয়সের দাগ দেখা দেওয়ার অন্যতম কারণ হল রোদ। তাই ত্বক তরুণ রাখতে অন্তত এসপিএফ ৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন মাখাটা সবচেয়ে জরুরি।
  • ত্বকে কোলাজেন বাড়ানোর জন্য অনেক ট্রিটমেন্ট রয়েছে।
    ডাক্তারের সাহায্য নিয়ে নিয়মিত ব্যবধানে ক্লিনিকে গিয়ে ফোটো ফেসিয়াল, মাইক্রোডার্মাব্রেশন, কোলাজেন ইনডাকশন থেরাপি, পিআরপি ট্রিটমেন্ট করাতে হবে।
    তা হলে বয়স যতই বাড়ুক, আপনার ত্বক থাকবে একদম পরিপাটি, তারুণ্যে উজ্জ্বল!

কেন ব্যবহার করবেন অ্যান্টি-এজিং ক্রিম?

অ্যান্টি-এজিং ক্রিম শুধু যে বলিরেখা, বয়সজনিত দাগছোপ, সূক্ষ্মরেখা দূরে রাখে তাই নয়।

রোদের তাপ, আবহাওয়ার দূষণের কারণে আপনার ত্বক প্রতিদিন যে ক্ষতির শিকার হয়, তা সারিয়ে তুলে ত্বক সুস্থ, উজ্জ্বল রাখতেও অ্যান্টি-এজিং ক্রিম অপরিহার্য।

ফলে পঁচিশে পা দেওয়ার পর নিয়ম করে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম লাগাতেই হবে।

নিজের ত্বকের ধরনের উপর ভিত্তি করে সঠিক প্রডাক্টটি বেছে নিন, প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

বয়সের কটাক্ষকে তুড়ি মেরে আপনার ত্বক থাকবে ঝলমলে সুন্দর!

অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট

প্রত্যেকেই নিজের তারুণ্যে ভরা চেহারা একটানা দেখতে চায়। এই আবেশ বা ঘোর আজকাল প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দোকানের শেল্ফে এবং শপিং ওয়েবসাইটে অনেক রকমের অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট থাকে যা বয়সের ছাপ পড়া কমিয়ে আটকানোর প্রতিশ্রুতি দেয়।

কিন্তু আদপেই কি কোনও উন্নতি হয়? আসুন দেখা যাক।  

এগুলোর কাজ কী? 

এগুলো ত্বকের উন্নতিসাধনের সাথে হাইড্রেট করে এবং ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল বানায়।

ডিহাইড্রেশান থেকে সূক্ষ্ম রেখা দেখা যায় এবং ত্বক অনুজ্জ্বল হয়ে যায়।

সচরাচর, সানস্ক্রিন এবং ভালো ময়েশ্চারাইজার সমস্যার কিছুটা সমাধান করলেও অ্যান্টি-এজিং ক্রিম উপকারিতা বাড়িয়ে দেয়। 

এগুলো কি কার্যকারী?

অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট সুরক্ষার জন্য প্রমাণিত হলেও কার্যকারিতার ক্ষেত্রে প্রমাণিত নয়।

এটা কাজে দেবে কি না সেটা তার মধ্যের নির্দিষ্ট উপাদান এবং কতদিন ব্যবহার করবেন তার ওপর নির্ভর করে।

বেশ কিছু প্রাকৃতিক প্রোডাক্ট এবং তার নির্যাস কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদনে সাহায্য করে। সক্রিয় উপাদান চেহারার সামান্য উন্নতি ঘটাতেও পারে। 

এর উপাদান  কী কী? 

ভিটামিন সি এবং ই: সুর্যের আলোর থেকে যে ক্ষতি হয় সেটা ঠিক করার সাথে কোষের ক্ষতি আটকায়।

আঙুরের বীজের নির্যাস: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি গুণ সম্পন্ন যা ত্বকের উন্নতি ঘটায় এবং ক্ষত নিরাময় করে। 

চায়ের নির্যাস: ব্ল্যাক/গ্রিন টি-র নির্যাসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান বয়সের ছাপ পড়া কমায়।

আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড: এই অ্যাসিড ফল এবং মিল্ক সুগার থেকে আসে এবং এগুলো অসাধারণ এক্সফলিয়েটিং অনুঘটক। এই অ্যাসিড বয়সের ছাপ পরা কার্যকারী ভাবে কমানোর পাশাপাশি ত্বককে মজবুত করে। 

কোএনজাইম কিউ১০: চোখের চারপাশের সূক্ষ্ম রেখা কমায় এবং ত্বককে সুর্যের আলোর ক্ষতি হাত থেকে রক্ষা করে। 

নিয়াসিনেমাইড: ভিটামিন বি৩-র সাথে সম্পর্কিত এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে হাইড্রেট করে এবং নমনীয়তা বাড়ায়।

এপিডারমাল বৃদ্ধি: এই ফ্যাক্টার কোষের পুনরুদ্ধারের সাথে কোলাজেন ও ইলাস্টিনের উৎপাদন বাড়ায়। বয়সের ছাপ পড়া কমায় এবং ত্বকের নিরাময় করে।

রেটিনল: এটা এক প্রকার ভিটামিন এ যা ফ্রি র‍্যাডিকেলকে নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি ত্বকের গঠন মসৃণ করে এবং কোলাজেন তৈরি এবং কোষের পুনরুদ্ধার বাড়ায়।

পেপটাইড: এগুলো কোষের বৃদ্ধি এবং ইলাস্টিন এবং কোলাজেন তৈরি বাড়ায় ও মুখের পেশীকে শিথিল করে।

ইউভি-র ত্থেকে রক্ষা করা: এটা ত্বককে সুর্যের আলোর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের বলিরেখা বা কুঁচকে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

মনে রাখার মতো জরুরি কিছু বিষয়

  • দামী অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট কার্যকারিতা নির্ধারণ করে না। একটু কমদামী প্রোডাক্টও ভালো কাজ দিতে পারে।
  • আলাদা আলাদা উপাদান সহ ২-৩টে প্রোডাক্ট বার বার ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায় না। একটাই ব্যবহার করুন।
  • কিছু প্রোডাক্টের প্রতিকূল প্রভাবের জন্য ত্বকের অস্বস্তি, লাল লাল ভাব বা র‍্যাশ হয়। ব্যবহার করার আগে প্রোডাক্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন।
  • দিনে দুই বার অ্যান্টিএজিং ক্রিম লাগালে ত্বকের উন্নতি হয়।
  • ওটিসি প্রোডাক্টে সক্রিয় উপাদান কম পরিমাণে থাকে যারা কম কার্যকারি। মেডিকেটেড জিনিসগুলো আরও বেশি কাজের।
  • বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন পছন্দ আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। একটা প্রোডাক্ট যা আপনার মায়ের জন্য উপযুক্ত সেটা যে আপনার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। আপনার ত্বকের ধরনের সাথে মানানসই প্রোডাক্ট বেছে নিন।

সুতরাং, বিশ্বাসযোগ্য সমস্ত বিজ্ঞাপন দূরে সরিয়ে রাখুন এবং এইসব বিষয়গুলো বিবেচনা করে নিজের সেরা অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট চিনতে শিখুন।