ফ্রেশ পাকা কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাকা কলা খেতে ও গন্ধে দারুণ লোভনীয়।
সারাবছর পাওয়া যায় এই কলাতে রয়েছে ৭০-১২০ ক্যালরি ও ৪৯০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম।
কিন্তু আপনি কি জানেন এটা আপনার চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করে চুল উজ্জ্বল ও লম্বা করে তোলে?
হ্যা, কলা এতটাই উপকারী একটি ফল।
কলাতে আছে সিলিকা ও মিনারেল জাতীয় উপাদান যা আমাদের চুল ঘন ও লম্বা করতে সাহায্য করে।
কলাতে রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল উপাদান।
এটা আমাদের চুল ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে।
সাধারণত যাদের মাথার ত্বক খুব বেশি শুষ্ক থাকে তাদের খুশকির সমস্যা দেখা দেয়।
কিন্তু কলা ময়েশ্চারাইজ করে খুশকি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কলার হেয়ার মাস্কের উপকারিতা
কলার হেয়ার মাস্ক যে কোনো চুলের জন্যেই খুব উপকারী। এর পুষ্টি গুনাগুণ চুল রিপেয়ার করতে সাহায্য করে।
কলা যেকোনো চুলে স্যুট করে খুব সহজেই। শুষ্ক, তৈলাক্ত বা নরমাল মাথার ত্বকে খুব সহজেই মানিয়ে যায়।
খুশকি দূর করতে
প্রাচীনকাল থেকেই কলা গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো।
কলার পাতা ও খোসা রুপচর্চায় দারুন জনপ্রিয়।
কলাতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর গুনাবলি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জীবাণুর সাথে ফাইট করতে সাহায্য করে।
মাথা শুষ্ক ও চুলকানোর সমস্যা থাকলে খুশকির সমস্তা দেখা দেয়।
তাছাড়াও ফাংগাস সংক্রমণের কারণে খুশকির দেখা যায়।
কলার হেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করার ফলে এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলি ফাংগাস দূর করতে সাহায্য করে।
এই হেয়ার মাস্ক মাথার ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ময়েশ্চারাইজ করে। ফলে খুশকির প্রবণতা কমে যায়।
ফ্রিজিনেস দূর করতে
কলার তৈরি হেয়ার মাস্ক চুলের ফ্রিজিনেস দূর করতে সাহায্য করে।
কলার মধ্যে উপস্থিত সিলিকা চুল শাইনি ও সফট করে তোলে। আমাদের শরীর সিলিকা শুষে নেয়।
পরে আমাদের শরীর কোলাজেন উৎপাদন করে যা চুলে প্রোটিন সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
তাতে আমাদের চুল বাউন্সি, সফট ও শাইনি হয়। সিলিকা বিভিন্ন কন্ডিশনারে ব্যবহৃত হয়।
এটি চুলের ফ্রিজিনেস দ্রুত দূর করে চুলে পুষ্টি জোগায়।
তো এখন থেকে ফ্রিজিনেসকে বিদায়!
নতুন চুল পড়া বন্ধ ও চুল লম্বা করতে
কলার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের মাথার ত্বকে চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের চুলের ফলিকল গুলো মজবুত করে তোলে।
ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল পড়া বন্ধ করে। আর নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
কলার জাদুকরী হেয়ার মাস্ক তৈরি করার উপায়
১) কলা ও ক্যাস্টর অয়েল হেয়ার মাস্ক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- কলা
- ক্যাস্টর অয়েল
- ডিম
- টকদই
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- প্যাকটি তৈরি করতে আপনি ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
ব্লেন্ডার ব্যবহার করলে প্যাকগুলোর সব গুলো উপকরণ খুব ভালোভাবে মিক্স হবে। - ব্লেন্ডারে ২ টি কলা অর্ধেক করে কেটে ব্লেন্ড করে নিন।
দুই টেবিলচামচ ক্যাস্টর অয়েল, একটি সম্পূর্ণ ডিম ও এক টেবিলচামচ টকদই অ্যাড করে নিন। - সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
- ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে একটি পরিষ্কার বাটিতে ঢেলে নিন।
- চুল ভাগ ভাগ করে চুলের গোড়ায় ও সম্পূর্ণ চুলে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন।
- ৪০/৪৫ মিনিট পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। পরে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের সাহায্যে ভালোভাবে ওয়াশ করে নিন।
সপ্তাহে অন্তত একদিন এই হেয়ার মাস্কটি অ্যাপ্লাই করতে হবে।
২) কলা ও মধুর হেয়ার মাস্ক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- ১/২ টি কলা
- মধু
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- একটি বাটিতে কাটা চামচ দিয়ে কলাগুলো ভালোভাবে চটকে নিন।
কোনো রকম দলা যেনো না পেকে যায় সেইভাবেই চটকে নিন। - তারপর এতে ২/৩ টেবিলচামচ মধু অ্যাড করুন।
- দুইটি উপকরণ খুব ভালোভাবে মিক্স করুন।
- ভালোভাবে মিক্স করে আপনার মাথার ত্বক ও চুলের আগায় অ্যাপ্লাই করুন।
- ২০/২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
চুল ন্যারিশ করে চুল ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
সপ্তাহে অন্তত দুই বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
৩) কলা ও নারকেল তেলের হেয়ার মাস্ক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- নারকেল তেল
- কলা
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- একটি বাটিতে ২/৩ টি কলা বা আপনার চুলের লেন্থ অনুযায়ী কলা নিতে চটকে নিন।
- এর মধ্যে ২/৩ টেবিলচামচ নারকেল তেল অ্যাড করুন। ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
চাইলে ব্লেন্ডারের মাধ্যমে ব্লেন্ড ও করে নিতে পারেন। - মাথার ত্বকের দিকে নজর দিয়ে সম্পূর্ণ চুলে অ্যাপ্লাই করুন।
- ২০/২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
সতর্কতা
- যাদের বিভিন্ন ফলে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা মাথার এক পাশে বা কানের পাশে অল্প একটু অ্যাপ্লাই করে দেখবেন চুলকাচ্ছে কিনা।
চুলকালে অবশ্যই কলার হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। - কলার মাস্কটি ধুয়ে ফেলার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- মাস্ক ধোয়ার সময় খুব ভালোভাবে সবটুকু ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
দানাদার জাতীয় অংশ গুলোও ভালোভাবে ধুয়ে ফেলে দিতে হবে।
যদি সেটা না করা হয় তবে তা মাথার ত্বক শুষ্ক করে তুলবে।
যার ফলে খুশকি সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।