শীত, গ্রীষ্ম, কিংবা বর্ষা সকল ঋতুতেই আমাদের ত্বকের উপর দিয়ে বেশ ধকল যায়।
সারাদিনের পরিশ্রম, ধকল ও ধুলাবালিতে লাবণ্য হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায় ত্বক।
নিস্তেজ ত্বকে সহজেই জীবাণুর সংক্রমণ হয়, দেখা দেয় নানা সমস্যা।
তাই আমাদের চেহারায় রূপ-লাবণ্য ফুটিয়ে তোলা, তারুণ্য ধরে রাখা!
সর্বোপরি ত্বকের সুস্থতার জন্য চাই এর নিয়মিত পরিচর্যা, দরকার একটি বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরন করা।
কিন্তু স্কিন কেয়ার রুটিনের কথা শুনলে আমরা অনেকেই ভয়ে আঁতকে উঠি।
কারন স্কিন কেয়ার রুটিন মানেই অনেক অনেক সময় ব্যয়! অধিক অর্থ ব্যয়!
টোনার, সিরাম, ময়েশ্চারাইজার, এম্পিউল ইত্যাদি গাদা, গাদা প্রোডাক্টের ব্যবহার!
ব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে আমাদের এত সময় কই!
কিন্তু আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই- আপনার স্কিন কেয়ার রুটিন অধিক সময়,অর্থ কিংবা গাদা গাদা প্রোডাক্ট ব্যবহারের দরকার নেই।
আপনার বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিনে শুধুমাত্র ৩টি ধাপ অনুসরন করেই একটি সুস্থ,সুন্দর সাস্থউজ্জল ত্বক আমরা পেতে পারি!
আমাদের স্কিন কেয়ার রুটিনের এই অত্যবশ্যকীয় ৩টি ধাপ হল- ক্লিঞ্জিং, ময়েশ্চারাইজিং, প্রোটেকশন বা সানস্ক্রিন এর ব্যবহার।
ক্লিঞ্জিং
আমাদের প্রাথমিক স্কিন কেয়ার রুটিনের প্রথম ধাপ হল ক্লিঞ্জিং।
ক্লিঞ্জিং আমাদের ত্বকের উপরিভাগ ও লূমকুপের গভীরে জমে থাকা ময়লা, তেল, মৃত কোষ পরিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের স্কিনকে পিম্পল, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস, একনি ইত্যাদি নানা সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে।
এটি আমাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার প্রবেশের পথকে সুগম করে।
ক্লিঞ্জিং এর সময় জেন্টল বা মাইল্ড কোন ক্লিঞ্জার ব্যবহার করা উচিত।
তবে আমাদেরকে অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে সঠিক ক্লিঞ্জার দিয়ে ক্লিঞ্জিং করতে হবে।
অর্থাৎ প্রথমেই আমাদের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিঞ্জার বাছাই করতে হবে।
তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্লিঞ্জিং করতে হবে।
ক্লিঞ্জিং এর সময় খুবই আলতোভাবে আমাদের মুখে ১ থেকে ২ মিনিট চক্রাকারে মাসাজ করতে হবে যেন ইনগ্রিডিয়েন্টস আমাদের ত্বকে প্রবেশ করতে পারে।
দিনে ২ বারের বেশি ক্লিঞ্জিং করা উচিৎ নয়।
ময়েশ্চারাইজিং
আমাদের প্রাথমিক স্কিন কেয়ার রুটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল ময়েশ্চারাইজিং।
ময়েশ্চারাইজার আমদের ত্বককে হাইড্রেট করে, একইসঙ্গে ত্বকের হাইড্রেশনও ধরে রাখে।
অর্থাৎ ময়েশ্চারাইজার আমাদের ত্বকের উপরিভাগে একটি স্তর তৈরি করে ত্বকে পানির অপচয় রোধ করে।
ময়েশ্চারাইজার আমাদের ত্বকের ভালো বন্ধু।
ত্বক সুস্থ ও লাবণ্যময়ী রাখতে সব ধরণের ত্বকেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
তবে অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে সঠিক ময়েশ্চারাইজারটি বেঁছে নিতে হবে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কারণে ত্বক ম্যাসারেটেড হয়ে অতিরিক্ত নরম ও সাদা হয়ে যেতে পারে যা ত্বকের জন্য মোটেই স্বাস্থ্যকর নয় এবং জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
সান প্রোটেকশন
আমাদের প্রাথমিক স্কিন কেয়ার রুটিনের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল সান প্রোটেকশন।
সান প্রটেকশন ছাড়া আপনার পুরো স্কিন কেয়ার রুটিনটাই বৃথা হয়ে যায়।
কারন সূর্যের ক্ষতিকারক আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি হলো রূপ লাবণ্যের পয়লা নাম্বার শত্রু।
আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির মধ্যে ‘এ’ ও ‘বি’ টাইপ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর।
‘বি’ টাইপ কেবলমাত্র ত্বকের এপিডার্মিস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে কিন্তু এর জন্য ত্বক কালো হয়, সানবার্ন হয়, মেসতা গাঢ় হয়, ত্বকে ক্যান্সার হয়, চোখের চারদিকে ডার্ক সার্কল তৈরী হয়, চোখে ছানি পড়ে ইত্যাদি।
আর ‘এ’ টাইপ ত্বকের ডার্মিস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে এবং এর জন্য তারুণ্যের ধারক ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন তন্তু ধ্বংস হয় ফলে চেহারায় দ্রুত বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে।
কাজেই বুজতে পারছেন আমাদের ত্বকে সান প্রোটেক্টর বা সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজনিয়তা। তবে অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে সঠিক সানস্ক্রিনটি আমাদের বেঁছে নিতে হবে।