মুখের ত্বকের যত্নে যতটা সময় ব্যয় করি, তার থেকে কিছুটা সময় ব্যয় করলে আকর্ষণীয় পিঠের ত্বক পেতে পারি আমরা।
পিঠেও হতে পারে অ্যাকনের সমস্যা। পিঠে অ্যাকনের সমস্যাকে পোশাকি ভাষায় বলে ব্যাকনে। মুখে অ্যাকনের সমস্যা থেকেও ব্যাকনে বেশি ঝামেলার।
পিঠে সেবাসিস গ্রন্থি থাকে, এই গ্রন্থির ক্ষরণ বেশি হলেই ব্যাকনে হয়। পিঠে ব্যাকনে ঠেকাতে কয়েকটি সাধারণ পরিচর্যা জানতে হবে।
সঠিক বডিওয়াশ বেছে নিন
সঠিক বডি ওয়াশ বেছে নিতে হবে। আপনি ত্বকের জন্য যেমন সঠিক ফেসওয়াশ ব্যবহার করছেন, তেমনি পিঠ ও শরীরের জন্য বেছে নিন সঠিক বডিওয়াশ।
খেয়াল রাখবেন, বডিওয়াশে এমন উপাদান থাকুক, যা পিঠের অ্যাকনের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করবে।
খুব ভালো হয় যদি অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ বডিওয়াশ হয়। কিছু কিছু বডিওয়াশে পিএইচ লেভেলের মাত্রা ব্যালেন্সড থাকে। এগুলোও ব্যাকনে দূর করতে আদর্শ।
পরিস্কার পরিচ্ছনতা জরুরি
বাইরে থেকে ফিরে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে বসে থাকলেন কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে এসে গোসল করলেন না, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।
ঘাম ও ভিজে ভাব অ্যাকনের ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত তৈরি করে। তাই বাইরে থেকে ফিরে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে ফিরলে অবশ্যই গোসল করতে হবে।
স্ক্রাব ব্যবহার করুন
গোসলের সময় স্ক্রাব ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের মরা কোষ দূর হবে। গোসলে বডি স্ক্রাব ব্যবহার করলে নতুন কোষ তৈরি হতে সাহায্য করবে।
যে স্ক্রাবে আলফা হাইড্রিক্স এসিড আছে, সেই স্ক্রাব বেশি উপযোগী।
ডীপ ক্লিনজিং ও ব্যাক ম্যাসাজ
বাড়িতে যত্নের জন্য পারলারে ফেশিয়ালের পাশাপাশি পিঠের জন্য ডিপ ক্লিনজিং বা ব্যাক ম্যাসাজ নিন। এতে পিঠে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে।
পিঠের ত্বকও হয়ে উঠবে সতেজ আর উজ্জ্বল। বাড়িতে ক্লে মাস্কও ব্যবহার করা যায়। এতে পিঠের ত্বকের বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকূপ খুলে যাবে। ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে।
চুল পরিস্কার রাখুন
চুল লম্বা হলে পিঠের সংস্পর্শে আসবে। সে ক্ষেত্রে চুল সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
এমন অনেক চুলের প্রসাধন আছে, যেগুলো ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ত্বক তৈলাক্তও হয়ে যায়।
তাই, ময়েশ্চারাইজার সেরাম ব্যবহার করার সময় মাথায় রাখবেন তা যেমন শুধু চুলের উপযুক্তই নয়, ত্বকেরও উপযুক্ত হয়।
হট স্টিম ব্যবহার করুন
পিঠের যত্নের জন্য যে পরিচর্যাই করুন না কেন, শুরুতেই হালকা গরম পানিতে গোসল করবেন।
হালকা গরম পানি বন্ধ হওয়া লোমকূপে জমে থাকা ময়লা বের করে আনবে। চেষ্টা করুন পিঠে গরম ধোঁয়া (হট স্টিম) লাগানোর।
এতে পিঠে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে আসবে। ব্ল্যাকহেডস থেকেও মুক্তি পাবেন।
বড় ব্রাশ দিয়ে পিঠ পরিস্কার করুন
বড় ব্রাশ পিঠে বুলিয়ে নিন। শুকনো অবস্থায় ব্যাক ব্রাশিং ত্বকের মরা কোষ ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করবে।
অ্যাকনের সমস্যা থাকলে মাইল্ড ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
পিঠ ময়েশ্চারাইজ করুন
স্ক্রাব করার পর ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করুন। খুব ভালো হয় যদি অভিজ্ঞ কারো কাছে ব্যাক ম্যাসাজ করান।
আমন্ড, অলিভ বা জোজোবা তেল দিয়ে ব্যাক ম্যাসাজ করতে পারেন।
পিঠের ত্বক নরম ও মসৃণ হবে। রক্ত সঞ্চালন বাড়লে ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
পিঠের ব্যায়াম করুন
টোনড পিঠ পেতে ব্যায়াম করতে পারেন। পুশআপ ব্যায়াম করতে পারলে ভালো।
যদি এ ধরনের ব্যায়ামে অভ্যস্ত না হন তাহলে যোগাসনও করতে পারেন। এতে আপনার পিঠের গঠন ঠিক থাকবে।
সাঁতার যদি জানেন তাহলে তো সব থেকে ভালো। না জানলেও ক্ষতি নেই।
পিঠের মেকআপ
পার্টিতে বা কোনো অনুষ্ঠানে ব্যাকলেস পরে যাবেন ভাবলে পিঠের যথাযথ মেকআপও প্রয়োজন।
মেকআপ করতে প্রথমেই পিঠে ফাউন্ডেশন লাগান। এরপর হালকা কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিন।
পিঠে যদি দাগছোপের সমস্যা থাকে তাহলে অল্প কনসিলার ব্যবহার করুন। আর শেষে লাগান ব্রনজার।
পিঠের জন্য প্যাক
শুনে অবাক হচ্ছেন? পিঠকে সুন্দর, গ্লোয়িং রাখার জন্য আপনার কিন্তু পিঠের জন্য ভালো একটা প্যাক চাই।
শুষ্ক ত্বকের জন্য
উপকরণ
চামচ গ্লিসারিন, ৪ চামচ পটচউলি এসেনশিয়াল অয়েল, ২ চামচ চিনি, ২ চামচ দুধ।
পদ্ধতি
একটা বাটিতে সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পিঠে ভালো করে ম্যাসাজ করে লাগান।
তারপর ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। একদিন ছাড়া ছাড়া করলে তফাৎ আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য
উপকরণ
২ চামচ সি-সল্ট, ২ চামচ পটচউলি এসেনশিয়াল অয়েল, ২ চামচ মধু।
পদ্ধতি
সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পিঠে ভালো করে লাগান। তারপর ১০-১৫ মিনিট মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ দিন ট্রাই করুন।
সাধারণ ত্বকের জন্য
উপকরণ
২ চামচ মধু, ২ চামচ পটচউলি এসেনশিয়াল অয়েল, ২ চামচ দুধ, ২ চামচ চালের গুঁড়ো।
পদ্ধতি
সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে আপনার পিঠের ওপর ম্যাসাজ করে অ্যাপ্লাই করুন।
১৫-২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। একদিন ছাড়া একদিন করুন, দেখবেন উপকার পাচ্ছেন।
পিঠে অয়েল ম্যাসাজ করুন
এছাড়া পিঠকে সুন্দর রাখার জন্য নিয়ম করে তেল মালিশ করা কিন্তু অত্যন্ত জরুরি।
অলিভ অয়েল বা বাদাম তেল ইত্যাদি যেকোনো তেল নিয়ে পিঠে ভালো করে মালিশ করুন ১৫-২০ মিনিট ধরে।
মালিশ করার ফলে আপনার পিঠে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ফলে পিঠ স্বাভাবিকভাবেই চকচকে, উজ্জ্বল থাকবে।
ডায়েট ঠিক করে করুন
হেলদি ডায়েট কিন্তু আপনার স্কিনকে ভালো রাখার জন্য সব থেকে বেশী দরকার।
তাই তেল-মশলা ছাড়া খাবার খান। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
আর ব্যালান্সড ডায়েট করুন। দেখবেন পিঠ আপনিই চকচক করছে।
তাহলে আর দেরী কীসের? আজ থেকেই লেগে পড়ুন।