ত্বকের রং কতটা উজ্জ্বল, তা নিয়ে এখনও অনেকেই মাথা ঘামান।
তবে অহেতুক ফর্সা হওয়ার পিছনে না দৌড়ে নিজের প্রকৃতিদত্ত ত্বকের যথাযথ যত্ন নিয়ে পরিস্কার করে রাখলে এমনিতেই অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
শ্যামলা ত্বকের যত্নের পদ্ধতি কিন্তু উজ্জ্বল ফর্সা রঙের চেয়ে আলাদা হবে, আপনি সেগুলি ঠিকঠিক মেনে চলছেন তো?
জানেন তো, শ্যামলা ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয় অনেক দেরিতে। আবার ব্রণ বা রোদের প্রভাবজনিত দাগ-ছোপ পড়ে তাড়াতাড়ি।
তাই বলে কিন্তু আর্দ্রতার দিক থেকে কোনও খামতি রাখলে চলবে না, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খান করুন, ত্বক যথাযথভাবে ময়েশ্চরাইজ করুন।
গায়ের রঙের পিছনে না ছুটে, ত্বকের যত্ন নিন
হাতের কাছে গোলাপজল ভরা স্প্রে বটল রাখুন। ত্বক খুব শুকনো লাগলে অল্প জল স্প্রে করে ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
এই ধরনের ত্বকে আর্দ্রতায় ঘাটতি পড়লে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বোঝা যায় – কারণ ত্বকে সাদা সাদা দাগ পড়ে সে ক্ষেত্রে।
হালকা কোনও ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। তবে এক্সফোলিয়েশন নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। খুব বেশি স্ক্রাব করলে রুক্ষতা বাড়বে বৈকি কমবে না।
মাইসেলার ওয়াটারের কোমল স্পর্শে সরিয়ে দিন ত্বকের সব ধুলো-ময়লা। ময়েশ্চরাইজার রিপিট করুন, দরকারে একাধিকবার।
সানস্ক্রিনের পূর্ণ সুরক্ষাও আপনার একান্ত প্রয়োজন। অনেকেই মনে করেন, যাদের ত্বকের রঙ গাঢ়, তাদের সানস্ক্রিনের প্রয়োজন পড়ে না– এটা কিন্তু সর্বৈব ভুল ধারণা।
ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী ঘরোয়া সমাধানের সাহায্য নিতে পারেন। এসেনশিয়াল অয়েল খুব কাজের, দুধের সর বা দইও আপনার ত্বক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক।
যারা কাঁচা হলুদ ব্যবহার করেন, তারা মনে রাখবেন যে শ্যামলা ত্বকে কিন্তু হলুদের ছোপ স্পষ্ট চোখে পড়ে– উলটোদিকে যারা ফর্সা, তাদের উজ্জ্বলতা আরও বেড়ে যায়।
তাই হলুদ এড়িয়ে গেলে ভালো করবেন। এবং লেবুর রস বা টোম্যাটো জ্যুস লাগিয়ে রং ফরসা করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ, তাতে সমস্যা বাড়বে।
তরুণ, মোমপালিশ ত্বকের প্রলোভন এড়ানো মুশকিল! আর সে জন্যই ব্রণহীন, দাগছোপহীন, নিখুঁত ত্বকের জন্য নানারকম চেষ্টা চলতেই থাকে।
কিন্তু অনেক সময় হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও মুখে কিছুতেই ফুটে ওঠে না স্বাস্থ্যের উজ্জ্বলতা। নিষ্প্রাণ ত্বক ঢেকে ফেলতে হয় পুরু মেকআপে।
তাছাড়া দৈনন্দিন স্ট্রেস, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার কারণেও ত্বকের জৌলুস কমে যায়, মুখ বিবর্ণ দেখাতে থাকে।
দেখে নিন কী কী কারণে আপনার মুখের জেল্লা কমে যাচ্ছে আর কীভাবে মুক্তি পাবেন সেই সমস্যা থেকে।
প্রতিদিন ফেসওয়াশ ব্যবহার করা জরুরি
ত্বক পরিস্কার ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির অন্যতম কার্যকরি উপায় হচ্ছে ভালোভাবে মুখমন্ডল ধৌত করা।
তাই বলে আপনাকে দিনে বারবার মুখ ধুতে হবে না। এটি আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।
সকালে-দুপুরে-রাতে নিয়ম করে বার তিনেক মুখ পরিষ্কার করলেই চলবে।
ঠান্ডা পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখ মুছতে নরম তোয়ালে ব্যবহার করবেন।
সাবান ব্যবহার না করে ভালো কোম্পানির ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
অবশ্যই প্রত্যেকের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।
একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ আপনার ত্বকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে ত্বককে পরিষ্কার ও মোলায়েম করে তোলে।
এটি মেকআপ থেকে রয়ে যাওয়া ময়লাও পরিষ্কার করে রোমকূপের মুখ বন্ধ না হতে দিয়ে।
যা আপনার ত্বককে রোমকূপের গোড়া থেকে পরিষ্কার করে ত্বকের সজীবতা ফিরিয়ে আনে।
নিয়মিত ফেসসওয়াশ ব্যবহারে আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতাকে ফিরিয়ে আনে।
মুখমন্ডল নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করুন
ত্বক স্বাভাবিকভাবেই প্রতি ৩০ দিন বা তার কাছাকাছি সময় পরে নতুন কোষের জন্য জায়গা তৈরি করতে মৃত ত্বকের কোষগুলি ছড়িয়ে দেয়।
কখনও কখনও, মৃত কোষগুলি পুরোপুরি শেড করে না। এর ফলে শুকনো, ফ্লেচিযুক্ত প্যাচ এবং আটকে থাকা ছিদ্র হতে পারে।
এক্সফোলাইটিং এটি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।
এক্সফোলিয়েটিং হলো রাসায়নিক বা দানাদার পদার্থ ব্যবহার করে ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে ত্বকের মৃত কোষগুলি অপসারণের প্রক্রিয়া।
বাড়তি ময়লা, তেল আর অশুদ্ধি দূর করার সেরা উপায় হল ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা।
ত্বকে বাড়তি মৃত কোষ থাকলে এক্সফোলিয়েশন সেটিকেও নির্মূল করে আর আপনাকে দেয় কাচের মতো পরিচ্ছন্ন আর স্বচ্ছ ত্বক।
সময়ের অভাবেই হোক বা আলস্যবশত, নিয়মিত মুখ এক্সফোলিয়েট করে উঠতে পারেন না এমন মেয়ের সংখ্যা নেহাত কম নয়!
অথচ ত্বক ঝলমলে উজ্জ্বল দেখাতে এক্সফোলিয়েশনের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না কোনওমতেই!
নিয়মিত স্ক্রাব না করলে মৃত কোষ ত্বকের উপরে জমে যায়, মুখ অনুজ্জ্বল দেখায়।
মুখে মৃত কোষ জমে যাওয়া আটকাতে সপ্তাহে দু’বার মুখ এক্সফোলিয়েট করুন।
যাদের ত্বক সেনসিটিভ, তারা ত্বকচর্চার রুটিনে অ্যালো ভেরা জেল, গ্রিন টি-র মতো উপাদান রাখুন। তাতে মুখের প্রদাহ কমবে।
নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করলে ত্বকের ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হবে।
ক্লান্ত ত্বককে বিশ্রাম দিন
বাড়িতে বা কর্মস্থলে প্রচুর মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হলে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া দরকার। ক্লান্তির কারণে ত্বক মলিন দেখায়।
মানসিক চাপ দূর তো করতেই হবে। তার জন্য নিয়মিত মেডিটেশন করতে পারেন।
তাছাড়া ভালো ময়শ্চারাইজার দিয়ে মুখ মাসাজ করুন। তাতে রক্ত সংবহন বেড়ে ত্বক উজ্জ্বল আর ভরন্ত দেখাবে।
ত্বক সর্বদা আর্দ্র রাখুন
শুধু ময়শ্চারাইজার মাখলেই আর্দ্রতার অভাব মিটবে না, ভিতর থেকেও আর্দ্রতার জোগান দিতে হবে।
আর্দ্রতার অভাবে ত্বক বিবর্ণ হয়ে যায়, চামড়া ঝুলে পড়তে শুরু করে। ফলে বলিরেখার আনাগোনা দেখা দেয়।
প্রচুর পরিমাণে পানি, তরল আর রসালো ফল খান।
হ্যালিউরনিক অ্যাসিডযুক্ত ফেস সিরাম ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ভিটামিনের অভাব পূরণ করুন
আমরা যে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে প্রতিদিন কাটাই, তার প্রভাব ত্বকে পড়তে বাধ্য। খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম, ঘুমের অভাব সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
ভিটামিনের অভাব, অপুষ্টির কারণেও ত্বক মলিন দেখাতে পারে।
সুষম খাবার খান। কপার, জিঙ্ক, আয়রনযুক্ত খাবার খান। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন।
নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
কাজের চাপে প্রতিদিন ভরদুপুরে বেরোতে হয়? সূর্যের রোদ আপনার ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে দিচ্ছে।
সানস্পট, হাইপারপিগমেন্টেশনও তৈরি হয় রোদের কারণেই।
রোদে বের হলে ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন মাখতেই হবে। রাতের ক্রিমে যেন রেটিনল অবশ্যই থাকে।
রেটিনল যুক্ত ক্রিম বা লোশন আপনার ত্বকের কোলাজেন সুরক্ষিত রাখবে।
অবশ্যই এস পি এফ এর মাত্রা দেখে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এস পি এফ ছাড়া সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে কোনও লাভ হবে না।
‘এস পি এফ’-এর অর্থ ‘স্পেসিফিক প্রোটেকশন ফ্যাক্টর’।
যে কোনও সানস্ক্রিন আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে, ‘এস পি এফ’ দিয়ে আদতে সেটাই মাপা হয়।
এস পি এফ-৩০ গুণমানে এস পি এফ-৫০ থেকে এই অর্থে আলাদা যে এক্ষেত্রে সুরক্ষা দেওয়ার মাত্রা বাড়ছে।
এস পি এফ-৩০ যতটা সুরক্ষা দেবে, এস পি এফ-৫০ এর ক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবে তার চেয়ে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
চেষ্টা করুন নূন্যতম এস পি এফ-৩০ থেকে ৫০ ব্যবহার করার। এতে করে কড়া রোদে পুড়ে ত্বক কালো হয়ে যাবে না। ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় থাকবে।
নজর দিন খাদ্যতালিকার দিকে
কার্বোহাইড্রেট, এসেনশিয়াল ফ্যাট, প্রোটিন এবং সবুজ শাকসবজি থাকে তো আপনার প্রতিদিনের খাবারে?
ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপকারি হচ্ছে নানা রঙের ফল আর সবজি। লাল, হলুদ, গোলাপি, সবুজ, কমলা – সব রঙই আলো করে থাকে বাজার।
তার বেশ খানিকটা নিজের রান্নাঘরেও বয়ে আনুন। এমন ফল খান যার মধ্যে ভিটামিন সি আর ই আছে।
কমলালেবু, বাতাবি, পিচ, কিউয়ি, স্ট্রবেরি, পেঁপে, পেয়ারা, কলার মতো ফল যাঁরা নিয়মিত খান, তাঁদের ত্বকে বয়স চট করে ছাপ ফেলতে পারে না।
সুবিধা হচ্ছে সামান্য দই বা দুধের সরের সঙ্গে যে কোনও ফল মিশিয়ে দুর্দান্ত ফেস প্যাকও বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনি।
পালং, মেথির মতো শাক বা ধনেপাতাও রাখুন রোজের খাদ্যতালিকায়। সেই সঙ্গে খান কাঁচা হলুদ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ – সবগুলিই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাবারে ব্যবহার করলে শরীর ও ত্বক ভালো থাকবে।
প্রোটিনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিন বিভিন্নরকম বাদাম, সিডসের উপর। ডিম, মাছ, মাংসও চলবে।
চলতে পারে নানা দুধজাতীয় প্রডাক্ট ও ডাল। তবে প্রোটিন থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়, আপনার তেমন কোনও সমস্যা আছে কিনা খতিয়ে দেখে নেবেন।
কথায় বলে মর্নিং শোজ দ্য ডে! কাজেই সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি কী কী করছেন, তার উপরেই অনেকটা নির্ভর করে আপনার ত্বকের হালহকিকত!
সত্যি বলতে সুস্থ উজ্জ্বল ত্বক পেতে বিশেষ কিছু করার দরকার নেই! শুধু প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের ত্বকের যত্ন নিন, তাহলেই ত্বকের সৌন্দর্য অটুট থাকবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
আপনার ব্যায়ামের অভ্যেস থাকলে ভালো, না থাকলেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই! মোটেই ট্র্যাকস্যুট পরে মাঠে নামতে হবে না!
সাধারণ কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন, বাগানে বা বাড়ির ছাদে মিনিট দশেক জোরকদমে হাঁটলেও চলবে।
সকালে ব্যায়াম করলে আপনার শরীর সারাদিন চাঙ্গা থাকে, তা ছাড়া ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়।
এই পরামর্শগুলো মেনে চললে, স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে বৈকি।