আপনার কি খুব চুল পড়ছে? চুলে খুশকি দেখা দিচ্ছে? চুল ড্যামেজ?
এই সমস্যা গুলোর সমাধান করার পাশাপাশি চুনে এনে দিবে নতুন প্রাণ ও করবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এমন তেল হচ্ছে ক্যাস্টর অয়েল।
ক্যাস্টর ওয়েল শুষ্ক চুল কে ময়েশ্চারাইজড করে ভুল ভেঙে যাওয়া সমাধান করে।
আমাদের মাথার ত্বকের বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করতেও সাহায্য করে এই ক্যাস্টর অয়েল।
এটি চুলের কোন সাইড ইফেক্ট ছাড়াই খুব ভালো কাজ করে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে।
এটি আমাদের চুল ও মাথার ত্বকের নানান সমস্যা দূর করতে খুব ভালো কাজ করে।
কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার না জানার কারণে এই তেলের সুফল সবাই পায় না।
ক্যাস্টর অয়েল কিভাবে কাজ করে?
এই উদ্ভিজ্জ তেলটি শীতল চাপযুক্ত এবং ক্যাস্টর বিনগুলি থেকে নেওয়া হয়।
এটি একটি ফ্যাকাশে হলুদ, সান্দ্র এবং অ-উদ্বায়ী তেল যা যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আমাদের দ্বারা।
এটি চুলের বৃদ্ধি এবং মাথার ত্বকের চিকিৎসার জন্য একটি খুব কার্যকরী উপাদান।
ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত ক্যাস্টর অয়েল আমাদের মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে, চুলে খাদ্য পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।
এবং এটি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধির জন্য কেনো ক্যাস্টর অয়েল বাছাই করবেন?
- ক্যাস্টর ওয়েল যখন অন্যান্য কেরিয়ার ওয়েল যেমন আমান্ড ওয়েল, সূর্যমুখীর তেল, নারকেল তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি তেলের সাথে মিলিত হয়, তখন ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির উপস্থিতিগুলির কারণে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং চুলের শিকড়কে গোড়া থেকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।
- ক্যাস্টর অয়েল অন্যতম প্রধান উপাদান রিকিনোলিক অ্যাসিডে (Ricinoleic Acid) রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সুতরাং, এটি মাথার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করতে পারে। এতে করে মাথার ত্বকে জ্বালা পোড়া কমে মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং ক্যাস্টর অয়েলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য চুল ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। এটি ড্যামেজ চুলকে রিপেয়ার করে চুল সুন্দর ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
- ক্যাস্টর ওয়েল এর বিশেষ উপাদান মাথার ত্বকের নানা ধরণের ইনফেকশন দূর করতেও সাহায্য করে।
- অন্যান্য ক্যারিয়ারের তেলের তুলনায় ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি যেমন কার্বনিক অ্যাসিড (99%), ওমেগা -6 ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো। এতে থাকা ওমেগা -6 ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের চর্মরোগ পেপিলা কোষগুলির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডার্মাল-এপিডার্মাল প্রতিক্রিয়া প্রচার করে এমন কোষ বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
- ক্যাস্টর ওয়েল যেকোনো কেরিয়ার ওয়েল এর সাথে মিক্স করে ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে সাইনি লুক দেয়।
- বিভিন্ন কেরিয়ার ওয়েল এর সাথে মিক্স করে এটি ব্যবহার করলে আগা ফাটা রোধ করে চুলকে সুন্দর করে তোলে।
চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল কিভাবে ব্যবহার করবেন?
চুলের বৃদ্ধির জন্য ক্যাস্টর অয়েল বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
একটি বাটিতে নিয়ে সেটা অল্প অল্প পরিমাণ হাতের তালুতে নিয়ে দুই হাত ঘষবেন তারপর মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করবেন আলতো করে।
তারপর ২/৩ ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
আপনি চাইলেয় সারা রাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে পারেন।
চুলের রোধ করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে উন্নীত করতে ক্যাস্টর অয়েলের কার্যকর প্রয়োগের জন্য কিছু নিয়ম দেয়া হলো।
চুল পড়া রোধে
যা যা প্রয়োজন
- ১/২ কাপ ক্যাস্টর ওয়েল
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- হাতের তালুতে অল্প পরিমাণে করে নিয়ে সেটা মাথার ত্বকের গোড়া থেকে শুরু করে নিয়ে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এটি খুব ভাড়ি হওয়াতে খুব বেশি তেলের প্রয়োজন পরে না। যেহেতু ভাড়ি তাই এটা ধুয়ে ফেলাও একটু কষ্ট সাধ্য।
- পুরো চুলে এপ্লাই করে এটি কমপক্ষে ২০/৩০ মিনিট রাখতে হবে। চাইলে এটা সারা রাত ও রেখে দেয়া যাবে।
- নির্দিষ্ট সময় পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার দিয়ে চুল কন্ডিশনিং করে ফেলতে হবে।
- চুল ধোয়ার পর এটি ব্লো ড্রায়ার দিয়ে না শুকিয়ে সূর্যের আলোতে বা ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে চুল পড়া রোধ হবে।
নতুন চুল গজাতে, চুল শক্ত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে
যা যা প্রয়োজন
- খাটি নারকেল তেল ২ টেবিল চামচ
- বাদাম তেল ২ টেবিল চামচ
- তিলের তেল ২ টেবিল চামচ
- ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- এই সবগুলো তেল একসাথে মিক্স করুন এবং মিশ্রণটি আপনার মাথার ত্বকে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন। আপনি আরো ভালো রেজাল্টের জন্য তেলের মিশ্রণ সামান্য গরম করতে পারেন।
- মিশ্রণটি প্রায় ৬০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। আপনি এটি সারা রাত ও রেখে দিতে পারেন।
- তারপর চুল শ্যাম্পু করে তেলের মিশ্রণটি ধুয়ে ফেলুন ভালোভাবে।
হেয়ার মাস্ক হিসেবে
যা যা প্রয়োজন
- ১-২ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল
- ১-২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- ৫/৬ টি জবা ফুলের পাতা
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- একটি ছোট পেয়ালা বা কাপের মধ্যে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল আর ক্যাস্টর অয়েল মিক্স করুন।
- তেলের মিশ্রণটিতে ৫/৬ টি পাতা দিয়ে ভালো ভাবে চুলায় মিডিয়াম তাপে সিদ্ধ করুন। ৩০ সেকেন্ড পর নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন।
- তেলটি ঠান্ডা হয়ে এলে চুলের আগা সহ পুরো মাথায় আলতো ভাবে ম্যাসাজ করুন ১০/১৫ মিনিটের জন্য।
- একটি তোয়ালের মধ্যে গরম পানির ভাপ দিন। সেটা ভাপ দেয়া হলে হালকা গরম করে মাথায় পেচিয়ে রাখুন এক ঘন্টার জন্য। এতে খুব ভালো ময়েশ্চারাইজড হবে।
- এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করুন।