প্রকৃতি তার আপন মনে বদলায় তার রূপ।
ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে সেই রূপের তারতম্যে পালা করে চলে আসে নানা ঋতু।
ছয় ঋতুর এই দেশ, প্রতিবারই ঘটা করে বিদায় জানায় বাংলা বর্ষের শেষ ঋতুকে।
এক নতুন সূর্যোদয়ের বিশাল আয়োজনে অধিরভাবে অপেক্ষা করতে থাকে বছরের প্রথম দিন, ১লা বৈশাখের।
এদিনটা ঘটা করে উদযাপনের প্রচলন খুব বেশি আগের থেকে শুরু না হলেও, গত ২০ বছরে ১লা বৈশাখ যেন বাঙালির ঘরের আরেক অঘোষিত ঈদ।
নতুন জামা কাপড় কেনা থেকে শুরু করে, করপোরেট, মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো নানা আয়োজন , নানা রঙে রাঙিয়ে দেয় সমগ্র বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের এই উৎসব এখন এতটাই জনপ্রিয় যে, প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসে শুধুমাত্র এই বৈশাখ-বরণ অনুষ্ঠান দেখতে।
বাঙালি রমণীদের মায়াবী সাজ যেন ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত বাংলাদেশে।
ফ্ল্যাশের আলোয় আর ক্যামেরার শাটারের শব্দেই যেন মুখোরিত হয়, ১লা বৈশাখে সমস্ত রেস্তোরা আর মেলার মাঠ!
ছায়ানট, বুলবুল ললিতকলা, গানের আসর, বাফা সহ দেশের বিখ্যাত সব শিল্পী গোষ্ঠীর সংগঠনগুলো নানা জল্পনা কল্পনায় প্রস্তুত হন প্রায় সারাটা বছর ধরে ।
তরুণ তরুণীর আউটিং প্ল্যান থেকে শুরু করে, ঘরে মাকিংবা নতুন বউ এর একটু আলাদা বাঙালিয়ানা খাবারের পরিকল্পনা, পরিবারের বয়োজেষ্ঠ্য মানুষটার জন্যও একটা নতুন পাঞ্জাবী কেনা সবই বৈশাখের আগের রাতের মধ্যেই করা চাই।
অতঃপর নতুন বছরের সূর্যকে স্বাগতম জানানো।
শরীরে না কুলালে, সশরীরে না গেলেও টিভিতে সেই ভোরবেলা থেকে ছায়ানটের লাইভ অনুষ্ঠান দেখা- এদেশের প্রতিটা সংস্কৃত-মনা পরিবারের খুব কমন দৃশ্য।
এ যেন বাঙালির জন্য আরেক ঈদ, যখন একদিনের জন্যও হলেও গভীর শ্রাদ্ধার সাথে স্মরণ করে তার হাজার বছরের সংস্কৃতিকে, তার শিকড়কে।
এক ব্যতিক্রমী বৈশাখ
পবিত্র রমজান মাস এসে পড়েছে ঠিক এই নতুন বছরের সূচনা লগ্নেই।
ধর্মভীরু বাঙালিরা তাই পবিত্র রমজানকেও স্বাগত জানাবে এবারের বৈশাখের প্রথম দিনের সাথে এক পবিত্র মনোভাবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
দীর্ঘ এক বছরের করোনা আতংকে ক্লান্ত মনটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে, জীবনের সবচেয়ে আপনজনদের সাথে এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে।
কেমন হতে পারে সেই ব্যতিক্রমী বৈশাখ?
তাকে ঘিরেই আজকে গ্ল্যামোজেনের বিশেষ বৈশাখী আয়োজন।
রমজানের বৈশাখ
বৈশাখের সূচনা হিসেবে বলা হয়ে থাকে, মুঘল আমলের সম্রাট আকবরের কর শোধের দিনকে কেন্দ্র করেই প্রথম পালিত হয়।
তবে ইতিহাসটাকে একটু গভীরভাবে নাড়াচাড়া দিলে বোঝা যায়, কৃষিপ্রধান এদেশের মানুষ শস্যের অবস্থাকে কেন্দ্র করে, তার আগেও নানা অঞ্চল ভেদে এই উৎসব পালন করতো।
সম্রাট আকবরের সময় থেকে অফিসিয়ালি হালখাতায় পুরাতন বছরের হিসাবকে শোধ করতো বাঙালিরা।
১লা বৈশাখে তারা নতুনভাবে আবার শুরু করতো নতুন হিসেবে লেনদেন।
সময়ের সাথেসাথে তা পারিবারিকভাবে আরও কাছাকাছি আনতে থাকে মানুষকে।
আর এই আধুনিক যুগে এসে, পরিবারের চাইতে বন্ধুবান্ধব কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে এই উৎসব।
তবে এবার করোনায় যেহেতু নিজের এবং আপনজনের জীবনের নিরাপত্তার খাতিরেই বৈশাখ ঘরে বসেই করতে হবে।
কেননা আমরা ফিরে যাই সেই পুরাতন নিয়মে, যেখানে পরিবারকে ঘিরেই বাঙালিরা আয়োজন করতো এই বৈশাখী উৎসবের?
তার উপর পবিত্র রমজান মাসটাও চলে আসছে, যে মাসের মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়।
বরং একসাথে নামাজ পড়া, সাহরি এবং ইফতারি করার মাধ্যমে, রমজানও আমাদের উৎসাহিত করে আপনজনের কাছে আসতে।
একসাথে গল্প করা, খাওয়া, সাহায্য করার মাধ্যমেই মজবুত হয় মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বতা।
যেহেতু করোনায় বাইরে যাওয়া আর হচ্ছে না এবার, লক ডাউনে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে আল্লাহর বিধান অনুযায়ীই আমরা ঘরে থাকবো।
তারাবীর নামাজ কিংবা ঈদের নামাজ একসাথে পড়া, ইফতারি বন্টন এবারের জন্য বন্ধ আমাদের।
কিন্তু এই রমজানটাকেও নিজ পরিবারের সাথে মিলে অত্যন্ত সুন্দর করেই পালন করতে পারি আমরা ১লা বৈশাখের আমেজে।
বৈশাখে এবারের খাওয়া
অন্যান্যবার বৈশাখ মানেই কি ছিল?
মাঠে মাঠে নানা মেলায় নানা খাবার, নাস্তা, শরবতের সমাহার।
দুপুরে কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা কারো বাসাতেই বাঙালি রান্নার পসরা নিয়ে আয়োজন।
করপোরেট সংস্থাগুলোও এই সুযোগে প্রমোট করে দিত পান্তা আর ইলিশের ট্রেন্ড।
যদিও এই পান্তা-ইলিশের ট্রেন্ডের কালচারাল ভ্যালু কিন্তু মোটেও ম্যান্ডেটরি নয়।
তা নিয়ে পরেই না হয় গল্প হবে।
কিন্তু এবার করোনার মধ্যে বৈশাখের খাবারের আয়োজন কেমন হতে পারে?
যেহেতু সময়টা রমজানের, ৮৫% মুসলিমের দেশে তাই বৈশাখের খাবার দাবারও তাই শুরু হবে পবিত্র ইফতারির মাধ্যমে।
এই ইফতারিটাই করতে পারি এক ভিন্ন ধারায়।
টিপিক্যাল ভাজা পোড়ার বদলে, বাঙালি খাবারেই খুলতে পারি এই বিশেষ দিনের রোজা।
শুরুতে যা থাকতে পারে আয়োজনে
পানীয়
আমরা সাধারণত ইফতারটা শুরু করি পবিত্র মাগরিবের আজান শুনবার সাথে সাথে খেজুর আর রুহ আফজা/ ট্যাং/ লেবুর শরবত দ্বারা।
বৈশাখের প্রথম দিনে সেই পানীয় টাই হয়ে যাক না অন্যরকম!
কাঁচা আম বাজারে পাওয়াই যাবে এখন।
কেননা খেজুরের সাথে সেই কাঁচা আমটার জুস দিয়েই হোক আমাদের ইফতারের সূচনা!
আর কাঁচা আম না পেলে, লেবু, ঝাল,পুদিনা পাতা, বীট লবণ, চিনির সাথে বরফ শীতল ঠান্ডা পানি দিয়ে সহজেই তৈরি করতে পারেন এক অন্যরকম স্বাদের শরবত।
এবারের রোজাটা শেষ করবে পরিবারের মানুষ এক বাঙালিয়ানা পানীয়ের সাথে!
এবং খাবার
১লা বৈশাখের ইফতারিটায় অন্তত আমরা না রাখতে পারি সেই ট্রাডিশন্যাল ভাজাপোড়া।
বরং সাধারণ বৈশাখের দুপুরের সেই নানা মজাদার ভর্তা-ভাজি আর মাছ-মাংসের সমাহার, সাথে চিকন-চালের ভাত দিয়ে করতে পারি ইফতারির মূল খাবারের মেন্যু।
এত আয়োজন, খেতে তো দেরী হবেই।
কিন্তু মিস করা যাবে না নামাজের ওয়াক্ত।
তাই শরবত আর খেজুরটা খেয়েই নামাজটা শেষ করে ফেলুন একসাথে জামাত করে।
এরপর সবাই মিলে একটা কমন স্পেসের মেঝেতে কিংবা টেবিলেই বসুন।
সৃষ্টীকর্তা মনে মনে কৃতজ্ঞতা আর আগামীদিনের এক নিরাপদ সময়ের কামনায় একসাথে খান এই বিশেষ বাঙালিয়ানার ইফতারি।
করোনায় সকর্তকা আবশ্যক
রমজানের সাথে সাথে যেহেতু এই বৈশাখটা করোনার মতো মহামারীর সময়েই হচ্ছে, মানতে হবে বাড়তি কিছু সতর্কতা।
নিজের জন্য না হোক, পরিবারের আপনজনদের জন্যই করতে হবে সেসব অনুসরণ।
দরকার হলে না হোক এবার নতুন জামা কেনা কাটা।
গত এক বছরের লক ডাউনে এমনিতেই ধ্বস নেমেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের অর্থনীতিতে।
তাই এবার জামা কাপড় কেনার টাকায় ,না হয় খুশি কিনে দেই সেই অভাবীদের পরিবারে।
অনেকে আছেন, অভাবে থাকলেও বলতে পারেন না সম্মানের ভয়ে।
নিজের বুঝেই বৈশাখের বাজারটা তার দরজার সামনে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
এতে করে শুধু বৈশাখ না, মহান আল্লাহর রহমতে ভাগাভাগি হয়ে যাবে আমাদের খুশি আমাদের প্রতিবেশি-স্বজনদের মাঝেও।
সফল হবে রমজানের উদ্দেশ্যও।
তবে সেই বাজার ঘাটও যে নিজের করতে হবে।
মোটেও না।
ঘরে বসে অনলাইন গ্রোসারিজ শপের অর্ডার করেন ফেলুন।
নিজের সাথে সাথে যাদের বাসায় বাজার পাঠাতে চান, তাদের এড্রেস দিয়ে দিন।
পে করে দিন অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
অনলাইন গ্রোসারিজ শপিং এর জন্য আজকাল নানা অনলাইন সাইট তো রয়েছেই বাংলাদেশে।
গুগল করলেই পাবেন।
বেশি না, মাত্র ১০০০ টাকাতেও সুন্দর কিছু দিন কাটতে পারে আপনার অভাবি পরিচিতের পরিবারের।
হবে না কোন ইলিশের বাজারে ভিড়!
জ্বী হ্যা।
করোনার ভাইরাসের মোট ৬০০ ধরণের মিউটেশন ছড়িয়ে আছে গোটা বাংলাদেশে।
করোনার ভ্যাকসিন কাজ করছে, মাত্র ২-৩ টা প্রজাতির বিরুদ্ধে।
বাকি প্রজাতির ভাইরাসের এটাকে কিন্তু আপনি আক্রান্ত হবেনই।
বয়সে তরুণ হলে, আপনাকে কাবু করতে না পারলেও, আপনার মাধ্যমে আপনার বয়স্ক বাবা মা, দাদা দাদী মৃত্যুর মুখোমুখী হতে পারে। তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন শুধুমাত্র আপনি!
তাই এই দায়ভার থেকে মুক্তি পেতেই নিজেরা বাইরে যাবেন না।
বৈশাখের বিখ্যাত ট্রাডিশনাল ইলিশ মাছ কেনা কোন দরকার নাই অবাস্তব দামে, করোনার এই অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে।
এতে করে দুইটা ব্যাপারে বাঁচবেন।
লোকে দেখানো অযথা খরচ থেকে এবং ভীড়ের মধ্যে হওয়া করোনার কোভিড ১৯ এর সংক্রমণ থেকে।
মনটা কেমন কেমন করছে, কথাটা শুনে?
তাহলে আপনার মনটাকে শান্ত করতে জানিয়ে দিচ্ছি এসব ইলিশ পান্তার পিছনের আসল সত্য।
ইতিহাস
আজ থেকে ৫০ বছর আগেও ইলিশ মাছ এত্ত বেশি পাওয়া যেত যে, নানা সরকারী হোস্টেলগুলোতে প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে থাকতো এই ইলিশ।
মানে ইলিশ এভেইলেবল ছিল বর্তমানে পাঙ্গাস বা তেলাপিয়ার চাইতেও বেশি।
অন্যান্য মাছের তুলনায় দাম কম বলে গরীব বাঙালি পরিবার এই মাছ সস্তায় কিনে খেত নিয়মিত।
আর পান্তা?
ফ্রিজ থাকত না বলে, আগের রাতের ভাতে পানি দিয়ে রেখে দিত, সকাল খাওয়ার জন্য।
বর্তমানে ভৌগোলিক পরিবর্তন এবং দূষণের কারণে ইলিশ মাছ আগের মতো পাওয়া যায় না।
পান্তা এখনও কিছু ঘরে গ্রামে খাওয়া হলেও সেটার প্রচলন আগের মতো নেই।
কিন্তু সর্বনাশটা করেছে কর্পোরেট সংস্থাগুলো।
হঠাৎ করে তারা ট্রাডিশনের নামে অফিসে, মেলায় শুরু করলো অত্যন্ত চড়া দামে এই পান্তা ইলিশের প্যাকেজ বিক্রি।
সেই সুযোগে মাছের বাজারের অসৎ ব্যবসায়ীরাও এক হাতের সমান ইলিশের দাম হাঁকালো ১৬ হাজার টাকা।
বাঙালিও বোকা।
নিজের ইমেইজকে প্রতিবেশী আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঁচাতেই কিনতে থাকলো কুরবানির ইদের গরু কেনার মতো ম্যান্ডেটরি বানিয়ে সব ইলিশ।
ভাবা যায়, গরীবের সেই সস্তা, বাসি খাবারকে কতটা সামর্থ্যের বাইরে নিয়ে গেছে এই করপোরেট সংস্থাগুলো?
আর সেই অস্বাভাবিক দামে, এসব সাধারণ খাবার না কিনে, করোনার মধ্যে ঘরে থাকলে কি খুব নাকটা কাটা যাবে আমাদের বাঙালিদের?
চলো পালটে ফেলি এ বৈশাখ
বরং বৈশাখের সারাদিন ঘরের মধ্যে কি করা যাবে, তার প্ল্যান করুন, পরিবারের মানুষদের নিয়ে।
মোবাইলের যুগে, বন্ধুবান্ধরের আড্ডা আর ট্যুরের ব্যস্ততায় এমনিতেও খুব কম সময় দেয়া হয় পরিবারের বাবা মাকে, ভাই বোনদের।
সকাল থেকেই সবাই গল্প করুন।
পবিত্র রমজানে জামাত করে, পরিবারের ছেলে মেয়ে একসাথে অন্তত আজকের দিনে পড়ুন যোহর আর আসরের নামাজ।
পরিবারের ছেলেরাও গল্প করতে করতে সাহায্য করুন মায়েদের, বোনকে, সংসারে আসা নতুন বউটাকে।
ফোনে বা ভিডিও কলে উইশ করুন বউ এর পরিবার এবং বাকি আত্মীয় স্বজনকে, হাসি ঠাট্টায় কাটিয়ে দিন সারাটা দিন।
আজ আর মেলার মাঠ নয়, বরং রান্না ঘরটাই হয়ে উঠুক বৈশাখের উৎসবের কেন্দ্র।
হয়েই যাক না, পরিবারের ছেলে মেয়েদের মধ্যে রান্নার একটা অন্যরকম প্রতিযোগিতা!
কিলিয়ে ভর্তাগুলোকে আরও মিহি করে অতুলনীয় স্বাদে মুগ্ধ করুন ছেলেরা, পরিবারের সবাইকে ইফতারে।
বড় বড় মাছ মাংসের ডিশগুলো নাড়িয়ে সাহায্য করুন মা-বউকে।
এতে করে প্রচন্ড গরমে রোজার মধ্যে ঘরের মেয়েরা একটু স্বস্তি পাবে।
তার সাথে সাথে কাছে চলে আসবে পরিবারের সব সদস্যের মন।
জমে উঠবে বন্ধনগুলো আরও গভীর মায়ায়-ভালোবাসায়।
আর তাতেই তো প্রকৃতপক্ষে সার্থক হবে বৈশাখ এবং রমজানের আসল উদ্দেশ্য!
এবং ওদের জন্য
আমাদের সমাজে, আমাদের আশেপাশে বাস করে নানা অবলা জীব-জন্তু।
কুকুর ,বিড়াল নানা জাতের পাখ পাখালি সহ অনেক বোবা প্রাণী।
প্রচন্ড গরমের সাথে সাথে এবার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য লক ডাউনে বন্ধ হওয়া হোটেল।
এই হোটেলের উচ্ছিষ্ট খেয়েই তারা জীবণটা চালাতো।
হোটেল বন্ধ থাকায় তারা আজ হাড্ডিসার।
এই রমজানের ১লা বৈশাখটা সাজাতে পারেন ওদের জন্যও।
অবলা জীবকে সাহায্য করা, খাওয়ানোর যে সওয়াব এবং সম্মান মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছে, আমরা কম বেশি সবাই জানি।
পরিবারের ছোটদের নিয়ে রেঁধে ফেলুন সকালে চামড়া-পাখনা, হলুদ লবণ দিয়ে এক বালতি খিচুরি।
মাস্ক- গ্লাভস পরে, নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে, পরিবারের ছোটদের নিয়ে বের হয়ে পড়ুন আপনার এলাকার অবলাদের খাওয়াতে।
ভয়ের কিছু নেই, আদর মমতা সবাই জানে।
কামড়াবে না। বড়জোর আনন্দে ডাকাডাকি করবে আশেপাশের প্রাণীদের খাবার পেয়ে।
পুরাতন পেপার বিছিয়ে আপনি কিংবা বাচ্চাদের দিয়ে ঢেলে দিন ৭-৮ চামচ করে সেই খিচুড়ি প্রতি অবলা পশুকে।
পবিত্র রহমতের মাসে, বাংলা বছরের ১ম দিনে আপনি আপনা পরিবারের ছোট সদস্যের জীবে-দয়ার যে হাতে কলমে শিক্ষাটা দিবেন, তার তুলনা একমাত্র আল্লাহর দরবারে আপনার জন্য করা ফেরেশতাদের প্রশংসার সাথেই করা সম্ভব হবে!
সেই সাথে নতুন বছরের প্রথম দিনে আপনার সন্তানেরাও শিখে যাবে এক নতুন মানবতার ব্যবহার।
ভেবে দেখেছেন, পরিবারের আপনজন, আশেপাশের অবলাদের নিয়ে কি চমৎকার ভাবেই না উদযাপিত হবে আপনার এবারের বৈশাখ!
শেষ কিছু কথা
প্রত্যেক বৈশাখের শুরুতেই খুব পরিচিত একটা গান দিয়ে আমরা নতুন বছরকে অনেক সমৃদ্ধপূর্ণ এবং বিশুদ্ধভাবে পেতে চাই।
এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
এবারও আমরা পেতে চাইবো এক নতুন, রোগ শোক মুক্ত বিশুদ্ধ বছর।
রমজানের পবিত্রতায় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন করব, ফিরতি বছরেও যেন প্রিয় মুখগুলোকে পাশে দেখতে পাই।
প্রকৃতি্র কাজই হল, নানা ঘটনা তৈরি করে, আমাদের আবারও মনে করায় দেয়া- আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি কি মূল্যবান?
সবচেয়ে কারা মূল্যবান।
এই করোনাও আমাদের সেটাই মনে করায় দিচ্ছে।
বৃদ্ধ বাবার জ্বর কিংবা মায়ের শ্বাসকষ্টে আবার আমরা বুঝতে পারছি আপনজনের কাছে থাকার মর্ম!
তাদের জন্যই সব ছেড়ে ছুড়ে আবার নতুন করে গড়ছি নিজেদের অভ্যাস।
তার সাথে বন্দী থেকে বুঝছি, প্রকৃতির সাথেও কত অন্যায় করেছি তার বাকি প্রাণীদের নানা জায়গায় বিনোদনের নামে বন্দী রেখে, অভুক্ত রেখে!
সেই শিক্ষাতেই আমরা নতুন করে গড়বো নিজেদের।
গত বছরের সকল ভুল , বাজে অভ্যাসগুলো আবর্জনার মতো ধুয়ে মুছে, আপনজনের হাত ধরে মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করবো, এক রহমত নতুন বছরের।
সবাই সুস্থ থাকুক, সচেতন থাকুক।
এই বৈশাখী প্রেরণায় শেষ করছি গ্ল্যামোজেনের আজকের আড্ডা।