খেজুরের উপকারী ও অপকারী–দুরকম দিকই রয়েছে।
মিষ্টির প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে অনন্য এক খাবার খেজুর।
বাজারে বিভিন্ন জাতের খেজুর মেলে।
আর শুধু খেজুর যেমন টপাটপ খেতে পারবেন, তেমনি সালাদ, শরবত, ওটমিল ইত্যাদি বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
তবে অতিরিক্ত খেলে বিপত্তিও আছে।
পাকা খেজুরে প্রায় ৮০% চিনিজাতীয় উপাদান রয়েছে।
বাদ-বাকি অংশে খনিজসমৃদ্ধ বোরন, কোবাল্ট, ফ্লুরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান রয়েছে।
খেজুরে স্বল্প পরিমাণে পানি থাকে যা শুকানো অবস্থায় তেমন প্রভাব ফেলে না।
কিন্তু এ প্রক্রিয়ার ফলে সঞ্চিত ভিটামিন ‘সি’ খাদ্য উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
জেনে নিন খেজুরের কিছু উপকারীতা।
শক্তি বর্ধনে
খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধক।
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিসহ হজম শক্তি, যৌনশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে।
খেজুর ও খেজুরের ফুল পরাগরেণু ডিএনএ’র গুণগতমান বৃদ্ধি করে এবং অণ্ডকোষের শক্তি বাড়ায়।
হার্টের সমস্যায়
এক্ষেত্রে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরো রাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে।
দেহের দুর্বলতায়
খুব দুর্বল লাগলে ঝটপট কয়েকটি খেজুর খেয়ে নিলে তাত্ক্ষণিক দেহে শক্তি পাবেন।
হজম ও রুচি বাড়ায়
রুচি বাড়াতে খেজুরের কোনো তুলনাই হয় না।
শিশুদের যারা ঠিকমতো খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসে।
খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে।
ক্যান্সার থেকে রক্ষায়
খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশেষ করে খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে
নিয়মিত খেজুর খেয়ে খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলে।
তুলনামূলক শক্ত খেজুরকে পানিতে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
রক্তশূন্যতায়
খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে রক্তশূন্যতায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন খেজুর খেলে দেহের আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়
খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে, যা মানুষের স্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে ৪০% কমিয়ে দেয়।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং খুব অল্প পরিমাণে সোডিয়াম।
এতে করে প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের খারাপ কলেস্টোরল কমায় এবং ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
খেজুর এবং গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া ভাল কারণ এগুলিতে ল্যাক্সেটিভ রয়েছে যা জরায়ুর সংকোচনে সহায়তা করে এবং এটি সংক্ষিপ্ত করে প্রসব শ্রমকে সহজ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে খেজুর গ্রহণ প্রসব শ্রমকে সংক্ষিপ্ত করে এবং প্রসবকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
এছাড়াও
উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে খেজুর বেশ উপকারী।
খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে।
নারীর শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুর বেশ কার্যকর।
খেজুরে থাকা ডায়েটরই ফাইবার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
নিয়মিত খেজুর খেলে ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
খেজুর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে বিশেষভাবে সহায়ক।
প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস রাতকানা রোগ ভালো করতে সাহায্য করে থাকে।
মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী।
বাড়তে পারে ওজন
খেজুরের নানান গুণের কথা শুনে যদি সকাল বিকাল খেজুর খাওয়া শুরু করেন তবে বিপদ আসতে খুব বেশি দেরি হবে না।
কারণ মাত্র চারটি বা ১০০ গ্রাম খেজুরেই মিলবে প্রায় ২৭৭ ক্যালরি।
প্রচণ্ড মিষ্টি এই শুকনো ফল যদি বেশি খেতে থাকেন তবে ওজন যে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তাই পরিমাণ মাথায় রাখতে হবে। ভালো খাবারও অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে তা কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ইফতারে খেজুর
রমজান মাস জুড়েই ইফতারে সবাই কম বেশি খেজুর খেয়ে থাকেন।
মুসলিমদের জন্য খেজুর অনেক প্রিয় একটি খাবার। রোজা এলে ইফতারের খাদ্যতালিকায় এর স্থান থাকে সর্বাগ্রে।
এ খেজুরের রয়েছে অসাধারণ কিছু পুষ্টিগুণ।
খেজুরে রয়েছে ভেষজ ও অনেক পুষ্টি উপাদান; যা সারাদিন রোজা রাখার পর খানিকটা পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
খেজুরে রয়েছে পানি, খনিজ পদার্থ, আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ভিটামিন ‘বি-১’, ভিটামিন ‘বি-২’ ও সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ‘সি ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, প্রোটিন।
রোজায় দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার কারণে দেহে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়।
শরীরের এই প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে খেজুর।
তাই প্রতিদিন ইফতারে খেজুর খাওয়া উচিত।