একাকিত্ব মনের এক গভীর সমস্যা। একা থাকার বোধকে বদলাতে গেলে তাই প্রথমেই পরিবর্তন আনতে হয় মনোজগতে।
কেউ একা থেকেও ‘একা’ নন৷ কেউ সব থেকেও ‘একা’৷
মন যা বলবে, আপনি আসলে তা-ই৷
কেউ একাকীত্বের মুহূর্ত ভরিয়ে তোলেন গানে–কবিতায়–কাজে বা অন্য ভাল লাগায়, কেউ ভুগতে থাকেন অনিশ্চয়তায়৷
একাকিত্ব বলতে আমরা যা বুঝি
একা থাকার দুঃখে, ভয়ে, হতাশায় মুহ্যমান হয়ে যান কেউ৷ কারও কাছে আবার সেটাই স্বাধীনতা৷
কাছের মানুষ দূরে সরে গেলে দুঃখের সেই অবসর কাজে ভরিয়ে তোলেন কেউ৷ মন তৈরি করে নেন৷ কেউ অভাব বোধে ভোগেন জীবনভর৷
এই যে বৈপরীত্ব তার মূলে রয়েছে মানুষটির ব্যক্তিত্ব, যার কিছুটা তার একেবারে নিজস্ব, কিছুর কারণ লুকিয়ে আছে বেড়ে ওঠার পরিবেশে, শিক্ষাদীক্ষায়, পারিপার্শ্বিকে৷
এই বোধকে বদলাতে গেলে তাই প্রথমেই পরিবর্তন আনতে হয় মনোজগতে, বদলাতে হয় ঘটনার প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী৷
প্রথমে যুক্তিকে সঙ্গী করে৷ তার পর ধীরে ধীরে নানা অভ্যাসের মাধ্যমে আবেগকে তার সঙ্গে যুক্ত করে৷ এর বিভিন্ন ধাপও রয়েছে৷ জানেন সেসব?
যেভাবে দূর করা সম্ভব একাকিত্ব
একা থাকলে প্রথমেই যে চিন্তা মনে আসে তা হলো, বিপদে কাকে পাশে পাব? অমূলক চিন্তা৷
কারণ, আপনি যদি সব সময় সবার পাশে থাকেন, তাঁরাও আপনার বিপদে পাশে থাকবেন৷ কাজেই স্বার্থপর না হলে বিপদে সঙ্গীর অভাব হবে না৷
গলাগলি করে থাকার ইচ্ছে না মিটলেই যদি ভাবেন একা হয়ে গেলেন, তা হলে বিপদ৷
কারণ সবার কাছে সম্পর্কের সংজ্ঞা এক নয়৷ অন্য জন হয়তো এত মিলমিশ ভালবাসেন না, শ্বাস ফেলার অবসর চান৷
স্পেস দিতে শিখুন। সম্পর্কের গভীরতা বাড়বে৷ কারণ ঘ্যানঘ্যান করে বা দোষারোপ করে আর যাই হোক, নৈকট্য আদায় করা যায় না৷
একা হতে না চাইলে কোনও সম্পর্কেরই বেশি গভীরে যাবেন না৷ একটু দূরত্ব রাখুন৷ তাতে হতাশা আসে কম৷ সব দিক বজায় থাকে৷
খুব বেশি একা লাগলে যা করবেন
হঠাৎ খুব একা লাগলে কী কী করলে একাকীত্ব দূর হতে পারে তার ফর্দ বানান৷
প্রায়োরিটি লিস্ট৷ স্বামী/স্ত্রী বা প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গ হয়তো এক নম্বরে৷ তাকে পাওয়া গেলো না৷
সন্তান, বন্ধু৷ হলো না? সিনেমা, থিয়েটার, ঘুরে বেড়ানো৷
তাও হলো না? টিভি দেখুন, গান শুনুন বা বই পড়ুন৷ ইচ্ছে করছে না? তাহলে উপরে কী আছে দেখুন। কিছু না কিছু তো হবেই৷
যা পাচ্ছেন, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন৷
মন মানছে না? তা হলে শুনুন, পাওয়ার ব্যাপারে বেশি ছটফট করলে কিন্তু একাকীত্ব এড়াতে পারবেন না৷
আজ যা চাইছেন তা কাল পেলে কী এমন ক্ষতি, ভেবে দেখুন৷
ভাল করে ভাবলেই বুঝতে পারবেন ক্ষতি আসলে কিছু নেই৷
এ আপনার অস্থিরতা, একমুখী ভাবনা৷ কাজেই কষ্ট পেতে না চাইলে একটু নমনীয় করুন নিজেকে৷
একাকিত্ব বোধের সঙ্গে কখনও মিশে থাকে দুশ্চিন্তা, অশান্তি৷ ব্যস্ত থাকলে তা সব সময় সামনে আসে না৷
একা হলেই মনকে চঞ্চল করে তোলে৷ এ রকম হলে প্রধান কাজ টেনশন কমানো৷ কীভাবে করবেন তা জেনে নিন মনোবিদের কাছে৷
একাকিত্বের সময়টাকে কাজে লাগান৷ অর্থকরী কাজ করুন, এতে সময়ও কাটবে, হাতে টাকাপয়সা এলে আগ্রহও বাড়বে।
সমমানসিকতার মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও বাড়ান৷
আড্ডার মধ্যমণি হতে চাইলে একটু পড়াশোনা করুন৷ ভাল সিনেমা–থিয়েটার দেখুন৷
খেলা বা দেশবিদেশের খবরাখবর রাখতে পারলে ভাল৷ রসিকতা পূর্ণ হলে তো কথাই নেই৷ মোট কথা, নিজস্বতা বলে কিছু একটা যেন থাকে৷
নিজের শরীর ঠিক রাখুন৷ ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাওয়া–দাওয়ার কোনও বিকল্প নেই৷ সঙ্গে একটু আধটু রূপচর্চা৷ সময় কাটবে৷
একাকিত্বের সবচেয়ে বড় দাওয়াই প্রেম৷ তবে বুঝেশুনে৷
যে কোনও সম্পর্কেই ভেবেচিন্তে না এগোলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে৷ প্রেমে ঝগড়া বা খিটখিট করে যাবেন না৷
তাতে অশান্তি বেড়ে আরও একা হয়ে যাবেন৷ কাজেই সহ্যশক্তিও একটু আধটু বাড়ান। ঘন ঘন বিরক্ত হলে মন ভাল থাকে এমন কিছু অভ্যাস করুন।
একান্তই সামলাতে না পারলে মনোবিদের সাহায্য নিন।