সাধারণত পানিশূন্যতা ঘটে যখন আমাদের শরীর থেকে পানি ও ফ্লুইড খুব বেশি মাত্রায় বের হয়ে যায়।
পানি আমাদের শরীরের জন্য খুব ই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আমাদের শরীরে পানি আছে ৭৫%।
আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে আমাদের পানিশূন্যতা দেখা দেয় যা ধীরে ধীরে বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়।
কী কারণে পানিশূন্যতা হতে পারে?
খুব সাধারণ যে বিষয় আসে সেটা হলো পানি কম খাওয়া।
যারা প্রয়োজন অনুপাতে কম পানি খান বা প্রচুর ঘামেন কিন্তু সে পরিমাণে ফ্লুইড শরীরে প্রবেশ করে না তাদের ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
অসুস্থতা, ব্যস্ততা ও ঘুরতে যাওয়া নানা কারণে পানি কম খাওয়া হলেই এই সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।
ডায়রিয়া ও বমি অন্যতম এক কারণ হতে পারে পানিশুন্যতার।
ডায়রিয়া বা বমি হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস ও ফ্লুইড বেরিয়ে যায়।
পানির পরিমাণ বের হওয়ার কারণে শরীর এ এদের যোগান কমে যায় ফলে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়।
শরীর এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানে জ্বর যত বাড়বে পানিশূন্যতা তত দেখা দিবে।
জ্বরের কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। অবস্থা আরো খারাপের দিকে এগোয় যখন বমি ও ডায়রিয়া জ্বরের সাথে হাত মেলায়।
অতিরিক্ত গরমে অতিরিক্ত ঘাম যাদের হয় তাদের শরীর ও ডিহাইড্রেট হয় খুব তারাতাড়ি।
কারণ শরীর থেকে পানি ঘাম হয়ে বের হয়ে যায় ও পানির অভাব বোধ করায়।
ডিহাইড্রেশন হলে কীভাবে বুঝবেন?
১) ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া
এই প্রচন্ড গরমে ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে আর রক্ত বের হচ্ছে।
তাহলে আপনার বুঝে নিতে হবে আপনার ডিহাইড্রেশন হয়েছে।
শীতকাল না হওয়া সত্বেও ঠোঁট ফাটা ও শুকিয়ে যাওয়া মানে পানি সল্পতা।
পানি সল্পতা হলেই এমন ঠোঁট মুখ শুকিয়ে যায়।
ডিহাইড্রেশন বা পানি শুন্যতা হলে ঠোঁটের উপর খুন বেশি প্রভাব পড়ে।
আপনাকে কিছুক্ষণ পর পর ই লিপ বাম বা ভ্যাসেলিন এসব মাখতে হয়।
আমাদের শরীর থেকে পানির পরিমাণ কমে গেলে শরীর তখন ঠোঁটের মত কম প্রয়োজনীয় এলাকা থেকে পানি নেয় এবং তা হৃদ্পিন্ড ও মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়।
ফলে ঠোঁট শুকাতে থাকে।
২) মাথা ব্যাথা
পানি সল্পতার কারণে মাথা ব্যাথা করতে পারে।
যেকোনো কারণে অতিরিক্ত মাথা ব্যাথা করলে বুঝতে হবে আপনার শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে গিয়েছে।
৩) ইউরিন কমে আসা ও হলুদাভ হওয়া
শরীর এ পানির অভাব দেখা দিলে ইউরিন ও কমে আসবে।
এর রঙ হলুদাভ হলে বুঝতে হবে শরীর খুব ডিহাইড্রেট হয়েছে।
৪) ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব
কাজ করতে গিয়ে অল্প তে হাপিয়ে উঠা বা ঘুম ঘুম ভান আসলে বুঝতে হবে এটা পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে এমন টি হচ্ছে।
শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে এমন অস্বস্তি ও ক্লান্ত অনুভব হয়।
৫) গলা শুকিয়ে যাওয়া
বার বার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে? তাহলে বুঝতে হবে আপনি ডিহাইড্রেশন এর পর্যায়ে চলে এসেছেন।
বার বার পানির তৃষ্ণা পায় কারণ শরীর এর অভাব বোধ করেছে তাই।
পানির অভাবে বার বার গলা শুকিয়ে যেতে থাকে ও তৃষ্ণা বেশি পায়।
৪) মাথা ঝিম ঝিম করা
মাথা ঝিম ঝিম করা পানিশূন্যতার একটি লক্ষণ।
কাজে মনোযোগ না বসলে বা মাথা ঝিম ঝিম শুরু হলে বুঝতে হবে আপনার শরীর ডিহাইড্রেট।
৫) দুর্বলতা
শরীর এ পানি শুন্য হলে শরীর দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যায়।
ব্রেইন ও কিডনি তে পানির প্রবাহ কম হতে থাকলে এমন অনুভব হয়।
৬) মাংসপেশির দুর্বলতা বা মাসল ক্রাম্প
পানির সল্পতার কারণে শরীর এর শিরা ও উপশিরা তে টান পরে ও মাংস্পেশি দুর্বল হয়ে পরে।
৭) কোষ্ঠকাঠিন্য
ডিহাইড্রেশন বা পানিশুন্যতার অন্যতম আরেকটি উপসর্গ হল কোষ্ঠকাঠিন্য।
শরীরে যত টুকু পানির পরিমাণ থাকা প্রয়োজন তা থেকে কমে গেলে তাঁর প্রভাব পেটের উপরেও পড়ে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়স্করা পানি কম খেলেই কোষ্ঠকাঠিন্যের শিকার হয়।
পানিশূন্যতা প্রতিরোধে করণীয়
পানিশুন্যতা বা ডিহাইট্রেশন মানেই পানির অভাব।
তাই এর প্রথম স্টেপ ই হলো পানি বেশি বেশি খাওয়া।
পানি যত বেশি যাওয়া যাবে তত শরীর ডিহাইড্রেড কম হবে।
এখন অতিরিক্ত গরম।
তাই ঘাম হওয়া টা স্বাভাবিক।
কিন্তু ঘামের কারণে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পরে তাই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এক বোতল পানি আপনার সাথে রাখুন।
তাপমাত্রা বেশি হলে শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম কমিয়ে আনুন।
আর একটু পর পর পানি খান।
এতে করে শরীর দুর্বল আর ডিহাইড্রেট কম হবে।
বিভিন্ন রঙের উপর সূর্যরশ্মি রিফ্লেক্ট ও শোষণ করার ক্ষমতা রাখে।
কালো রঙের জামার তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি তাই যত সম্ভব হালকা বা মিষ্টি রঙের জামা পরে বের হতে হবে।
ফলে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস যার কারণে ফল থেকে পানি আমাদের শরীর শোষণ করে তা সব জায়গায় ছরিয়ে দেয়।
তাই বেশি বেশি ফল খেতে হবে।
ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ ঠিক থাকলে শরীর ডিহাইড্রেট হয় না।
তাই ইলেকট্রোলাইট যুক্ত লিকুইড বেশি বেশি পান করতে হবে।
ফার্মাসিতে ইলেকট্রোলাইট যুক্ত লিকুইড পাওডার পাওয়া যায় সেগুলো ডিহাইড্রেশন রোধ করতে হেল্প করবে।
প্রচন্ড গরমে পানির অভাব মেটাতে লেবু পানি খুব উপকারী একটি পানীয়।
লেবু পানি শরীরের পানির ঘাটতি ও শরীর থেকে চলে যাওয়া মিনারেল ঘাটতিও মেটায়।
লেবুর রস ও তাতে মধু মিশিয়ে পান করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
ডিহাইড্রেশন দূর করতে ডাবের পানি বেশ উপকারী।
এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের মিনারেল ঘাটতিও দ্রুত মেটায় ও শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখে।
এলোভেরা তে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে।
এলোভেরা জেল এর জুশ বানিয়ে খেলে তা ডিহাইড্রেশন এর জন্য খুব ই ফলদায়ক।
ক্যাফেইনবিহীন হার্বাল চা যেমন জবা, অপরাজিতা ও গোলাপ এর চা শরীরের পানিস্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে।
এসব হারবাল চা নার্ভাস সিস্টেমকে রিলাক্স রাখে ও মনকে করে সতেজ।
কখন বুঝতে পারবেন যে আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
ডিহাইড্রেশন এর কারণে অনেকের ই মাথা ঘুরায় এবং অজ্ঞান ও হয়ে যায়।
এই অবস্থায় তাকে ছায়া তে নিয়ে গিয়ে পানি খাওয়া তে হবে।
এবং যথেষ্ট রেস্ট এর ব্যাবস্থা নিতে হবে।
এসব করার পর ও যদি সমস্যা দূর না হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।