Search
Close this search box.

ডিভোর্স: সম্পর্কের সৌন্দর্য নাকি তিক্ততা? (পর্ব-১)

আমাদের সমাজে সংখ্যায় বাড়তে থাকা এই ম্যাসিভ ডিভোর্স রেটের কারণ কী?

আমরা চেস্টা করেছি এর কারণগুলো খুঁজে বের করতে।

চার পর্বের ধারাবাহিক এই সিরিজের প্রথম পর্ব রইলো আজ।

সিন্থিয়া (কাল্পনিক নাম), বাংলাদেশের স্বনামধর্ম এক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাডুয়েট করে এখন একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার।

বিয়ে করেছেন তারই এক ক্লাসমেট সাগরকে (কাল্পনিক), প্রেমের বিয়ে।

সবার সাথে মিশুক, হাসিখুশি ছেলেটাকে বেশ লাগতো সিন্থিয়ার পরিচয়ের শুরুতে।

কেমন অমায়িকভাবে বাবা মায়ের মনও জয় করে নিল সাগর প্রথম সাক্ষাতেই বাসায় এসে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছিমছাম পরিবেশে বেড়ে ওঠা সাগরকে পেয়ে সিন্থিয়ার বাবা মাও তেমন আপত্তি করে নি।

সাগর বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান, পরিচয় পর্বের প্রথমেই পছন্দ করে ফেললো সিন্থিয়াকে সাগরের বাবা মাও।

দুই পরিবারের স্ট্যাটাস, শিক্ষার লেভেল সবই প্রায় কাছাকাছি, তার চাইতে বেশি মিল দুই বেইয়ান-বেইয়াইনদের মনের।

আর কি লাগে!

স্বপ্নের শুরুটা এখানেই…

শেষ বর্ষের থিসিস ডিফেন্সের পরেই, একটা ছোট খাট ঘরোয়া অনুষ্ঠানেই তুলে নিল সিন্থিয়াকে।

সিন্থিয়ার বাবা মা পাত্রপক্ষের কোন দাবি দাওয়া না থাকায় প্রথমে অবাক হলে, পরে মেনে নিল এই ভেবে- শিক্ষিত পরিবার বলেই জানে যৌতুক কতটা সম্মান হরণ করে ছেলের।

এর জন্য না চাওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

অতঃপর শুরু হল টোনাটুনির সংসার।

সিন্থিয়ার রেজাল্ট ভালো হওয়ায় গ্রাডুয়েশনের সাথে সাথেই লেকচারার হিসেবে ঢুকে গেল এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে।

সাগর তখনও টিউশনি করে। বছর খানেকের মধ্যে সাগরও একটা জব যোগাড় করে ফেললো।

হাসি তামাশায়, দুই পরিবারকে নিয়ে দিন কাটতে লাগলো। ব্যাস, এভাবেই তারা পেয়ে গেল “ Happily Ever After” একটা জীবন!

The End বলে সুন্দর করেই চালিয়ে দেয়া যেত, যদি এটা ডিজনি কিংবা কোন ফেইরি টেইলের পরিণতি হতো।

কিন্তু বাস্তবতা, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটা দেশের জন্য তো ভীষণ কঠিন!

যেখানে সমান যোগ্যতা নিয়েই নারীরা অফিসে টিকে থাকতে যে কোন পুরুষের চেয়ে ৪ গুণ বেশি নিজের এবিলিটির প্রমাণ দেখাতে হয়, সেখানে কিভাবে সংসার নামক গোলকধাধায় নিজেকে বাঁচাবে!

সিন্থিয়ার সংসারও সেই গোলকধাঁধার বাইরে নয়। স্মুথলি চলতে থাকা সংসারটাতেও ধীরে ধীরে দেখা দিল অরাজকতা।

একই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী, অপেক্ষাকৃত ভাল পোস্ট পজিশনে চাকরি করার পরেও, সিন্থিয়ার মনে কোথায় যেন একটা অভাব ছিল।

সে অভাব আসলে ক্লান্ত মনের। অফিস থেকে দুইজন প্রায় একইসময়ে ঘরে ঢুকলেও, ফ্রেশ হয়ে সাগর বসে পড়তো টিভির রিমোর্ট নিয়ে।

আর সিন্থিয়া? কাপড় অর্ধেক খুলতে খুলতেই রান্নাঘরে ছুটতো খাবারের ব্যবস্থায়।

শরবতটা পর্যন্ত সাগর নিজে বানাতে অনাগ্রহ দেখাতো, একদিন তো কথা প্রসঙ্গে বলেই দিল, তার মা কখনও এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে দেয়নি।

সিন্থিয়াও হেসে বলেছিল, “এখন তো তুমি মায়ের সংসারে নেই সাগর। এ সংসারে পানিটা তো নিজেরই নিয়ে খেতে হবে!” ফলস্বরূপ থমথমে পরিবেশ।

দিন যত যায়, সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি, খাটুনি শেষে বাসায় এসে খাবার খাওয়া, রান্না করা, বাকি জিনিস ম্যানেজ করা- সিন্থিয়া হাঁপিয়ে উঠতে লাগলো।

এর মধ্যেই শ্বশুর শাশুড়ির আগমন, মাসখানেক থাকবেন ছোট ছেলের সংসারে। অফিস ফেরত সিন্থিয়া সাগরকে তখনও পেল না পাশে।

অতঃপর বিষন্নতার ঘনঘটা

অফিস থেকে এসেই সাগর জুড়ে দিত বাবা মায়ের সাথে গল্প আর টিভি দেখা।

সিন্থিয়ার দায়িত্ব এখন ৪ জন মানুষের কমপক্ষে ৩ বেলার খাবার আর ২ বেলার নাস্তার ব্যবস্থা করা, সপ্তাহে প্রতিটাদিন!

এরপরও শাশুড়িকে কেমন নাখোশ লাগছে।

এক রাতে তো উনি বলেই দিলেন, ঠান্ডা খাবার গরম করে দুপুরে খেতে রুচি হয় না, স্বাদ চলে যায়, উনার স্বামী তো চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন।

এই খাবারে না আবার অসুস্থ বেশি করেই হয়ে যায়। সিন্থিয়ার মুখ দিয়ে খাবার নামছিল না, সাগর বেশ তৃপ্তির সাথেই খেয়ে মায়ের সাথে তাদের রুমে চলে গেল।

তবে ঘটনা তো সবে শুরু। দিনের পর দিন সিন্থিয়ার রান্না থেকে শুরু করে এখন সিন্থিয়ার বাসার ফার্নিচার নিয়েও শুরু হল আপত্তি শাশুড়ির।

একদিন কাজ করে বেডরুমে ফেরার পথে কানে ভেসে এলো শাশুড়ির আওয়াজ- সাগরকেই বলছেন- “ মুখ ফুটে কিছু চাই নি, কারণ ভদ্র বাড়ির লোক মেয়ের বিয়েতে এমনিতেই গিফটে ঘর সাজায় দেয়।

তা এরকম বেয়াক্কেল বাবা মা তো জীবণেও দেখি নি! কত্ত কষ্ট হচ্ছে আমার সোনার ছেলেটার এই শক্ত বিছানায় শুইতে।

আমি মা, কি ভেবেছিস, আমি টের পাই না আমার ছেলের কষ্ট!”

সিন্থিয়া যেন জমে গেল ওখানেই!

দুজনে দেখা হলো…

এভাবেই নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বছর খানেক পর কোর্টে দেখা- দুইজনের মিউচুয়াল কিংবা একজনের নোটিশে ডিভোর্স।

রিয়েল লাইফের ঘটনায়-এবার দি এন্ড।

গত ৪-৫ বছরে বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে, নিম্নবিত্ত- প্রতি ১০টা পরিবারের মধ্যে প্রায় ৪ টা পরিবারের এই পরিণতি।

আর যারা এখনও টিকে আছে, সেখানের নারীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। আর সব ঘটনা মূলত একই।

দিন যত যাচ্ছে , ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে ডিভোর্সের সংখ্যা।

করোনার আগে, ২০১৯ সালেই ডিভোর্সের আবেদন এসেছিল একবছরে আগের তুলনায় ৬ গুণ!

কারণ! ঐ কেষ্টা বেটিই চোর?

সংখ্যায় বাড়তে থাকা এই ম্যাসিভ ডিভোর্স রেটের কারণ কী?

জিজ্ঞাসা করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে উত্তর পাওয়া যাবে, মেয়েদের লেখাপড়াই এর জন্য দায়ী!

অনেক ওয়াজে বিশেষ বিশেষ হুজুররা তো ওয়াদা আদায়ও করে নেন এর জন্য অভিভাবকের থেকে, যেন মেয়েকে ক্লাস ফাইভ এর বেশি না পড়ায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি নারীর লেখা পড়া দায়ী এই ক্রমশ বর্ধিত ডিভোর্সের জন্য?

উত্তরটা হল- হ্যা , হ্যা । অবশ্যই লেখাপড়া করেছে বলেই মেয়েরা এখন ডিভোর্স নিতে বেশি সোচ্চার। কিন্তু কেন? কারণটা জানেন?

একটু পিছনের সময়টাতে গেলেই এর কারণ বুঝে যাবেন।

আজ থেকে ৪০ বছর আগেও। মেয়েরা ছিল অপেক্ষাকৃত স্বল্প শিক্ষিতা।

আমাদের দাদী নানীর যুগে তো শিক্ষিত কজন স্ত্রী ছিল গড় বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত আর নিম্ন বিত্তের পরিবারে, তার হিসাব করতে গেলে নিজেকেই ফিরে আসতে হবে মূলে।

উল্লেখ্য, এখানে শিক্ষিত বলতে খালি স্বাক্ষরতা জানা, ক্লাস টেন-পাশ নারীকে বুঝানো হচ্ছে না।

এখানে শিক্ষিত বলতে এমন নারীকে বুঝানো হচ্ছে, যারা গ্রাডুয়েশন করে এমন একটা স্কিলে নিজেদের ডেভেলপ করেছে, যে স্বাধীনভাবে চাকরি করলে একজন ছেলের মতো না হোক, নিজের জীবিকা অর্জন করার জন্য সে নারী যোগ্য; কিংবা ইতিমধ্যে চাকরি করছে একটা হ্যান্ডসাম এমাউন্ড স্যালারি সহ।

তো আগের প্রসঙ্গে আসি। আমাদের নানী দাদীর সময়ে নারী-শিক্ষা, চাকরির জন্য যে যোগ্যতা লাগে, তা কারোরই তেমন ছিল না।

ফলে গ্রাম বাংলাই বলুন, কি মফস্বল- নারীদের যে কোন অত্যাচার সহ্য করে, অসম কাজের বন্টনের বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে চুপচাপ সংসার করে যেতেই হতো।

বাবা-মায়ের ঘরে ফিরবার উপায় নেই। প্রতিবেশীর টিটকারি বাদেও, করুণ আর্থিক অবস্থার জন্য বুড়ো বাবা-মায়ে ঘাড়ে উঠে বসতেও পারতো না নারীরা।

শিক্ষিত ছিল না বলে, দুনিয়াটাও ছিল বেশ অপরিচিত।

স্বামী ছাড়া বেশি দূর যাওয়া, এমনকি বাপের বাড়ি থেকে একা নিজের বাসায় আসাতেও বেগ পেতে হতো।

তাও কি তা নিজের বাসা ছিল? শ্বশুর-শাশুড়ি, কিংবা স্বয়ং স্বামীর অত্যাচারেই প্রতিটা পদে জানা হয়ে যেত, এ ঘরটাও তার নয়।

নিজের মনে প্রশ্ন জাগতো, কোথায় আমার বাড়ি?

গর্ভের সন্তান পৃথিবীর আলোয় আসলে দীর্ঘশ্বাস পড়তো মনের অজান্তেই, যখন জানতো, তারই মতো আরেক অভাগী এসেছে পৃথিবীতে।

কিন্তু বর্তমানে চিত্রপট বেশ ভিন্ন। অধিকাংশ নারী ডিগ্রী পাশ, অনেক ক্ষেত্রে তো পুরুষের চাইতেও বেশ ভালো অর্জনের অধিকারী হচ্ছে এই শিক্ষিত, কর্মজীবি নারীরা।

নিজের ইনকামের টাকায় শুধু নিজের না, পুরো সংসারেও কন্ট্রিবিউশন হচ্ছে একজন নারীর।

আর এটা তেতো হলেও সত্য, যতক্ষণ না পকেটে কিংবা ব্যাংক ব্যালেন্সের জোর নারীদের না হচ্ছে, সর্বযুগেই এ উপমহাদেশের পুরুষদের জেনেটিক ইগোর কাছে নিজেরা বড় অসহায় নারীরা।

বর্তমানে যেহেতু্ সেই অসহায়ত্বও নেই নারীদের, তবে কেন এই সংসারের অবিচার সহ্য করা ! কেন স্বামী অফিস থেকে এসে টিভির রিমোর্ট হাতে বসে যাবে, আর স্ত্রী জামা কাপড় খুলতে খুলতেই রান্নাঘরে দৌড়াবে!

বেতনে টাকার অংক যদি মাস শেষে কাছাকাছি হয়, তবে সংসারের কাজের পরিমাণ কেন কাছাকাছি হবে না!

তোমাকে রান্না করে তো দিতে বলে নাই , প্রিয় স্বামী।

কিন্তু রান্না/ খাবার শেষে ডিশ ওয়াশ, কিংবা সবজিগুলো কেটে দিলে কি তোমার মা আজও নাক সিটকাবে?

মিজে নারী হয়েও কি দুর্বিষহ করবেন তোমার মা আরেক নারীর জীবণ, কারণ তার নিজের অতীত দূর্বিষহ ছিল বিধায়?

নারীদের এই শিক্ষা- অতঃপর অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই কাল হয়ে দাঁড়ালো উপমহাদেশের ডমিনেন্ট হাসব্যান্ডের জন্য।

আজ দুই-থেকে তিনটা অসামাঞ্জস্যতা সহ্য করে নারীসংসার টিকিয়ে রাখলেও, বছরের পর বছর এই অসম দায়িত্বের বোঝা নারী আর একা টানতে রাজি না।

ফলে বলা যায়, ছেলেরা যদি তাদের টিপিক্যাল মায়ের আহ্লাদী খোকা থেকে বের হয়ে না আসতে পারে-

সেদিন খুব বেশি দূরে নাই, যেদিন নারীতে পৃথিবী ভরা থাকা সত্ত্বেও হ্যান্ডসাম পুরুষেরা নিজেরা চেয়েও সংসার করতে/টিকাতে পারছে না।

এখন কথা হলো, ২০২১ সালে এসেও পুরুষেরা কেন এরকম প্রিমিটিভ ধরণের আচরণ স্ত্রীর সাথে চালিয়েই যাচ্ছে। এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে।

ধর্ম ও সংস্কৃতি

বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যে দেশে ৮৫% মুসলমান থাকলেও, সত্যিকার জ্ঞানী এবং প্র্যাক্টিসিং মুসলিমের সংখ্যার মোট মুসলমানদের ১৫% ও নয়।

সাধারণ মুসলিম ঘরের সন্তানদের অধিকাংশের দৌড় মাদ্রাসার হুজুরদের থেকে আমপারা পরে কুরআন এক খতম দেয়া, আর নামাজের জন্য বেসিক কিছু সূরা, কালাম তোতাপাখির মতো মুখস্ত করার মধ্যেই।

শীতকালে এক দুইবার ওয়াজে হুজুরদের উচ্চস্বরের ক্রন্দন সোনা আর দাদা দাদীর কাছে কিছু সনাতনী ধর্ম মিলিত দূষিত প্র্যাক্টিসিং টিপস।

এর বাইরে, নিজের আগ্রহে না হোক, আল্লাহকে ভয় করেও কেউ সত্যিকার ইসলামে কি বলা হয়েছে, আল্লাহর বিধান কি- এসব নিজ থেকে খুলেও দেখে না।

আরবি রিডিং পড়তে জানলেও, সেই আরবিতে কি বলা হয়েছে আসলে, সেটা জানে না ৮০% সাধারণ মানুষ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, যে ইসলাম ধর্মে গণক বা কবিরাজের কাছে যাওয়া, কুফরী, বিদাত, শিরকের শামিল গুণাহ- সেই ধর্মের দাবি করা এই অর্ধশিক্ষিত লোকজনই সামান্য কথায় গণক কিংবা ওঝার কাছে ছুটে যায় কুফরি কালাম করতে। আল্লাহর উপর তাদের ভরসা নাই। গণক হিন্দু নাকি মুসলিম, সে ব্যাপারেও মাথাব্যাথা নাই।

আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে ওয়াজ থেকে শুরু করে, জুম্মার খুতবা নানা জায়গায় পুরুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে, শুধুমাত্র বাবা মা সংক্রান্ত হাদিস আর আয়াত শুনিয়েই সুবিধা মতো টাকা ইনকাম করে নিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু হুজুর।

নিজেদের জ্ঞানের অসম্পূর্ণতায়, যুগের পর যুগ আমাদের ধর্মের সাথে মিশে গেছে, সনাতন ধর্মের কিছু নিয়মও, তার মধ্যে ভয়ংকর হিংস্র একটা নিয়ম হল- সংসারে বউ আসবে শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করতে, যতদিন না তারা মারা যায়।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বউ খাটলেও, ক্ষমতার দড়িটা থাকবে শাশুড়ির হাতে।সকাল থেকে রান্না ঘর বউটা ঘাম ঝরে সামলাতেও, সারাদিন কাজের পরেও সন্তুষ্ট নয় শাশুড়ি।

ছেলে বাসায় ফেরার সাথে সাথে নানা ছলে-কৌশলে সরাসরি বা আভাসে বউয়ের নামে নালিশ!

এখন, এক্ষেত্রে ছেলেদের মধ্যে দুইটা দল থাকে।

একদল মায়ের কথা শুনেই তেরিয়া হয়ে জ্বলে ওঠে! কারণ মা কি আর মিথ্যা বলতে পারে!

কত্ত কষ্ট মানুষ করেছে তাকে এই মা! সেই মায়ের চোখে আজ পানি আনালো ঐ হারামজাদী! আজ ওর খবর আছে!

আরেকদলের ব্যবহার হয়, আরও নাটকীয়। সে পরিবেশ দেখে ঠিকই বুঝতে পারে মায়ের অতিরঞ্জিত দাবি।

সাথে এটাও টের পায়, সারাদিনে তার অনুপস্থিতিতে বউটার ভাগ্যে কত তিরস্কার , বকা জোটে।

কিন্তু মাকে তো কিছু বলা যাবে না! মা বাবাকে বললে , পাছে যদি কষ্ট পায়! হুজুর বলেছেন, কুরআনে আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত! সেই বেহেশতের মনে কষ্ট দিব!

শুতে গিয়ে বউকেই গম্ভীরভাবে বলে, “মাকে কিছু বলতে পারবো না। উনি মা। তুমিই সহ্য করে নিও!”

সারাদিন অপমানে জর্জরিত, একাধারে খেটে সামান্য সুবিচারের আশায় থাকা বউটা তখন স্বামীর মুখে এই কথা শুনে, মনে মনে সৃষ্টীকর্তার কাছে প্রার্থনা করা- আমার পেটে যেন এমন কোন অভাগী মেয়ে না আসে খোদা! ছেলে দিও!

অথচ কেউ যদি ইসলামটাকে একটু নেড়েচেড়ে দেখতো, সহজেই দেখতো।

আল্লাহ একজন পুরুষকে তার স্ত্রীর ব্যাপারে কি পরিমাণ যত্নশীল হতে বলেছেন।

বিখ্যাত শাইখ নোমান আলী তার লেকচারে একদা কুরআনের রেফারেন্স দিয়ে বলেন-

“একজন পুরুষ কারোও কন্যাকে যখন বিয়ে করে ঘরে আনে, তখন সে আল্লাহকে ওয়াদা করে এই মর্মে যে, সে মেয়েটার বাবার থেকেও অধিক যত্নে এবং নিরাপদে রাখবে মেয়েটাকে।

কারণ সেই মেয়ে শুধুই তার স্ত্রী নয়, তার ভবিষ্যৎ সন্তানদের জননী! এবং সেই মেয়ে মোতটও বাধ্য নয় তার শ্বশুর শাড়ির সেবা করবে।

মেয়েটা যদি করে, সেটা তার বিশেষ উদারতা। এবং শ্বশুর শাশুড়ি কোনভাবেই সেই বউকে কোন প্রকার কটু কথা , বকা-ঝকা করতে পারবে না।

বাবা মাকে সেবা করে খুশি করার দায়িত্ব পুরুষের। কোন অসন্তোষের বকার পাত্র হবে পুরুষ।

না বাবা মা সেই বউ এর থেকে এসব আশা করবে, না ছেলের কাছে বউমার থেকে সব পাওয়ার দাবি করবে।

কোন বাবা মা যদি এসব রাগারাগি করেও, ছেলে যেন সরাসরি বিনম্রভাবে বাবামাকে বলে, যা বলার আমাকে বলেন।

আমি মেনে নিব। তবে আমার বউকে না। তাকে কিছু বললে আমি মানবো না মহান আল্লাহর নির্দেশে।

মনে রাখবেন, স্ত্রীকে আল্লাহ সংসারের রাণির মর্যাদা দিয়েছেন। অন্য কাউকে না। বাবা মায়ের সাথে স্ত্রীর অত্যাচারের কোন সমাধান না হলে, আলাদা ঘর করবেন স্ত্রীকে নিয়ে। কারণ, আপনার স্ত্রী হিসেবে তার আলাদা আবাস পাওয়ার অধিকার আছে আপনার থেকে। এটা আল্লাহরই বিধান“

অথচ আমাদের দেশের লোকেরা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যের এরকম মারাত্মক নির্দেশনার কিছুই জানে না।

জানার চেষ্টাও করে না ইসলাম মেনে।

এছাড়াও ইসলামে বলা আছে, যে বিয়েতে কন্যার পিতার খরচ শূণ্য হয়, সে বিয়ে সর্ব বরকতময়।

আমাদের রাসূল (সঃ) এর হাদিসে এও আছে, “ তোমাদের মধ্যে যে পুরুষ সর্ব-উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম!”

অথচ এর কিছুই না জানা বাংলাদেশের পুরুষ উলটা বাবা মায়ের প্রলুব্ধে গুলিয়ে ফেলে মুসলিম হিসেবে নিজের কর্তব্যকে, আবারও সতানতী ধর্মের আচারের সাথে।

আজকাল গিফটের নামে যৌতুকের সেই একই প্রেশার মেয়ের বাবামায়ের উপর দেয়া হয়, মেয়েকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অপদস্থ করা হয় , যা আজ থেকে ১০০ বছর আগেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।

গায়ে নির্দিষ্ট পরিমান সোনার গয়না না নিয়ে মেয়ে শ্বশুরবাড়ি আসলে, কিংবা বরযাত্রীর আরুনদারুণ আবদার না মেটাতে পারলে, আজকাল ছেলের বাড়ির আত্মীয়রা তো বউকে মানুষের নজরেই দেখতে পারে না।

বর্তমানের মেয়েরা, শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি এসব ব্যাপারে আইন কি বলে, তাতেও সচেতন।

আর যেহেতু নিজে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, সে কারণে মুখ বুঝে যৌতুকের অত্যাচার আর তেমন সহ্য করাও হয় না।

ফলস্বরূপ ডিভোর্স অবধারিত।

তাই বলা যায়, এদেশে সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব এবং প্রাচীন সনাতনী সংস্কৃতির সাথে যখন ক্ল্যাশে লেগে যাচ্ছে আধুনিক শিক্ষত নারীর সোচ্চার গলার, ঘটে চলেছে ডিভোর্স!

পরবর্তী পর্বে চলবে…

দ্বিতীয় পর্ব পড়ার জন্য ক্লিক করুন এখানে