Search
Close this search box.

ডিভোর্স: সম্পর্কের সৌন্দর্য নাকি তিক্ততা? (পর্ব-৩)

আমাদের সমাজে সংখ্যায় বাড়তে থাকা এই ম্যাসিভ ডিভোর্স রেটের কারণ কী?

আমরা চেস্টা করেছি এর কারণগুলো খুঁজে বের করতে।

চার পর্বের ধারাবাহিক এই সিরিজের তৃতীয় পর্ব রইলো আজ।

প্রথম পর্ব পড়ার জন্য ক্লিক করুন এখানে

দ্বিতীয় পর্ব পড়ার জন্য ক্লিক করুন এখানে

সংসারে অশান্তি? নারীও দায়ী!

আলোচনার শুরু থেকেই যে সকল ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছিল, তার পিছনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পুরুষ এবং তার পরিবারকেও দায়ী করা হচ্ছিল।

কেননা,আমাদের আলোচনার প্রধান সেক্টর কিন্তু আমাদের দেশ, আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা পাঠক অস্বীকার করতে পারবেন না।

যে পরিমাণ ডিভোর্স হচ্ছে, তার জন্য অনেকাংশে দায়ী পুরুষ এবং তার “ছেলেপক্ষ আমরা”- মানসিকতার পরিবার।

আর তার পিছনে দায়ী কিছু সংখ্যক নারী

ঠিক কি কি কারণে এসকল নারীদের ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা ডিভোর্সের সংখ্যাটা বাড়িয়ে দিচ্ছে, এবার সে ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করা হল-

অস্বাভাবিক উচ্চাকাংক্ষী কিছু নারী

কিছু নারী রয়েছেন, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকুক কি না থাকুক, দুঃখজনক হলেও সত্য, ভীষণ পরিমাণে উচ্চাকাংক্ষী।

কোন কিছু টার্গেট করে, সেটা প্রাপ্তির পরেও তারা সন্তুষ্ট হতে চায় না। তারা চায় আরও আসুক, আরও হোক।

তা সে চাহিদা অর্থসংক্রান্ত হোক, কিংবা পদবী সংক্রান্ত, ডিগ্রী সংক্রান্ত হোক কি কোন কিছু অর্জনসংক্রান্ত হোক।

একজন পুরুষও একসময় থামতে জানে, কিন্তু এই নারীরা থামতে একদমই জানে না।

বাস্তবতা মেনে একজন পুরুষ তার ইচ্ছেঘুড়িকে একতা সময় লাগাম দিলেও, সে নারী জানে না কখন লাগামটা টেনে ধরা উচিৎ সংসারের খাতিরে, আপনজনের খাতিরে।

ফলে সে সব নারী একসময় শুধু স্বামী বা সন্তানকেই না, নিজের বন্ধু, আপন বাবা-মা, ভাই-বোন , শুভাকাংক্ষীদেরও হারিয়ে ফেলে।

আর এ কারণে খুব সহজেই ডিভোর্সের পরিণতি অপেক্ষা করে এসব নারীর সংসারে

তবে উল্লেখিত ১০% এর মধ্যে এসব নারীরা প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র ১.৫% – ২% পর্যন্ত।

সংখ্যার হিসেবে লাখ পাঁচেক ডিভোর্সের মধ্যে মাত্র ২-৩টা কেইস পাওয়া এ রকম নারী ঘটিত।

তবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, একজন নারী ক্যারিয়ারিস্ট মানেই সে এই ক্যাটাগরিতে পড়া উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারী নয়।

একজন স্বাভাবিক নারী বর্তমানে ডিগ্রী নিচ্ছে, গ্রাডুয়েশন করছে, মাস্টার্স করছে এত্ত কষ্ট করে প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে, নিশ্চয়ই কোন ঘরে হাউজ-ওয়াইফ হয়ে থাকার জন্য নয়।

তার পুরুষ ক্লাসমেটদের পাশাপাশি সমান তাকে লেখাপড়া, ট্রেনিং এর স্কিলগুলো অর্জন করেছে ঘরে বসে সন্তান পালন করতে নয়।

সন্তান পালনের দায়িত্ব স্বামী-স্ত্রী- ২ জনের, যেহেতু দুইজনের মিলিত প্রচেষ্টায় বাচ্চাটা পৃথিবীতে এনেছে

সংসারে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির যতই টাকা পয়সা থাকুক না কেন, একটা মাস্টার্স কিংবা গ্রাডুয়েশন করা একটা নারী খুব স্বাভাবিকভাবেই চাইবে, তার স্বামীর মতো, তার ক্লাসমেটের মতো চাকরি করতে।

ব্যাপারটা শুর্ধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যই নয়।

বরং তার একান্ত নিজস্ব একটা পরিচয়, তার কর্মযোগ্যতার একতা নিজস্ব আইডেন্টিটির গড়ার জন্য হলেও মেয়েটা জব বা ক্যারিয়ার করতে চায়।

তার মানে এই নয় যে, সে সংসার সন্তানকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে না।

সেক্ষেত্রে স্বামীকেও বুঝতে হবে, সংসার বা সন্তান মেয়েটার একার দায়িত্ব না।

সে জেনে বুঝে একজন লেখাপরা জানা মেয়েকে ঘরে এনেছে, তাই তাকে কাজের সুযোগও দিতে হবে।

তাতে সংসারে সময় কম দিলে মেয়েটা, স্বামীর এগিয়ে আসতে হবে, সংসারের কিছু অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব, সন্তানের কিছু ব্যাপারে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিতে।

তাই এসকল সকল নারীদের যদি আপনি উপরের উল্লেখিত অস্বাভাবিক-উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারীদের ক্যাটাগরিতে ফেলেন, তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, চিন্তাধারায় সমস্যা আপনার মধ্যে।

সে স্বাভাবিক মাস্টার্স-ডিগ্রী পাশ করা নারীর মধ্যে নয়।

পারিবারিক প্রয়োজনগুলো না বোঝা

এটা ভীষণ ভীষণ নাড়া দেয়া একটা ফ্যাক্টর, স্পেশালি বর্তমানে এই জি-বাংলা সিরিয়ালের যুগে।

কিছু সংখ্যক মেয়ে আছে, যার স্বামীর পরিবারের কিছু ভাইটাল ফ্যাক্টর মাথায় রাখেন না।

হয়তো শ্বশুর-শাশুড়ির একমাত্র সন্তানের সাথেই তার বিয়ে। বুড়ো মানুষ দুটোও অনেক ভাল, অমায়িক।

কিন্তু সমস্যা হয় মেয়েটারই। সে বরাবরই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি গড়তে চায়, যেখানে সে আর তার স্বামী-সন্তান ছাড়া যে কোন মানুষ একটা আপদের মতোই।

এরফলে স্বামীর বিন্দুমাত্র তার বাবা মা, বন্ধু বান্ধবের সাথে মেলামেশা, কিংবা একমাত্র ছেলে হিসেবে বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গেলেও , স্ত্রী হিসেবে এসব নারীরা নিতে পারায় তৈরী করে অশান্তি।

ফলে একটা সময়ে দায়িত্বের টানাপোড়ায় কখনও ছেলে স্ত্রীকেই টেনে নেয়

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে ছেড়ে বাবা-মায়ের কাছেই চলে যায়।

ফলে ডিভোর্স ছাড়া উপায় থাকে না।

তবে এক্ষেত্রেও একটা ব্যাপারে সতর্ক করা দরকার পাঠকদের, যে শ্বশুর-শাশুড়ির সাহচার্য বা বন্ধু বান্ধবের নৈকট্য সহ্য করতে না পারা স্ত্রী মানেই এই নয়, তারা এই ক্যাটাগরিতে পড়ছে।

কেননা, এদেশের ডিভোর্সের কেইস স্টাডিতে, প্রতি লাখেও ১টার বেশি খুব চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি যে- শ্বশুর-শাশুড়ি অনেক ভালো থাকার পরেও স্ত্রী ঘাড়-বেঁকে আলাদা হতে গো ধরেছে।

বরং কেসেই দেখা গেছে, সংসার জীবণের শুরু থেকেই বেশ দীর্ঘ একটা সময় ধরে, এসকল শ্বশুর-শাশুড়ি, কিংবা বন্ধ মহল, কিংবা ছেলের আত্মীয়রা এমন সব অস্বাভাবিক দাবি করে আসছে, মেয়েটার কাছে, মেয়েটার বাবা মায়ের কাছে, যে মেয়েটা সেসব পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

এর ফলে শুরু করে অমানুষিক অত্যাচার, শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে।

এমন সব সার্ভিস ঘরের বউ এর কাছে প্রত্যাশা করে সার্ভিস, যা বুয়া কিংবা নার্সের কাছেও কেউ করতে পারবে না।

প্রত্যাশা পূরণ না হলেই, অফিস ফেরত ছেলেকে নালিশ

আর এদেশের ছেলেরা সেই বিখ্যাত একপক্ষের ধর্মীয় শিক্ষায়, জাস্ট বাবা মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্বটা পড়েই যেহেতু মানুষ।

সুতরাং সহজেই বাবা মায়ের এসব নালিশে বিশ্বাস করে, বিন্দুমাত্র স্ত্রীর দিক বিবেচনা না করে, স্ত্রীর কথাকে বিশ্বাস না করেই, স্ত্রীকে জাজ করা শুরু করে।

যে মেয়েটা সংসারের শুরুতে নিজের আপন বাবা-মায়ের আসনে শ্বশুড় শাড়িকে বসিয়েছিল তাদের থেকে এহেন আচরণ পেয়ে।

তাদের প্ররোচনায় নিজ স্বামীকে দূরে চলে যেতে দেখে, আতংকে সংসার বাঁচাতেই তখন প্রেশার দেয় আলাদা সংসার করতে।

তাই একজন মেয়ে আলাদা সংসার করতে চায় শুনেই যদি ভেবে বসেন, এই মেয়ে মিশুক না, স্বার্থপরের মতো নিজেরটা বোঝে।

তাহলে বলেই হবে মশাই, আপনার বিচার কার্য খুবই একপাক্ষিক।

আপনি পুরো ঘটনা জানেন না, পুরো কাহিনী বোঝেন না, শুধুমাত্র বৃদ্ধ পিতা মাতার চোখের পানি দেখেই জাজ করে ফেললেন মেয়েটা খারাপ।

বিচার যদি করতেই হয়,দুই পক্ষের কথা পুরোপুরি শুনেই করুন। যে ধর্মের রেফারেন্সে আপনি বাবা মায়ের হয়ে সাফাই গাইবেন, জেনে রাখুন, সে ধর্মেই আল্লাহ বলেছে, সামর্থ্য থাকলে বিয়ের পর স্ত্রী নিয়ে আলাদা গৃহে বসবাস করতে পুরুষকে।

বাবা মায়ের দেখভালের জন্য দাসী রাখতে।

সে সামর্থ না থাকলে নিজে দেখভাল করতে।

কিন্তু স্ত্রী কোনভাবেই বাধ্য নয়, সে ছেলের বাবা মায়ের জন্য সকাল থেকে রাত অবধি ঝি এর মতো খাটতে, রান্না বান্না করতে, হাত পা টিপে দিতে।

স্ত্রী সেবা করলেও তার নিজের বাবা মায়ের করবে।

প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব তার বাবা মায়ের সেবা করা

সে সূত্রে ছেলে করবে তার বাবা মায়ের সেবা। স্ত্রী নয়। স্ত্রী যদি এরপরও করে থাকেন স্বশুর-শাশুড়ির সেবা, তবে তা সেই স্ত্রীর উদার মনের পরিচয় হবে।

কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি যদি এ নিয়ে স্ত্রীকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে, চাপ প্রয়োগ করে, ছেলের কাছে নালিশ করে, স্ত্রীকে বকা-ঝকা করে।

আল্লাহ সাথে সাথে স্বামীকে নির্দেশ দিয়েছেন স্ত্রীকে এসব অবিচার থেকে বাঁচাতে।

জ্বী ঠিকই শুনেছেন।

আমাদের গ্রাম বাংলায় হাজার বছর ধরে যে রীতিতে শ্বশুর-শাশুড়ি ছেলের বউদের সাথে ব্যবহার করে আসছে, সংসারের কাজ করতে বাধ্য করে আসছে; সহীহ ইসলামের চোখে তা অবিচার।

এখন পুত্র খালি অর্ধেক ইসলাম জ্ঞান জেনে যদি বাবা মাকে হুশিয়ার না করে, স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার না করে- তবে পুরুষ একমাত্র দায়ী এইসংসার ভাঙার পিছে।

তাই এসকল ব্যাপারে কিছুতেই নারীকে ঐ এডজাস্ট করতে রাজী না ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না।

আর এসিব না করলেই, ডিভোর্স!

পরবর্তী পর্বে চলবে…

চতুর্থ পর্ব পড়ার জন্য ক্লিক করুন এখানে