ত্বক ভাল রাখার প্রথম ধাপই হল ক্লিনজিং বা পরিষ্কার করা। আলস্যের কারণে বা সময়ের অভাবে অনেকেই শুধু জলের ঝাপটা দিয়েই মুখ ধুয়ে নেন।
কিন্তু, ত্বক দূষণমূক্ত রাখতে রাখতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ কিন্তু ক্লিনজিং।
আর যদি একনে, পিগমেন্টেশন, বলিরেখা থেকে ত্বক দূরে রাখতে চান তা হলে অবশ্যই করুন ডাবল বা ডিপ ক্লিনজিং।
ডাবল ক্লিনজিং কী?
অনেক বিউটি রুটিনের নাম শুনে বোঝা না গেলেও ডাবল ক্লিনজিং-এর মানে বোঝা খুবই সহজ।
একের বেশি প্রোডাক্ট দিয়ে দু’বার ত্বক পরিষ্কার করাই হল ডাবল ক্লিনজিং।
ডাবল ক্লিনজিং মানে একই ফেসওয়াশ দিয়ে দুইবার মুখ ধোয়া নয়। বরং প্রথমে শুকনো ত্বকে আলতো করে মাখা হয় তেল বা তেলযুক্ত একটি ক্লিনজার।
এতে মুখ থেকে মেকআপ তোলা সহজ হয়।
এরপর এই তেল ধুয়ে ফেলা হয় ও মুখে মাঝা হয় একটি ক্রিম বেজড ক্লিনজার, যাতে মেকআপের শেষ অংশটাও উঠে আসে।
এ পদ্ধতিতে ত্বক থেকে ভারি ক্লিনজার দিয়ে মেইকআপ এবং অতিরিক্ত ‘সিবাম’ তুলে ফেলা হয়।
পরের ধাপে হালকা ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কারের ফলে ধুলাময়লা এবং মৃত কোষও দূর হয়।
সারাদিন মেকআপ দিয়ে থাকার পর রাত্রে ডাবল ক্লিনজিং করা হয়। আর ডাবল ক্লিনজিং এর শেষে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
কীভাবে করবেন ডবল ক্লিনজিং?
ডবল ক্লিনজিং-এর প্রথম ধাপ হলো রিমুভারের সাহায্যে মেকআপ তুলে ফেলা। ওয়াইপসের সাহায্যে নয়। তেল বা বাম রিমুভার হিসেবে খুব ভালো।
এর পর কোনও জেল বা ক্রিমি ফেস ক্লিনার ও জল দিয়ে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।
কখন করবেন ডাবল ক্লিনজিং?
সকাল, সন্ধ্যা দুই সময়ের জন্যই ডাবল ক্লিনজিং উপকারী। যে হেতু ত্বকের রোমকূপে ধুলো, বালি ময়লা জমে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে, তাই ডাবল ক্লিনজিং নিয়মিত রুটিনের অংশ করে ফেলুন।
ক্লিনজিং কেনো প্রয়োজন?
পরিবেশ দূষণের কারণে এখন ঘরের বাইরে পা রাখলেই ত্বক দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আর রোদের তাপ, দূষণ, মেইকআপ ইত্যাদি কারণ তো আছেই। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, দীর্ঘ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকা ইত্যাদি কারণেও ত্বকের ক্ষতি হয়।
আর আছে ঘাম এবং ত্বকের স্বাভাবিক তেল নিঃসরণ।
এই প্রতিটি উপাদান সারাদিন পর ত্বক থেকে নিখুঁতভাবে পরিষ্কার না করা হলে ব্যক্টেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে নানারকম সমস্যা হতে পারে।
আর এই কারণেই ডাবল ক্লিনজিং পদ্ধতিতে ত্বক পরিষ্কার করা দরকার।
প্রথম ধাপ: অয়েল ক্লিনজিং
ত্বকের সঙ্গে মানানসই তেল মিশ্রিত ক্লিনজার পর্যাপ্ত পরিমাণে কপালে, গালে, নাকে এবং থুতনিতে নিয়ে ভালোভাবে আলতো হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। ত্বক শুকনা থাকতে হ
মুখে আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করলে মেইকআপ এবং জমে থাকা ময়লা উঠে আসবে। কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চোখ এবং ঠোঁটের মেইকআপ ওঠাতে, অয়েল ক্লিনজার ব্যবহারের আগে মেইকআপ রিমুভার দিয়ে মেইকআপ উঠিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয় ধাপ: ফোম ক্লিনজার
সামান্য পরিমাণে ক্লিনজার হাতে নিয়ে ঘন ফেনা তৈরি করতে হবে। এই ফোম পুরো মুখে এবং গলায়, কপালে এবং নাকের ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে যেন মুখে খুব বেশি হাত দিয়ে ঘষাঘষি না করা হয়।
এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। কপালের কাছে চুলের অংশও ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
সব শেষে নরম তোয়ালে দিয়ে শুকনা করে মুখ মুছে নিতে হবে।
পুরো প্রক্রিয়া শেষে ত্বকে অবশ্যই ভালো মানের পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার লোশন বা ক্রিম লাগিয়ে নিতে হবে।
নতুবা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে এবং আর্দ্রতা হারাবে।
শীতের মৌসুমে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেওয়া খুবই জরুরি।
কীভাবে কাজ করে ডাবল ক্লিনজিং?
ডাবল ক্লিনজিং ত্বকের রোমকূপের গভীরে গিয়ে পরিষ্কার করে। যা অ্যাকনের সমস্যা দূর করে। ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখায়।
ডাবল ক্লিনজিং-এর ফলে যে কোনও প্রোডাক্ট যেমন ক্রিম, সিরাম, ফেসিয়াল অয়েল অনেক ভাল ভাবে শোষিত হয়।
এর উপকারিতা কী?
ডাবল ক্লিনজিং করলে ত্বক থেকে নিখুঁতভাবে দূর হয় মেকআপ ও অন্যান্য প্রসাধনী। ক্লিনজিং করার পর ত্বক অনেকটাই কোমল হয়ে ওঠে।
এতে ত্বকে ব্রণের উৎপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
সব ধরনের ত্বকেই কী ডাবল ক্লিনজিং করা যায়?
অনেকেই ভাবছেন, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ তৈলাক্ত ত্বকে আর তেল দেওয়া উচিত নয়।
কিন্তু তেল এক্ষেত্রে চুম্বকের মতো কাজ করে। তা ময়লা ও মেকআপ টেনে তুলে ফেলে ত্বক থেকে। ফলে তেল ধুয়ে ফেললে ত্বক আগের তুলনায় বেশি ফ্রেশ হয়ে যায়।
আর ক্রিম ক্লিনজার ব্যবহার করলে ত্বক আরও উপকৃত হয়। ফলে যে কোনো ধরনের ত্বকের অধিকারী মানুষ এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
ডাবল ক্লিনজিংএর পর কী করতে হবে?
অনেকেই মুখ ধোয়ার পর সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। ডাবল ক্লিনজিং করলে ত্বক ইতোমধ্যেই নরম, কোমল হয়ে ওঠে।
তাই সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন অল্প পরিমাণে। এছাড়া নিয়মিত ডাবল ক্লিনজিং করলে ত্বক মসৃণ হয়ে ওঠে।
ফলে এই ত্বকে মেকআপ করাটাও সহজ হয়।