আমাদের ত্বক-এর সর্বোচ্চ স্তরে একটি মৃতকোষের আবরণ থাকে!
এবং আমাদের ত্বক প্রতি দুই সপ্তাহে নতুন কোষ উৎপাদন করে পুরনো ও মৃত কোষগুলোকে উপরের দিকে উঠিয়ে দেয়।
এই প্রক্রিয়াটি হতে দুই সপ্তাহের মত সময় লাগে।
আমাদের ত্বক-এর সর্বোচ্চ স্তর হলো মৃতকোষী স্তর।
এই পুরোটি রিপ্লেস হতে সময় লাগে প্রায় ৫০ দিনের মতো।
কিন্তু বয়স, হরমোন, আবহাওয়া এবং বিভিন্ন কারণে এই প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়।
যার কারণে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস, লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাইপারপিগমেন্টেশন, একনে ব্রেকআউট ইত্যাদি৷
আর এ সব কিছু থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে এক্সফোলিয়েটর৷ এক্সফোলিয়েটর আমাদের ত্বক-এর এই মৃত কোষগুলো দূর করে ফেলে, আমাদের ত্বক-এ নতুন কোষ উৎপাদনে সাহায্য করে!
এবং এর ফলে আমাদের ত্বক-এ ব্যবহৃত বাড়তি যেসব প্রোডাক্টগুলো যেমন – ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, টোনার এগুলোকে আরও গভীরে ঢুকিয়ে ত্বক-এ বাড়তি পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।
এক্সফোলিয়েটর মূলত দুই রকমের হয়ে থাকে।
ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর এবং কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর
ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বা মেকানিক্যাল এক্সফোলিয়েটর আমাদের ত্বকের উপরে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে!
এবং সেই ঘর্ষনের মাধ্যমে আমাদের ত্বকের ডেড স্কিন গুলো তুলতে বা রিমুভ করতে সাহায্য করে।
যেমন স্ক্রাব, কফি, বেকিং সোডা দিয়ে তৈরী হোমমেইড স্ক্রাব ইত্যাদি। তবে স্ক্রাব এর সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত।
এছাড়াও অন্যান্য ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর এর মধ্যে আছে কঞ্জাক স্পঞ্জ, ফেসিয়াল ব্রাশ, পিলিং জেল ইত্যাদি।
কিন্তু, এ ধরণের এক্সফোলিয়েটর ত্বকের জন্য খুব খসখসে ও ক্ষতিকর হতে পারে।
কেননা এতে থাকা অসমান ও অমসৃণ দানাগুলো আমাদের ত্বকে মাইক্রো টিয়ার্স এর সৃষ্টি করে।
যার ফলে আমাদের স্কিন ব্যারিয়ার ড্যামেজ হয়, ত্বক সেনসিটিভ হয়ে যায় এবং আরও নানা সমস্যা দেখা যায়৷
তাই ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহারে উপকারের থেকে অপকারই বেশি হয়।
কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর আমাদের ত্বকের গভীরে ঢুকে ত্বকের ডেডসেল গুলোকে ভিতর থেকে বাহিরে বের হতে সাহায্য করে।
জনপ্রিয় দুটি কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর এর নাম হলো এএইচএ বা AHA (Alpha Hydroxy Acid) এবং বিএইচএ বা BHA (Beta Hydroxy Acid) আমরা অনেকেই অ্যাসিডের নাম শুনে ভয় পাই।
তবে এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ আমরা যে পানি পান করি সেটাও কিন্তু কেমিক্যাল মানে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন এর সমন্বয়ে গঠিত।
কেমিক্যাল বা অ্যাসিড মানেই যে খারাপ এমনটা ভাবার কারণ নেই
এরা ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর এর মত এত দ্রুত ফলাফল দেয় না কিন্তু ত্বকের জন্য তুলনামূলক অনেক নিরাপদ ও কার্যকর।
এগুলো লিকুইড, টোনার, সিরামের মতো হয় যা স্কিনের ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস গলিয়ে স্কিনের ভেতর থেকে বের করে আনে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর এর মতো কোন ধরণের স্ক্রাব না করে।
যদি আপনি আগে কখনো এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করে না থাকেন তাহলে একজন বিগিনার হিসেবে এএইচএ (AHA) এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করতে পারেন৷
এএইচএ (AHA) এক্সফোলিয়েটর ড্রাই স্কিনের জন্য এবং বিএইচএ (BHA) অয়েলি স্কিনের জন্য ভালো কাজ করে থাকে।
তবে শুরুতে স্কিন যে টাইপেরই হোক না কেন এইএচএ (AHA) এক্সফোলিয়েটর দিয়ে শুরু করা ভালো৷
এরপর ধীরে ধীরে এটি স্কিনে স্যুট করলে বিএইচএ (BHA) এক্সফোলিয়েটর স্কিন কেয়ার রুটিনে যুক্ত করতে পারেন।
এইএচএ (AHA) এক্সফোলিয়েটর হলো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড।
বিএইচএ (BHA) এক্সফোলিয়েটর হলো স্যালিসিলিক এসিড৷
সেনসিটিভ ত্বকের জন্য প্রোডাক্ট বাছাইয়ের সময় বেশ সতর্ক থাকতে হয়
সেভাবেই এ ধরণের ত্বকে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহারের পূর্বে হাতে বা কানের পিছনে প্যাচ টেস্ট করে দেখা উচিত কোন ধরণের রিয়েকশন হয় কি না।
২০ বছর বয়স থেকে এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা যাবে।
তবে যাদের বয়স ১৮ এর নিচে তাদের সরাসরি এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা উচিত না৷
মাইল্ড এক্সফোলিয়েট করে এমন কোন ফেইসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত৷
এছাড়াও কম মাত্রা দিয়ে শুরু করতে হবে যেমন যেন AHA ১০% এর নিচে হয় এবং BHA ২% এর নিচে।
ধীরে ধীরে এ মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে।
এক্সফোলিয়েটর কখনো দিনে ব্যবহার করা যাবে না
রাতে ব্যবহার করতে হবে।
প্রথম সপ্তাহে এক বা দুই দিন, দুই সপ্তাহ পর দুই দিন এভাবে এক মাস পর সর্বোচ্চ তিন দিন ত্বকে এক্সফোলিয়েটর
ব্যবহার করতে হবে৷ এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
সানস্ক্রিন কোনভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। বাহিরে গেলে, রান্না বা চুলার কাছে থাকলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
কারো ফাংগাল একনে থাকলে ফাংগাল একনে সেইফ এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করতে হবে।