আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ-ই হলো এমন এক ইন্দ্রিয় যার মাধ্যমে আমরা জগতের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করি। আবার অন্যদিকে চোখ হলো মনের আয়না স্বরূপ। মনের কথা বলে দেয় আমাদের দৃষ্টি।
চোখ নিয়ে সাহিত্য, গান কত কিছুই না লেখা হয়েছে। কিন্তু এই চোখের আগে যদি নাকের উপর এঁটে বসে একজোড়া চশমা, তবে ব্যাপারটা বেজায় বিটকেল হয় তাতে সন্দেহ নেই! কিন্তু যদি এমন হয়, আপনাকে এসব নাই করতে হয় আর আপনার চোখও ভালো থাকে। সেটা জানতে অবশ্যই ফলো করতে আজকের টিপস।
চোখে চশমা বসার কারণ:
- আজকাল কমবয়সী পড়ুয়াদের চশমা ও ভারী পাওয়ার নিতে হচ্ছে। অনেকে সে ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে কন্ট্যাক্ট লেন্স লাগাচ্ছেন বটে। কিন্তু এই দৃষ্টি সমস্যার কারণ অনেক।
- গ্লুকোমা বা চোখের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে চোখের অপটিক স্নায়ু অকেজো হয়ে দৃষ্টিশক্তির বিলোপ।
- চক্ষুনালীর প্রদাহ ও চোখের বহিঃস্থ শিরা ফুলে রক্তাভ বর্ণ ধারণ করা ও সংক্রমণ।
- ভিটামিন এ এর অভাবে চোখের মিউকাস শুকিয়ে কর্নিয়ার আলসার হয়ে যাওয়া।
- ইউভিয়াটাইটিস বা ভাস্কুলার কোটের প্রদাহ যেটাতে চোখের যোজককলার ক্ষয় সাধিত হয়।
- মায়োপিয়া বা দূরের জিনিস স্পষ্ট ভাবে দেখতে না পাওয়া বা আবছা দেখা। এই রোগে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনার আগে গঠিত হয়।
- এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষেত্রে কম্পিউটার এর সামনে বসে থাকা, মোবাইল স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় যাবৎ চোখ রাখা, অতিরিক্ত টিভি দেখা ইত্যাদির ফলে চোখের দৃষ্টি অস্বচ্ছ হওয়া মাথাধরা বা চোখ লাল ইত্যাদি হয়।
চোখের যত্ন নিন
ব্রেক গ্রহণ:
- যারা ডেস্ক জব করেন বা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার এর কাজ যাদের করতে হয়, তাদের কম দূরত্বে বেশিক্ষণ ধরে ফোকাস বজায় রাখতে হয়, তাই দূরের দৃষ্টি খর্ব হয়ে যায়। ফলে মায়োপিয়া হবার চান্স থাকে।
- বই পড়ার অভ্যেস থাকলে চোখের সাথে ৩০° কোন মেন্টেন করে পড়ুন ও বেশি টানা পড়বেন না। শুয়েশুয়ে বই পড়া ঠিক না। টিভি দেখুন মিনিমাম ১০ফুট দূরত্বে।
- তাই টেবিলে বসে কাজ করার সময় ৩০মিনিট ছাড়া ছাড়া ব্রেক নিন ও দূরের জিনিস দেখুন। সবুজ গাছপালা দেখুন তাতে চোখ আরাম পাবে।
পলক ফেলা:
- ল্যাপটপের মনিটর হোক বা ফোনের স্ক্রিন বা টিভির এলইডি ডিসপ্লে সবথেকেই ক্ষতিকর ব্লু রে বেরোয় যা আমাদের চোখের পিউপিলের বারোটা বাজায় সাথে অনিদ্রা ও মনসংযোগহীনতা ডেকে আনে।
- তাই ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন নতুবা চোখ হয়ে যাবে শুস্ক। মিনিটে কমপক্ষে ১৫বার চোখের পলক ফেলা জরুরি।
- পারলে গ্লেয়ার ফ্রি স্ক্রিন লাগান মনিটর এ। তাতে ব্লু লাইট ফিল্টার হয়ে যাবে।
আলোর পর্যাপ্ততা:
- আমাদের অনেকের মধ্যেই অভ্যাস আছে ঘর অন্ধকার করে টিভি দেখার, তাতে নাকি আনন্দ ও মজা বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু আখেরে তা চোখের রড কোষের উপর মারাত্মক প্রেশার দেয়।
- এর ফলে চোখের পেশীর উপর স্ট্রেন পড়ে ও চোখের রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- আইরিশ ও পিউপিল এর আকার বিগড়ে যেতে পারে। তাই কম আলোতে কাজকরার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
ত্রিফলার মন্ত্র:
- আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খুবই কার্যকরী। বহেড়া, বৈঞ্চি ও আমলকী একটা ব্লেন্ডারে নিয়ে চূর্ণ করে ফেলুন।
- সকালে খালি পেটে জলের সাথে মিশিয়ে ত্রিফলা চূর্ণ খেতে পারেন।
- এটি চোখের বর্ণ পৃথক করার ক্ষমতা ও ভিট্রিয়াস হিউমর এর মতো সূক্ষ্ম ব্যাপার গুলিকে সুরক্ষিত
- করে ও চোখের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
ভিটামিন ইনটেক বাড়ান:
- চোখ ভালো রাখতে অতিরিক্ত মাছ মাংস ভক্ষণ প্রধান বাধক হয়ে দাঁড়ায় সাথে সবুজে অরুচি ও একটা বড় কারণ।
- কিন্তু শাকসবজি এর সাথে চোখের বোঝাপড়া খুবই নিপুণ। তাই চোখ বুজে গাজর, টমেটো,
- ব্রকোলি, বিন্স, পেপার, ফলমূল ও ড্রাই ফ্রুটস খান। সব ভিটামিন এর উৎস নিহিত রয়েছে এর মধ্যে।
সূর্যোদয় দেখা:
- চোখের সংবেদনশীলতা বাড়াতে ও শিথিলতা কমাতে সকালের সূর্যালোকের সমতুল্য কিছু হয় না।
- তাই সকাল সকাল মর্নিং ওয়াকে বেরোন ও চোখ জুড়িয়ে সবকিছু আলোয় দেখুন।
- এতে আপনার স্বাস্থ্য ও ভালো থাকবে।
উষ্ণতার ছোঁয়া:
- চোখে টান অনুভব করলে দুটি হাতের তালু ঘষে গরম করে ৩০ সেকেন্ড মতো চোখের পাতা
- বন্ধ করে তার উপর চেপে ধরুন। এটি একটি ইনস্ট্যান্ট টোটকা।
- এটি চোখ রিজুভিনেট করে। চোখের স্পর্শকাতরতা কমবে ও সক্রিয়তা বাড়বে।
চোখের ব্যায়াম:
- মাথা স্থির রেখে ক্লকওয়াইজ চোখের মণি ১০বার ও এন্টি ক্লকওয়াইজ ১০বার ঘোরান।
- এটি করলে চোখের লাল ভাব ও ভার হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
- চোখ বন্ধ করে চোখের মণি উপর থেকে নীচে ও নীচ থেকে উপরে তুলুন। এইভাবে ৫-১০বার করুন।
- চোখের সামনে একটি কলম বা ফুল ধরে এগিয়ে আনুন যতক্ষন না সেটার উপর চোখ তার
- ফোকাস হারাচ্ছে এবং সেটা ঘোলাটে দেখছেন। এরপর আস্তে আস্তে সেটা চোখের থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে সেটার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। এইভাবে বার কয়েক রিপিট করুন।