Search
Close this search box.

ফেসিয়াল হেয়ার দূর করার ঘরোয়া উপায়

হঠাৎ একদিন খেয়াল করলেন আপনার ঠোঁটের উপর গোঁফের মত দেখা যাচ্ছে।

অথবা কানের পাশটায় মোটা মোটা লোম উঠেছে।

কী একটা ব্যাপার! না পারবেন ঢাকতে, না পারবেন কমফোর্ট বজায় রাখতে৷

ছেলে মেয়ে সবারই শরীরে ও মুখে লোম গজায়। পার্থক্য হচ্ছে, উভয়ের শারীরিক গঠন।

ছেলেদের শরীরের লোম মোটা ও বড় হয়, যা মেয়েদের ক্ষেত্রে উল্টো।

বিপত্তি তখনই হয় যখন মেয়েদের লোম অস্বাভাবিকভাবে বড় ও মোটা হতে শুরু করে।

আর এই লোমবৃদ্ধির ব্যাপারটা যখন মুখে হয় তখন সমস্ত সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।

আজকে জানাবো কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে দূর হবে ফেসিয়াল হেয়ার সে সম্পর্কে।

ফেসিয়াল হেয়ার কি?

ফেসিয়াল হেয়ার বা মুখের অবাঞ্ছিত লোমকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে হারসুটিজম।

হারসুটিজম হলে মেয়েদের মুখে, বিশেষ করে ঠোঁটের উপরে ও চোয়ালে বাড়তি লোম গজিয়ে পুরুষালী ভাব আসে।

এছাড়া পিঠে, বগলে, বুকেও লোম গজায়।

ফেসিয়াল হেয়ার কেন হয়?

শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বেশি হলে। এই হরমোন মূলত পুরুষদের শরীরে থাকে।

মেয়েদের শরীরেও এটি সামান্য পরিমাণে থাকে।

কিন্তু যখন এর পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তখন অবাঞ্ছিত লোম গজায়।

  • ওভারিতে সিস্ট, টিউমার, বা ক্যান্সার হলে।
  • গর্ভাবস্থায় ও মেনোপজ হলে মেয়েদের শরীরে হরমোনের বিরাট পরিবর্তন হয়। এতে অস্বাভাবিক ফেসিয়াল ও বডি হেয়ার গজায়।
  • কিডনির উপরে থাকা অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থিতে কোন রোগ থাকলে।
  • অনেক সময় জেনেটিক কারণেও ফেসিয়াল হেয়ার গজায়।
  • চিকিৎসার খাতিরে ব্যবহৃত ওষুধ ও ট্রিটমেন্টও মুখের অবাঞ্ছিত লোমের কারণ হতে পারে।
    যেমন চুল গজানোর ওষুধ (মিনোক্সিডিল, রোজেইন), হরমোন ট্রান্সপ্ল্যান্ট, অরগান ট্রান্সপ্ল্যান্ট, টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি পূরণ করার ওষুধ (অ্যান্ড্রোজেল, টেস্টিম) ইত্যাদি।
  • শরীরে অ্যান্ড্রোজেন নামক পুরুষ হরমোন বেড়ে গেলেও ফেসিয়াল ও বডি হেয়ারের সমস্যা প্রকট হয়।
    অতিরিক্ত ওজন ও অ্যান্ড্রোজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় এমন ওষুধ অ্যান্ড্রোজেনের বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
  • বিরক্তিকর ফেসিয়াল হেয়ার দূর করার অনেক প্রফেশনাল পদ্ধতি আছে।
    কিন্তু সেগুলো সবসময় আশানুরূপ ফল দেয় না।
    তাই রান্নাঘরে থাকা উপাদান দিয়ে খুব সহজে মুক্তি পাবেন অবাঞ্ছিত লোম থেকে।

১. জেলাটিনের মাস্ক

উপাদানসমূহ

  • ফ্লেভার মুক্ত জেলাটিন – ১ চা চামচ
  • কাঁচা দুধ – ২ চা চামচ (দুধটা হালকা গরম করে নিবেন তবে জ্বাল দিবেন না। জ্বাল দিলে কাঁচা দুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে)
  • খাঁটি মধু – ১ চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ
  • হলুদ গুঁড়া – এক চিমটি
  • লেবুর রস বা এসেনশিয়াল অয়েল – ১-২ ফোঁটা (যদি জেলাটিনের গন্ধ ভালো না লাগে)

যেভাবে ব্যবহার করবেন

মাস্কটা লাগানোর আগে মুখ ভালোমতো পরিষ্কার করে নিন।

এরপরে গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে মুখের উপর ৫ মিনিট চেপে রাখুন।

এতে পোরগুলো খুলে যাবে আর মাস্ক ত্বকের ভিতরে ঢুকতে পারবে।

সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট বানান, সাথে সাথেই ব্যবহার করুন।

হালকা গরম দুধের কারণে মিশ্রণটা গরম লাগবে তাই একটু ঠান্ডা করে নিবেন।

বেশী দেরি করলে মিশ্রণটা শক্ত হয়ে যাবে।

তখন ব্যবহারের আগে ওভেনে ৫ সেকেন্ড রেখে দিবেন।

এবারে চোখের গোলাকার অংশ বাদে সারা মুখে মাস্কটা নরম ও ফ্ল্যাট মেকআপ ব্রাশ দিয়ে লাগান।

মাস্কটা শুকাতে ৩০ মিনিট লাগবে।

এরপরেও যদি ভেজাভাব থাকে তাহলে আরও ৫ মিনিট শুকাতে দিন।

শুকিয়ে আসলে চোয়ালের দিক থেকে আস্তে আস্তে উপরের দিকে টেনে তুলুন।

এভাবে তুললে ফেসিয়াল হেয়ার পুরোপুরি উঠে আসবে।

মাস্ক তোলার পরে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন।

এরপরে সাথে সাথে বরফ খন্ড দিয়ে মুখ ঘষে নিন চেহারায় জ্বালাভাব ও রেডনেস কমানোর জন্য।

তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

সপ্তাহে একবার বা দুইবার জেলাটিনের মাস্ক ব্যবহার করলে ফেসিয়াল হেয়ার, দাগছোপ, পোড়া দাগ উধাও হয়ে যাবে।

উপকারিতা

  • জেলাটিনে থাকা প্রোটিন ও অ্যামিনো এসিড ত্বকের বলিরেখা, সান ড্যামেজ, স্ট্রেচ মার্ক অপসারণ করে। ত্বককে করে ঝলমলে ও চিরযৌবনা।
  • কাঁচা দুধ ত্বকে ক্লিনজিং-টোনিং-ময়েশ্চারাইজিংয়ের কাজ করে। এর নিউট্রিয়েন্টস মুখের বলিরেখা ও পোড়া দাগ দূর করে।
  • মধু ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে।
  • হলুদ ত্বকের বা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম স্থায়ীভাবে নির্মূল করে।

২. আলুর মাস্ক

উপাদানসমূহ

  • আলুর রস – ৫ টেবিল চামচ
  • মধু – ১ টেবিল চামচ
  • লেবুর রস – ১ টেবিল চামচ
  • মসুর ডাল মিহি বাটা – ১ টেবিল চামচ

যেভাবে ব্যবহার করবেন

মুখ পরিষ্কার করে গরম তোয়ালে দিয়ে চেপে নিন৷

সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে ব্রাশ দিয়ে লোমের জায়গায় লাগিয়ে নিন।

কমপক্ষে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন শুকানোর জন্য।

যদি না শুকায় তাহলে আরো ৫-৭ মিনিট রাখুন।

শুকিয়ে আসলে মাস্কটা ঝরে পড়বে, সাথে ফেসিয়াল হেয়ারও।

এরপরে স্বাভাবিক পানিতে মুখ ধুয়ে নিন।

উপকারিতা

  • এই মাস্ক ব্যবহারে আরামদায়ক। টেনে তুলতে হয় না, আবার চেহারায় লালভাব বা জ্বালা করে না।
  • আলুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজ করে।