তিসি বীজ হলো ফাইবার জাতীয় ফসল যা সাধারণত শীত অঞ্চলে চাষ করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে তিসি বীজ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায় এবং এটি স্বাস্থ্য প্রতিরক্ষামূলক বীজ হিসেবে খুবই পরিচিত।
আমরা সবাই কম বেশি জানি যে এই বীজগুলি খুব স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু চুলের জন্য এটির উপকারিতা অনেক সেটা কি জানি?
তিসি বীজ রুপচর্চার এক অন্যতম উপাদান। এই তিসি বীজ দিয়ে আমাদের নানী দাদীরা তৈরি করতো তেল বা হেয়ার প্যাক।
যা ব্যবহারের মাধ্যমে তারা তাদের চুলের যত্ন নিতেন।তাই তাদের চুল এখনো সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
কিন্তু এই অনম্য উপাদানগুলো আজ হাড়িয়ে যাওয়ার পথে।
বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে এসব উপাদানের উপকারিতা সম্পর্কে আমদের ধারণা খুব কম। তাই আজ জানাবো তিসি বীজের উপকারিতা।
তিসি বীজের পুষ্টি গুণাগুণ
তিসি বীজের গুণাগুণ অনেক সেটা না হয় জানিয়ে দিলাম।
কিন্তু এই তিসি বীজে কি কি গুণাগুণ রয়েছে সেটা জানানো উচিৎ।
এক টেবিল চামচ তিসি বীজ কী কী ধারণ করে বা এর গুণাবলি:
- ক্যালরি ৩৭
- প্রোটিন ১.৩ গ্রাম
- কার্ব ২ গ্রাম
- ফাইবার ১.৯ গ্রাম
- ফ্যাট ৩ গ্রাম
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ১,৫৯৭ মিলি
- ক্যালসিয়াম ২%
- আয়রন ২%
- ম্যাগ্নেসিয়াম ৭%
- ফসফরাস ৪%
- পটাসিয়াম ২%
- ভিটামিন বি-১ ৮%
- ভিটামিন বি-৬ ২%
এত্ত এত্ত উপাদান দেখে নিশ্চয়ই চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে। হ্যা, তিসি বীজ এতোগুলো গুণাবলিতে ভরপুর।
তাহলে আজ থেকেই তিসি বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে ফেলুন।
মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তিসি বীজ ভিটামিন ও পুষ্টিগুণের উৎস। এতে রয়েছে ভিটামিন-ই ও বি। ভিটামিন আমাদের মাথার ত্বকের ফ্রি রেডিক্যালস কম করতে সাহায্য করে।
যার ফলে মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
নতুন চুল গজানো ও চুল পড়া বন্ধ করে
ভিটামিন আমাদের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। যার ফলে চুল গোড়া থেকে শক্ত
আর চুল পড়া বন্ধ করে।
মাথার ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে
তিসি বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি আমাদের চুলের ও মাথার ত্বকের ময়েশ্চার লক করে রাখে।
আমাদের তুলের প্রাকৃতিক তেল ধরে রেখে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আগা ফাটা বন্ধ করে
ভেঙে যাওয়া চুল প্রতিরোধ করতে তিসি বীজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিসি বীজ চুলের ব্রেকেজ ও আগা ফাটা বন্ধ করে স্মুথ করে তুলে।
যাদের চুল খুব ফ্রিজি এবং ম্যানেজ করা কষ্টসাধ্য সেক্ষেত্রে তিসি চুলকে সফট করে ট্যাঙ্গেল হওয়া থেকে বাঁচাবে।
খুশকি দূর করতে সাহায্য করে
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফসফরাস ও পটাসিয়াম যুক্ত তিসি বীজ মাথার ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে।
ফলে খুশকি আসতে বাধা দেয়। খুশকি প্রতিরোধ করে চুলে নিয়ে আসে প্রাণ।
চুল ন্যারিশ করে
তিসি বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফসফরাস, কপার, ভিটামিন ও পটাসিয়াম ইত্যাদি গুণে ভরপুর।
আমাদের মাথার ত্বকের ও চুলের প্রয়োজনীয় খাদ্যগুণে ভরপুর এই তিসি বীজ চুলের খাদ্য জোগায়।
এসব খাদ্যগুণে ভরপুর তিসি বীজ চুল ন্যারিশ করে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
চুল কন্ডিশনিং করে
তিসি বীজের জেল ফর্মুলা চুলের রাফনেস দূর করে।
রুক্ষ ও শুষ্ক চুলে কন্ডিশনিং করে চুল করে তোলে নরম আর উজ্জ্বল।
তিসি বীজের হেয়ার মাস্ক তৈরির নিয়ম
চুলের নানা ধরণের সমস্যাই সমাধান করে না বরং তিসি তেল চুলের পুষ্টিগুন বৃদ্ধি করে। আমাদের চারপাশের পলিউশান আমাদের চুল করে তোলে নিষ্প্রাণ ও নির্জীব।
তাই প্রাকৃতিকভাবে তিসি বীজের মাধ্যমে চুলের পরিচর্যা করুন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- তিসি
- পানি
- নারকেল তেল
- ল্যাভেন্ডার তেল
যেভাবে তৈরি করবেন
- প্রথমে একটি প্যানে এক বাটি তিসি বীজ নিন। অবশ্যই ধুয়ে ব্যবহার করবেন।
- সেই প্যানে তিসি বীজের চার গুণ পানি এড করতে হবে।
- এবার চুলা জ্বালিয়ে দিন। চুলার তাপমাত্রা মিডিয়াম টু লো তে রাখতে হবে। তাপমাত্রা বেশি বাড়ালে পানি শুকিয়ে যাবে।
- ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন। তলায় লাগিয়ে ফেলা যাবে না।
- যখন দেখা যাবে পানি খুব ঘন হয়ে এসেছে তখন বুঝতে হবে এটা রেডি। কিছুটা হার্ড জেলের মত দেখা যাবে।
- এবার চুলা থেকে নামিয়ে নিন। কিছুক্ষণ এমনি রেখে দিতে হবে ঠান্ডা হওয়ার জন্য।
- তবে বেশি ঠান্ডা হতে দেয়া যাবে না। তাহলে জেল বেশি ঘন হয়ে জমে যাবে।
- ফলে বীজ থেকে জেল আলাদা করা কষ্ট হয়ে যাবে। তাই অল্প একটু ঠান্ডা হলেই পরের ধাপে যেতে হবে।
- এক টুকরো পাতলা সুতি কাপড় নিন। এতে করে এবার জেল গুলো ঢেলে দিন। কাপড় খুব শক্ত করে চেপে চেপে এর জেল বাটিতে রাখতে হবে।
- পুরোপুরি ঠান্ডা না হওয়াতে এই কাজ করাটা একটু কষ্টসাধ্য।
- সম্পূর্ণ জেল বের হয়ে গেলে এটা রেডি। এবার এতে এড করুন ৬/৭ চামচ নারকেল তেল। তেল যাতে খুব বেশি না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- এরপর এড করতে হবে ১০/১২ ফোটা ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল। সবগুলো উপাদান খুব ভালোভাবে মিক্স করতে হবে।
- মিক্স করলেই রেডি হয়ে গেলো তিসি বীজের হেয়ার মাস্ক।
ব্যবহার করার নিয়ম
এই মিক্সারটি খুব আঠালো কন্সিস্টেন্সি। তাই একে খুব সাবধানে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
হেয়ার মাস্কটি ঠান্ডা হয়ে গেলে তখন ব্যবহার করবেন।
আপনার চুলগুলোকে প্রথমে আলাদা আলাদা সেকশনে ভাগ করে নিন। স্ক্যাল্প ও চুলে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন।
সম্পূর্ণ চুল ও মাথার ত্বকে লাগানোর পর ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ৫/৬ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে।তাহলে মাস্ক পুরো চুলে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারবে।
এবার ২/৩ ঘন্টা এইভাবে রেখে দিন। ভালোভাবে মাস্ক মাথার ত্বকে ও চুলে বসতে দিন।
২/৩ ঘন্টা পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে চুলের উন্নতি ও চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে।