ফল শুধু খেতেই সুস্বাদু না, এর রস চেহারায় উজ্জ্বলতা ও কমনীয়তা আনতেও সক্ষম।
ফল দিয়ে তৈরি ফ্রুট ফেসিয়াল মুখের যেকোন সমস্যা দূর করতে সক্ষম।
সাধারণ পার্লার ফেসিয়ালের চাইতে ফলের ফেসিয়াল বানানো যেমন সহজ, খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে, এবং পার্লারের চাইতে বেশি কার্যকরী।
ঘরে নানা ধরণের ফল থাকে, যা দিয়েই তৈরি করা যাবে ফলের ফেসিয়াল।
প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ফলের ফেসিয়াল থেকে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ারও সম্ভাবনা নেই, যেমনটি সাধারণ পার্লার ফেসিয়াল থেকে আছে।
পার্লারেও ফ্রুট ফেসিয়াল করা যায়, তবে আপনি যদি ঘরে বসেই ফ্রুট ফেসিয়াল তৈরি করতে পারেন, তাহলে পার্লারে যাওয়ার কি দরকার?
তাছাড়া এই লকডাউনের সময় বাইরে যাওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঘরে বেকার বসে না থেকে নিজেই হতে পারেন নিজের বিউটিশিয়ান।
আজকে আপনাদের জানাব ঘরে কিভাবে ফলের ফেসিয়াল করবেন। সাথে থাকছে ফ্রুট ফেসিয়ালের প্রতিটি ধাপের বিস্তারিত বর্ণনা।
ঘরে কিভাবে এবং কী কী দিয়ে ফলের ফেসিয়াল তৈরি করবেন?
ফলের ফেসিয়ালের কয়েকটি ধাপ আছে, যেমন ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, ব্লিচিং, স্টিমিং, ফ্রুটপ্যাক, ফেসপ্যাক, টোনার ইত্যাদি৷ প্রতিটা ধাপই আপনার ফ্রিজে থাকা ফল বা অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তৈরি করতে পারবেন অনায়াসেই। ফ্রুট ফেসিয়াল বানাতে সচরাচর যা যা লাগে।
উপকরণ
- লেবু
- কাঁচা দুধ
- লবণ
- কলা
- স্ট্রবেরি
- পেঁপে
- শসা
- গোলাপজল
- নারিকেলের পানি
- তরমুজের রস
- আটা/ময়দা
- কমলালেবুর খোসা
- মধু
- মুলতানি মাটি
- উষ্ণ গরম পানি
- তুলা
- তোয়ালে/রুমাল
এখন আমরা জানব ফ্রুট ফেসিয়ালের প্রতিটা ধাপ সম্পর্কে।
ক্লিনজিং
ফলের ফেসিয়ালের প্রথম ধাপ হচ্ছে ক্লিনজিং। এই ক্লিনজিংয়ের জন্য আপনাকে অল্প কাঁচা দুধের সাথে পরিমাণমত লেবুর রস এবং এক থেকে দুই চিমটি লবণ মেশাতে হবে।
তারপর এই মিশ্রণটি তুলায় ভিজিয়ে আলতোভাবে মুখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘষতে থাকুন। ৫ মিনিট ঘষার পরে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে মুছে ফেলুন।
স্ক্রাবিং
দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্ক্রাবিং। স্ক্রাবিং আপনি বাজারের পণ্য দিয়ে করতে পারেন আবার ঘরে বানিয়েও করতে পারেন।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডেড ফ্রুট-বেইজড স্ক্রাব পাওয়া যায়, সেখান থেকে ঋতু এবং নিজের পছন্দ মিলিয়ে যেকোন একটি স্ক্রাব কিনতে পারেন।
আর যদি ঘরে স্ক্রাবিং করতে চান, তাহলে এক কাপ তরমুজের রসের সাথে এক টেবিল চামচ আটা বা ময়দা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
চাইলে লেবুর রস দিয়েও স্ক্রাব বানাতে পারেন, এর জন্য একটি গোটা লেবুর (লেবু বেশি বড় হলে অর্ধেকটা) রসের সাথে এক চামচ মধু এবং আধা চামচ চিনি মিশিয়ে নিবেন।
এরপর এটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুখে ম্যাসাজ করবেন। অথবা লেবুর রস, কমলালেবুর খোসার শুকনো টুকরা, এবং গোলাপজল মিশিয়ে স্ক্রাবটি বানাতে পারেন।
স্ক্রাবিং শেষে ভেজা রুমাল দিয়ে মুখ ভাল করে মুছে নিন।
ব্লিচিং
এরপর আসবে তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ ব্লিচিংয়ের পালা। মধু কিংবা লেবুর রস যেটাই ব্যবহার করেন না কেন, অবশ্যই তাতে অল্প পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিবেন।
তারপর ঐ পাতলা মিশ্রণ মুখে ১০ মিনিট রেখে দিন, এরপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
আপনার ত্বকে যদি ব্লিচিং স্যুট না করে তাহলে এই পার্টটি বাদ দিন।
স্টিমিং
চতুর্থ ধাপ স্টিমিংয়ের মাধ্যমে লোমকূপের গোড়া আলগা করে ময়লা বের করার রাস্তা করতে হবে। ধোঁয়া উঠা গরম পানির কাছে মুখ নিয়ে ভাপ নিতে থাকুন।
বড় তোয়ালে দিয়ে পুরো মাথা এবং পানির গামলানঢেকে নিবেন যাতে ভাপ বাইরে চলে না যায়।
অথবা কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ ও গলা ৫ মিনিট ঢেকে রাখতে পারেন।
যদি আপনার স্কিন সেনসিটিভ হয় তাহলে স্টিমের দরকার নেই।
ফ্রুটপ্যাক
পঞ্চম ধাপে আপনাকে ফ্রুটপ্যাক বানাতে হবে। কলা, পেঁপে, স্ট্রবেরি ছোট ছোট করে কেটে তাতে এক চামচ কাঁচা দুধ এবং কিছু মধু মিশিয়ে মুখে আলতো করে লাগান।
তবে তৈলাক্ত ত্বক কিংবা ব্রণের ক্ষেত্রে দুধের বদলে লেবুর রস ব্যবহার করবেন।
শসা বা লেবু গোল গোল স্লাইস করে চোখের উপর দিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন।
৫ থেকে ১০ মিনিট পরে ফ্রুটপ্যাকটি সামান্য ম্যাসাজ করে এরপর তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন।
ফেসপ্যাক
এখন আসি ষষ্ঠ ধাপে, যেটা হচ্ছে ফেসপ্যাক প্রস্তুতকরণ। ত্বকের ধরণ বুঝে ফেসপ্যাক তৈরি করুন।
রোদে পোড়া ত্বককে ঠিক করতে শসা অথবা লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বককে উজ্জল করতে চাইলে কাঁচা দুধের সাথে কমলার রস এবং কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
ব্রণ বা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শসার টুকরার সাথে গোলাপজল এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
যদি মুলতানি মাটিতে অ্যালার্জি থাকে তাহলে শুধু শসা কিংবা গোলাপজলও ব্যবহার করতে পারবেন।
টোনার
টোনার হচ্ছে ফ্রুট ফেসিয়ালের সপ্তম এবং সর্বশেষ ধাপ। ঘরে বসে নিজেই টোনার বানাতে শসার রস, লেবুর রস, এবং নারিকেল পানি পরিমাণমত মিশিয়ে নিন।
বা দুই চা চামচ গোলাপজলের সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়েও টোনার হিসেবে লাগাতে পারেন মুখে ও গলায়।
টোনার শুকিয়ে গেলে আর মুখ ধোয়া লাগবে না, এতেই ফেসিয়াল পরিপূর্ণ হবে।
শেষ কথা
কেমিক্যালমুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পেতে চাইলে ফলের ফেসিয়াল হবে আপনার হাতিয়ার।
এটা চেহারায় এমন জেল্লা আনবে যে কেউ চাইলেও চোখ ফেরাতে পারবে না।
হ্যাঁ এটা বানাতে হয়তো একটু সময় বেশি লাগবে, খাটুনি হবে, কিন্তু চেহারায় পাবেন একেবারে পার্লারের মত প্রফেশনাল টাচ।
আমি তো বলবো তার চাইতেও বেশি জেল্লা গ্যারান্টিড।
চেষ্টা করুন প্রতি মাসে ফ্রুট ফেসিয়াল করার। মাসে একবার বা সর্বোচ্চ দুইবার এই ফেসিয়াল করলে ত্বক থাকবে টানটান, সুন্দর, ও উজ্জ্বল।
এই ফেসিয়াল গাইডটা গরমের সময় খুব ভাল কাজে দিবে। বর্ষা বা শীতের সময় হুবহু এভাবে ফেসিয়াল করলে ভাল ফল না-ও পেতে পারেন।
তখন উপাদানে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে।