একমাথা ঝলমলে উজ্জ্বল চুল পাওয়ার অন্যতম পথ হল ভালো তেল দিয়ে চুল আর মাথায় মাসাজ করা।
সুন্দর চুলের এই চিরকালীন গোপন রহস্যটির কথা জানেন সব মেয়ে।
চুলে আর স্ক্যাল্পে নিয়মিত তেল দিয়ে মাসাজ করার বেশ কিছু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারিতা রয়েছে।
উন্নত রক্ত সংবহন, ডিপ কন্ডিশনিং, শরীর-মনের শিথিলতা, চাপমুক্তির মতো আরও বহু উপকারিতা এর অন্তর্গত।
অয়েল মাসাজের ঠিক কী কী গুণ রয়েছে? চুলের বৃদ্ধি আর স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য সবচেয়ে উপকারী তেল কোনটি?
সঠিকভাবে মাথায় মাসাজ করার উপায়ই বা কী?
এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে পড়তে থাকুন। জেনে রাখুন অয়েল মাসাজের উপকারিতা।
চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
আমাদের চুল প্রোটিন দিয়ে তৈরি, তাই চুলের সঠিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টির প্রয়োজন।
তেল চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিয়ে চুলের যাবতীয় ঘাটতি পূরণ করে।
স্ক্যাল্পে তেল দিয়ে মাসাজ করলে রোমছিদ্রগুলো খুলে যায়, ফলে তেলের শোষণ ভালো হয়।
নিয়মিত অয়েল মাসাজ রাসায়নিক ও অন্যান্য হেয়ার ট্রিটমেন্টজনিত যাবতীয় ক্ষতি নিরাময় করে, রক্ত সংবহন বাড়ায়, চুলের গোড়া মজবুত করে, এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
চুল মজবুত করে
জৌলুসহীন নেতিয়ে পড়া চুল, অতিরিক্ত শুষ্কতা বা তেলতেলেভাব, চুল ডগা ফাটা, চুল ভেঙে ঝরে যাওয়া, এ সবই আসলে চুলের গোড়া দুর্বল হওয়ার চিহ্ন।
শীতল তাপমাত্রা, অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, স্টাইলিং টুলের চড়া তাপ, কিছু বিশেষ ধরনের হেয়ার প্রডাক্টের মতো নানা কারণে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
দিনে ১০০ থেকে ১৫০টা চুল ঝরে যাওয়া স্বাভাবিক হলেও এর বেশি চুল যদি আপনার উঠতে থাকে, তা হলে নিয়মিত অয়েল মাসাজ করালে আপনি যথেষ্ট উপকার পেতে পারেন।
অয়েল মাসাজ মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে, ফলে চুলের গোড়ায় পুষ্টি সহজেই পৌঁছোতে পারে।
তা ছাড়া তেল মাথার রোমছিদ্রগুলো খুলে দেয়, ফলে চুলের স্বাস্থ্য ও চুলের বৃদ্ধি, দুইয়েরই উন্নতি হয়।
চুল সুরক্ষিত রাখে
চুল সাধারণভাবে জল শোষণ করে না, কারণ মাথায় স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক তেল তৈরি হয়।
এই প্রাকৃতিক তেল চুল আর্দ্র রাখে ও চুলে পুষ্টি পৌঁছে দেয়।
কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন, রাসায়নিকে ভরা চুলের প্রডাক্ট, হিটিং টুল, দূষণ, ক্লোরিনযুক্ত জল এবং আরও নানা কারণে চুলের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চুল শুষ্ক, আর্দ্রতাহীন ও রুক্ষ হয়ে যায়।
বাইরের সুরক্ষা স্তরটি নষ্ট হয়ে যায় বলে বিবর্ণ ও প্রাণহীন চুল সাধারণত প্রচুর ছিদ্রযুক্ত হয়।
বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হলে বা চুল ধোওয়ার পরে জলের কণা চুলের ভিতরে ঢুকে যায় এবং তার ফলে চুল ফুলে ওঠে।
কিউটিকল, অর্থাৎ চুলের একেবারে বাইরের দিকের অংশটি কিন্তু চুলের ভিতরদিকের মতো প্রসারিত হতে পারে না।
তাই এই অংশটি বাইরের দিকে কুঁচকে যায় এবং চুল খুব অমসৃণ, খসখসে দেখায়।
চুলে নিয়মিত তেল লাগালে চুল ফের জল শোষণ করা বন্ধ করে দেয়, ফলে জলের কণা চুলের ভিতরে ঢুকে ক্ষতি করতে পারে না।
চুল ঝলমলে উজ্জ্বল করে তোলে
স্বাস্থ্যবান চুলের অন্যতম চিহ্ন হল তার ঝলমলেভাব।
তেল চুলের গোছাকে হাইড্রোফোবিক অর্থাৎ জলশোষণের অযোগ্য করে তোলে, তার ফলে বাইরের কিউটিকল কুঁকড়ে খসখসে হয়ে যেতে পারে না।
মসৃণ ও উজ্জ্বল কিউটিকল মানেই স্বাস্থ্যদীপ্ত, ঝলমলে চুল।
অতিরিক্ত উত্তাপের কারণেও চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে যেতে পারে ও চুলের ডগা ফেটে যায়।
নিয়মিত তেল মাসাজ ফাটা চুল সারিয়ে তুলতে পারে এবং ভিতর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে চুল উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তোলে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
মাথার রোমছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে তা থেকে সাধারণ চুলকানি থেকে শুরু করে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের মতো ছোটবড়ো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই সব সংক্রমণ থেকে যেমন খুসকি হতে পারে, তেমনি উকুনের বংশবিস্তারের উপযোগী পরিস্থিতিও তৈরি হয়, যার ফলে চুল উঠে যেতে শুরু করে৷ মনে রাখতে হবে, মাথায় সবসময়ই উপকারী ব্যাকটেরিয়াও থাকে।
মধুর মতো প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানযুক্ত তেল দিয়ে নিয়মিত মাসাজ করলে স্ক্যাল্পে পুষ্টি পৌঁছোয় এবং যাবতীয় সংক্রমণ দূরে থাকে।
কিন্তু যদি দেখেন আপনার মাথায় জায়গায় জায়গায় নরমভাব দেখা যাচ্ছে অথবা লাল লাল দাগ তৈরি হয়েছে, তা হলে দেরি না করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
খুশকি প্রতিহত করে
চুল ওঠার অন্যতম মূল কারণ হল খুশকি। আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ খুশকির সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
মাথার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হলে খুশকি দেখা দেয়। এর ফলে মাথা চুলকোতে থাকে, চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চুল ভেঙে ঝরে যেতে শুরু করে এবং উকুনের বাড়বাড়ন্তের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।
খুশকি আসলে মাথার ত্বকের মৃত কোষ।
যাদের মাথার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, সাধারণত তাদেরই খুশকি হয়।
মাথার ত্বকের সেবেশাস গ্ল্যান্ড থেকে প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
নিয়মিত তেল মাসাজ করলে মাথার ত্বক প্রয়োজনীয় পুষ্টি তো পায়ই, সঙ্গে তেলের গ্রন্থিগুলোও পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন করতে শুরু করে।
মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত তেলও কিন্তু মাথার রোমছিদ্র আটকে চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে, তাই চুলে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য আনতে কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অকালপক্বতা রোধ করে
আজকাল অল্পবয়সী ও পরিণত বয়স্ক, দু’দলের মানুষই অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন।
দৈনন্দিন খাবারে ভিটামিন ও প্রোটিনের অভাব থাকলেই সাধারণত অকালে চুল পাকার সমস্যা দেখা যায়।
তবে এ ছাড়াও অকালপক্বতার একাধিক কারণ রয়েছে, তার একটি হল জিনের প্রবণতা।
মেলানিন যেমন ত্বকের রঙের জন্য দায়ী, তেমনি চুলের কালো রঙের পিছনেও মেলানিনই রয়েছে।
মেলানিনের ঘনত্ব যত বেশি হবে, চুলের রংও তত ঘন কালো হবে। মেলানিনের অভাব হলে চুল সাদা হতে শুরু করে।
নিয়মিত তেল মাখলে চুলের স্বাভাবিক কালো রং ধরে রাখা যায়।
তেল চুলের বাইরে একটি সুরক্ষার আবরণ তৈরি করে এবং চুলকে দূষণ ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে বাঁচায়, যা চুল সাদা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
শরীর ও মন হালকা করে
ঈষদুষ্ণ তেল দিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করলে রক্ত সংবহন বৃদ্ধি পায়, মাথার শিরা-উপশিরা, স্নায়ুগুলো শিথিল হয়ে আসে।
অয়েল মাসাজ শরীর ও মন হালকা করে, মানসিক চাপ কমায় এবং মনমেজাজ ভালো রাখে।
যেহেতু স্ট্রেসের কারণে চুল উঠে যায়, তাই নিয়মিত তেল মালিশ করলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয়।
গবেষণা বলছে, নিয়মিত অয়েল মাসাজ করলে দৃষ্টিশক্তিরও উন্নতি হয়!
যেসব তেল চুলের জন্য খুব উপকারি:
নারকেল তেল
নারকেল তেল স্বাভাবিকভাবেই ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক প্রতিরোধী এবং স্ক্যাল্প স্নিগ্ধ রাখতেও সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভার্জিন কোকোনাট অয়েল থেকে কোনওরকম প্রদাহ হয় না।
ফলে চুল ওঠার সমস্যা থাকলে এই তেলই সবচেয়ে ভালো কারণ শারীরিক প্রদাহজনিত কারণেই চুল ওঠে।
নারকেল তেল ময়শ্চারাইজ়ার হিসেবও খুব ভালো এবং চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহা্য্য করে৷
আমন্ড অয়েল
এই তেলটি হালকা ও একেবারেই চটচটে নয়৷
ভিটামিন ই-র গুণে ভরপুর এই তেলটি চুলে পুষ্টি জোগায়, চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং চুল মজবুত ও ঝলমলে করে তোলে৷
আমন্ড অয়েল স্ক্যাল্পেও পুষ্টি জোগায় এবং খুসকি কমাতে সাহায্য করে৷
অলিভ অয়েল
ত্বকে লাগানো এবং নন-হিটেড কনজ়াম্পশনের জন্য অলিভ অয়েল খুবই ভালো৷
এই তেলটিতে পর্যাপ্ত এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা স্ক্যাল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে, চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে৷ এই হেয়ার অয়েলটিতে পর্যাপ্ত ময়শ্চারাইজ়ার রয়েছে এবং এটি ভিটামিন ই-তে ভরপুর যা চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷
এই তেলে ওলেইক অ্যাসিড রয়েছে যা খুব সহজেই চুলের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা ধরে রাখে৷
ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল চুলের জন্য দারুণ কাজ করে এবং কসমেটিক অয়েল হিসেবেও এটি খুবই জনপ্রিয়৷
যাঁরা অত্যধিক চুল ওঠার শিকার, তাঁদের শরীরে সাধারণত প্রস্টাগ্ল্যান্ডিন বা পিজিডি২ হরমোনের আধিক্য থাকে৷
গবেষণা বলছে, ক্যাস্টর অয়েলে উপস্থিত একটি উপাদান দিয়ে এই হরমোনটিকে দমন করা যায়, ফলে চুল ওঠা বন্ধ হয়ে চুলের বৃদ্ধি ভালো হতে শুরু করে৷
তিল তেল
বহু আয়ুর্বেদিক ওষুধে বেস অয়েল হিসেবে তিল তেল ব্যবহার করা হয়৷ তিল তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহা্য্য করে এবং স্ক্যাল্পের সংক্রমণ কমায়৷
চুল কন্ডিশনিং করতে, স্ক্যাল্পে পুষ্টির জোগান দিতে এবং খুশকি কমানোর জন্য হট অয়েল ট্রিটমেন্টে হামেশাই ব্যবহার করা হয় তিল তেল।
আর্গান অয়েল
আর্গান গাছের শাঁস থেকে পাওয়া যায় আর্গান অয়েল।
এই তেলটি অ্যান্টি-অক্সিডান্ট, টোকোফেরল এবং পলিফেনলে ভরপুর, ফলে পরিবেশের ক্ষতির হাত থেকে চুলকে বাঁচাতে পারে।
এই তেলটি প্রদাহ কমায় এবং দ্রুত নতুন ত্বকের জন্ম দিতে সাহায্য করে।
জোজোবা অয়েল
নানাধরনের বিউটি ট্রিটমেন্ট আর কসমেটিকসে জোজোবা অয়েল ব্যবহার করা হয়।
মাথার ত্বকে ও চুলের ফলিকলের গোড়ায় জমে থাকা তেলময়লা জমে গেলে তা চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
জোজোবা অয়েল সেই জমে যাওয়া ময়লা পরিষ্কার করতে সক্ষম।
চুলে আর্দ্রতা জোগান দিতে এবং বাইরের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে চুল রক্ষা করতেও এই তেল খুবই কার্যকর।
সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হল, জোজোবা তেলটি হাইপোঅ্যালার্জেনিক ও কোনওভাবেই আপনার চুল বা স্ক্যাল্পের কোনও ক্ষতি করে না।
চুলে তেল লাগানোর সেরা উপায়
শ্যাম্পুর আগে
বহু প্রাচীন কাল থেকেই শ্যাম্পুর আগে চুলে তেল লাগানোর পদ্ধতিটি অনুসরণ করে আসছেন মেয়েরা।
শ্যাম্পুর আগে চুলে তেল লাগালে চুল হাইড্রোফোবিক হয়ে ওঠে, অর্থাৎ চুলের ভিতরে জল ঢুকতে পারে না ফলে চুলের কিউটিকলও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
সারা রাতের ট্রিটমেন্ট
আপনার চুল যদি খুব রুক্ষ, শুকনো ও খসখসে হয়, তা হলে ওভারনাইট অয়েল ট্রিটমেন্টই আপনার একমাত্র ওষুধ।
এমন একটি তেল বেছে নিন যা চুলের গভীরে শুষে যায়।
মাথায় এবং চুলে ঘষে ঘষে মেখে নিন।
চুলের ধরন অনুযায়ী এসেনশিয়াল ও ক্যারিয়ার তেল মিশিয়ে মাথায় ও চুলে মাখুন, তারপর ঘুমোতে যাওয়ার আগে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুলটা ঢেকে নিন।
বালিশে আর চাদরে তেলের দাগ ধরা আটকাতে পুরোনো তোয়ালে দিয়ে বালিশ ঢেকেও নিতে পারেন।
পরের দিন সকালে কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হট অয়েল মাসাজ
ঠান্ডা তেল দিয়ে মাসাজের চেয়ে গরম তেল দিয়ে মাসাজ করা অনেক বেশি উপকারী।
কারণ তাপ রক্ত সংবহন ব্যবস্থা জোরদার করে এবং তার ফলে চুলের ফলিকলে পুষ্টি পৌঁছোতে পারে।
তাছাড়া গরম তেল চুল শুষে নিতে পারে বেশি।
শুধু খেয়াল রাখবেন, তেল যেন অতিরিক্ত গরম হয়ে না যায়, তাতে আপনার ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
এমনভাবে তেল গরম করুন যাতে তাতে আঙুল ডোবালে গরম লাগে অথচ ত্বকে ছ্যাঁকা না লাগে।
বেশি গরম করবেন না, তাতে তেলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
জেনে রাখুন
জল দিয়ে চুল ভিজিয়ে নিন এবং স্ক্যাল্প ও চুলে ভালো করে তেল লাগান। যতক্ষণ ইচ্ছে রেখে দিন। তারপর কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷
রুক্ষ কিউটিকল দ্রুত তেল শুষে নেয়৷ চুল ধোওয়ার পরে যদি তেল লাগান, তা হলে গোড়ার দিকটায় লাগাবেন না, চুল খুব ন্যাতানো দেখাতে পারে৷
হাতে সময় কম থাকলে কন্ডিশনারে কয়েক ফোঁটা হেয়ার অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন৷
পাত্রে জল নিন, তাতে এক টেবিলচামচ হেয়ার অয়েল মেশান৷ ভালো করে মিশিয়ে তাতে ১৫-২০ মিনিটের জন্য চুল ভিজিয়ে রাখুন৷
এবার চুলে একটা বড়ো তোয়ালে জড়িয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে দিন, তাতে আরও বেশি উপকার পাবেন৷ তারপর কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷
স্প্রে বোতলে জল নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা হেয়ার অয়েল মিশিয়ে নিন৷ ভালো করে ঝাঁকিয়ে ভেজা চুলে স্প্রে করুন৷
এতে চুল পুষ্টি পায় এবং হিট স্টাইলিংয়ের ক্ষতি থেকে সুরক্ষিতও থাকে৷
শুকনো মাথায় ও চুলে তেল লাগান৷ গরম জলে তোয়ালে ভিজিয়ে নিংড়ে নিন৷
তেলের পরিপূর্ণ উপকারিতা পেতে মাথায় এই তোয়ালেটি জড়িয়ে রাখুন৷
যা করা যাবে না
তেল মাখার সময় সমস্ত তেল মাথায় মেখে ফেলবেন না৷ তেলে আঙুল ডুবিয়ে নিন, তারপর চুল ফাঁক করে করে গোটা স্ক্যাল্পে লাগান৷
তেল মাসাজের পদ্ধতি যথাযথ না হলেও চুল উঠে যেতে পারে৷ হাতের তালু দিয়ে মাথায় তেল ঘষলে চুল উঠে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে৷
আঙুলের ডগা দিয়ে 10-15 মিনিট মাসাজ করুন, তাতে রক্ত সংবহন ভালো হবে৷ মাসাজের সময় চুল ধরে টানবেন না৷
কখনও নখ ব্যবহার করবেন না৷ মাসাজের সময় এই নিয়মটা মনে রাখা খুব দরকার৷ দু’ধরনের মাসাজ পদ্ধতি আছে৷
প্রথম পদ্ধতিতে হাতের চক্রাকার মুভমেন্ট হয় এবং দ্বিতীয়টিতে দলাইমলাই করা হয়৷
চুলের ক্ষেত্রে প্রথম পদ্ধতিটি অনুসরণ করার কথা বলা হয় এবং এটিই সবচেয়ে উপকারী৷
তুলোয় করে তেল নিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন৷ এটি আঙুলের চেয়েও কোমল৷
প্রয়োজনের অতিরিক্ত তেল লাগাবেন না, তাতে চুলের বাড়তি কোনও উপকার হবে না৷
বেশি তেল লাগালে ধোওয়ার জন্যও বেশি শ্যাম্পু লাগবে৷ পর্যাপ্ত তেল নিন, কিন্তু মাথা আর চুল তেলে চুপচুপে করে ফেলারও কোনও দরকার নেই৷
চুলে তেল মাখার আগে অবশ্যই সব জট ছাড়িয়ে নেবেন, না হলে আরও জট পড়ে গিয়ে চুল ছিঁড়ে বা ভেঙে যেতে পারে৷
মনে রাখবেন অয়েল মাসাজের পর চুলের গোড়া কিছুটা আলগা থাকে৷
তাই এই সময়টা চুল শক্ত করে বাঁধবেন না, কারণ তাতে চুল উঠে যেতে পারে৷
মনে রাখবেন
নিয়মিত চুলে তেল মাখার যেমন প্রচুর উপকারিতা রয়েছে, তেমনি মাত্রাতিরিক্ত তেল লাগালে কিন্তু চুলের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে৷
সপ্তাহে দু’বারের বেশি অয়েল মাসাজ করবেন না৷ মনে রাখুন, ঘন ঘন শ্যাম্পু করলে কিন্তু স্ক্যাল্প ও চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়৷
এবং তাতে স্ক্যাল্প ও চুলের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে৷
এমনভাবে ক্যারিয়ার তেল ও এসেনশিয়াল তেল বাছুন যাতে তা আপনার স্ক্যাল্প ও চুলের উপযোগী হয় এবং আপনার চুলের সমস্যারও সমাধান করতে পারে৷
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমন্ড অয়েল পুষ্টিকর ও খুসকি প্রতিরোধক, আবার রুক্ষ ও শুষ্ক চুলের জন্য আর্গান অয়েল খুবই উপকারী৷
তেলের পুষ্টিগুণ যাতে স্ক্যাল্প আর চুলে শোষিত হতে পারে, তার জন্য সময় দিন৷
তেল লাগানোর পর ও শ্যাম্পু করার আগে অন্তত আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা অপেক্ষা করুন৷
চুলের ট্রিটমেন্ট করার পরে পরেই হিট স্টাইলিং করাবেন না৷
অয়েল মাসাজের পদ্ধতি আর উপকারিতা সম্পর্কে সব কিছুই তো জানলেন!
এবার নিজের চুলেও ছড়িয়ে দিন সেই পুষ্টিগুণ!