এবারের গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড গরমের মধ্যে কাটছে।
তার উপর দেশে হাজির হয়েছে করোনার মতো মহামারীর দ্বিতীয় ফেইজ।
এই অবস্থায় একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে মহামারি করোনার হাত থেকে বাঁচতে বাড়তি সচেতনতা।
এ দুইটি ব্যাপারকে ফোকাস করে, যথাযথ পুষ্টিমানের খাদ্যতালিকা বানাতে আমরা বেশ হিমশিম খাচ্ছি।
কোন কোন খাবারগুলো এই প্রচন্ড গরমে খেলে শরীরে অস্বস্তি লাগবে না, সেগুলোতে পুষ্টিগুণ কেমন, দীর্ঘকালীন কাজের সময়টায় যথেষ্ট এনার্জি কি শরীরকে সাপ্লাই দিচ্ছে এই খাবারগুলো- এসব ব্যাপারে অনেকেই কনফিউজড থাকেন।
অনেকেই খাবারের পুষ্টিগত গুণাগুণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না।
অনেকে আবার ভুল কিছু প্রচলিত ধারণাকে ক্রন্দ্র করেই খাবারের মেনু বানান।
যার ফলে মহামারী করোনার এই সময়ে, শরীরটাকেও ফিট ও এক্টিভ রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
গ্ল্যামোজেন তার পাঠকদের এই হিমিশিম থেকে বাঁচাতে এবং সঠিক-পূর্ণ সায়েন্টিফিক ওয়েতে গাইড করতে নিয়ে এসেছে , স্পেশাল গ্ল্যামোজেন হেলথ টিপস, যা নিয়মিতভাবে দেয়া হবে।।
এসব অনুসরণ করলে, শুধুমাত্র শারীরিকভাবেই নয়; বরং মানসিক, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবেও এই প্রচন্ড গরম এবং ভয়ংকর করোনার মাঝে আপনি থাকবেন আপনার পরিবার সহ সুস্থ, স্ট্রং ইমিউনিটির অধিকারী।
আর যখন আপনি থাকবেন সকল দিক থেকে সুস্থ, তখনই তো বিকশিত হবে আপনার ভেতরের সৌন্দর্যটা বাইরের চেহারায় গ্লো করে!
আজকের টিপসটা হচ্ছে, গরমের এই দিনগুলোয় কিভাবে সুষমখাদ্য সমবন্টন করে, একটা হেলদি ব্যালেন্স ডায়েট আমরা ঠিক করবো, নিজেদের জন্য এবং পরিবারের সবার জন্য।
গরমকালের বেসিক প্ল্যান
খাদ্য তালিকা বানানোতে প্রথমেই মনে রাখতে হবে, দীর্ঘকালীন গ্রীষ্মকালে হচ্ছে দিবালোক বা সূর্যের প্রখরতার ডিউরেশন হবে গড়ে ১৪ ঘন্টার মতো।
সেই সাথে থাকবে বৈশাখের প্রচন্ড হিউমেডিটি বা আর্দ্রতা।
তাই এই প্রচন্ড গরমে শরীর ঘামবে সারাটা দিন।
আর এই ব্যাপারটাকেই ফোকাস করে রাখতে হবে শরীরকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করার ব্যাপারটায়।
এর জন্য, দিনের সূচনার সময় থেকেই পানির বোতল সঙ্গে রাখতে হবে।
প্রয়োজনে মোবাইলে ১৫ মিনিট পর পর রিমাইন্ডার সেট করে রাখতে হবে, যাতে ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই গড়ে ১ লিটারের মতো পানি পান করা হয়ে যায়।
এছাড়া রাতের খাবার এমনভাবে খেতে হবে, এমন উপকরণ বেছে খেতে হবে, যা শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরি করবে না, এসিডিটি তৈরি করবে না।
দাওয়াত বা স্পেশাল অকেশন না থাকলে- ভারি রিচ ফুড , যেমন পোলাও, খিচুড়ী, বিরিয়ানী ইত্যাদি এভোয়েড করাই ভালো।
কেননা, এগুলো হজমের সময় প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।
ফলে রাতে খাওয়া খাবারকে হজম করতে শরীরের যে পানি খরচ হবে, তা পূরণ করতে সারাদিন কাজের মধ্যেই প্রচন্ড পানির তেষ্টা পাবে, যা ব্যস্ততার কারণে অনেকেই মেটাবে না।
মোট কথা , একজন সুস্থ মানুষের শরীরে দিনে কমপক্ষে ২ লিটার বা ৮ গ্লাস পানি পান করা দরকার।
এবং তা যেন কিছুতে বাদ না যায়।
এর পাশাপাশি রাতের নামাজ শেষেই চেষ্টা করতে হবে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে, শরীরকে প্রপারলি রেস্ট না দিলে, খাবার তালিকা যতই উন্নত হোক না কেন, কাজ করবে না।
প্রচন্ড গরমে শরীর, স্পেশালি ব্রেইন প্রচন্ড স্ট্রেইসে থাকে,শুধুমাত্র খাবার দিয়ে শরীরের সেই ক্লান্তি সামলানো সম্ভব নয়।
এর জন্যই ব্যাক আপ সাপোর্ট হিসেবে পরিমিত পর্যায়ের ঘুম অবশ্যই লাগবে।।
সকালের খাবার এবং পানীয়
যেহেতু বেশ বড় একটা দিন পার করতে হবে কর্মক্ষেত্রে, এবং বেশ গরম থাকবে সারাদিন, খেয়াল রাখতে হবে, সকালের নাস্তাতেও কমপক্ষে ২ বড় বড় গ্লাস পানি পান যেন করা হয়।
এছাড়া খাদ্য তালিকায় অপেক্ষাকৃত জটিল বা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন ভাত, গম, ওটস এরকম ভারি খাবার রাখতে হবে।
সাধারণ রুটি বা নুডুলস অনেকে খেতে চাইলেও মনে রাখতে হবে, এগুলো অপেক্ষাকৃত সিম্পল কার্বোহাইড্রেট, যা সহজে ২-৩ ঘন্টার মধ্যেই হজম হয়ে পেট খালি করে দেয়।
অথচ, করোনার মহামারীতে আমাদের বাইরে এখন তেমনভাবে খাওয়া বলতে গেলে হয়ই না নিরাপত্তার জন্য।
অন্যদিকে, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট অনেক দেরীতে হজম হয়।
ফলে বেশ খানেক সময় ধরে পেট ভারি থাকে।
দীর্ঘকালীন কর্মক্ষেত্রে এটা একট্ব পজিটিভ দিক বটেই।
এছাড়াও নানা উপকারতা রয়েছে এইসকল জটিল কার্বোহাইড্রেট খাবার নিয়ে।
এবং তার পাশাপাশি যদি মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার এড করা হয় তাহলে তো কথাই নেই।
বিকালের কিংবা সন্ধ্যা খাবার
অফিসের পর বাসায় এসে সাধারণত বিকালের নাস্তাটাই একসাথে বসে পরিবারের সকলে খায়।
অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতনতায় বা কর্মব্যস্ততায় লাঞ্চ এভোয়েড করেন বলে, স্বাভাবিকভাবেই এ সময়টায় প্রচন্ড ক্ষুধা থাকবে।
তবে খিদা নিবারণ করতে গিয়ে যেন অস্বাস্থ্যকর পরিমাণে কোন খাবার খাওয়া না হয়, সেটা খুব সতর্কতার সাথে নজর রাখতে হবে।
ভাজা পোরা যথা সম্ভব এভোয়েড করতে হবে।
সাথে রাখতে হবে যথেষ্ট পরিমাণ মৌসুমী ফল।
পানীয়ের মধ্যেও স্যুপ, জুস রাখতে হবে পানির পাশাপাশি, সারদিনের কর্মব্যস্ততায় পানি খেতে অনেকেই ভুলে যান।
সেই পানির চাহিদাটাকে এ সময়ে পূরণ করতে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, কিছুতেই যেন বক্সড জুস, বোতলে পাওয়া জুস পান করা না হয়।
অনেকেই আবার নানা ফিজি ড্রিংক্স, কার্বোনেটেড ড্রিংক্সও পান করেন।
এই প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা এসকল পানীয়ের অলটারনেট অনেকে ভাবতেই পারেন না।
কিন্তু কেউ জানেন না যে, এগুলো কি মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে কিডনির উপর।
অত্যাধিক পান করলে, কিডনির নানা ইনফেকশন সহ নানা রকম জটিলতায় পড়তে পারেন আপনি।
তাই রাখতে হবে, একদম ঘরে বানানো মৌসুমি ফলের জুস।
কিংবা সাধারণ লেবুর শরবত।
খেয়াল রাখতে হবে, অত্যাধিক লবণ বা চিনি- কোনটাই যেন খাবারগুলোয় না থাকে।
কেননা এগুলো এই দীর্ঘকালীন দিবালোকে শরীরের উপর মারাত্মক স্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে।
সন্ধ্যার নাস্তায় কেমন খাবার রাখা যায়, বা কি টাইপের ড্রিংক্স রাখা দরকার, কিংবা কিভাবে খাওয়া স্বাস্থ্যজনক, এসব নিয়েও গ্ল্যামোজেন নিয়ে আসছে সামনে হেলথ স্পেশাল আলোচনা।
তাই সেই টিপগুলো পেতে, চোখ রাখুন ব্লগের পর্দায়।
এবং আরও কিছু অভ্যাস…
যেহেতু, ২৪ ঘন্টার প্রায় ১০-১২ ঘন্টাই কর্মক্ষেত্রে বা ঘরের বাইরে থাকা হয়, এবং বাকি সময়ের মধ্যে প্রায় ৬ ঘন্টা কেটে যাচ্ছে ঘুমের মধ্যেই; তাই ব্ল্যালেন্স করে খাওয়ার সাথে সাথে বেশ কিছু অভ্যাস- যেমন ঘুমানোর টাইমিং, এক্সারসাইজ, মেডিসিন নেয়া ইত্যাদি ব্যাপারেও নিতে হবে বিশেষ সকর্ত পদক্ষেপ।
নইলে হতে পারে নিজের অজান্তেই শরীরের এমন কিছু মারাত্মক ক্ষতি, যা পরিবর্তীতে ড্যামেজ করেদিতে পারে স্থায়ীভাবে নানা ইন্টারনাল অর্গান বা অভ্যান্তরীণ অঙ্গসমূহকে।
আর এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই গ্ল্যামোজের আগামী পর্বগুলোয় নিয়ে আসছে বিশেষজ্ঞদের সাজেশন মেনে স্পেশাল হেলথ টিপস পর্ব, যেগুলো আপনাদের গাইড করবে এই প্রচন্ড গরমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কারোনার মতো মহামারিতে শুধু নিজেকে নয়, বরং পরিবারের সকলকে সচেতন রাখতে।
আজকে ফান্ডামেন্টাল খাবারের ব্যাপারগুলোকে ফোকাস করে শেষ করছি, গ্ল্যামোজেন হেলথ স্পেশালের ১ম দিনের আলোচনা।
সবাই ভালো থাকবেন।
সুস্থ থাকবেন।
আড্ডা হবে একটা নতুন হেলথ টিপস নিয়ে আগামী গ্লামোজেন হেলথ স্পেশাল পর্বে।