Search
Close this search box.

প্রতিদিনের যে অভ্যাসগুলো ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখে

একটা সুন্দর মোলায়েম নির্দাগ ত্বক, কে না চায়?

মুখ হোক কি হাত-পা, কিংবা পিঠ-পেট, ত্বক তখনই মোলায়েম, সুন্দর, দাগবিহীন , স্নিগ্ধ থাকবে- তখন ত্বকটা স্বাস্থ্যবান এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ থাকবে।

গ্ল্যামোজেন প্রায়ই তাদের ব্লগে পাঠকদের জন্য, এই সকল ত্বকের যত্ন-সংক্রান্ত নানা সঠিক তথ্য পরিপূর্ণ আর্টিকেল পাঠকদের দিয়ে থাকে।

তবে, আজকের আয়োজনটা একটু অন্যরকম।

আজকে ঠিক অন্যভাবে আমরা ত্বকের যত্ন নেয়ার কথা বলবো।

আর তা হল কিডনিকে সুস্থ রেখে, ত্বককে সুস্থ রাখা।

কিডনির এবং ত্বক

অনেকের মনে ইতিমধ্যে একটা প্রশ্ন হয়তো দেখা দিয়েছে- ত্বকের সাথে কিডনির কি সম্পর্ক।

আর ত্বককে সুন্দর করতে কিডনির প্রসঙ্গ আসছে কেন?

ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনার আগে আমর প্রথমে কিছু ভুল ধারণা বা কন্সেপ্ট নিয়ে কাজ করবো, যা নিজেদের অজান্তে, ত্বকের যত্নের জন্য যুগ যুগ ধরে করে আসছি, ভুল ভাবে।

কী সেই ভুল?

আমরা নানা পত্রিকা বা ফেসবুকের নানা পেইজ, গ্রুপে নানা ধরণের সামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেখি। 

ত্বককে সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে, কখনও ত্বককে ফর্সা করতে, কখনও বা দাগ অপসারণ করতে, কিংবা কোন গোটা বা পিম্পল যেন না ওঠে, অনেক উচ্চ মূল্য দিয়েই নানা প্রডাক্ট , ক্রিম, সেরাম কিনে ফেলি।

একবারও দেখি না, প্রডাক্টের পিছনে ক্রিম বা ঐ সেরাম তৈরীর উপকরণ হিসেবে কি কি উপাদানের কথা উল্লেখ আছে।

সেই উপাদানগুলো আদৌ শরীরে কি রকম প্রভাব ফেলে।

অনেক সময়, বিক্রেতা আপু বা মডেলের ফর্সা ত্বক দেখেই নিজেকে নিজেই গ্যারান্টি দিয়ে ফেলি ঐ সকল পণ্য নিয়ে।

একবারও ভেবে দেখি না আপাতঃদৃষ্টিতে দাগ দূর করা কিংবা রঙ ফর্সা করার এই প্রডাক্টগুলো সুদূর ভবিষ্যতে কি ইফেক্ট ফেলবে শরীরে?

এবং হারবাল…

অনেকে আবার উপরের উল্লেখিত কেমিকেল বেইসড প্রডাক্ট ইউজ করে না।

সেটা প্রডাক্টের উচ্চমূল্যের কারণে সামর্থ্যের না থাকার জন্য হোক, কিংবা কেমিক্যালের ক্ষতিকারক সাইদ ইফেক্টের ব্যাপারে সচেতনতার জন্যই হোক না কেন।

এই গ্রুপের সচেতন মানুষেরা সেক্ষেত্রে ত্বকের যত্নে নানা হারবাল উপাদান, যেমন হলুদ, বেসন, মসুরের ডাল, চালের পানি, এলোভেরা জেল, আলু, লেবু, মধু ইত্যাদি না জানি কত ধরণের সামগ্রী কত উপায়ে ব্যবহার করে থাকেন।

এবং ভেবে বসেন  নিয়মিত এই সকল ব্যবহারে ত্বক অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর , ফর্সা, দাগবিহীন হয়ে যাবে, দেরীতে হলেও।

মোটকথা কেমিক্যাল মেশানো উপকরণ হোক, কিংবা খাঁটি প্রাকৃতিক উপাদান- অধিকাংশ মানুষ ত্বককে আকর্ষণীয় রাখতে , বাইরের থেকেই রূপচর্চা করে থাকে।

অর্থাৎ নানা ক্রিম, সেরাম, মাস্ক মুখে, হাত পায়ে লাগিয়েই ভাবে, ত্বক সুন্দর হবে।

আর এটাই সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা।

সঠিক তথ্যে ত্বকের যত্ন

এতক্ষণ ভুল ধারণা নিয়ে কথা বলা হয়েছে ইন্ডিটেইলস।

কারণ, সঠিক তথ্য অনুযায়ী নিজেকে অভ্যস্ত করার পূর্বে, নিজের ভুলগুলো জানা জরুরি ছিল।

ভুল না জানলে, নিজেকে সংশোধন করা কঠিন।

উপরে উল্লেখিত বাহ্যিক রূপচর্চাগুলো যে ত্বককে আকর্ষণীয় করতে কাজ করে না, তা নয়।

তবে তা মূল কাজের মাত্র ১৫% অংশে কন্ট্রিবিউট করে।

যার মধ্যে নিয়মিত সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করাটাই ১০% এর উপর কাজ করে।

বাকি ৮৫% কার্যকারিতা তাহলে কোথার থেকে পাব?

সেটা হল- শরীরের ভেতর থেকে ত্বকের যত্ন।

মেডিকেল সায়েন্সের বেসিক নলেজ যাদের আছে, তারা জানেন, একটা শরীরের চামড়া বা ত্বককে সুস্থ রাখতে হলে, তাকে শরীরের ভেতর থেকেই সুস্থ রাখতে হবে।

এবং শরীরের ভেতরে যে যে অংশ ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, তাদের যত্ন নিতে হবে।

তবেই ত্বক বাহ্যিকভাবে আপনার মনমতো সৌন্দর্যকে উপস্থাপন করবে।

কিভাবে শরীরের ভেতর থেকে সাপোর্ট দিতে হবে?

শরীরের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে মুলত যে অংশগুলো ত্বককে সুস্থ রাখতে সরাসরি ভূমিকা রাখে, তা হল রক্ত এবং কিডনি।

রক্তের মাধ্যমে খালি ত্বক না, শরীরের অন্যান্য সকল অর্গানই সুস্থ থাকে।

প্রকৃতপক্ষে, রক্ত হল শরীরের মেইন ডেলিভারি ম্যান।

আমরা যা খাই বা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরের মধ্যে গ্রহণ করি, তা রক্তই শরীরের ব্রেইন থেকে শুরু করে, চুল কিংবা পায়ের নখ; ভেতরের লাংস থেকে শুরু করে পায়ের পাতার মাসল, সব জায়গায় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

ত্বকের ক্ষেত্রে সরাসরি এই রক্তের ভূমিকা রয়েছে।

তাই ত্বককে সুস্থ রাখতে গেলে, খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের রক্ত যেন সুস্থ থাকে।

এই রক্ত সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন রক্তকে বর্জ্যমুক্ত রাখা।

রক্ত পরিষ্কার থাকলেই, তা সহজে এমন সব উপাদান ত্বকের নিচের অংশে সরবরাহ করতে পারবে, যেগুলো ত্বক গ্রহণ করলে ভেতর থেকেই সুস্থ, রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালি এবং দাগ বিহীন হবে।

কিভাবে রক্তকে পরিষ্কার রাখা যায়?

রক্তকে পরিষ্কার রাখতে গেলে, প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে, রক্ত পরিষ্কারের প্রধান অর্গান- কিডনি যেন সুস্থ থাকে।

জ্বী হ্যা।

কিডনি আমাদের শরীরের মেইন ড্রেনেজ সিস্টেম।

সারাদিন নানা কাজে , নানা অংগে রক্ত যে যে বর্জ্য পদার্থ পায়, তা বহন করে সোজা কিডনির কাছে নিয়ে আসে।

কিডনি সেই রক ছেঁকে বর্জ্য পর্দার্থগুলোকে আলাদা করে, ফ্রেশ রক্ত আবার শরীরে সাপ্লাই দেয়।

সেই ফ্রেশ রক্ত আবার পৌষ্টিক উপাদানগুলো পাকস্থলি থেকে নিয়ে নানা ওংশের ত্বকে সাপ্লাই করে।

এবং কিডনিকে সুস্থ রাখতে করণীয়

তাহলে বোঝা গেল, আল্টিমেটলি একটা সুস্থ কিডনিই মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে , সুস্থ শরীরের ত্বকের সৌন্দর্যকে বিকশিত করতে।

এই কিডনিকে বেশ কিছু অভ্যাসের দ্বারা, সারাদিন পরিচর্যা করতে পারি আমরা। যেমন-

১. দিনে গড়ে ৩ লিটার পানি কমপক্ষে পান করতে হবে।

অনেকের কাছেই ব্যাপারটা বিস্বাদের মতো মনে হলেও, ওষুধ মনে করে এটা ফলো করতেই হবে।

সারাদিন নানা ধাপে, প্ল্যান করে পানি খেতে হবে।

বোতলে করে সাথে রেখে, কিছুক্ষণ পর পর খেতে হবে।

সারাদিনের কোন অভ্যাসের রুটিনে এই পানি ইন্টেক করতে মোটেও অস্বস্তি লাগবে না, সেটা নিয়ে আগামী পর্বে বিসদভাবে লেখা হবে।

পদ্ধতিটা পেতে চোখ রাখুন গ্ল্যামোজেনের পর্দায়।

২. ভাজা পোড়া বা তেল বেশি পরিমাণে দিয়ে রান্না করা হয়, এসকল খাবার খুব কম খেতে হবে।

সবচেয়ে ভাল হয়, যদি ঐ খাবারগুলোকে পরিহার করা যায়।

৩. ব্রেভারেজ বা কোল্ড ড্রিংক্স, যেগুলোতে প্রচুর সুগার, ক্যাফেইন, কেমিক্যাল জাতীয় উপকরণ আছে, সেগুলো নিয়মিত পান পরিহার করতে হবে।

৪. স্কিনে পারদ বা লেড আছে এমন কোন প্রডাক্ট লাগানো যাবে না।

বাইরের এই ক্রিঙ্গুলো থেকে লেড বা মার্কারী রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে পৌঁছে যায়।

কিডনি তখন সেসব ক্ষতিকর উপাদান ছাঁকতে গিয়ে মারাত্মকভাবে নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

৫. অনেকে ত্বককে ব্রাইট করতে নানারকম পানীয় পাউডার বিক্রি করে।

এগুলো থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন।

কেননা, এগুলো বিদ্যমান উপাদান এতটাই মারাত্মক যে রেগুলার পান করলে, কিডনি ফেইলও হতে হবে।

৬. এছাড়া বাজারে সহজে ময়টা কমার,মানে স্বাস্থ্য কমানোর জন্য নানা রকম সেরিয়াল, চা, ক্যাপসুল, ইত্যাদি বিক্রি করা হয়।

এগুলো কিডনির উপর এত্ত মারাত্মক প্রভাব ফেলে যে,  অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই  কিডনি ফেইলের সম্ভাবনা গড়ে ৯০% হয়ে থাকে।

এবং আরও কিছু কথা…

পাশ্চাত্যের অধিকাংশ মানুষ মেডিকেল সায়েন্সের এই বেসিকটা জানে।

তাই তাদের কাছে উল্লেখিত প্রডাক্টগুলো বিক্রি করা দূরহ হয়। সেদিক থেকে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত এবং অসচেতন, এই উপমহাদেশের মানুষদের কাছে এইগুলো বিক্রি অনেক সোজা হয়ে যায়।

কারণ আমাদের অধিকাংশের ত্বক ব্রাউন।

আর আমরা মরিয়া হয়ে যাই , ত্বককে ফর্সা করতে।

দুধে আলতা ত্বক না হলে, কেউ সুন্দর নয়- এই ধারণাটাই মূলত আমাদের ধীরে ধীরে শেষ করেছে। 

অথচ পাশ্চাত্যের মানুষেরা রীতিমতো সমুদ্র সৈকত কিংবা আর্টিফিশিয়াল মেশিনের সামনে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পরে থাকে, স্কিন ট্যান করে আমাদের মতো  গায়ের রঙ পেতে।

তাই কোরিয়ান, চাইনিজ কিংবা থাইল্যান্ডের এসকল সস্তা  উপকরণে বানানো ক্ষতিকারক প্রডাক্ট আমাদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে।

আমরা অজ্ঞ বাঙালিরা প্রডাক্ট কেনার আগে, উপকরণের লিস্টটাও একটাবার পড়ে দেখি না।

অথচ এই প্রডাক্টগুলো আমাদের কিডনি নষ্ট করে। স্কিন ক্যান্সার তৈরি করে।

রক্তের মাধ্যমে ক্ষতিকর উপাদানগুলো শরীরের নানা ভাইটাল অংগে গিয়ে সর্বনাশ করে।

তাই ত্বককে আসলেই যদি সুস্থ রাখতে হয়, বাইরে না ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে হবে।

আর তার জন্য রক্ত এবং কিডনিতে সুস্থ রাখতে হবে।

কিডনি এবং রক্ত যদি সুস্থ থাকে, তাহলে ত্বক এবং চুলের সুস্থতা চোখে পরার মতোই হবে।

এছাড়া কিছু নিয়মিত খাদ্য অভ্যাস গড়তে হবে, যা রক্ত এবং কিডনিকে সুস্থ রাখতে সরাসরি ভূমিকা রাখে।

তবে তা নিয়ে আজ আর নয়।

কিডনি এবং রক্তকে সুস্থ রাখতে যে খাদ্যাভ্যাস আমাদের প্রতিদিন ফলো করতে হবে, তা নিয়ে আসবো আগামী পর্বে।