Search
Close this search box.

হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়

অতিরিক্ত গরমে আমাদের শরীর থেমে ঘামের মাধ্যমে মানি বেরিয়ে যায়।

ফলে দেখা দিতে পারে পানি শুন্যতা।

তাপমাত্রা ব্যালেন্স রাখার জন্য আমাদের ব্রেইন বাইরের তাপমাত্রা বাড়ার সাত্থে সাথে আমাদের শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি করে তোলে।

ফলে আমাদের শরীরে দেখা দেয় দুর্বলতা, পানি শুন্যতা ও মাথা ঘোরানোর মত অসুখ।

হিট স্ট্রোক মাঝে মাঝে খুব চরম পর্যায়ে চলে যেতে পারে তার আগেই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। 

হিট স্ট্রোক কী

আবহাওয়ায় প্রচন্ড গরম থাকা অবস্থায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

ফলে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে।

আমাদের শরীরের রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রচন্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে হিট স্ট্রোক হয়। 

কোন পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

সাধারণত প্রচন্ড গরমে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

যারা প্রচন্ড গরমে শারীরিক পরিশ্রম করে। তাদের ই হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কারণ ঘাম বের হয়ে শরিরে পানি শুন্যতা দেখা দিলে এমনটি হয়ে থাকে। 

তাছাড়াও কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষণ্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।

লক্ষণ বা উপসর্গ

হিট স্ট্রোক হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে কিছু লক্ষণ বা  উপসর্গ দেখা দেয়।

এই লক্ষণ গুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে পদক্ষেপ নিলে হিট স্ট্রোক হওয়া থেকে বাচাঁনো সম্ভব।

তাই লক্ষণ গুলো চিনে রাখতে হবে। 

  • শরীরের অত্যাধিক তাপমাত্রা। শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা ছাড়িয়ে ১০৫° ফারেনহাইট তাপমাত্রার বেশি হলে বুঝতে হবে সেই ব্যাক্তি হিট স্ট্রোক এর খুব কাছাকাছি পর্যায়ে। 
  • তাপমাত্রা বেড়ে মাথাব্যথা হওয়া। 
  • শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়া। যেমন হাটতে বা দাড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বসে পরা। এমন কিছু দুর্বলতা দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে। 
  • চোখ বন্ধ হয়ে আসা বা ঝিমুনি লাগা। 
  • হঠাৎ বমি বমি ভাব হওয়া। 
  • নিশ্বাস খুব দ্রুত নিতে থাকা।
  • ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • ত্বক শুষ্ক ও লালচে বর্ণের হয়ে যাওয়া।
  • নাড়ির স্পন্দন খুব দ্রুত হওয়া।
  • রক্তচাপ কমে যায়।
  • খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, কথায় জড়তা অ অসংলগ্নতা ইত্যাদি।
  • এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় 

তরল জাতীয় খাবার বেশি করে গ্রহণ করা

আমরা যারা বাইরে কাজ করি অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে পানি বের হয়ে আসে।

ঘামের মাধ্যমে পানি বের হয়ে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা।

পানিশূন্যতা থেকে ঘটতে পারে হিট স্ট্রোকের মতো ভয়ংকর কিছু। 

তাই আমাদের সারাদিন ২৪ ঘন্টায় মিনিমাম ৯/১০ গ্লাস পানি পান করা উচিৎ।

হিট স্ট্রোক এড়াতে পানির পাশাপাশি যেকোনো তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, যেকোনো ফলের জুশ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

এতে করে শরীরে পানির ঘাটতি পূরন হবে আর হিট স্ট্রোক এড়ানো সম্ভব হবে। 

ভোরবেলায় শরীরচর্চা করুন

দুপুরের অতিরিক্ত দাবদাহে, আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়।

ঘাম হওয়ার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুকিও দেখা দেয়।

ফলে হার্ট বিট দ্রুও হয়ে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

তাই সূর্য উঠায় আগে সকাল সকাল শারিরীক কসরত করে ফেললে হিট স্ট্রোক এড়ানো সম্ভব। 

অ্যালকোহল গ্রহণ করা যাবে না

অ্যালকোহল আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা ঘটায়।

বিভিন্ন সুগার ড্রিংক্সগুলো ডিহাইড্রেশন এর কারণ।

যা গ্রহণ করার মাধ্যমে আমাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি হয়ে যায়। 

হালকা রঙের পোশাক ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন

খুব ভাড়ি ও গাঢ় রঙের জামা গুলো গরমে না পরা ভালো।

গাঢ় রঙ গুলো বিশেষ করে কালো রঙের তাপ শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি।

অত্যধিক তাপ শোষণ করার কারণে কালো রঙের জামা বা যেকোনো গাঢ় রঙের জামা পরলে বেশি গরম লাগে।

ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পরে। তাই যতটা সম্ভব হালকা রঙের কাপড় পরতে হবে।

এই রঙ গুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা একদমই কম।  তাই এইগুলো একটু স্বস্তি প্রদান করে। 

খাদ্য তালিকায় রসালো ফল ও সবজি রাখুন

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রসালো ফল বা সবজি রাখুন।

যেসব খাবারে পানির পরিমাণ বেশি সেইগুলো বেশি বেশি খেতে হবে।

যেমন লেটুস, শসা, তরমুজ, আনারস, কমলালেবু, আখ, জামরুল এবং পুদিনা গরমের জন্য আদর্শ খাবার বলে বিবেচিত হয়।

এতে ক্যালরির পাশাপাশি সোডিয়ামের পরিমাণও কম থাকে।

আবার পর্যাপ্ত পরিমানে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, এ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে।

এটি আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে। এবং শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানেরও জোগান দেয়।

এসব উপাদান হিট স্ট্রোকের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর সুস্থ রাখে।

আক্রান্ত হলে করণীয়

হিট স্ট্রোক ঘটার প্রথম পর্যায়েই রোগীর লক্ষণ দেখে বুঝতে হবে হিট স্ট্রোক হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে তখন দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। 

  • হিট স্ট্রোক হওয়ার পর্যায়ে খুব তাড়াতাড়ি শ্রী স্থান ত্যাগ করতে হবে। কোন ঠান্ডা জায়গায় চলে যেতে হবে। ঠান্ডা হাওয়ার যত যত দ্রুত সম্ভব ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিতে হবে।
  • ঠান্ডা স্থানে যাওয়ার সাথে সাথে প্রচুর পানি বা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে স্যালাইন খুব ভালো কাজ করবে। অবশ্যই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন চা বা কফি এই সময়ে খাওয়া একদম চলবে না। 
  • ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলুন। পানির ঝাপটা চোখ, মুখ ও মাথায় দিন। সম্ভব হলে দ্রুত গোসল করে ফেলতে হবে। 

কিন্তু যদি হিট স্ট্রোক হয়ে যায় বা খুব সিরিয়াস পর্যায়ে চলে যায় তবে রোগীকে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে যেতে হবে।

এক্ষেত্রে ঘরে রেখে আরো বিপদ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই।