আজকাল সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত।
কেউ বাড়ির বাইরের কাজে আবার কেউ বাড়ির ভেতরের কাজে।
অতিরিক্ত কাজের চাপ, নানা রকমের চিন্তা ভাবনা, মানসিক চাপ এবং রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়া এগুলি আমাদের শরীরের সাথে সাথে আমাদের ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে।
ফলত ত্বক শুস্ক রুক্ষ, হয়ে যায়, মুখের চামড়া কুঁচকে অকালেই বয়সের ছাপ পরে যায়।
কাজের ব্যস্ততার জন্য সবসময় আমাদের বিউটিপার্লার এ যাওয়া সম্ভব হয়না, তাছাড়া এখানে ব্যবহৃত পদার্থগুলি অনেক সময়ই আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে থাকে।
তাই আসুন দেখেনি কিভাবে খুব সহজেই বাড়িতেই আমরা ফেসিয়াল বা ফেস মাসাজ করতে পারি।
ফেসিয়াল বা ফেস ম্যাসাজের ফলে আমাদের ত্বকের রক্ত চলাচল ভালো ভাবে হয়, মৃত কোষ গুলি পরিষ্কার হয়।
ত্বকে অক্সিজেন আদানপ্রদান ঠিক মতো হয়। আসুন প্রথমে দেখে নিই ফেসিয়াল করতে হলে যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
প্রথম ধাপ
ফেসিয়াল করার জন্য প্রথমে আমাদের মুখটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এর জন্য ফ্রেশ ওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। বা ঠান্ডা দুধ, লেবুর রস ও সামান্য লবন মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করতে হবে।
এবার তুলো দিয়ে ওই মিশ্রণটিকে সারা মুখেও গলার অংশে হালকা করে ঘষে লাগিয়ে নিতে হবে।
এবার হালকা গরম জল দিয়ে মুখটি পরিষ্কার করে নিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
এবার স্ক্রাবার দিয়ে ভালো করে ত্বকের গভীরে পরিষ্কার করতে হবে যাতে ফেস ম্যাসাজ করলে তা ভেতরের লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
এর জন্য যে কোনো স্ক্রাবার ব্যবহার করা যেতে পারে বা দই ,ব্যাসন ও সামান্য মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি ভালো করে মুখে ও গলার অংশে ৫ টি ৭ মিনিট রেখে হাতে অল্প জল নিয়ে ভালো হালকা করে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে।
তৃতীয় ধাপ
এরপর ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা করার জন্য মুখ ও গলার অংশে ১ থেকে দু চামচ মধু ঠান্ডা দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে ও গলার অংশে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে।
এরপর ঠান্ডা জলে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বক নমনীয় ও ঠান্ডা হবার সাথে সাথে স্কিন টোনকে কিছুটা হালকা করে দেবে।
চতুর্থ ধাপ
আমাদের স্কিনের কোষগুলি ঘাম জমে বা ধুলো বালি লেগে অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়।
সেগুলিকে পরিষ্কার করে বা খুলে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য সসপ্যান এ জল গরম করতে হবে।
জল ফুটে গেলে ৫ মিনিট পর একটি ভারী টাওয়াল জড়িয়ে গরম জলের ভাপ নিতে হবে।
৫ মিনিট নিলেই আমাদের স্কিনপোর গুলি পরিষ্কার হয়ে যাবে বা খুলে যাবে।
পঞ্চম ধাপ
এবার সময় হলো ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে নেওয়ার।
বাড়িতে বানানো যে কোনো ফেস প্যাক মুখে ও গলার অংশে ভালো করে মেখে নিতে হবে।
এবার অল্প অল্প করে জল নিয়ে ও প্রায় জন মতো মিশ্রণটি নিয়ে খুব ভালো করে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে।
যতক্ষন না সেটি আমাদের ত্বকের গোচিরে পৌঁছে যাচ্ছে ততক্ষন হাতের তালুটি দিয়ে গোলগোল করে ঘুরিয়ে নিচের দিক থেকে ওপরের দিকে টেনে ম্যাসাজ করতে হবে।
১৫ মিনিট ম্যাসাজ করার পর একটি নরম কাপড় প্রথমে হালকা গরম জলে ভিজিয়ে মুখ ভালো করে মুছে নিতে হবে।
তারপর ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে।
শেষ ধাপ
এবার সব শেষে আপনার ব্যবহৃত ক্রিম মুখে ভালোকরে মেখে নিতে হবে।
এভাবেই খুব সহজেই বাড়িতে ফেসিয়াল করা যেতে পারে।
আসুন জেনেনি কত গুলি ঘরোয়া ফেসপ্যাক যেগুলি আপনি বাড়িতে ফেসিয়াল করার সময় ম্যাসাজ করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
দই এর ফেসপ্যাক
১ কাপ দই একটি নরম সাদা পাতলা কাপড়ে নিয়ে কাপড়ের মুখটি ভালোকরে আটকে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
দই থেকে জল আলাদা হয়ে গেলে শুধু ক্রিম অংশটি থাকবে।
ক্রিম দই একটি পাত্রে নিয়ে তার সাথে ২ ফোঁটা অলিভ অয়েল,২ ফোঁটা আলমন্ড অয়েল এবং ২ চা চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন।
এই ফেসপ্যাকটি রুক্ষ ত্বকের জন্য অত্যন্ত ভালো।
বেদানার ফেসপ্যাক
২ বড় চামচ বেদানার দানা এবং ৬ টিকে ৮ বড় চামচ ওটমিল মিক্সিতে ভালোকরে বেটে নিতে হবে।
এবার মিশ্রণটি একটি পাত্রে নিয়ে ওই পাত্রে ২ বড় চামচ মধু ও ৩ বড় চামচ বাটারমিল্ক ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
এই ফেসপ্যাক টি ত্বকের নমনীয়তা রক্ষা করে এবং অকাল বার্দ্ধক্য জনিত লক্ষণগুলি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
কলা ও দই এর ফেসপ্যাক
কলা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ভালো।
এটি আমাদে ত্বক কে নরম ও ভেতর থেকে নমনীয় করে তোলে।
একটি মাঝারি মাপের পাকা কলাকে ভালোকরে চটকে মেখে নিন।
এবার ১/২ কাপ টক দই ও ২ বড় চামচ মধু ভালো করে কলার সাথে মিশিয়ে নিন।
ঘরোয়া ফেসিয়াল মাস্ক হিসেবে এটি অত্যন্ত ভালো। এটি সব রকম( রুক্ষ ও তৈলাক্ত) ত্বকের জন্য ভালো।
ব্যাসন দুধ ও হলুদের ফেসপ্যাক
এই ফেসিয়াল মাস্ক বা ফেসপ্যাকটি বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৩-৪ চামচ ব্যাসন ,একটি অর্ধেক পাতিলেবুর রস, ১/২ চামচ হলুদ বাটা (কাঁচা হলুদ) ও ৪-৫ বড় চামচ কাঁচা ঠান্ডা ভালো করে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরী করে ফেসিয়ালের পদ্ধতিগুলি মতো ম্যাসাজ করলে ত্বক গভীর ভাবে পরিষ্কার হবে।
এবং মুখের অতিরিক্ত তেল ও মৃত কোষ গুলি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
২-৩ বড় চামচ মুলতানি মাটি গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
এবার এতে ৩ -৪ ফোটা লেবুর রস ও ১ – দু চামচ দুধ মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ বানিয়ে নিন।
এই মিশ্রণটিও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অত্যন্ত ভালো।