Search
Close this search box.

ঘরোয়া উপায়ে তৈরি করুন কোরিয়ান রাইস ক্রিম

কোরিয়ার মেয়েদের স্কিন কতটা নিখুঁত দেখতে হয়। আমারাও মনে মনে চেয়ে থাকি এমন ত্বক যদি আমাদের হতো। 

তাদের এই সৌন্দর্যের অন্যতম সিক্রেট আজকে জানালে অবাক হবেন। 

তাদের এই সৌন্দর্যের পিছনে রয়েছে চালের অবদান। 

কি অবাক হচ্ছেন এটা ভেবে যে আপনাদের ঘরের এক নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার উপাদানই হলো কোরিয়ান বিউটি সিক্রেট। 

হ্যা। তবে এখন আর সিক্রেট রইলো না। চাল এতটাই উপকারী যে আমাদের চুল ও ত্বকের জন্য খুব কার্যকরী। আর চাল আমাদের দেশে অতিমাত্রায় সহজলভ্য একটি উপাদান।

চালের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান 

চালে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও আয়রন। এটি আমাদের মাংশপেশি পুনর্গঠন ও শক্তি সঞ্চার করতে সাহায্য করে।

তাছাড়াও চালে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট যেমন ফেনলিক আর ফ্লেভোনইড কম্পাউন্ডস, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-ই, স্ট্রার্চ, কার্বোহাইড্রেট ও অ্যামাইনো অ্যাসিড। 

এসব উপাদান আমাদের চুল, ত্বক ও স্বাস্থের জন্য খুব উপকারী। আমাদের ত্বক চুলের সৌন্দর্য বজায় ও বৃদ্ধি করতে চালের পানির কোনো জুড়ি নেই। তবে আজকে এর পানি নয়, কথা বলবো চালের তৈরি ক্রিম নিয়ে। বাসায় খুব সহজেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন এই রাইস ক্রিম। 

রাইস ক্রিম তৈরির নিয়ম

ধাপ ১:

  • একটি বাটিতে তিন টেবিলচামচ চাল নিয়ে নিন। আপনি আপনার পছন্দমতো যেকোনো ধরণের চাল নিতে পারেন। 
  • এর মধ্যে অ্যাড করুন দেড় কাপ পানি। পানি অ্যাড করার পূর্বে অবশ্যই চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। 
  • পানি অ্যাড করার পর এটা সারা রাতের জন্য ভিজিয়ে রাখুন।
  • পরদিন বের করে দেখতে পাবেন চাল সহ পানি ক্লাউডি হয়ে গিয়েছে। চালও খুব নরম হয়ে গিয়েছে। দেখা যাবে যে হাত দিয়ে খুব সহজেই ভেঙে ফেলা যাচ্ছে। 
  • এবার ভালোভাবে পানি সহ চাল ব্লেন্ডারে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। 
  • ব্লেন্ড করার পর চাল কিছু পরিমাণ দানাদার থেকে যাবে। আর আমাদের প্রয়োজন লিকুইড। তাই ব্লেন্ড করার পর ভালোভাবে ছেকে নিতে হবে।  
  • এবার এই চালের পানিকে ঘন করে নেয়ার পালা। একটি প্যানে চালের পানি ঢেলে নিন। এবার চুলা জ্বালিয়ে মিডিয়াম তাপমাত্রায় রাখুন। তলায় যাতে না লেগে যায় তাই একটি চামচের মাধ্যমে নাড়তে থাকুন। 
  • ৩/৪ মিনিট পর দেখা যাবে এটা ঘন হয়ে এসেছে। তখন চুলার আঁচ বন্ধ করে দিতে হবে। এবার ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছু সময় রেখে দিন। 
  • ঠান্ডা হওয়ার পর দেখা যাবে এটা ক্রিমি টেক্সচার দিচ্ছে। অনেকটা ঘন হয়ে গিয়েছে। 

এটা আমাদের রাইস ক্রিম। এর পর বাকি ইনগ্রিডিয়েন্স ড্রাই ও অয়েলি স্কিনের জন্য কিছু আলাদা হবে। 

ধাপ ২:

ড্রাই টু নরমাল স্কিনের জন্য রাইস ক্রিম রেসিপি 

প্রয়োজনীয় উপকরণ 

  • উপরে তৈরি করা রাইস ক্রিম
  • অ্যালোভেরা জেল
  • ভিটামিন-ই ক্যাপ/আমান্ড অয়েল
  • দুধ

প্রস্তুত প্রণালী 

  • একটি বাটিতে দুই টেবিলচামচ রাইস ক্রিম নিয়ে নিন। 
  • এর সাথে অ্যাড করুন এক টেবিলচামচ অ্যালোভেরা জেল। বাজার থেকে কিনে আনা ভিটামিন-ই ক্যাপ অ্যাড করুন দুইটি পরিমাণ। 
  • যাদের কাছে ভিটামিন-ই ক্যাপ না থাকবে তারা আমান্ড অয়েল ও ব্যবহার করতে পারেন। 
  • লাস্ট দুইটি উপকরণ নারকেল গুড়া ও দুধ অ্যাড করুন হাফ টেবিলচামচ করে। যাদের কাছে নারকেল গুড়া থাকবে না তারা স্কিপ ও করতে পারেন। কিন্তু নারকেল গুড়া স্কিনের জন্য খুব ভালো। তাই চেষ্টা করবেন ম্যানেজ করে অ্যাড করতে। 
  • এবার সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিক্স করে নিন। মিক্স করে নিলেই রেডি হিয়ে গেলো ড্রাই স্কিনের জন্য ইফেক্টিভ রাইস ক্রিম। 

অয়েলি টু কম্বিনেশন স্কিনের জন্য রাইস ক্রিম রেসিপি 

প্রয়োজনীয় উপকরণ 

  • আগের তৈরি করা রাইস ক্রিম 
  • গোলাপজল
  • চন্দন গুড়া/ মধু
  • হলুদ গুড়া 
  • অ্যালোভেরা
  • টি ট্রি এসেন্সিয়াল অয়েল ( ত্বকে পিম্পল থাকা সাপেক্ষে)

প্রস্তুত প্রণালী 

  • একটি বাটিতে দুই টেবিলচামচ রাইস ক্রিম নিন। এর মধ্যে অ্যাড করুন হাফ টেবিল চামচ গোলাপজল, এক টেবিল চামচ চন্দন গুড়া। চন্দন গুড়া না থাকলে স্কিপ করতে পারেন।
  • এর মধ্যে অ্যাড করুন এক চিমটি হলুদ গুড়া, এক টেবিলচামচ অ্যালোভেরা জেল। নরমাল হলুদের পরিবর্তে চাইলে কস্তুরি হলুদ অ্যাড করতে পারেন। 
  • আপনার ত্বকে পিম্পল বা একনে প্রবলেম হলে ২/৩ ড্রপ টি ট্রি অয়েল অ্যাড করতে পারেন। 
  • সবগুলো উপকরণ একসাথে মিক্স করে নিন ভালোভাবে। তাহলে অয়েল স্কিন ও কম্বিনেশন স্কিনের জন্য রেডি আপনার রাইস ক্রিম। 

রাইস ক্রিমের উপকারিতা 

ময়েশ্চারাইজার হিসেবে 

ড্রাই স্কিনের জন্য তৈরি করা রাইস ক্রিম ড্রাই স্কিনের জন্য বেস্ট ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এই ক্রিম ভিতর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে ত্বক হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।  

অয়েলি স্কিনের জন্য তৈরি করা রাইস ক্রিমটি অয়েল কন্ট্রোল করতে সাহায্য করবে। যাদের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হয়, এই ক্রিম তাদের জন্য বেস্ট। 

টোনার হিসেবে

এই ক্রিম টোনার হিসেবেই খুব সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। এটা আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে খুব কার্যকরী। 

এক্সফোলিয়েটেশন 

ব্লেন্ডারে করা চালের যে অংশ আমরা প্রথমেই ছেকে নিয়েছিলাম আলাদা করে সেটা রেখে দিবেন। সেটা এই ক্রিমের সাথে অ্যাড করে এক্সফোলিয়েটশন করা যাবে। সপ্তাহে ২/৪ বার স্ক্রাবিং করার মাধ্যমে মৃত চামড়া দূর হবে। 

বলিরেখা বা বয়সের ছাপ দূর করতে

যাদের চোখের নিচে বলিরেখা দেখা দিচ্ছে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ বোঝা যাচ্ছে তাদের জন্যও এই ক্রিম খুবই উপকারী। এটা ত্বকের বলিরেখা ও ফাইন লাইনস দূর করতে সাহায্য করবে। চেহারায় তারুন্যতা ফুটিয়ে তুলবে। ত্বক করবে টানটান ও প্রাণবন্ত। 

দাগ দূর করতে

দাগ দূর করতেও এর জুরি মেলা ভার। যাদের ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ বা পিম্পলের দাগ রয়েছে সেই দাগ দূর করতেও সাহায্য করবে। 

গ্লোয়িং ও ব্রাইট করতে

ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রেখে ত্বকে আনে ইভেন টোন। ক্রিম রেগুলার ব্যবহার করার মাধ্যমে চেহারা হবে ব্রাইট ও গ্লোয়িং।  

সংরক্ষণ পদ্ধতি 

এই রাইস ক্রিম আপনি খুব সহজেই স্টোর করতে পারবেন। বানানোর পর একটি কাচের বয়ামে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন। ৫/৭ দিন পর্যন্ত ইউস করতে পারবেন। পরবর্তীতে নতুন করে আবার বানিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারবেন।