একধরণের ফল হল লেবু। সাইট্রাস বৈজ্ঞানিক নাম।লেবু রসালো শ্রেণীর ফল। লেবুকে আবৃতবীজি বলা হয়।
কারন বংশবৃদ্ধিকারী টিস্যু লেবুর বীজে থাকে। লেবু খেতে টক হয়। এতে সাইট্রিক এসিড থাকে যার কারণে এর স্বাদ টক।
লেবুর রস মূলত ব্যবহার করা হয়।তাছাড়া লেবুর শাঁস ও খোসা ব্যবহার করা হয়।
খোসা ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে থাকে ভিটামিন সি ৫৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৮ মিলিগ্রাম, এনার্জি ২৯ ক্যালরি, প্রোটিন ১.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ০.০৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৬ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৮ মিলিগ্রাম, থিয়ামিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম।
লেবু চাষ
লেবু ভালো চাষ হয় হালকা দোআঁশ ও নিকাশ সম্পন্ন মধ্যম অম্লীয় মাটিতে।
লেবুর চারা বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে ২.৫ মিটার দূরে দূরে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়।
মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাস চারা রোপণের জন্য সঠিক সময়।
চারা লাগানোর পর প্রথম ২-৩ মাস জল দেওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার করা ভালো।
গাছ একটু বড় হলে ২০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খোল পঁচা জল হালকা করে গাছের গোড়ায় দেওয়া হয়।
এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে লেবু গাছে ফল আসে।
বর্ষা আসার আগে সাতদিন অন্তর অন্তর কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ভাল হয়।
এছাড়াও বছরে তিন থেকে চারবার কোন ভাল কীটনাশক ব্যবহার করা হয় যাতে পোকা না হয় গাছে।
আমাদের দেশের আবহাওয়া লেবু চাষের জন্য ভালো। টবে লেবুর ফলন খুব ভাল হয়।
লেবুর প্রজাতি
লেবুর অনেক জাতের হয়। পাতিলেবু, কাগজিলেবু, এলাচিলেবু, সিডলেসলেবু, সরবতিলেবু, বাতাবিলেবু,কমলালেবু ও মাল্টালেবু উল্লেখযোগ্য।
তবে কমলালেবু পাহাড়ি এলাকায় জন্মায় বাকিগুলো সমভূমিতেই জন্মায়।
লেবুর কার্যকরীতা
সকাল বেলায় গরম লেবুর রস শরীর থেকে টক্সিন দূর করে শরীরকে ফ্রেশ রাখে। শরীরের পিএইচ মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ রাখে।
১০০গ্রাম লেবুতে প্রায় ৫৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা এসকরিক এসিড পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধকারী কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে বা ক্ষত হলে দ্রুতগতিতে কোলাজেন কোষ উপাদান তৈরি করে ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে এই ভিটামিন সি।
লেবুর সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়াম নির্গমন হ্রাস করে পাথুরী রোগ প্রতিহত করতে পারে।
দীর্ঘ পরিশ্রমের পর শরীরে লবণে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে লেবু।লেবু হৃদপিণ্ডের জ্বালাপোড়ায় ক্যালসিয়াম ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষা করে।
পরিপাক রস উৎপাদনে সাহায্য করে লেবু। ফলে খাবার অনিচ্ছা দূর হয়ে যায়।
দৃষ্টিশক্তির জন্য ভালো। চোখের সমস্যার থেকে সাহায্য করে লেবু।
হজমে সাহায্য করে ও পিত্তরসের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
লেবুতে থাকা প্যাকটিন ফাইবার মলাশয়কে সুরক্ষিত রাখে।
এ ছাড়া শক্তিশালী এন্টিব্যাকটেরিয়া হিসেবেও কাজ করে।
সিটরিক এসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফরফরাস ও ম্যাঙ্গানিজের ভাল উৎস লেবুর রস।
প্যাথজেনিক ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা প্রতিরোধ করে থাকে লেবু।
এ ব্যাকটিরিয়া ইনফেকশন ও নানাবিদ রোগের কারণ।যা লেবু খেলে হয় না।
শরীরের বিভিন্ন অংশের সন্ধিতে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
ঠাণ্ডায় লেবুর রস খুবই উপকারী। লেবু লিভার এ্যানজাইমের মাধ্যমে লিভারকে শক্তিশালী করে।
রূপচর্যায় লেবুর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলে আসছে।
কাপড়ে দাগ পড়লে লেবুর রস দিয়ে ঘষ্লে দাগ উঠে যায়। বয়সজনিত মুখের দাগ সারাতে লেবুর রস কার্যকরী।
লেবুর রস ব্যবহারে মুখের ব্রণও সেরে যায়। লেবু দেহের ওজন কমায়।
লেবুর মধ্যে এমন পদার্থ আছে যা কিনা শরীরের অতিরিক্ত মেদকে জ্বালিয়ে দেয়।
ফলে রোগ সংক্রমণও কমে যায়। সম্প্রতি এক গবেষণাতে এ তথ্য প্রমানিত হয়েছে।