আমরা ত্বক ও চুলের যত্নে নানা রকমের পরিচর্যা করে থাকি।
কিন্তু যে হাত দ্বারা নানা রকমের কাজ করে থাকি সেই দিকে আমাদের তেমন নজর দেয়া হয় না।
হাতের পরিচর্যা করাও জরুরি। তার জন্যেও রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে পরিচর্যা করার উপায়।
আপনি এই প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপাদানগুলো আপনার রান্নাঘরে পেয়ে যাবেন।
কেনো ম্যানিকিওর করা প্রয়োজন?
দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। এতে আমাদের হাত রুক্ষ, শুষ্ক ও নির্জীব হয়ে যায়। তাই আমাদের ত্বক ও চুলের পাশাপাশি হাতের ও বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে ম্যানিকিওর করবেন?
ধাপ ১:
আমাদের অনেকের হাতের আঙুলে ও হাতের উপরে লোম থাকে। এইগুলো ছোট বা বড় হোক দেখতে খারাপ দেখা যায়। ঘরোয়া কোনো উপায়ে কালো লোম বাদামী করার উপায় নেই। তাই তুলে ফেলাই শ্রেয়। তাতে দেখতেও সুন্দর লাগবে আর মোলায়েম ও হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- পানি
- লেবু
- চিনি
- মধু
- এক টুকরো কাপড়
- পছন্দের ময়েশ্চারাইজার
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
- একটি পাত্রে এক লিটার পানির মধ্যে এক কাপ চিনি জ্বাল দিন।
- পানি ফুটতে শুরু করলে তাতে লেবুর রস ও মধু দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন।
- কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা যাবে ঘন হয়ে এসেছে।
- একটি যেকোনো বাটিতে নামিয়ে নিন। কিছুক্ষণ ঠান্ডা হতে দিন।
- ঠান্ডা হয়ে এলে একটা স্টিকি ভাব দেখা যাবে। এটাকে একটা চামচ বা স্টিকের মাধ্যমে আঙুলে এপ্লাই করতে হবে। উপরে এক টুকরো কাপড় জড়িয়ে নিতে হবে।
- কিছুক্ষণ রেখে টেনে উঠাতে হবে। এইভাবে প্রত্যেকটা আংগুলে করতে হবে।
- শেষে ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করুন। তা না হলে গুড়ি বাম্পস দেখা দিতে পারে।
এইভাবে করে হাত থেকে এক্সট্রা লোম তুলে ফেলুন। দেখবেন খুব সফট ও স্মুথ হয়ে গিয়েছে।
ধাপ ২:
এবার দ্বিতীয় ধাপে হাত ওয়াশ করবো। যাদের হাত খুব রুক্ষ তাদের জন্য এটা বিশেষ প্রয়োজনীয়।
ভাঙা নখ বা হলদে নখের জন্যে যা খুব কার্যকরী।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- খাবার লবণ
- বেকিং সোডা
- পানি
- শ্যম্পু
- লেবু
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
- একটি ছোট বাটিতে হালকা গরম পানি ঢালুন
- এক চামচ বেকিং সোডা, এক চামচ খাবার লবণ নিন। তার সাথে কিছু পরিমাণ শ্যম্পু এড করুন
- উপকরণগুলো সব ভালোভাবে হাত দিয়ে মিশিয়ে নিন।
- এই মিক্সারে আপনার হাত ৮/১০ মিনিটের মতো ডুবিয়ে রাখুন।
- ৮/১০ মিনিট পর হাতের নোখে লেবু ঘষুন খুব ভালো করে।
এইভাবে করার ফলে হাত ধীরে ধীরে রিকোভার হতে থাকবে।
ধাপ ৩:
আমাদের হাতে ডেডস্কিন সেল জমতে থাকে। নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে সেটা কুচকে যায় ও খারাপ দেখা যায়। তাই হাতে স্ক্রাবিং করা জরুরি। তিন নাম্বার ধাপে স্ক্রাবিং এর মাধ্যমে হাতের ডেডসেল তুলে ফেলা হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- চিনি
- এ্যালোভেরা জেল
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- এই উপকরণগুলো একটি বাটিতে এক চামচ করে নিন
- খুব ভালোভাবে মিক্স করুন। একটি দানাদার পেস্ট পাওয়া যাবে।
- এই স্ক্রাবার টি ভালোভাবে হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। সার্কুলার মোশনে হাতের উপরে ম্যাসাজ করুন খুব ধিরে ধিরে।
- ৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাসাজ করে ঠান্ডা পানির মাধ্যমে ধুয়ে ফেলুন।
ধাপ ৪:
এই ধাপ অপশনাল সম্পুর্ণ। কেউ চাইলে এভয়েড ও করতে পারেন। এই ধাপটি তাদের জন্য যাদের হাত খুব বেশি ড্রাই হয় পানির কারণে। অনেক অনেক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পরও সফট হয় না তারা এই ধাপ টি অবশ্যই করবেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- দুধ মালাই
- গ্লিসারিন
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- হাতে এক চামচ দুধ মালাই নিয়ে নিন।
- তার মধ্যে কয়েক ফোটা গ্লিসারিন নিয়ে ভালোভানে মিক্স করুন।
- মিক্স করে হাতের উপরে ও নিচে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে থাকুন।
- এমন ভাবে ম্যাসাজ করবেন যাতে কোন অংশ শুকনো না থাকে।
- ৪/৫ মিনিয় ম্যাসাজ করতে থাকুন। ২য় ধাপে ব্যবহার করা পানি দিয়ে হাত খুব ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন। লেবু দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। তারপর তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে।
ধাপ ৫:
যাদের হাতে রিংকেলস পড়ে গিয়েছে এই প্যাক টি তাদের জন্য খুব উপকারী হবে। তাছাড়াও এর মধ্যে থাকা দই হাত ময়েশ্চারাইজড করার সাথে সাথে গ্লো দিবে। আর মুলতানি মাটি স্কিন টাইটেনিং এর কাজ করবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- মুলতানি মাটি
- দই
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
- একটু খালি বাটিতে এক চামচ মাটি নিবেন।
- তার সাথে দই এড করুন। খুব ভালোভাবে এই ২ টি উপকরণ মিক্স করুন।
- ভালোভাবে আপনার হাতে অন্য হাতের সাহায্য নিয়ে এপ্লাই করুন।
- মিক্সারটি হাতে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। প্রায় ১৫/২০ মিনিট এর মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার পর ধুয়ে ফেলুন।
ভালোভাবে ধুয়ে ফেলার পর অনেক ডিফারেন্স আপনি বুঝতে পারবেন। এই প্যাক টি আপনি চাইলে দিনে ২ বার করেও ব্যবহার করতে পারেন যদি হাতে খুব রিংকেলস থাকে তবে।
এই পাঁচটি ধাপের মাধ্যমে আপনি খুব সুন্দর ত্বক পেয়ে যেতে পারেন। হাতের ময়েশ্চারাইজ ধরে রাখার জন্য ম্যানিকিওর করা খুব জরুরি। তাই সপ্তাহে ২/৩ বার এই ধাপ অনুসরণ করার ফলে আপনি খুব স্মুথ ও গ্লোয়িং ত্বক পেয়ে যাবেন।