একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে নারীস্বাস্থ্য সচেতনতায় পিরিয়ড একটা বেশ আলোচ্য বিষয়।
খাওয়া, ঘুম, প্রকৃতিক কাজের মতো, প্রতিমাসে ঋতুবতী নারীদের মাসিক/পিরিয়ড হওয়াটা সম্পূর্ণ একটা প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার।
এর চাইতেও বড় ফ্যাক্ট হল, নারীস্বাস্থ্য বর্তমানে শুধুমাত্র এই মাসিক সংক্রান্ত পরিচর্যার অজ্ঞতায় যে পরিমাণ ঝুঁকিতে আছে তার থেকে বের হতে হবে।
পিরিয়ড নিয়ে আমাদের সমাজে যে সকল ট্যাবু প্রচলিত আছে, সেগুলোকে কাটিয়ে উঠে নারীদেরই খোলামেলাভাবে আলোচনা শুরু করতে হবে।
শুধুমাত্র পিরিয়ডকালীন শারীরিক ব্যাপারেই নয়, এ সময়ে কিভাবে নারীর নিজ দেহের যত্ন নিতে হবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে,
কি কি প্রডাক্ট ব্যবহারের প্রভাবে রিস্কগুলো কমবে।
সেটা নিয়েও যাবতীয় ট্যাবু ভেংগে এগিয়ে এসে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
বাজারে এসময়ে কি কি প্রডাক্ট পাওয়া যাচ্ছে, কোনটা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব, বাজেটের মধ্যে রয়েছে।
এসব নিয়েও সচেতন থাকতে হবে, অন্যকে সচেতন করতে হবে।
নারীস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সর্বদা সচেতন গ্ল্যামোজেনের আজকের আয়োজন এমনই একটি পিরিয়ডকালীন প্রডাক্ট, মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে।
মেন্সট্রুয়াল কাপ কি?
বর্তমানের প্রযুক্তির সাপেক্ষে, পিরিয়ড চলাকালীন লিকেজ প্রটেকশন এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে, একটা অবিস্মরণীয় আবিস্কার হল, এই কাপ।
এটা নরম মেডিকেল সিলিকন এ তৈরী একটা ফানেল বা চৌঙ্গা সদৃশ পাত্র, যা সহজেই ভ্যাজাইনাল এরিয়ায় এডজাস্ট করে বসে যায়।
এতে কোন প্রকার ক্যামিক্যাল বা ব্যাক্টেরিয়াল কিছু থাকে না, যার ফলে এটি শুধুই পিরিয়ডকালীন রক্ত সংগ্রহ করে।
এটা নানা সাইজের, নানা রঙের পাওয়া যায়।
বাংলাদেশেও এখন ফার্মাসী, ডিপার্ট্মেন্টাল স্টোর কিংবা অনলাইন শপগুলোয় প্রচুর পরিমাণে এভেইলেবল।
কোম্পানিভেদে এগুলোর মূল্য ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
তবে স্বস্তির ব্যাপার হলো, একটা কাপ কিনে ৮-১০ বছরও ব্যবহার করা যাবে, যদি এটার পরিষ্কার-প্রক্রিয়া সুন্দরভাবে অনুসরণ করা যায়।
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা
বাংলাদেশের পিরিয়ডকালে অধিকাংশ মেয়েরাই যে প্রডাক্টটা ব্ব্যবহার করে, তা হলে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড।
এই প্যাড বিভিন্ন ধরণের পাওয়া যায়। সুলোলোজ ফাইবারের, তুলা-গজের, কিংবা কাপড়ের।
প্যাড ছাড়া শুধুমাত্র টেম্পন ব্যবহারের সংখ্যা বাংলাদেশে মাত্র হাতে গোণা ৪-৫ জন হবে।
তাই মেন্সট্রুয়াল কাপের উপকারিতার ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করতে, তুলনায় এই প্যাডকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করা হল।
প্রডাক্ট ম্যাটেরিয়াল বা বানানোর উপকরণসমূহ
সাধারণ প্যাডগুলোর রঙ সাদা রাখতে, ডায়োক্সিন নামের এক প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।
এই ডায়োক্সিন কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ এবং মারাত্মক কার্সেনোজিন; অর্থাৎ ক্যান্সার হওয়ার জন্য বিশেষভাবে সক্রিয়।
এছাড়া সুগন্ধী এবং ছত্রাক সংক্রমণ থামাতেও ব্যবহার করা হয় এমন অনেক ঝঁকিপূর্ণ উপাদান,
যা নিয়ে গাইনোকলোজিস্ট বা নারী স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বেশ জোড়ালো আপত্তি তুলেছেন।
আল্ট্রা শোষণ ক্ষমতার বিভিন্ন রকম প্যাড পাওয়া যায় বাজারে।
নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়ে যত বেশি দামেই বিক্রি করা হোক না কেন, সেগুলোয় ব্যবহৃত কেমিক্যাল তো ইতিমধ্যে ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারগুলোয় প্রমাণিত ক্যান্সারোজিন প্রডাক্ট। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই এইসকল কেমিক্যালকে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি পুর্ণ সামগ্রীর লিস্টে রেখেছে, যা ওদের ওয়েবসাইটে গেলেই পাওয়া যাবে।
সেদিক দিয়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ তৈরী হয়, মেডিক্যাল সিলিকন নামক, খুবই নিরাপদ একটা নরম সিন্থেটিক রাবারের মতো পদার্থ দিয়ে।
এতে সুগন্ধী বা কোন ধরণের প্রিজার্ভেটিভ ব্যবহার করা হয় না।
নানা সাইজের পাওয়া যায়, যা বয়স এবং শরীরের পরিমাপ অনুযায়ী, কিনতে পাওয়া যায়।
কাপটা শুধু মাত্র রক্তটাই ধারণ করে রাখে।
এর ফলে কোন প্রকার কেমিক্যাল বা উপকরণ জনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি এই কাপটা ব্যবহারে একদমই নেই।
ব্যবহারের সময়-বিধি ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা
স্যানিটারি নাপকিনগুলোতে এমন কিছু উপাদান থাকে, যেগুলোতে রক্তের ফোঁটা পড়ার ৪ ঘন্টার মধ্যে, ভেতরের আর্দ্রতা আর পরিবেশের জন্য ব্যাক্টেরিয়াল কালচার/ ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হয়।
এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনার রাস্তা হয়ে জরায়ু বরাবর চলে যায়।
এতে করে, ভ্যাজাইন্যাল এরিয়া, জরায়ুর রাস্তা, গর্ভাশয়ে মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে।
মাঝে মাঝে এসব ইনফেকশন থেকে বন্ধ্যাত্বও চলে আসতে পারে।
কিংবা জীবণ বাঁচাতে জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হতে পারে নারী, এর ফলে হারিয়ে ফেলে মা হওয়ার ক্ষমতাটাকে।
আবার এসকল ব্যক্টেরিয়াল ইনফেকশন যে খালি জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যাই করে, তা হয়।
প্রস্রাবের রাস্তার ইনফেকশন থেকে শুরু করে,বড় ধরণের কিডনি সংক্রান্ত ইনফেকশন বা জটিলতাও এই ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণে হতে পারে।
তাই কোন স্যানিটারি ন্যাপকিনই ৪ ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা মোটেও নিরাপদ নয়।
বনাম: মেন্সট্রুয়াল কাপ
এদিক থেকে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার বেশ নিরাপদ।
খুব সহজেই সামান্য একটু চাপ দিয়েই জায়গা মতো সেট করা যায়।
একটা কাপ ১২মিলি থেকে ২০ মিলি পর্যন্ত রক্ত ধারণকরতে পারে।
ব্যাক্টেরিয়াল গ্রো করার মতো কোন অপশনই থাকে না।
১০-১২ ঘন্টা পর পর রক্তটা ফেলে দিলেই হল।
স্বাস্থ্যগত কোন অনিশ্চয়তা অন্যান্য পিরিয়ডকালীন ব্যবহৃত প্রডাক্টের তুলনায় ২% এরও কম থাকে এই মেন্সট্রুয়াল কাপে।
ব্যবহারের পারিপার্শ্বিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা
প্যাড বা স্যানিটারি ন্যাপকিন
আগের সেগমেন্টেই বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নিরাপদে ব্যবহার করতে হলে,স্যানিটারি প্যাড প্রতি ৪ ঘন্টা পরপর অবশ্যই বদলাতে হবে।
সেই সাথে বদলাতে হবে, সেই প্যাডের সাথে ব্যবহৃত পেন্টি। কেননা, পেন্টি না বদলাতে, প্যাডের ব্যাক্টেরিয়াগুলো পেন্টিতেই লেগে থাকে।
ফলে নতুন প্যাড পরলেও লাভ হবে না, নিরাপদ হবে না , যদি না পেন্টিও প্রতিবার প্যাডের সাথে চেঞ্জ না করা হয়।
প্যাড-সংখ্যা
এখন ৪ ঘন্টার হিসাবে, ১ দিনে ৬ বার কমপক্ষে চেঞ্জ করা লাগবে প্যাড।
একটা মেয়ের পিরিয়ড সময় সীমা ৩ দিন থীকে শুরু করে ৭-৮ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
তাতে প্রতিদিন ৬ টা প্যাড করে, প্রতিমাসের ঋতুচক্রে কি পরিমাণ প্যাড লাগবে, সহজেই ধারণা করা যায়।
আবার অর্থমূল্যের দিক চিন্তা করলে, ভালো মানের প্যাডের দাম বর্তমান বাংলাদেশ বাজারে ৩০০-৬০০ টাকা করে।
বাইরের ব্রান্ডগুলোর দাম আরও বেশি।
তাও ৪ ঘন্টা পরপর চেঞ্জিং পলিসি মেইন্টেইন করলে ২ প্যাকেট অবশ্যই লাগবে প্রতিবার।
দাম যদি কমপক্ষে ৩০০ টাকাও ধরি (যা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড প্যাডের দাম।
এর থেকে কমদামের প্যাডে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি), প্রতি মাসে ৬০০ টাকার প্যাড= বছরে ১২ মাসে মোট ৭২০০ টাকার প্যাড লাগবে!
একজন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের প্রত্যেকের জন্য এই পরিমাণ অর্থ শুধুমাত্র পিরিয়ডকালীন সময়ে খরচ করা, কতটা বাস্তবসম্মত?
আর এই খরচ করবেন না, একটা প্যাডে সারা দিন / ১২ ঘন্টা কাটাবেন?
এর ফলে দীর্ঘ সময়ের ফলে ক্যান্সার থেকে শুরু করে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, সে ব্যাপারে ভেবেছেন কি?
আর তাতেও জীবণটা ফেরত পাবেন কিনা, তার গ্যারান্টী কেউ দিতে পারবে না।
প্যাড বদলানোর উপযুক্ত পরিবেশ
তাছাড়া ৪ ঘন্টা পর পর প্যাড-পেন্টি পাল্টানোটা সুবিধাজনক হতো,
যদি নারী সবসময় নিজের বাসা-ঘরের মধ্যেই থাকতো।
কিন্তু বর্তমান যুগে নারীরা পুরুষদের সাথে সমান তালে ব্যবসা, অফিস, স্কুল ভার্সিটী সহ নানা কর্ম সংস্থানে যাচ্ছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, এসকল জায়গায় পুরুষদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও, সব জায়গায় নারীদের জন্য টয়লেট, কিংবা টয়লেট থাকলেও, মাসিককালীন প্যাড চেঞ্জিং, ডাম্পিং এর সুযোগ একদমই নাই।
সেক্ষেত্রে, একজন নারীর পক্ষে প্রতি ৪ ঘন্টা পর পর ওয়েস্ট প্যাড ফেলা, পেন্টিগুলোকে চেঞ্জ করে রাখা খুবই অস্বসতিকর এবং কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বনাম: মেন্সট্রুয়াল কাপ
এদিক থেকে মেন্সট্রুয়াল কাপ একজন ১০-১২ ঘন্টাও টানা ব্যবহার করা যায়।
একটা মেন্সট্রুয়াল কাপ সঠিকভাবে পানিতে নিয়মিত সিদ্ধ করে ব্যবহার করলে ৮-১০ বছরেও নিরাপদ থাকে।
তারমানে ৬০০-৮০০ টাকার দুইটি কাপে আপনি ১২ মাস X ১০ বছর ব্যবহার করছেন।
খরচ সর্বোচ্চ দুইটা কাপের জন্য ১২০০-১৬০০ টাকা, তাও ১০ বছরের জন্য।
এসকল কাপ এমন ধরণের মেডিকেল সিলিকন পদার্থ দিয়ে তৈরী হয়, যাতে ব্যাক্টেরিয়াল কালচার সম্ভব না হয়।
ফলে ১০-১২ ঘন্টা চেঞ্জ না করলেও একজন নারী সম্পূর্ণ নিরাপদ।
কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে একটা কাপ পরে, সারাদিন পর বাসায় ফিরেও চেঞ্জ করতে পারবেন।
কিংবা পেন্টি চেঞ্জের ঝামেলা নেই বলে, অফিস বা ওয়ার্কিং প্লেসেও ইজিলি চেঞ্জ করা যাবে।
ব্যবহারে স্বস্তি
প্যাড ব্যবহারের সময়ে নারীরা দুইটা বিষয়ে খুবই অস্বস্তিতে থাকেন- লিকেজ এবং র্যাশ নিয়ে।
একটা প্যাড যতই শোষণ ক্ষমতার হোক না কেন, কাজ কর্মের নড়া-চড়ায় ডিস্প্লেসড হয়ে যাবেই।
ফলে একটু না একটু লিকেজ হবেই। ফলস্বরূপ কাপড় নষ্ট, অস্বস্তি।
এছাড়া প্যাডের সুগন্ধ রক্ষার জন্য যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় সেই কেমিকেল ভীষণ এলার্জি তৈরী করে।
ফলে মেয়েদের দুই পায়ের মধ্যমর্তী স্থানে র্যাশ উঠে, জ্বালাপোড়া করে, কালো হয়ে যায়।
গজ/কাপড়ের প্যাডে সুগন্ধী কেমিক্যাল দেয়া না হলেও, ঐ সকল প্যাড বানাতে যে ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়, তা দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করলে, দুইপায়ের ফাঁকে ঘষা খেয়ে একই রকম এলার্জিক র্যাশ তৈরি করে।
ফলস্বরূপ সেই জ্বালাপোরা, স্থানটা কালো হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকেই যায়।
বনাম: মেন্সট্রুয়াল কাপ
এদিক থেকে মেন্সট্রুয়াল কাপ এর ব্যবহার একদম স্বস্তিকর।
বয়স এবং শারীরিক গঠনের পরিমাপে সাইজমত কিনলে, সহজেই এডজাস্ট করে ভ্যাজাইনাল এরিয়াতে।
এমনভাবে কাপটা বসে যায়, যে পিরিয়ডের ঐ অস্বস্তিটা থাকেই না।
স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করা যায়। কোন লিকেজের ভয় থাকে না।
আর কেমিকেল নেই বলে, কোন প্রকার র্যাশের বা এলার্জিক রিয়েকশনের সম্ভাবনাও শূণ্যের কাছাকাছি হয়ে যায়।
ফ্যাক্টর- পরিবেশবান্ধব
যে কোন র্যান্ডম সেনিটারি প্যাড একটা পরিবেশে সম্পূর্ণ রূপে ডিস্পোওজ হতে সময় লাগে কমপক্ষে ৫০০ বছর।
তাহলে প্রতিটা নারী একদিনে ৬ টি প্যাড করে, মাসে কিংবা বছরে কি পরিমাণ প্যাড ফেলে দেয়, আর সেগুলো ডিজপোজ হতে যে পরিমাণ সময় লাগবে, তাতে পরিবেশের কি মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, সহজেই অনুমেয়।
অপরদিকে, একটা মেন্সট্রুয়াল কাপই আপনি বছর দশেক ব্যবহার করছেন।
এরমধ্যে কোন কিছু ফেলার প্রশ্নই যেখানে আসছে না, সেখানে ডিস্পোজ করার ব্যাপারটাও থাকে না।
এবং বিবিধ…
মেনুস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের এত সুবিধার পরেও এদেশের মানুষ একটা ব্যাপারে এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে, যার মূলেও আছে আরেকটা সমাজে চলমান কুসংস্কার।
আর তা হল সতীত্ব।
অনেকে মনে করেন, অবিবাহিত নারীরা এই কাপ ব্যবহার করলে, তাদের সতীপর্দা নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে ভবিষ্যতে বৈবাহিক জীবণে সমস্যা হবে।
এখন এই সতীপর্দার ব্যাপারটা মেডিকেল সায়েন্স অনুযায়ী নিজেই যে কতবড় কুসংস্কার, তা নিয়ে লিখতে হলে, আরও একটা আর্টিকেল লেখা হয়ে যাবে গ্ল্যামোজেনে।
যা নিয়ে খুব তাড়াতাড়িই আসছে গ্লামোজেন।
কুসংস্কার নির্মূল:
তবে এখানে সংক্ষেপে বলে রাখি, মেন্সট্রুয়াল কাপের সাথে সতী পর্দা নষ্টের কোন সম্ভাবনা নেই।
বিয়ের পর শারীরিক মিলিনে রক্তপাত হওয়ার মূল কারণ একজন নারীর কুমারিত্ব কিংবা সতী থাকা নয়।
বরং তার মেন্টাল প্রেসার, আচানক শারীরিক মিলন, এবং পুরোপুরি রিল্যাক্স না হওয়ার জন্য রক্তপাত হতে পারে।
এসব বিবেচনা করলে, একটা সতী নারী রিল্যাক্স থাকলে, তার রক্তপাত নাও হতে পারে।
আবার কুমারিত্ব না থাকার পরেও নারীর রক্তপাত হতে পারে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর ডিপেন্ড করে।
‘তাই কুমারিত্ব নষ্ট হবে ভেবে, কেউ যদি আপনাকে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে নিষেধ করে, আপনি নিজেই তাকে থামাবেন।
কারণ একতা ভ্রান্ত সামাজিক কারণের চাইতে বেশি জরুরি আপনার স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা, আপনার জীবণ এবং আপনার মা হওয়ার ক্ষমতাকে রক্ষা করা।
তাই না?
বিবিধ: ২
এই কাপ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আরেকটা পয়েন্ট হল, এটা ব্যবহারে নাকি ভ্যাজাইনাল এরিয়া বড় হয়ে যায়। ফলে পরবর্তীতে বৈবাহিক জীবণে সমস্যা হয়।
এটাও একটা ভুল ধারণা।
সাইজ বুঝে কাপ কিনলে কোন সমস্যাই হয় না।
আর কেউ যদি ভুল কাপের জন্য একটু সমস্যায় পড়েনও, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, মেয়েদের ভ্যাজাইন্যাল এরিয়া এমন কিং মাংসপেশীর সমন্বয় গঠিত, যেগুলো যৌনকর্মের সময়ে এক্টিভ থাকলে, এসব বড়-ছট কোন ব্যাপার না।
আসলে সেটিস্ফেকশনটা নির্ভর করে আপনার পুরুষ সঙ্গীর মানসিকতার উপর।
সে যদি ইতিমধ্যে অল্প বয়স্ক বাচ্চাদের সাথে নিয়মিত যৌনমলিনে অভ্যস্ত থাকে, তাহলে আপনি বয়স অনুযায়ী যতই ফিট থাকুন না কেন ভ্যাজাইন্যাল এরিয়াতে, ঐ পুরুষ স্যাটিস্ফাই হবে না তার নিজের কারণেই।
তাই এই পয়েন্টে অন্তত মেন্সট্রুয়াল কাপকে দায়ী করা ভীষণ হাস্যকর হবে।
অতএব…
যুগটা শিক্ষার, পূর্ণ সমতা এবং নিরাপত্তার।
পিরিয়ডকালীন এসব ব্যাপার এখনও যদি চক্ষুলজ্জার কারণে ঘরের কোণে, পুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে রাখা হয়, তা দেখতে লাগবে যতটা হাস্যকর, ততোটাই স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিপূর্ণ।
নিজের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ এবং সুন্দর একতা জীবণের লক্ষ্যে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও উচিৎ এই পিরিয়ড এবং পিরিয়ডকালীন ব্যবহৃত সামগ্রী সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত থাকা।
এর ফলেই, সুনিশ্চিন্ত হবে একজন নারীর সুস্বাস্থ্য।
আর সুস্বাস্থ্যের নারী মানেই তো স্বীয় সৌন্দর্যে বিকশিত একজন নারী-সে ব্যাপারে গ্লামোজেনের পাঠকদের নতুন করে বলবার ত কিছু নেই।
তাই না?