ত্বকের যত্নে নানান প্রসাধনীর মাঝে ‘মাইসেলার ওয়াটার’য়ের নাম অনেকেই শুনে থাকবেন।
‘মাইসেলার ক্লিঞ্জিং ওয়াটার’ বা ‘মাইসেলার ওয়াটার’ হয়তো অনেকে ব্যবহারও করছেন।
তবে এটা আসলে কীভাবে কাজ করে আর কীভাবে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

মাইসেলার ওয়াটার আসলে কী?
মাইসেলার হলো ওয়াটার বেইসড একটা ক্লিনজার। যা মেকআপ তুলতে এবং স্কিনকে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে অনেকটা গেইম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করে।
এটি স্কিন ড্রাই না করেই ম্যাট বা ওয়াটারপ্রুফ মেকআপও খুব সহজে রিমুভ করে, পাশাপাশি স্কিন ময়েশ্চারাইজডও করে।
মাইসেলার ওয়াটারে ছোট ছোট ফ্যাটি অ্যাসিডের ক্লাস্টার থাকে যা মুখের তেল আর ময়লার সঙ্গে আটকে যায়।
তাই তুলো দিয়ে মুছে নিলেই সমস্ত ধুলোময়লা উঠে যায়।
মাইসেলার ওয়াটারে রয়েছে ক্ষুদ্র কণা যা ত্বকের ভেতরে ঢুকে ময়লাকে ঘিরে ধরে এবং তা ভেঙে ফেলে। ত্বককে শুষ্ক না করেই ময়লা বের করে আনে।
ফলে সাবানের সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।
ঐ ক্ষুদ্রকণাগুলো তেল, ময়লাকে প্রাকৃতিকভাবেই আকৃষ্ট করে এবং ত্বক পরিষ্কার করে।
তাই মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহারে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং ত্বক আর্দ্র থাকে।

যে কারণে মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার করা হয়
ত্বক পরিষ্কার করতে মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার করতে হবে।
এর কোনো বিকল্প নেই কারণ এটা ত্বকে থাকা বড় উপাদান যেমন- মেইকআপ, তেল ও জীবাণু যা সাবান বিহীন পরিষ্কারক ছাড়া পরিষ্কার করা যায় না, তা দূর করতেও সাহায্য করে।
অস্বস্তিকর সাবান প্রাকৃতিক তেল এবং প্রোটিনকে ভেঙে দেয়, ত্বককে শুষ্ক ও মলিন করে ফেলে।
অন্যদিকে মাইসেলার ওয়াটার ত্বককে পরিষ্কার করার পাশাপাশি সতেজ, সুরক্ষিত ও সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে।

স্কিন হাইড্রেটেড করে
মাইসেলার ওয়াটারে গ্লিসারিন থাকে, যা স্কিন হাইড্রেটেড রাখতে চমৎকার কাজ করে।
মেকআপ রেমুভের পর অনেক সময় স্কিনে ইরিটেশন হয়, মাইসেলার ওয়াটার স্কিনকে ইরিটেশন থেকে প্রোটেক্ট করে।
এছাড়াও এটি খুব মাইল্ড হওয়ায় ড্রাই স্কিনের জন্য বেশ ভালো একটি সলিউশন।

ডার্ট ও অয়েল কমায়
মাইসেলার ওয়াটার ফেসিয়াল ক্লিনজার হিসেবেও চমৎকার কাজ করে।
এটি মেকআপ রিমুভ করার পাশাপাশি স্কিনের ডার্ট ও অতিরিক্ত অয়েল কমায়।
এটি স্কিনের ডিপ লেয়ার পর্যন্ত গিয়ে ভিতর থেকে স্কিনকে পরিষ্কার করে।

সব স্কিন টাইপের জন্য ভালো
ড্রাই অয়েলি বা নরমাল যে ধরনের স্কিনই হোক না কেন, মাইসেলার ওয়াটার মানিয়ে যাবে সহজেই।
এটি স্কিনের ইনফ্ল্যামেশন ও ইরিটেশনও কমাতে সাহায্য করে।

মাইসেলার ওয়াটার কীভাবে ইউজ করতে হয়?
মাইসেলার ওয়াটার ইউজ করা খুবই ইজি।
তবে এটি অবশ্যই পরিষ্কার তুলা না কটন বল দিয়ে ইউজ করতে হবে।
কোনো কাপড়ে দিয়ে স্কিন ক্লিন করা যাবে না।
এতে স্কিনে জার্ম ও ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে।
প্রথমেই একটা কটন বল মাইসেলার ওয়াটারে ভালো মতো ভিজিয়ে নিন।
এরপর মুখের মেকআপের উপর হালকা করে মুছে নিলেই হবে।
তবে ভারি আই মেকআপ তুলার নিয়ম একটু ভিন্ন।
এর জন্য চোখের উপর কটন বল কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে হালকা করে মুছে নিলেই হবে।

মাইসেলার ওয়াটার শুধু ক্লিনজার নয়, তার চেয়ে কিছু বেশি
আর পাঁচটা ক্লিনজার ব্যবহার করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়।
কিন্তু মাইসেলার ওয়াটারের কোনো ধোওয়াধুয়ির বালাই নেই।
তুলো দিয়ে মুছে নিলেই হলো!

সংবেদনশীল ত্বকের পক্ষে আদর্শ
মাইসেলার ওয়াটার অত্যন্ত কোমলভাবে তৈরি এবং তাতে সাবান, সুগন্ধী, অ্যালকোহল বা অন্য কোনও প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদান নেই।
আসলে ফ্রান্সে মাইসেরা ওয়াটারের উৎপত্তিই হয়েছিলো ক্ষারযুক্ত কলের পানির পরিপূরক হিসেবে!
তাই ত্বক যত সংবেদনশীলই হোক, মাইসেলার ওয়াটার নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।

ফেস ওয়াইপসের বদলে মাইসেলার ওয়াটার
অধিকাংশ ফেস ওয়াইপসেই প্রচুর রাসায়নিক থাকে যা আপনার ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার করা অনেক বেশি নিরাপদ আর কার্যকরী, সুবিধেজনক তো বটেই!

সঙ্গে রাখা সহজ
বেড়াতে যাওয়ার সময় আলাদা আলাদা করে মেকআপ রিমুভার, ক্লিনজার, ফেস ওয়াইপস না নিয়ে শুধু মিসেলার ওয়াটারের একটা বোতল রাখুন।
আপনার সব প্রয়োজন একসঙ্গে মিটে যাবে, ত্বক নিয়েও চিন্তা থাকবে না!

মাইসেলার ওয়াটারের যে ব্যবহারগুলো জানা নেই অনেকের
নিয়মিত যারা মেকআপ পণ্য ব্যবহার করেন এবং বাইরের যাতায়াত করেন, তাদের জন্য মাইসেলার অপরিচিত কোন পণ্য নয়।
মুখের ত্বক থেকে মেকআপ তুলতে এবং ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করতে মাইসেলার ওয়াটার গেইম-চেঞ্জার ধরণের একটি পণ্য।
এমন চমৎকার একটি পণ্য শুধু নির্দিষ্ট একটি কাজেই নয়, বরং ব্যবহার করা যাবে আরও বেশ কিছু দারুণ কাজেও।

মেকআপ ব্রাশ পরিষ্কার করা
মেকআপ খুব দ্রুত ও সহজেই অপরিষ্কার হয়ে যায় এবং এই ব্রাশগুলো পরিষ্কার করা বেশ কষ্টকর ও ঝামেলাপূর্ণ কাজ।
সেক্ষেত্রে মাইসেলার ওয়াটার এই কাজটিকে সহজ করে দেবে।
ছোট পাত্রে মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে এতে ব্রাশ চুবিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণের জন্য।
এরপর ওয়াটার থেকে উঠিয়ে টিস্যুর সাহায্যে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

পারফিউমের ঘ্রাণ কমিয়ে আনা
শখ করে কেনা পারফিউমের ঘ্রাণ যদি প্রখর ও উগ্র মনে হয় তবে তা ফেলে রাখার প্রয়োজন নেই।
পারফিউমটি যেখানে স্প্রে করা হবে (ত্বক কিংবা পোশাকে) সেখানে কটন প্যাডে মাইসেলার প্রয়োগ করে হালকা করে মুছে নিতে হবে।
এতে করে পারফিউমের ঘ্রাণ সম্পূর্ণ চলে যাবে না, কিন্তু অনেকটা হালকা হয়ে আসবে।

মেকআপের ভুল ঠিক করা
মেকআপ করার ব্যাপারটি বেশ কৌশলপূর্ণ। সামান্য এদিক-সেদিকেও বড় ধরণের ভুল হয়ে যেতে পারে।
হুট করে আইলাইনারের টান বেঁকে যেতে পারে, মাশকারার দাগ ত্বকে লেগে যেতে পারে, ব্লাশ অতিরিক্ত দেওয়া হয়ে যেতে পারে।
এই সমস্যাগুলোর সমাধানে রয়েছে মাইসেলার ওয়াটার।
কটন প্যাডে অল্প পরিমাণ মাইসেলার ওয়াটার নিয়ে মেকআপের ভুল সহজেই ঠিক করে নেওয়া যাবে।

পোশাকের দাগ দূর করা
বাইরে যাওয়ার জন্য একদম টিপটপ হয়ে রেডি হওয়ার পর দেখলেন প্রিয় জামাতে পুরনো দাগ লেগে রয়েছে।
জামা বদলানোর মত ঝামেলায় না গিয়ে মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার করে পোশাকের দাগ তুলে ফেলা যাবে।

ফলস আইল্যাশ ওঠাবে সহজে
মেকআপের অন্যতম একটু অনুষঙ্গ হল ফলস আইল্যাশ।
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় আইল্যাশ ওঠানোর সময়।
যেহেতু আইল্যাশ ব্যবহারের আগে আইল্যাশ গ্লু ব্যবহার করা হয়, ফলস আইল্যাশ আইলিডে বেশ শক্তভাবে লেগে থাকে।
এখানেও কাজে আসবে মাইসেলার ওয়াটার। কটন প্যাড মাইসেলার ওয়াটারে ভিজিয়ে ফলস আইল্যাশের উপর আলতোভাবে চাপ দিতে হবে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে।
এরপর নিজ থেকেই ফলস আইল্যাশ খুলে আসবে।

মাইসেলার ওয়াটার নিয়ে শেষ কিছু কথা
মাইসেলার ওয়াটার সব টাইপের স্কিনের জন্যই ভালো কাজ করে।
অনেক সময় স্কিন টাইপ সেনসিটিভ হলে, মেকআপ রিমুভ করার সময় ইরিটেশন হয়।
মাইসেলার ওয়াটার মাইল্ড হওয়ায় সেনসিটিভ স্কিনের জন্যও ভালো সলিউশন হতে পারে।
এছাড়া এতে হাইড্রেটিং ও রিফ্রেশিং উপাদান আছে, যা স্কিনকে নারিশ করে।
এবার তো বিস্তারিত জানলেন যে, মেকআপ হোক বা ডার্ট বা স্কিনের এক্সেস অয়েল!
এসব কিছুর সলিউশন হিসেবে সলিউশন হিসেবে মাইসেলার ওয়াটার একদম বেস্ট!