শিশুদের মতো অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরও দুধ অপছন্দ।
কেউ কেউ কেবল ভাতের সঙ্গে দুধ-কলা খেতে পছন্দ করেন।
তবে খালি এক গ্লাস দুধ পানের ক্ষেত্রে তারা একেবারেই নারাজ।
কিন্তু এই দুধকে বলা হয় সুপার ফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার।
এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন।
দুধের নানা পুষ্টিগুণ আপনাকে সুস্থ, সবল ও নিরোগ রাখতে পারে।
অ্যাসিডিটির সমস্যা, পিরিয়ডের সময় তীব্র যন্ত্রণা, কাজের স্ট্রেসে অস্থির অবস্থা- এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এক গ্লাস দুধ।
প্রতিদিন মাত্র এক গ্লাস দুধ পানেই এমন অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা।
আসুন এবার জেনে নিই দুধের নানা উপকারিতা
১. ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে।
দুধের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে এদের গঠন দৃঢ় করে।
প্রতিদিন দুধ পান করলে দাঁতের ক্ষয়, দাঁতে পোকা ও হলুদ ছোপ পড়া, হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
২. প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পানে অন্যান্য খাবারের চাহিদা অনেকাংশে মিটে যায়
নাস্তার সময় দুধ পান করলে দীর্ঘ সময় সেটা পেটে থাকে। ফলে ক্ষুধা কম থাকে।
এছাড়া দুধ পানের ফলে দেহের অনেক ধরণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগলে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন কমাতে চাইলে, প্রতিদিনের ডায়েটে দুধ রাখুন।
৩. দুধে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলস ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে
দুধ পানে ঘুমের উদ্রেক হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হয়।
সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন।
৪. দুধ শরীর রি-হাইড্রেট করতে সাহায্য করে
ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগলে এক গ্লাস দুধ পান করে নিন। সুস্থ বোধ করবেন।
শুধু এটুকুই নয়, আরো আছে
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে এবং দুধজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি না থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
৬. শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক না থাকলে প্রি মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম হতে পারে।
তাই পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে খেয়ে নিন এক গ্লাস দুধ।
৭. দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংশপেশির গঠনে সহায়তা করে ও মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করে।
নিয়মিত ব্যায়ামের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস দুধ খুবই উপকারী।
শিশুদের মাংশপেশির গঠন উন্নত করতেও প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।
৮. প্রতিদিন আমরা এমন অনেক ধরণের খাবার খাই যার ফলে অ্যাসিডিটি হয় ও বুক জ্বালাপোড়া করে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান, প্রতিদিন দুধ পান। দুধ পাকস্থলী ঠাণ্ডা রাখে ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।
৯. দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন দুধ পানে ত্বক নরম, কোমল ও মসৃণ হয়।
১০. দুধ কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
সঠিক পুষ্টি পেতে নিয়ম মেনে দুধ পান করতে হবে
দুধ পান করা শরীরের পক্ষে ভালো একথা সবাই জানলেও, দুধ পানের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি এটি সবাই জানেন না।
খালি পেটে দুধ পান করেন অনেকে। এই অভ্যাস এড়িয়ে চলুন।
আপনি যদি বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন তবে অবশ্যই এটি মেনে চলতে হবে।
ল্যাক্টেজ গ্রহণে সমস্যা যাদের
যাদের শরীরে ‘ল্যাক্টেজ’ নামক এনজাইমের অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া।
ল্যাক্টেজ দুধ হজম করতে আমাদের সাহায্য করে। এটি দুধের উপাদান ল্যাক্টোজ (lactose)–কে ভেঙে দেয়।
বস্তুত আমাদের শরীর সরাসরি ল্যাক্টোজ গ্রহণ করতে পারে না। তাই ল্যাক্টেজের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
তাই, যাদের শরীরে ল্যাক্টেজের অভাব আছে, তাদের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ শুনতে হবে।
দুধ পানে অবশ্যই সাবধানতা মেনে চলুন
নোনতা স্বাদের খাবার যেমন বিস্কুট কিংবা চানাচুর খাওয়ার পরে কখনো দুধ পান করবেন না।
যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
কিডনির পাথরের একটি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। আর দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।
তাই এ ধরনের রোগীর উচিত দুধ কম খাওয়া এবং রাতে একেবারেই দুধ না খাওয়া।
যাদের দুধে এলার্জি রয়েছে, তাদের দুধ খাওয়া সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত।
এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে দুগ্ধজাত খাদ্য খেতে পারেন।
কাশি, হাঁপানি, ডায়রিয়া, কোলাইটিস, পেটের ব্যথা বা বদহজমের সমস্যা থেকে থাকলে দুধ খাাওয়া এড়ানো উচিত।