প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত কয়েকটি উপাদান দিয়ে স্কিন কেয়ার

স্কিন নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই।

আজ ব্রণ ওঠে তো কাল এলার্জি, পরশু দেখা যায় মেছতা।

এছাড়াও কালচে ভাব, চামড়া ওঠা, রোদে পুড়ে যাওয়া – এসব নানাবিধ সমস্যার কারনে স্কিন নিয়ে আমাদের ভাবনার অন্ত থাকে না।

আর এসব সমস্যার সমাধানে আমরা বাজারে গিয়ে কিনে আনি নানানরকম কেমিক্যালে ভরা পণ্য যা আদতে স্কিনের ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু করে না।

অনেক সময় তো দেখা যায় এসবের প্রভাবে স্কিনের অবস্থা হয় আরো বাজে।

এত খরচ না করে হাতের কাছে কিংবা আপনার রান্না ঘরেই পাওয়া যায় এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যেই আপনি স্কিন রাখতে পারেন ভালো।

যার নেই কোনো রকমের সাইড এফেক্টও।

প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সাধারণ কয়েকটি উপাদান দিয়ে স্কিন ভালো রাখার কিছু টিপসঃ

আটাঃ

আটা স্কিনের ডার্ক সার্কেল ও কালচে ভাব দূর করে জেল্লা ফিরিয়ে এনে স্কিনকে সজীব করতে সাহায্য করে।

কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ

  • চোখের আশেপাশের ডার্ক সার্কেল দূর করতে এর সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন।
    দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
  • দুধ বা দইয়ের সঙ্গে আটা মিশিয়ে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি মুখ, ঘাড়, গলা, হাত-পায়ে লাগিয়ে দশ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
  • হাঁটু বা কনুইয়ের কালচে ভাব ও রোদে পোড়া ভাব দূর করতে এই মিশ্রণটি খুবই কার্যকর।
  • স্কিন টানটান রাখতে ও মরা চামড়া দূর করতে আটার সাথে মধু কিংবা লেবুর রস মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন।
    চাইলে লেবুর বদলে শসার রস বা গোলাপ জলও ব্যবহার করতে পারেন।

আলুঃ

আলুতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, ফাইবার ও ভিটামিন রয়েছে যা স্কিনের বয়স কমিয়ে দেয় ও রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে।

কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ

  • চোখের আশেপাশের ফোলা ভাব ও ডার্ক সার্কেল দূর করতে আলু পাতলা করে কেটে অথবা কুচিয়ে নিয়ে চোখের উপর দিয়ে রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
  • আলু কুচিয়ে রস বের করে নিন। এই রস নিয়মিত স্কিনে লাগালে ব্রণের দাগ দূর হয় ও উজ্জ্বলতা বাড়ে।
  • রোদে পোড়া ভাব দূর করতে আলু বেটে নিয়ে তাতে মধু, লেবুর রস বা গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট খুবই উপকারী।

ডালঃ

স্কিন ভালো রাখতে মসুর ডালের ব্যবহার চলে আসছে অনেক আগে থেকেই।

এতে থাকা খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্কিনের পরিচর্যায় খুব ভালো কাজ করে। তবে সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার করলে স্কিন শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।

কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ

  • মসুর ডালের গুড়ার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ম্যাসাজ করে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এটি স্কিনের তৈলাক্ততা কমায়।
  • এটি ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে। মসুর ডালের সাথে দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট স্কিনে হালকা ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রাখুন, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
  • যাদের স্কিনে খুব বেশি গর্ত আছে তারা মসুর ডালের গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
    নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে গর্ত দূর হবে খুব তাড়াতাড়িই।

চিনিঃ

প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে চিনি ব্যবহার করা হয় অনেক আগে থেকেই। বিভিন্ন ব্র্যান্ডেড স্ক্রাবাররেও অন্যতম উপাদান চিনি।

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে, ঠোঁট নরম রাখতে, কনুইয়ের কালো দাগ ও স্ট্রেচ মার্ক সরাতেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ

  • কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েলের সাথে এক চামচ চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব করুন মুখে, যতক্ষন পর্যন্ত চিনি পুরোপুরি গলে না যায়। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
    এতে স্কিনের মৃত কোষ ও ময়লা-ধুলোবালি দূর হয়ে যায় খুব সহজেই।
  • স্কিনের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতেও চিনি খুবই সহায়ক। লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
    এই মিশ্রণ স্ট্রেচ মার্ক তুলতেও সহায়ক। লেবুর রসের বদলে মধুও ব্যবহার করতে পারেন।
  • চিনি আটকাতে পারে ঠোঁট ফাটার সমস্যাও। বিটের রস ও চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। নরম ও লালচে হওয়ার পাশাপাশি ফাটবে না ঠোঁটও।

লবণঃ

লবণের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান স্কিনের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ উপশম করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

এতে থাকা খনিজ উপাদান স্কিনে আর্দ্রতা সঞ্চার করে ও টানটান রাখে। এটি টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।

কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ

  • উজ্জ্বল ও মসৃণ স্কিন পেতে দুই চামচ লবণের সাথে চার চামচ মধু মিশিয়ে স্কিনে মেখে নিন।
    ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে আঙুল দিয়ে আলতো করে ঘষে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে অন্তত একবার এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
  • এক কাপ কুসুম গরম পানিতে কয়েক চিমটি ইপসম লবণ বা খাবার লবণ মিশিয়ে তুলা বা স্প্রে বোতলের সাহায্যে স্কিনে ব্যবহার করুন।
    এটি টোনারের পাশাপাশি ব্রণনাশক হিসেবেও কাজ করবে।
  • বলিরেখাকে বলি দিতে মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে লবণ। অলিভ অয়েলের সাথে লবণ মিশিয়ে বলিরেখার উপর হালকাভাবে দশ মিনিট ম্যাসাজ করুন।
    এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই উপায়ে ম্যাসাজ করলে বলিরেখা দূর হবে খুব দ্রুতই।

স্কিনের জন্য আমরা কতকিছুই না করি।

অথচ দেখুন, আপনার রান্না ঘরে সব সময় থাকে এমন কয়েকটি কেমিক্যাল ফ্রি উপাদান দিয়েই স্কিনের যত্ন নেয়া যায় খুব ভালোভাবেই, থাকছে না কোনো সাইড এফেক্টের চিন্তাও।

তাই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন এগুলো।

পাশাপাশি স্কিন ভালো রাখতে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম, বেশি বেশি পানি পান এবং সঠিক খাবার।

এসব কিছু ঠিক রাখলেই দেখবেন স্কিন হয়ে উঠছে আরো সুন্দর ও লাবণ্যময়। আর হ্যা, প্রাকৃতিক উপাদানগুলো কাজ করতে স্কিনভেদে একটু সময় নেয়।

তাই দুদিন লাগিয়ে থেমে গেলেই কিন্তু হবে না, ধৈর্য্য ধরে ব্যবহার করা চাই।