নিয়মিত ব্রণ আক্রমণ করছে? তাহলে আপনাকে এখনই দৈনিক জীবনচর্যায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
খুব বেশি ভাজাভুজি, রিফাইন্ড তেল, ময়দা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। নিয়মিত ফল আর সেদ্ধ সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
খাদ্যতালিকায় থাকুক হালকা তেলে রান্না করা সুষম, পুষ্টিকর খাবার।
পেট পরিষ্কার হচ্ছে তো রোজ? সেদিকে বিশেষ নজর দিন।
বাড়তি স্ট্রেস থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
ব্যায়াম করলেও কিন্তু শরীর টক্সিমুক্ত থাকে, তাই হালকা কোনও ব্যায়াম বা হাঁটার উপর জোর দিন।
কেন ব্রণ হয়?
যখন ত্বকে অতিরিক্ত সিবাম নিঃসৃত হয়, তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে ওঠে। এই সিবাম ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিতে পারে, যা সংক্রমিত হয়ে গেলে ব্রণ দেখা দেয়।
এ সময় যদি সঠিকভাবে যত্ন না নেয়া হয়, তবে ব্রণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং ত্বকে কালো ও স্থায়ী দাগ তৈরি হতে পারে।
হরমোনের স্তরে অস্বাভাবিক কোনও পরিবর্তন এলে কিন্তু ব্রণের আচমকা হামলা হতে পারে। সেই সঙ্গে মেনোপজ, মাসিক ঋতুচক্রের আগে ও পরেও অনেকের ব্রণ হয়।
যারা নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য হরমোনের ওষুধ খান, তাদেরও এই সমস্যা বিব্রত করতে পারে।
এসব ব্যাপারগুলো নিয়ে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
যারা ব্রণর সমস্যায় ভুগছেন, তারা চেষ্টা করুন নন-কোমেডোজেনিক এবং সেনসেটিভ ত্বকের জন্য উপযোগী ক্রিম ব্যবহারের।
ব্রণ কখনওই খুঁটবেন না, তাতে ইনফেকশন বাড়বে। টি-ট্রি অয়েল ডাইলিউট করে ব্রণর উপর লাগালে সুরাহা হতে পারে।
হাতের কাছে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার থাকলেও কাজ চলবে।
চেষ্টা করুন লো-গ্লাইসেমিক এবং ডেয়ারি ফ্রি ডায়েট মেনে চলার।
এমনিতেই আপনার ত্বকের পোরগুলির মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েই সমস্যা বাড়ে, তার উপর খাবারে বাড়তি তেল থাকলে ব্রণ কমবেই না।
বার বার মুখ ধোবেন না, দিনে দু’বারই যথেষ্ট। আপনি যতবার মুখ ধোবেন, তত বেশি তেল নিঃসৃত হবে। সেই সঙ্গে আয়েল ফ্রি ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করুন।
আপনার ডাক্তার যদি অনুমতি দেন, একমাত্র তাহলেই ভারি কোনও এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করতে পারেন।
সঠিক নিয়মে মুখ ধোয়া
ব্রণ দূর করার প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিকভাবে মুখ ধোয়া।
তাই বলে আপনাকে দিনে বারবার মুখ ধুতে হবে না। এটি আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।
সকালে-দুপুরে-রাতে নিয়ম করে বার তিনেক মুখ পরিষ্কার করলেই চলবে।
ঠান্ডা পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখ মুছতে নরম তোয়ালে ব্যবহার করবেন।
সাবান ব্যবহার না করে ভালো কোম্পানির ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
কখনোই ব্রণে নখ দিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না। এমন করলে দাগ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
নিয়মিত ঘুম প্রয়োজন। অনিদ্রায় যেমন ব্রণের প্রবণতা বাড়ে, তেমনি অতিরিক্ত ঘুমের কারণেও ব্রণ হতে পারে।
দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে চেষ্টা করুন।
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখতে ফেসওয়াশ ব্যবহার করা জরুরি।
তবে ব্যবহারের আগে বুঝে নিতে হবে কোন ধরনের ত্বকে কোন উপকরণে ভালো ফল মিলবে।
ফেসওয়াশ এর ব্যবহার কি আসলেই কার্যকরী?
ফেসওয়াশ হলো প্রতিদিন ব্যবহার করার জন্য একটি প্রসাধনী। প্রতিদিন আমাদের ত্বকে যে ময়লা জমে সেটা দূর করার জন্য ফেসওয়াশ ব্যবহার করা হয়।
যদি দৈনিক মুখের ত্বক পরিস্কার না করা হয় তবে নানাবিধ সমস্যা দেখে দিতে পারে, যা প্রাথমিকবভাবে প্রতিহত করে একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ।
বাজারে আপনার ত্বকের সুরক্ষার জন্য নানা রকমের ফেসওয়াশ পাওয়া যায় ৷ কিন্তু সব ফেসওয়াশ সব ধরণের ত্বকের উপরে প্রয়োগ করা উচিত নয় ৷
অবশ্যই প্রত্যেকের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য একধরণের ফেসওয়াশ আবার রুক্ষ বা শুষ্ক ত্বকের জন্য অন্য ধরণের ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত ৷
যেমন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল ফেসওয়াশ উপযুক্ত যা ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে জমতে দেয় না।
এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম ফেসওয়াশ উপযুক্ত যা ত্বককে হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজ করে।
একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ আপনার ত্বকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে ত্বককে পরিষ্কার ও মোলায়েম করে তোলে।
এটি মেকআপ থেকে রয়ে যাওয়া ময়লাও পরিষ্কার করে রোমকূপের মুখ বন্ধ না হতে দিয়ে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ ফেসওয়াশ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয় বলে ত্বকের অল্প কোনো অসুবিধা যেমন চুলকানি জাতীয় কোনো সমস্যা থাকলে এটি তা নিরাময় করে।
যা আপনার ত্বককে রোমকূপের গোড়া থেকে পরিষ্কার করে ত্বকের সজীবতা ফিরিয়ে আনে।
নিয়মিত ফেসসওয়াশ ব্যবহারে আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতাকে ফিরিয়ে আনে। ত্বককে মৃত কোষ থেকে মুক্ত করে।
হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা খুঁজে পাবেন ভালো ময়েশচারাইজার বেজড ফেসওয়াশে। ফেসওয়াশে থাকা ভিটামিন ই থাকার জন্য এটি ত্বকের কোমলতা বজায় রাখে।
একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না।
ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বক থেকে শুকনো ভাব দূর করে।
নিয়মিত ভালো মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ত্বকের নানাবিধ সমস্যাকে প্রাথমিকভাবে প্রতিহত করে, ফলে একনে প্রোন স্কিন বা ব্রণ এর জন্য খুবই কার্যকরী ফেসওয়াশের ব্যবহার।
কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি জেনে রাখুন
ব্রণ দূর করতে শসা
কেবল খাদ্যগুণই নয়, শসার নানা গুণ রয়েছে। তার মধ্যে একটা অবশ্যই ত্বকের কাজে লাগা। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই।
শসা সবধরনের ত্বকের জন্যই মারাত্মক ভালো। শসা থেঁতো করে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিন মুখ।
এছাড়াও শসাকে অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারেন। শসা গোল গোল করে কেটে অন্তত একঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
তারপর সেই পানি খেয়েও নিতে পারেন, বা ওই পানি দিয়ে মুখও ধুয়ে নিতে পারেন।
ব্রণ দূর করতে গ্রিন টি
- গ্রিন টি গোটা বা ব্রণের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। গরম পানি গ্রিন টি বানান। তারপর সেই গ্রিন টি একদম ঠাণ্ডা করে ব্রণ বা গোটার জায়গায় ব্যবহার করুন।
- তুলায় ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভালো করে ত্বকের ওপর মিশতে পারবে চায়ের মিশ্রণটি।
- যদি টি ব্য়াগ থেকে গ্রিন টি বানান, তাহলে ঠাণ্ডা গ্রিন টি ব্যাগটিও রাখতে পারেন ত্বকের ওপর। মিনিট ২০ রাখার পর ধুয়ে নিন।
- দুই টেবিল-চামচ গ্রিন টি’র পাতা এক কাপ গরম পানিতে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর এতে তুলার বল ডুবিয়ে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ দূর করতে রসুন
রসুন ব্রণের বড় শত্রু। এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। এক-দুই কোয়া রসুন দুই টুকরা করে কেটে নিন।
তারপর ব্রণের জায়গায় রসটা লাগান। মিনট পাঁচেক পরে ধুয়ে ফেলুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এটা করলে পরদিন সকালে ত্বকের উন্নতি টের পাবেন।
টি ট্রি অয়েল
ব্রণ কমাতে প্রতিদিনকার ব্যবহৃত ক্লিঞ্জারে এক ফোঁটা টি ট্রি তেল দিয়ে নিন। এই তেল হোয়াইট ও ব্ল্যাক হেড্স কমাতে সাহায্য করে।
ডিমের সাদা অংশ
ডিম ত্বকের লোম কূপ টানটান করে। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার
এতে আছে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ব্রণ কমায়।
এক ভাগ ভিনিগারের সঙ্গে দুভাগ ডিস্টিল্ড ওয়াটার মেশান। এটা ব্রণ আক্রান্ত স্থানে টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন।
বরফ
ব্রণ সমস্যা কমাতে বরফ খুব ভালো কাজ করে। বরফ সংক্রমণ দূর করে এবং লালচেভাব কমায়।
ব্রণ কি আসলেই দূর করা সম্ভব?
লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্রণ সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব—
- প্রতিদিন ন্যুনতম ২ লিটার বা তার বেশি পানি পান করতে হবে।
- সপ্তাহে অন্তত ২ বার স্কিন কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে স্কিন উপযোগী এক্সফোলিয়েটর দিয়ে এক্সফোলিয়েট করতে হবে।
- ঘন ঘন মুখে আধোয়া বা অপরিচ্ছন্ন হাত দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অপরিচ্ছন্ন হাতের রোগ জীবাণু মুখের লোমকূপের গোড়ায় ইনফেকশন এর অন্যতম কারন।
- সপ্তাহে অন্তত ১ বার বালিশ কাভার ধুতে হবে। মুখ মোছার তোয়ালে নিয়মিত ধুতে হবে।
- মেকআপ রিমুভ করার জন্য অবশ্যই অবশ্যই ডাবল ক্লেনজ করতে হবে। প্রথমে অয়েল বেজড ক্লেনজার দিয়ে মেকআপ উঠিয়ে তারপর সাধারণ ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুতে হবে।
- দীর্ঘ সময় ধরে ব্রণ সমস্যায় ভুগতে থাকলে দ্রুত ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন
সাধারনত ব্রণ বা পিম্পল বা একনি ত্বকের এমন একটি অবস্থা যা হয় যখন আপনার মুখের ত্বকের লোমকূপের গোড়ায় ধুলা-ময়লা, ত্বকের ন্যাচারল তেল এবং ত্বকের মৃত কোষ জমে যায়।
ব্রণ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ইনফেকশনও হয়ে যায়।
এটি প্রায়শই হোয়াইটহেডস, ব্ল্যাকহেডস বা পিম্পলস সৃষ্টি করে এবং সাধারণত মুখ, কপাল, বুক, উপরের পিঠ এবং কাঁধে উপস্থিত হয়।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ব্রণ সাধারণত সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যদিও এটি সমস্ত বয়সের লোককে প্রভাবিত করে।
ঠিকমতো প্রতিরোধ না করলে ব্রণ ত্বকে ক্ষত বা দাগ সৃষ্টি করতে পারে। যা কনফিডেন্স কমিয়ে আপনার স্ট্রেস এর কারণ হতে পারে।
চেষ্টা করুন উপরোক্ত পরমার্শগুলো মেনে চলার। উপকার পাবেন আশাকরি।