Search
Close this search box.

কেমন হতে পারে বৈশাখের সাজ?

রঙিন বৈশাখ। রঙিন দিন। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ আসে নতুন আবহ নিয়ে।

এই দিনে বাঙালিয়ানা সাজে সেজে উঠতে চান সবাই। তাদের জন্যই এই ফিচার।

পয়লা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য।  বাঙালি সংস্কৃতির ঐহিত্যবাহী উৎসবের সাজ-পোশাকে চাই বাঙালিয়ানা।

কিন্তু চৈত্রের বিদায় বেলায় বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি শুরু হয়। আর  গ্রীষ্মের প্রথম দিনটি হয়ে ওঠে বাঙালি ঐতিহ্যের উৎসবের দিন।

তাই সবখানেই প্রচণ্ড রোদ এবং গরম বিরাজ করতে থাকে।

আর এই রোদ-গরম উপেক্ষা করে রাজপথে বাড়তে থাকে উৎসবমুখী মানুষের ভিড়।

কিন্তু এবারের পয়লা বৈশাখে আপনার সাজ কেমন হচ্ছে? কী আছে এবারে ট্রেন্ডে?

সেই সব দিক পাঠকের সামনে তুলে ধরতেই আজকের এই ফিচার।

কেমন হতে পারে বৈশাখের পেশাক

গর-বন্দর সবখানে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকেন সবাই।

লাল সাদা শাড়িতে ললনারা সেজে ওঠে অপরূপ সাজে।

কপালে লাল টিপ, খোঁপায় গাজরা ফুলের মালা এবং হাতভর্তি রঙিন কাচের চুড়ি।

ব্যাস! বৈশাখের এমন দিনের সাজে অনন্যা হয়ে উঠতে এর চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই।

আসলে পয়লা বৈশাখের দিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাঙালিয়ানা সাজতেই পছন্দ করেন।

আর বাঙালি সাজের প্রথমেই আসবে শাড়ি। আর শাড়ির ক্ষেত্রে বর্তমান বাজার দখল করে আছে হ্যান্ডলুমের ট্রেন্ড।

একেবারে সাধারণ, সুন্দর রঙের নৈপুণ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হ্যান্ডলুমের তৈরি বৈশাখের শাড়ি।

যেহেতু গ্রীষ্মকাল। তাই ভারী শাড়ি বা এমব্রয়ডারি কাজ করা শাড়ি এখন একেবারেই চলছে না।

সুন্দর হ্যান্ডলুমের শাড়ির জমিটা একটা রং আর পরে যুক্ত হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক।

ভিতরটা এক রকম তো আঁচলটা অন্য রং। এই শাড়িগুলোই এখন চলছে।

শাড়ির বাইরেও রমণীদের পছন্দের তালিকায় থাকছে সালোয়ার কামিজ।

এসব কামিজে লাল ও সাদা তো থাকবেই, সঙ্গে থাকতে হবে অন্যান্য রংও।

বৈশাখে কামিজের ফ্যাশনে যুক্ত হয়েছে ওয়েস্টার্ন ধাঁচের ফিটিং।

এসব পোশাক শুধু গতানুগতিক ধারাতেই তৈরি করা হচ্ছে না, বরং নিত্যনতুন ফ্যাশন যোগ করে বৈশাখকে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে নিত্যনতুন রঙে।

সেই ধারাবাহিকতায় বৈশাখী কামিজে ফ্যাশন হাউসগুলো যোগ করেছে বিভিন্ন দেশের ফ্যাশন।

কেমন হতে পারে বৈশাখের গয়না

বৈশাখ এলেই গয়নার দোকানে ভিড় জমে।

নিজেদের পছন্দের শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে চুড়ি, মালা, দুল কিনতে পারেন।

এর বাইরে সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, টপস, স্কার্ট ইত্যাদি পোশাকের সঙ্গেও আলাদা গয়না পরতে পারেন।

হালফ্যাশনে এখন অ্যান্টিক রাজ করে চলেছে।

মাদুলি ও হাঁসুলির পাশাপাশি মঙ্গলসূত্রের মতো দেখতে অ্যান্টিকের গলার মালার চাহিদাও বেশ।

সঙ্গে অ্যান্টিকের চুড়িও বেশি বিক্রি হচ্ছে। বৈশাখী সাজে রাঙিয়ে তুলতে মাদুলীর আয়োজনজুড়ে রয়েছে নান্দনিক সব গয়নার সমাহার।

এ সবের মধ্যে রয়েছে মাটির মালা ও কানের দুল, লম্বা পুঁতির মালা, কাঠের চুড়ি, কাঠের গলার হার, পিতলের বালা, কানের রিং, অক্সিডাইজড ইয়ার রিং।

এ ছাড়া বাঙালিয়ানা এবং নববর্ষের ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কাচের চুড়ি।

লাল ও সাদা- তো বটেই শাড়িতে ব্যবহৃত অন্যান্য রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়িও পরতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে আধুনিক মেয়েরা।

বৈশাখের সাজে অনন্যা তুমি

প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যও পাওয়া, বন্ধুমহল এবং পরিচিত জনদের আড্ডা দিতে দিনটি বেশ উপযুক্ত।

তাই সাজপোশাকে একটু ভিন্নতা থাকতেই পারে।

সাজের শুরুতেই খেয়াল রাখতে হবে পয়লা বৈশাখের উৎসব হয় তীব্র গরমের মধ্য দিয়ে।

তাই এমন দিনে ভারী সাজ পুরোপুরি বেমানান। হালকা সাজেই অনন্যা হয়ে উঠতে পারেন।

তবে গরমকে হার মানিয়ে দীর্ঘক্ষণ সাজ ধরে রাখতে ট্রাই করুন ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ।

দিনে মেকওভার নিন হালকা। তবে তা অবশ্যই ম্যাট হতে হবে।

চোখে গাঢ় রং না দিয়ে বেছে নিন নিউট্রাল বা হালকা কোনো শেড।

আর ঠোঁট রাঙাতে নিন টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক।

শাড়ির সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সাজ দিতে চাইলে কপালে লাল টিপ থাকলেই পূর্ণতা পাবে।

মেকওভার শুরু করার আগে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

যেহেতু তপ্ত রোদে বের হবেন! তাই বরফ টুকরো নিয়ে মুখে ও গলায় হালকাভাবে ঘষে নিন।

এতে মেকআপ নষ্ট হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। আর ফ্রেশ তো লাগবেই।

তুলোয় অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন বা টোনার দিয়ে মুখ মুছে নিন। তারপর আপনি যে ক্রিমে অভ্যস্ত সেটি মেখে নিন।

সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না

এই বৈশাখের রোদে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। কমপক্ষে ৫০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন হলে ভালো হয়।

বাইরে বের হবার ত্রিশ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের সাথে মিশে প্রতিরক্ষা দিতেও সানস্ক্রিনের সময় দরকার।

বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে ২/৩ ঘন্টা পরপর সানস্ক্রিন রি-এপ্লাই করবেন প্লিজ।

মুখে বেশি দাগ থাকলে কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। আর দাগহীন মুখে শুধুমাত্র ফাউন্ডেশনই যথেষ্ট।

চাইলে ম্যাট ফাউন্ডেশন লাগাতে পারেন।

চোখের নিচের কালি ও মুখে দাগ ঢাকতে অল্প পরিমাণে কনসিলার লাগিয়ে স্পঞ্জ বা ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন।

সব শেষে কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিন।

মুখের মেকআপ হয়ে গেলে হালকা ব্লাশঅন না দিলে পুরো আয়োজনটাই মাটি হয়ে যাবে।

গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা গোলাপি বা বাদামি ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন।

পয়লা বৈশাখে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কাজল এঁকে নিন। এবার মানানসই আইশ্যাডো দিলে চোখের সাজে পূর্ণতা আসবে।

আলগা পাপড়ি ভালো দেখায় তবে পাপড়ি লাগাতে না চাইলে ভালো করে মাশকারা লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না।

লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙাতে লিপলাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে নিন। ম্যাট লিপস্টিকই গরমে ভালো। চোখে গাঢ় সাজ হলে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিন। এই দিনে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গাঢ় লিপস্টিকও খারাপ না। ব্যাস পূর্ণ হয়ে যাবে পয়লা বৈশাখে রমণীর সাজগোজের সাতকাহন।

প্রয়োজনীয় পরামর্শ

পয়লা বৈশাখ মানে রঙিন উৎসব। এদিন সাজ-পোশাকেই থাকে উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া।

পার্থক্যটা কেবল মেকআপ এবং অনুষঙ্গে। নিজেকে ভিন্ন লুকে দেখাতে চাইলে নানা ঢঙে শাড়ি পরতে পারেন।

মাঝবয়সী কেউ কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরতে পারেন, সঙ্গে হাতখোঁপা আর কপালে গোল টিপে ছিমছাম সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।

চাইলে এক প্যাঁচের শাড়িও পরতে পারেন এই দিনে। সঙ্গে টিকলি বা নথ, পুরোপুরি দেশি ঢঙে সেজে উঠতে পারেন।

তা ছাড়া সবাই শাড়িতে অভ্যস্ত নন। শাড়ির প্যাঁচে আবদ্ধ না থাকতে চাইলে বেছে নিতে পারেন সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, ফতুয়া, স্কার্ট এবং পায়জামা।

এসব পোশাকে চুল সামনে একটু পাফ করে পনিটেল বা অন্য কোনো বান করে নিতে পারেন।

দিনে চুলে ছিমছাম সাজ এবং রাতে চুলটা সুন্দর করে সেট করে ছেড়ে রাখতে পারেন।

অথবা চুলটা উঁচু করে বেঁধে ব্যবহার করতে পারেন কোনো হেয়ার অ্যাকসেসরিজ। তবে হ্যাঁ, বেড়ানোর সময় এক রকম সাজ।

কিন্তু ঘরোয়া আয়োজন এবং অতিথি আপ্যায়নের সময় সাজটা নিশ্চয়ই তেমন হবে না।

ঘরোয়া আয়োজনে শাড়ি-কামিজ পরতে না চাইলে স্কার্ট পরতে পারেন।

চুলটা না হয় বেঁধে নিলেন এলোমেলো ঢঙে, কানে পরতে পারেন লম্বা কোনো দুল।

সাজপোশাকে পুরোপুরি বাঙালিয়ানা আনতে এ সময় অবশ্যই ফ্ল্যাট স্যু বা জুতা পরুন।

খেয়াল রাখুন

অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।

করোনার এই ক্রান্তিকালে উৎসবের চাইতে সুস্থ থাকাটা বেশি জরুরি।

সাজটা যাতে অনেক সময় থাকে সে জন্য মেকআপের আগে কিছু সময় মুখে বরফ ঘষে নিন।

তবে মনে রাখতে হবে সাজটা হালকা হলে ভালো।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী সবাই মিলিত হই মহামিলনমেলায়।

আর সে মিলনমেলায় নিজেকে সুন্দর ও পরিপাটি করে উপস্থাপন করাটাই সার্থকতা।

এরই ঐতিহ্য ধরে বর্ষবরণের পোশাকে এখন এসেছে একটু ভিন্নতা।

লাল-সাদার পাশাপাশি বৈশাখী পোশাকে স্থান করে নিয়েছে আরও কিছু রঙ।

এখন বৈশাখ আর লাল-সাদার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, লাল-সাদার পাশাপাশি অন্য রঙকেও বেছে নিয়েছে।

এ উৎসবে নিজেদের একটু ভিন্নভাবে ফুটিয়ে তুলতে ছেলেরাও পিছিয়ে নেই।

পহেলা বৈশাখ সাধারণত গ্রীষ্মকালে থাকে, তাই গরমও থাকে।

তাই সাজটা সেভাবে দিতে হবে, যাতে দীর্ঘ সময় থাকে।