বছর ঘুরে আবার আমাদের সামনে পবিত্র মাহে রমজান হাজির হয়েছে।
আমাদের দেশের মানুষের মাঝে রমজানে যে খাদ্যাভ্যাস, তা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমাদের দেশে সেহরি ও ইফতারের বেশির ভাগ খাবারই হচ্ছে উচ্চ চর্বিসমৃদ্ধ এবং তেলে ভাজা।
সেহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা হয় না।
কিন্তু এসব দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
তাই আজ সেহরি ও ইফতার কেমন হওয়া উচিত এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো আমরা।
প্রথমে সেহরির প্রসঙ্গে আসা যাক
স্বাভাবিকভাবে যে কোনো ধরনের খাবারই সেহরিতে খাওয়া যায়।
তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবারটা যেন সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। ভাত বাঙালির প্রধান খাবার।
তাই সেহরিতে অবশ্যই সাদা ভাত রাখবেন। তবে ভাতের সঙ্গে রাখতে হবে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমনথ মাছ, মাংস ও ডিম।
খরচ কমাতে চাইলে ভাতের সঙ্গে শুধু ডিম ও ডাল। ডাল উদ্ভিজ প্রোটিন বলে এতে ক্ষতিকর চর্বি নেই।
সেহরির খাবার তালিকায় যে কোনো একটি সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, করলা, আলু, টমেটোথ এর কয়েকটি বা যে কোনো একটি রাখলে চলবে।
পাকস্থলিতে উত্তেজনা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করেথ এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়।
এবার আসা যাক ইফতার প্রসঙ্গ
বেশির ভাগ লোককে দেখা যায়, সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেবেন।
কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। ইফতার শুরু করবেন শরবত দিয়ে।
কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পরিহার করবেন। ইফতারে ফলের রস বেশ উপকারী।
বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়। দই, চিঁড়া ও কলা খেলে ভালো।
তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
তা ছাড়া খাবারগুলো পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বেড়ে যায়।
তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যার মধ্যে থাকে বেনজোপাইরিন।
এটা ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। তাই ইফতারে খেজুর ও বিভিন্ন ফল রাখা ভালো।
সেহরি এবং ইফতারির সময় প্রচুর পানি পান করবেন।
পেপটিক আলসারের রোগী রোজা রাখতে পারবেন কি-না
হ্যাঁ, পারবেন। এ সময়ে খাবার-দাবারে নিয়মানুবর্তিতার সৃষ্টি হয় বলে রোজায় স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।
তবে সেহরি ও ইফতারিতে তাদের বাছাই করা খাবার খেতে হবে।
তৈলাক্ত খাবার পরিহার করে সহজপাচ্য খাবার খেলে এসিড নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং স্বাস্থ্যগত কোনো অসুবিধা হবে না।
রোজা রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এ কথা কি ঠিক?
কিছুটা ঠিক বটে বিশেষ করে যারা রোজার বাইরে অসংযত জীবনযাপন করছেন।
রোজায় এক ধরনের শৃঙ্খলাবোধ কাজ করে।
সময়মতো আহার গ্রহণ, বিশ্রাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন প্রভৃতি বিষয় প্রকারান্তরে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সহায়ক উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখা
এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হবে।
যারা ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার শিকার, রোজা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
আলেমদের মতে, ইনসুলিন নিয়েও রোজা রাখা সম্ভব।
সে ক্ষেত্রে রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার চিকিৎসাপত্র, খাবার ও ব্যায়ামের ব্যাপারটা ঠিক করে নেবেন।
এ সময়ে দৈনন্দিন কাজ সীমিত হারে করতে হবে।
রোজা রাখলে হৃদরোগীদের কোনো অসুবিধা হবে কি?
সাধারণত অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এ সময়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে তাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও ঠিক থাকে।
রোজায় পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি-না হ্যাঁ, থাকেথ যদি আপনি সেহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান না করেন।
সেহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানির সঙ্গে শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন। তাহলে পানিশূন্যতার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
যারা ওষুধ খাচ্ছেন রোজার সময়ে তাদের করণীয়
রোজার সময়ে ওষুধ কোনো সমস্যা নয়। চিকিৎসককে বলে ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নিলেই হলো।
অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে জীবন বাঁচানোর স্বার্থে রোজা রাখার পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে।
অন্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নিলে রোজা রাখতে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হবে না।
দিনের শেষে মাথা ব্যথা করলে ইফতারের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে কি?
বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা গেছে, রোজার সময় ইফতারের পরপরই বেশির ভাগ রোগী ভর্তি হন পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে।
ব্যথানাশক ওষুধ খাবার কারণে পেটে তীব্র ব্যথা এবং অন্ত্র ফুটো হয়ে যাওয়া সমস্যার সৃষ্টি হয়।
মূলত মাথাব্যথা করলে ইফতারের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথানাশক ওষুধ যেমন এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়।
কিছু খেয়ে তারপর এসব ওষুধ খেতে হবে। যাদের পেপটিক আলসারের ইতিহাস আছে, তারা এন্টাসিড ও রেনিটিডিন খেয়ে এসব ওষুধ খাবেন।
কিছু পরামর্শ
অনেকে রোজার সময় সারা দিন ঘুমান এটা স্বাস্থ্যসম্মত কি? মোটেই না।
এভাবে ঘুমালে আপনার শরীরের কোষগুলো অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
বরং ইফতারের পরে বিশ্রাম নেওয়াই স্বাস্থ্যসম্মত।
একজন সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক ৫-৭ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট।
তা ছাড়া দিনের বেলা ঘুমালে রাতে নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়থ সে সঙ্গে জড়ো হয় স্বাস্থ্যগত আরও সমস্যা।