স্কিনের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে সব সময় বিশেষ খেয়াল নেবেন মুখের টি জোনের।
এই অংশে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয়।
স্কিনে থাকা জটিল সেল লেয়ার, গ্রন্থি ও নার্ভেরা আমাদের নানা টক্সিন ও মাইক্রো অর্গানিসম এবং ক্ষতিকারক সূর্যরশ্মি থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু নানা রকম ভাবে মুখের টি জোন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।
টি জোন আদতে কী?
মুখের টি জোন হলো আপনার কপাল, নাক ও চিবুক এর অংশ নিয়ে গঠিত।
এটির আকৃতি ইংরেজি ‘T’ লেটার এর মত দেখায় বলে এর নাম টি জোন।
‘টি’ জোন মুখের অন্যান্য অংশের থেকে বেশি তৈলাক্ত কারণ আমাদের গাল সাধারণত শুষ্ক থাকে।
এবং এই টি জোনে বেশি পরিমাণে তৈলগ্রন্থি থাকে বলে বেশি পরিমাণে তেল ক্ষরণ হয়।
আপনার লোমকূপগুলো বুজে যায় ও ইরিটেশন এর সন্মুখীন হন আপনি।
অনেকসময় এতে অ্যাকনে ও কালচে ভাব দেখা দেবার প্রবণতাও বেড়ে যায়।
তাই টি জোনের দরকার স্পেশাল কেয়ার।
কিভাবে খেয়াল রাখবেন এই টি জোনের?
প্রত্যেক সমস্যার যেমন সমধান আছে, তেমনই টি জোনের অতিরিক্ত অয়লি ভাব দূর করা থেকে হাজার একটা সমস্যারও সমাধান রয়েছে।
ঘরোয়া কয়েকটি ছোট ছোট পদক্ষেপ টি জোনের খেয়াল নিতে খুবই জরুরি।
১. ক্লিনজার এর কামাল
- প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অয়েল ব্লক নাক, থুতনির ত্বকের গ্রন্থির পথ বন্ধ করে দেয়। তাই ওই জায়গায় ব্ল্যাকহেড ও ব্রণ হয়।
- আপনার ত্বক অনুযায়ী আপনি বেস ফোম বা জেল ক্লিঞ্জার ইউস করতে পারেন। নানা কোম্পানির ক্লিঞ্জার বাজারে উপলব্ধ।
- এবার বাড়ির ঘরোয়া দাওয়াই কিন্তু এই ব্যাপারে কম যায় না। টক দইের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকের উপর লাগিয়ে দেখুন।
- শীতকালে যারা শুষ্ক ত্বক এবং গ্রীষ্মে যারা ওয়েলি স্কিনের সমস্যায় জর্জরিত থাকেন তারা চন্দন এর গুঁড়োর সাথে ছোলার আটা সমপরিমাণে নিয়ে জলের সাথে মিশিয়ে হালকা ভাবে লাগান টি জোন বরাবর। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
- ১ চামচ হানি ২ চামচ টমেটোর রস এর সল্যুশন ‘টি’ জোনে মেসেজ করে লাগিয়ে ১৫মিনিট মতো রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। তারপরেই দেখবেন জাদু। সাইট্রিক এসিড আমাদের ত্বকের পিএইচ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
২. মশ্চারাইজার এর ম্যাজিক
- ত্বকে রিফ্রেশার হিসেবে গোলাপ জলের বিকল্প নেই।তাই রোজ ওয়াটার এর সাথে কয়েক ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল ফেলে সেটা অ্যাপ্লাই করতে খুব ভালো আর্দ্রতার যোগান দেবে।
- বাড়িতে অ্যালোভেরার গাছ থাকলে, অ্যালোভেরার সাথে শশার রস মিক্স করে কটন প্যাড দিয়ে সম্পূর্ণ টি জোনে রাখুন বেশ কিছুক্ষণ। ফল পাবেন হাতেনাতে।
- এছাড়াও বাজারে ওয়েলি স্কিন এর জন্য বিশেষভাবে ফর্মূলেটেড নানা ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম পাওয়া যায়। এগুলো আপনার ত্বকের সিবাম এর অতিরিক্ত ক্ষরণ রোধ করে আপনাকে দেবে ম্যাট লুক। তবে কেনার সময় সেটি প্যারাবেন বা সিলিকন ফ্রি কিনা অবশ্যই দেখে নেবেন।
৩. টোনার করুক কেয়ার
- আপনার গাল ড্রাই, টি জোন ওয়েলি হলে টোনার আপনার ত্বকে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
- এমন টোনার বাছুন যা এন্টি একনে স্পেশালিস্ট হবে। যাতে স্যালিসাইসিক এসিড থাকবে যা ব্রণ হওয়া আটকাবে। দিনে তবে একবারের বেশি ব্যবহার করবেন না।
- দুধ নিয়ে তা তুলোয় ভিজিয়ে মুখের ‘টি’ জোনে লাগান রোজ এক থেকে দুবার। ঘরোয়া টোনার হিসেবে এটি দারুন কাজ করে।
- বাড়িতে অর্গানিক টোনার হিসাবে লেবু বা ভিনিগারকে কটন প্যাডে ডিপ করে লাগিয়ে ৫-১০মিনিট রেখে জায়গাটা মুছে নিতে পারেন।
- এতে স্কিন এর সারফেস এরিয়া হাইড্রেটেড হয় এবং ফেসিয়াল ক্লিনজিং দ্রুত হয়।
৪. স্ক্রাব হোক সঙ্গী
- শুষ্ক ত্বকে ডেড স্কিন সেল জমে থাকে বলে টোনার বা ক্লিঞ্জার ভালো করে ত্বকের গভীরে পৌঁছাতে পারেনা। তার জন্য চাই এক্সফোলিয়েটিং স্কিন স্ক্রাবিং।
- স্পর্শকাতর ত্বকের ক্ষেত্রে স্কিনে গ্লাইকলিক এসিড আছে এরকম স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। কফি স্ক্রাব, সুগার স্ক্রাব বা চারকোল মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
- কিছু পরিমান রোদে শুকনো করা আমন্ড ও আধ চা চামচ হানি একসাথে মিশিয়ে টি জোনে ৫মিনিট লাগানোর পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক গ্লো করবে।
মেনে চলুন কিছু পরামর্শ
- সপ্তাহে একদিন গরম জল এর উপর মুখ রেখে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে স্টিমটা ত্বকে সোক করুন। ফল পাবেন।
- মেকআপ এর আগে টি জোনে বরফ লাগান অবশ্যই।
- হ্যান্ডব্যাগ এ ক্যারি করুন অয়েল ব্লটিং টিস্যু যা আর পাঁচটা ন্যাপকিন এর থেকে একদম আলাদা।
- রোদে বের হবার আগে সময় সান স্ক্রিন লাগিয়ে তবেই বের হন।