চা বিশ্বের একটি জনপ্রিয় পানীয়।
পানির পর এটি বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য একটি পানীয়।
এর একধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে যা সবাই খুব আনন্দের সাথে এটি উপভোগ করে।
আর আমাদের বাঙালিদের মধ্যে একবেলা চা পান করেন না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
অনেকেরই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গরম চা না পেলে তাদের সকাল ই শুরু হয় না।
কেন লাল চা পান করবেন?
আমরা আয়েশ করে লাল চা এর পাশাপাশি দুধ চাও পান করে থাকি যেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হলেও লাল চা আমাদের জন্য বিশেষ উপকারী।
লাল চাতে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যকর গুণাবলি।
এতে পাওয়া যায় যায় ক্যাফেইন,পলিফেনল, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, মিনারেল, ফ্লোরাইড, ম্যাঙ্গানিজ।
চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেরও একটি ভালো উৎস।
ট্যানিন, গুয়ানিন, এক্সাথিন, পিউরিন ইত্যাদিকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলা হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
যারা রেগুলার চা পান করে তাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
লাল চায়ে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রেক্টাল যা জরায়ুর ক্যানসার, ফুসফুস ও ব্লাডার ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
এটি স্তন ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার ও পাকস্থলীর ক্যানসারও প্রতিরোধে কাজ করে।
নার্ভ-কে শান্ত করে
চায়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে। ফলে নার্ভ শান্ত থাকে ও রিল্যাক্স থাকে।
চা পান করার পর শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর হয়।
একটি সুস্থ হার্টের জন্য
লাল চা রেগুলার খাওয়ার ফলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
চা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল জারিত হওয়া প্রতিরোধে কাজ কারে কারণ এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
তাই নিয়মিত লাল চা খেলে হৃৎপিণ্ড বা হার্ট ভালো থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
লাল চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এর মধ্যে থাকা ট্যানিন যা আমাদের দেহকে ফ্লু, ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
চা আমাদের হজমে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের শরীরে বারতি মেদ বা চর্বি জমার সুযোগ পায় না।
আর এইভাবে ওজন বাড়ার ও প্রবণতা কম।
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁতের ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে। তাছাড়াও এর মধ্যে থাকা ফ্লোরাইড মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
হজম ভালো করে
চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিন হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার বিপরীতে লড়াই করে। যা আমাদের হজমে সাহায্য করে।
এতক্ষণ জানলেন চা খাওয়ার উপকারিতা।
এখন থেকে রেগুলার চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
রেগুলার চা বানিয়ে সেই চা পাতা আবার ফেলে দিবেন না।
আমাদের আরো কিছু বলার আছে। চা খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি ত্বক ও চুলের জন্য ও এটি বেশ উপকারী একটি উপাদান।
চা পাতা ত্বক ও চুলের নানা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও খুব কার্যকরী।
ত্বকের যত্নে
ব্রণ দূর করতে
আপনি কি এটা জানতেন চা পাতা ব্রণ দূর করতে কার্যকর। তো এখনি জেনে নিন।
চা পাতায় আছে পলিফেনল, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, মিনারেল, ফ্লোরাইড, ম্যাঙ্গানিজ যা ফাঙ্গাস এর সাথে লড়াই করে ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে
চায়ের লিকার ঠান্ডা হওয়ার পর তাতে ১/২ ফোটা টি ট্রি এসেন্সিয়াল ওয়েল মিক্স করুন।
সেই মিক্সার এ তুলো ডুবিয়ে সেটা ৮/১০ মিনিট ব্রণ এর উপর চেপে ধরুন।
এতে খুব সহজেই ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
চোখের ফোলা ভাব বা আই ব্যাগ কমাতে
চা পাতায় থাকা ট্যানিন আমাদের চোখের ফোলা ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
একটু টি ব্যাগ ৮/১০ মিনিট ফুটিয়ে সেটা প্রথমে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
তার পর টি ব্যাগ থেকে এক্সট্রা পানি ফেলে দিয়ে সেটা চোখের উপর রেখে দিতে হবে ১৫ মিনিটের জন্য।
ব্যাস। ধিরে ধিরে কমতে থাকবে চোখের ফোলা ভাব।
বলিরেখা ও ডার্ক সার্কেল দূর করতে
এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চোখের আশেপাশের বলিরেখা আর ক্যাফেইন ডার্ক সার্কেল কমাতে খুব বেশি হেল্পফুল।
ত্বকের দাগ দূর করে উজ্জ্বল করতে
চায়ে বিদ্যমান ক্যাফেইন ত্বকের নিচে রক্তজালকে সংকুচিত করে আর কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
চা পাতা বের করে একটি পাত্রে নিয়ে, ২ চা চামচ মধু, আধা চা চামচ দই ও লেবুর রস মিশিয়ে একটু ভারী প্যাক তৈরি করুন।
প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১০/১৫ রেখে একটু শুকিয়ে আসলে ধুয়ে ফেলুন।
চায়ে উপস্থিত ট্যানিক এসিড ত্বকের কালো ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোপার্টি ত্বক কে ব্রাইট করতে সাহায্য করে।
রেগুলার ব্যাবহারের ফলে দাগ থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে ও স্কিন উজ্জ্বল ও গ্লোয়িং হবে।
সানবার্ন দূর করতে
সানবার্ন দূর করতে চায়ের লিকার অনেক বেশি কার্যকরী।
স্কিনে সানবার্ন হলে টি ব্যাগ সরাসরি মুখে ব্যাবহার করতে পারেন।
এক্ষেত্রে গ্রিন টি হলে ভালো।
গ্রিণ টি জাল দিয়ে তা ঠান্ডা হতে দিন।
তারপর তাতে গোলাপ জল মিশিয়ে ঘুমানোর আগে মুখে তুলা দিয়ে লাগিয়ে নিন।
এরপর ভালো ময়েশ্চারাইজার ইউস করুন।
আসতে আসতে কমতে থাকবে।
চুলের যত্নে চা পাতা
চা পাতা ত্বক ও শরীরের জন্য খুব উপকারী হলেও চুলের ক্ষেত্রে এটি কোনো অংশে কম নয়।
জেনে নেই এর চুলের যত্নে উপকারিতা
খুশকি দূর করতে
খুশকি খুব ই নাছরবান্দা টাইপ।
একবার আসলে আর কোনো ভাবেই যাওয়ার নাম নেই।
এক্ষেত্রে চা পাতা ভালো ফলাফল দিবে।
এক কাপ গ্রিন টির ফুটিয়ে নিন তাতে ১টি লেবুর খোসা, ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে নিন।
একসাথে সব উপকরণ নিয়ে জ্বাল দিন।
যখন ফুটতে শুরু করবে সেটা নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন।
তেল ঠান্ডা করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে দিন।
শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিলে খুশকি কমে যাবে।
এটি মাসে ৩ থেকে ৪ বার করতে পারলে ফলাফল ভালো আসবে।
কন্ডিশনিং
চ পাতা দিয়েই ভালো ভাবে কন্ডিশনিং করা যায়।
২ কাপ গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ কালো চা দিয়ে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে শ্যাম্পু করার পর চুলে লাগিয়ে সেটা ধুয়ে ফেলুন।
এটি খুব ভালো কন্ডিশনারের কাজ করবে।
চুলের বৃদ্ধি
চা পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং প্যান্থেনল।
এটি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং চুলকে আরও সফট স্মুথ করতে সাহায্য করে।
এজন্য পানিতে চা পাতা ফুটিয়ে সেটাকে ঠান্ডা করে, ছেঁকে নিতে হবে।
এবার সেই পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে, শ্যাম্পুর পরে চুলে ব্যবহার করুন।
খুব ভালো উপকার পাওয়া যাবে।