টেডি বেয়ার কে না ভালোবাসেন? ভালোবাসার উপহার হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় টেডি বেয়ার।
ছোট খাটো চেহারার এই আদুরে ভাল্লুকটি যে কতো প্রেমের জন্ম দিয়েছে সে কথা হিসেব করা অসম্ভব।
প্রেম নিবেদন থেকে শুরু করে মান-অভিমান ভাঙাতে টেডি বেয়ারের জুরি নেই।
ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের চতুর্থ দিন অর্থাৎ, ১০ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে গোটা বিশ্বজুড়ে বেছে নেয়া হয়েছে ‘টেডি ডে’ হিসেবে।
প্রেমিক-প্রেমিকাকে উপহার দিলে যেমন উষ্ণতা বাড়ে সম্পর্কে, তেমনই উপহার হিসেবে শিশুদেরও দারুণ পছন্দ টেডি বেয়ার।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই সফট টয়-এর জন্মের পিছনে রয়েছে এক দারুণ গল্প কিংবা মর্মস্পর্শী এক ইতিহাস।
আর এই ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম।
সেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেন আমেরিকার ২৬তম প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট। যিনি ‘টেডি’ নামে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন।
যেভাবে জন্ম নিলো টেডি বেয়ার
ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯০২ সালের নভেম্বর মাসে, যখন মিসিসিপি-এর গভর্নর এর ডাকে মিসিসিপি-এর জঙ্গলে ভাল্লুক শিকার করতে যান থিওডোর রুজভেল্ট।
সারাদিন কেটে গেলেও প্রেসিডেন্ট একটিও ভল্লুক শিকার করে উঠতে পারেন না।
অন্য শিকারিরা সকলেই অন্তত একটি করে ভাল্লুক শিকার করে ফেলেছে।
এই অবস্থায় দিনের প্রায় অন্তিম লগ্নে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা লুইজিয়ানার একটি বাচ্চা কালো ভাল্লুককে ধরে নিয়ে আসে।
এবং প্রেসিডেন্টকে বলে সেটিকে হত্যা করতে। প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট ভাল্লুকটিকে গুলি করতে অস্বীকার করেন।
গাছের গুঁড়িতে বেঁধে রাখা ভালুক ছানার ওপর গুলি চালাতে মন সাড়া দেয়নি রুজভেল্টের। তাই ছোট্ট ছানাটিকে ছেড়ে দেন তিনি।
সেই সময়ে শিকার নিয়ে গোটা বিশ্বে এতো কড়া আইন ছিলো না।
সামাজিকভাবেও শিকার ছিল এক বীরত্ব প্রদর্শনের খেলা।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী গোটা সমাজকে নাড়া দেয়।
পরের দিন সেই সময়ের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে উঠে আসে এই মানবিকতার কাহিনী।
‘ড্রইং দ্য লাইন ইন মিসিসিপি’ কার্টুনে এই গল্প তুলে ধরেন ওয়াশিংটন স্টার কার্টুনিস্ট ক্লিফর্ড বেরিম্যান।
ছবিতে তিনি আঁকেন রুজভেল্ট রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার পেছনে পুঁচকে এক ভালুক ছানা।
প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের এই কাহিনী কার্টুন হিসেবে গোটা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
সেই কার্টুন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমেরিকার খেলনা কোম্পানি ‘আইডিয়াল নভেলটি অ্যান্ড টয় কোম্পানি’-এর মালিক মরিস মিকটম এবং তার স্ত্রী প্রথম তৈরি করেন টেডি বেয়ার।
তারপরের ঘটনা তো বিরাট ইতিহাস। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে টেডি বেয়ার।
উপহার হিসেবে টেডি বেয়ার
আদুরে এই পুতুলটি শুধু উপহার হিসেবে ব্যবহার হয়।
গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ‘টেডি বেয়ার, মিউজিয়াম পর্যন্ত তৈরি হয়েছে।
টেডি বেয়ার নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক বই এবং চলচ্চিত্র।
চেহারায় প্রাথমিক সময়ের থেকে অনেক বদল হয়েছে টেডি বিয়ারের, বদল হয়েছে আকারে এবং রঙে।
তবুও একশো বছরের অধিক সময় ধরে মানুষের মনে নিজের জায়গা ধরে রেখেছে টেডি বেয়ার।
একদিকে শিশুদের প্রিয় হিসেবে অন্য দিকে ভালবাসার মানুষকে উপহার দেওয়ার সামগ্রী হিসেবে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পুতুলটি।
ভালোবাসা সপ্তাহের এই বিশেষ দিন ‘টেডি ডে’ হাতছাড়া করা যাবে না কোনোভাবেই।
নরম সরম গল্লু একটা পুঁচকি টেডিও এক নিমেষে বদলে ফেলতে পারে আপনার গম্ভীর প্রেমিকার মেজাজ।
একটা শব্দ খরচ না করেও ওই এক টেডি আপনার বার্তা বাহক হয়ে ভালোবাসার মানুষটির কাছে পৌঁছে দিতে পারে আপনার গভীরতম ভালোবাসার গোপন অনুভূতি।
সব ঝগড়া, সব অভিমান ওই এক পুতুলেই ধুলোবালি হয়ে উড়ে যাবে।
প্রেমিকারাও পিছিয়ে থাকবেন না, সারা বছর তো প্রেমিকরাই আপনাদের নরম পুতুল উপহার দেন।
আজ আপনি না হয় একটা টেডি দিয়ে ভালোবাসার অব্যক্ত ইস্তেহারটা পৌঁছে দিন প্রেমিকের কাছে।
দেখবেন, আপনার প্রেমিক প্রবরটি এতে চমকে গেলেও মনে মনে খুশি হবেন বিস্তর।
ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের ‘টেডি ডে’-তে আপনার মনের মানুষটিকে টেডি বিয়ার উপহার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ইতিহাসটিও জানিয়ে দেবেন ছোট্ট করে।
এতে আপনার প্রতি তার মুগ্ধতা অবশ্যই বাড়বে।