অনেক কমন একটি প্রশ্ন, খাবার খাওয়ার পর পানি খাওয়া উচিত নাকি উচিত না?
আজ আসুন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিই আমরা।
খাবার খাওয়ার পর একদমই পানি খাওয়া উচিত না তার বিভিন্ন কারণ আছে।
অনেক ডাক্তাররা বলে থাকেন খাবার খাওয়ার পর পানি খাওয়া খারাপ।
আবার অনেকে বলেন খাবার খাওয়ার পর পানি খাওয়া একদম উচিত না।
আয়ুর্বেদের মতে পানি খাওয়া উচিত না খাবার খাওয়ার পর।
অন্তত ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর পানি খাওয়া উচিত।
এই পদ্ধতি না মানলে অনেক রকম রোগ দেখা দিতে পারে আমাদের শরীরে।
তাহলে এখন জানা যাক যে কি হয় খাবার খাওয়ার পর পানি খেলে।
আমরা যখন প্রথমে খাবার খাই তা আমাদের পেটের জঠরে গিয়ে পৌঁছায়। পাঁচন শক্তি শুরু হয়ে যায়।
যা আমাদের পাচক প্রক্রিয়া আরম্ভ করে।
যতক্ষণ আমাদের শরীরে পাচক প্রক্রিয়া চলতে থাকে ততক্ষণ আমাদের পেটে জঠর জ্বলতে থাকে।
তারপর পাচক প্রক্রিয়া শেষ হলে সেই জঠর অগ্নির ও অবসান ঘটে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়ে যায় পানি খেলে।
খাবার খাওয়ার পর পানি খেলে শরীরের যেইসকল আ্যসিড দরকার আমাদের পাঁচন প্রক্রিয়ার জন্য তা দুর্বল হয়ে যায়।
এর ফলে আমাদের পেটে ঠিক করে পচন হয় না এবং পেটে পানি আর খাবার না মেশার ফলে তা আলাদা ভাবে থাকে।
এই সকল খাবারে গাঁজন প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে এবং তার ফলে নানা রকম অহেতুক পদার্থ তৈরী হয় যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই অপকারী।
কিছু পদার্থ যা গাঁজন প্রতিক্রিয়ার জন্য তৈরী হয় আমাদের শরীরে যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।
১. শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে ওঠা
আমাদের শরীরে দুই ধরণের কোলেস্টেরল থাকে।
গাঁজন প্রক্রিয়ার ফলে আমাদের শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে ওঠে যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।
বাজে কোলেস্টেরল বেড়ে উঠলে রক্তের প্রবাহ কমে যায় আমাদের হার্টের শিরাতে।
এরফলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে ওঠে যা আমাদের হার্ট আ্যট্যাক এর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
২. ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া মনে তা হার্টের বিভিন্ন অসুখকে ডেকে আনে।
আর খুব বেশী মাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড মস্তিষ্কে বা হার্টে গেলে তা রক্ত প্রবাহকেও থমকে দেয়।
৩. ইউরিক আ্যসিড
গাঁজন প্রতিক্রিয়ার ফলে আমাদের ইউরিক আ্যসিডের মাত্রা বেড়ে ওঠে আমাদের শরীরে।
এই ইউরিক আ্যসিডের ফলে নানা রকম রোগ হয় আমাদের শরীরে যেমন আমাদের পা,কনুই,গোড়ালি ফুলে ওঠা এবং তার ফলে ব্যথা হওয়া বা আমাদের হাড়ের জয়েন্টসে তীব্র পীড়া অনুভব করা।
খাবার খাওয়ার মাঝে কিন্তু পানি খাওয়া যেতেই পারে আয়ুর্বেদিকের গবেষণার মতে।
খাবার খাওয়ার মাঝে যে পানি খাই আমরা তা আমাদের তেষ্টা মেটায় এবং তার সাথে খাদ্য করে নরম করে তোলে যা সহজেই আমাদের গিলতে সাহায্য করে।
কিন্তু তাও আমাদের উচিত কম পানি পান করা খাওয়ার মাঝে ।
কারন বেশী পানি খেলে তা আমাদের ক্ষিদেকে দূর করে দেয় এবং তার ফলে অবশ্যই আমরা কম খাবার খেয়ে থাকি।
কিন্তু আবার খেয়াল রাখতে হবে যে খাবার খাওয়ার মাঝে ঠান্ডা পানি যেন না খাই।
ঠান্ডা পানি আমাদের পাচক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে তোলে এবং যেইসব এনজাইম যা আমাদের পাচক পদ্ধতিতে সাহায্য করে তাদেরকে দুর্বল করে তোলে।
তাই বলা বাহুল্য খাবার খাওয়ার মাঝে পানি খাওয়া যেতে পারে কিন্তু সেই পানি যেন রুম টেম্পারেচারে থাকে।
খাবার পর পানি পান করা কেনো উচিত না
আমরা অনেকেই ওষুধ খেয়ে থাকি। ওষুধ মানেই প্রায়শই ট্যাবলেট খাই।
আর ট্যাবলেট খেতে গেলে পানি তো লাগবেই। কিন্তু পানি খাওয়া তো খাবার পর উচিত না।
আমাদেরকে যে বেশীর ভাগ সময়ই ডাক্তাররা বলে থাকেন যে খাবার আধ ঘন্টা বা এক ঘন্টা পরে যেন ওষুধটি খাই আমরা।
আসলে ট্যাবলেটের সাথে পানি খেয়ে থাকি যা আমাদের পাচক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়।
কিন্তু এরকম না যে সবসময় ডাক্তাররা আমাদের খাওয়ার কিছুক্ষন পরেই খেতে বলেন ওষুধ।
অনেক সময় খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই ওষুধ খেতে বলে থাকেন ডাক্তাররা।
সেইটা সম্পূর্ণ রোগ আর প্রেসক্রিপশনের উপর নির্ভর করছে।
ওষুধের বিষয় কিন্তু একদম ডাক্তারদের নিরিখেই খেতে হবে।
আয়ুর্বেদের মতে খাবার খাওয়ার অন্তত ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট পর পানি খাওয়া উচিত।
এতটা সময় হজম করার জন্য প্রয়োজনী। তার পর আমরা পানি খেতেই পারি।
আমি আগেই বলেছি খাবার পরে পানি খেলে অনেক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
একদিন পানি খেলে বা কয়েকদিন খেলে এই সব রোগ ধরা পড়ে না।
ধীরে ধীরে অনেক দিন ধরে পানি খাওয়ার অভ্যাস মেনে চললে রোগ হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
তাই আমাদের চেষ্টা করা উচিত যে আমরা খাবার খাওয়ার পর যেন অন্তত ১ ঘন্টা জল না খাই।
কিছুক্ষন পানি না খাওয়ার ফলে যদি আমরা রোগের প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে ক্ষতি কী?