সবুজ মোটা খোসাযুক্ত গোল বৃত্তে আবৃত লাল রসালো গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ।
চৈত্রের খর তাপে তৃষ্ণা মেটাতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যেমন আছে এ ফলে তেমনি আছে মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিজেনের মতো নানা উপাদান।
এ ছাড়া তরমুজ শরীরে পানির অপূর্ণতা পূরণেও বেশ সহায়ক।
তাই গরমে ঘামের পরিমাণ বেড়ে গেলে আর পানির সংকট হলে আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করতে পারে তরমুজ।
তরমুজের উৎপত্তি
মিষ্টি রসালো সুস্বাদু এ ফলের আদি নিবাস আফ্রিকাতে।
পরে পৃথিবীজুড়ে তরমুজের চাষাবাদ শুরু হয়।
তরমুজের গুণাবলি ও উপকারিতা
তরমুজ কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়।
এতে আছে নানা গুণাবলি।
তরমুজ একাধারে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যেমন সহায়তা করে তেমনি হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় বেশ উপকারী।
অন্যদিকে এ ফলের ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর।
তরমুজে থাকা বিশেষ উপাদান ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধে বেশ কাজ করে।
যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন তাদের খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নিতে এ ফলটি।
তরমুজ ওজন কমাতে সহায়তা করে তেমনি আপনার শরীরের কার্যক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বেশ সহায়ক।
অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও তরমুজ খুব দ্রুত মেজ কমাতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে শরীরের অন্য উপকারী দিকের মতোই তরমুজ ত্বকের জন্য বেশ উপাকারী।
তরমুজে আছে বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগানিজ যা আপনার ত্বক মসৃণ করে সঙ্গে ব্রণের সমস্যা দূর করতেও বেশ সহকারী।
এছাড়া এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে।
সর্দি কাশি কিংবা ঠাণ্ডা জ্বরের মতো সমস্যায় তরমুজ ওষুধের মতো কাজ করে থাকে।
তাই করোনাকালীন এ সময়ে যখন আমাদের ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা সবচেয়ে জরুরি তখন এ মৌসুমি ফলটি আপনাকে রাখতে পারে সুরক্ষিত।
অনেকেই এর মিষ্টি রসালো গুণের কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকার বাইরে রাখেন তরমুজ।
প্রকৃত পক্ষে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী একটি ফল এ তরমুজ।
যাদের চোখের সমস্যা আছে তারা তাদের খাবারের তালিকাতে যুক্ত করতে পারেন এ মৌসুমি ফলটি।
তরমুজ খাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকেই শুধু এর লাল অংশটুকু খেয়ে থাকেন।
গরমের এ সময়ে এভাবে তরমুজ খাওয়া ছাড়াও এর শরবত বেশ সুস্বাদু।
ঠান্ডা ঠান্ডা এক গ্লাস তরমুজের শরবত এ গরমে আপনাকে যেমন দিতে পারে প্রশান্তি তেমনি দূর করে দিতে পারে সারাদিনের ক্লান্তি।
তাই খাবারের তালিকায় রাখুন তরমুজ আর এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
অতিরিক্ত তরমুজ খেলে শরীরের কী ক্ষতি হয় জানেন?
তরমুজ খুব উপকারী ফল আমরা জানি।
কথায় আছে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।
তেমনি তরমুজের নানা স্বাস্থ্যকর রুপের আড়ালে রয়েছে ক্ষতিকর দিক।
তবে তরমুজে ক্ষতির চেয়ে উপকারই বেশি।
দেখে নিন বেশি তরমুজ খেলে কি ক্ষতি হতে পারেন।
তরমুজে রয়েছে ফাইবার। তাই অতিরিক্ত তরমুজ খেলে ডায়রিয়া-সহ পেটের নানা রোগ দেখা দিতে পারে।
এতে রয়েছে সরবিটল (সুগার কমপাউন্ড) যার ফলে অম্বল, বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে।
লাইকোপিন নামক রাসায়নিকের কারণে তরমুজের রং উজ্জ্বল ও গাঢ় হয়।
লাইকোপিন এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অধিক মাত্রায় শরীরে গেলে পেটের নানা সমস্যা হতে পারে। হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
তরমুজ খুবই স্বাস্থ্যকর ফল। কিন্তু এতে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি।
তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তরমুজ খেলে ডায়বিটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
নিয়মিত মদ্যপান করেন যাঁরা তাদের জন্য তরমুজ একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়।
কারণ, তরমুজের রাসায়নিক উপাদান লাইকোপিন অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশে লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত তরমুজ খেলে শরীরে জলীয় উপাদান অনেক বেড়ে যায়।
‘ওভার-হাইড্রেশন’-এর ফলে কিডনির নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরও অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
তরমুজে থাকে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম।
এই খনিজ উপাদান আমাদের হার্ট ভাল রাখে, পেশী শক্তি বাড়ায়, হাড়ের গঠন মজবুত করে।
কিন্তু, অতিরিক্ত পটাসিয়াম শরীরে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে, পালস রেট কমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ ৩০ ও শর্করার পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম।
একদিনে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত তরমুজ হজম করা সম্ভব, কারণ এতে শরীরে ঢোকে ১৫০ ক্যালোরি।
কিন্তু, এর থেকে বেশি তরমুজ খেলে সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।