Search
Close this search box.

গমের ব্যবহার ও উপকারিতা

গম হল এক প্রকারের দানাশস্য। গম মূলত তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। গমের বৈজ্ঞানিক নাম হল ‘Triticum Astivim’.

মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সময় গমের চাষ প্রথম শুরু হয় বলে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন।

নাতিশীতোষ্ণ ও তুন্দ্রাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চলে গম চাষ ভালো হয়। বর্তমানে গম প্রায় সারা বিশ্বে চাষ হয়।

গম থেকে আটা তৈরি হয়। যা খুবই পুষ্টিকর। প্রতি ১০০ গ্রাম আটায় আমিষ ১২.৩ গ্রাম, শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম থাকে।

তাছাড়া ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম থাকে।

আঁশ থাকে ১.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম এবং জলীয় অংশ ১২.২ গ্রাম। গমে এসব ছাড়াও প্রোটিন, ম্যাকারিন, চর্বি, লেসিথিন, এমাইলজ থাকে।

গম চাষের উপযুক্ত মাটি

উঁচু ও মাঝারী মানের দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য বেশি ভালো। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়।

এঁটেল মাটিও গম চাষের জন্য উপযুক্ত। গমের বীজ রপন করার পর গমের চারা সর্বাধিক দেড় মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গম গাছ সোজা ও লম্বা হয়। গম গাছের পাতা চ্যাপ্টা ধরনের হয়ে থাকে।

৫ থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা ও ১.২৫ ইঞ্চি চওড়া হওয়া থাকে পাতাগুলো। গম গাছের মাথা বরাবর শীষ বের হয়। গম গাছ থেকে প্রাপ্ত দানাই হল মূল খাদ্যশস্য।

গম দানাশস্য

গমের দানা প্রজাতি ভেদে নানান রঙের হয়ে থাকে যথা হলদে, লালচে, সাদাটে।

এই দানাগুলো প্রথমে ভালো ভাবে শুকিয়ে নেওয়া হয়।

এই শুকনো দানা গুঁড়ো করলে যে সাদা পাউডার পাওয়া যায় তাকে ময়দা বা আটা বলা হয়।

গম থেকে সাধারনত রুটি হয়। এছাড়া বিস্কুট, মিষ্টি, সুজি, পিঠা, নুডলস ইত্যাদি তৈরি হয়।

গম চাষের পদ্বতি

অগ্রাহয়ণের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় হল গম বোনার উপযুক্ত সময়।

গম চাষের সুবিধা হল যে এই ফসল চাষের পদ্বতি সহজ। বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না।

এই সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম হয়। পোকামাকড়ের সমস্যা তেমন হয় না এসময় ।

গমে রোগ হয় না ফলে খুব একটা।সারিতে বপন করা হয় গম। মাটির সারিতে গমের বীজ প্রথম বপন করা হয়।

সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরির পর ছোট লাঙল দিয়ে ২০ দূরে সারি তৈরি করা হয়ে থাকে।

৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার মাটির গভীরে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার সাথে সাথে বীজ মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয়।

ভালো ফলনের জন্য মাটির প্রকারভেদ অনুযায়ী ২ থেকে ৩ বার জল সেচের প্রয়োজন।

এরপর ১ মাস পর গম গাছের শীষ থেকে হলুদ রঙের দানা দেখা গেলে তারপর টা ধীরে ধীরে কাটা হয়।

গম কাটার পর বিএসআরআই উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে গম মাড়াই করা হয়। ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৫০০০ কিলোগ্রাম গম মাড়াই করা হয়।

গমের প্রকারভেদ বা জাত

ফসল উৎপাদনের উপর নির্ভরকরে গমের বিভিন্ন প্রকারভেদ বা প্রজাতি রয়েছে।

গমের প্রকারভেদগুলি হল যথাক্রমে কাঞ্চন, আকবর, সৌরভ, অঘ্রানি, প্রতিভা।

বিভিন্ন বিদেশি ও দেশি বীজের সংকরায়ন করে গমের এই প্রজাতিগুলি উদ্ভাবিত করা হয়েছে।

গমের উপকারিতা

পুরনো গম চর্ম রোগ উপশমে সহায়ক। ২ লিটার জলে ৫০০ গ্রাম গম ভিজিয়ে তিন দিন রেখে দিন।

তিন দিন পর ভেজানো গমের থেকে জল ফেলে দিন।

জমে যাওয়া গমের সাথে সামান্য ভিনেগার মিশিয়ে ত্বকে লাগালে চর্ম রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায় দ্রুত।

হিস্টিরিয়া বা মৃগী রোগ থেকে মুক্ত হতে গম সহায়ক।

হিস্টিরিয়া বা মৃগী রোগ থাকলে প্রতিদিন ৩০ গ্রাম গমশস্যর সাথে ১০ গ্রাম যষ্টিমধু ও ৪-৫ টি লাল খেজুর জলে সেদ্ধ করে খাওয়ালে মৃগী রোগ সেরে যাবে।

নেতাজি সুভাষ ক্যান্সার রিসার্চ, এনআরএস, এর ডাক্তাররা সম্প্রতি গবেষণা করে জানিয়েছেন যে গম গাছের রস থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারি।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর রক্তের লোহিত কনিকা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

ফলে রোগীকে কিছুদিন অন্তর রক্ত দিতে হয়। গম গাছ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত রস শরীরে লোহিত কনিকার বৃদ্ধি করে।

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের গম গাছের রস খাওয়ালে কিছুদিন অন্তর অন্তর রক্ত দিতে হবে না।

গম থেকে প্রাপ্ত আটায় আছে শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য পুষ্টি। আটার রুটি সহজে হজম হয়।

কোষ্ঠ কাঠিন্য হয় না। খিদের ইচ্ছে বাড়ে। মেদ বৃদ্ধি কমায়। ফলে শরীর সুস্থ্য ও সবল থাকে।

ওজন বেড়ে গেলে আটার রুটি ভাতের বদলে খেলে ওজন কমে।

ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের জন্য আটার রুটি খাওয়া ভালো।

শরীরে বিশেষ করে হার্টের জন্য গম খুবই উপকারি। তাছাড়া গম অনিদ্রা দূর করতে সহায়ক।

হার্টের পাশাপাশি পেটের নানা সমস্যা দূর করতে সহায়ক গম।

ফোঁড়া বা ব্রণের সমস্যা থেকে সমাধান বা উপশম করে গম। গম থেকে প্রাপ্ত আটার রুটি খেলে খাবার হজম হয় ভালো ভাবে।

ফলে মলের সমস্যা হয় না। পেট পরিষ্কার থাকে। ফোঁড়া বা ব্রণর সমস্যা কমে।

গমের দানা শুকনো কড়াইয়ে ভালো করে ভেজে টা পিষে গুঁড়ো করে রাখতে হবে।

হালকা গরম জলে সেই গুঁড়ো মিশিয়ে রোজ খেলে ফোঁড়া বা ব্রণও থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।