চুল পড়ার স্বাভাবিক চক্রেই একজন ব্যক্তি গড়ে দিনপ্রতি ৫০-১০০টি চুল হারায়। কিন্তু তার বেশি চুল পড়া বা হেয়ার থিনিং সেই স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত করলে অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ঘটে থাকে। হেয়ার লাইন পিছিয়ে যাওয়া, সিঁথি ফাঁকা হওয়া, বল্ড প্যাচ এগুলির দুর্বিপাক দেখা দেয় তখন।
আয়নার দিকে তাকিয়ে হা হুতাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না তখন।
প্রতিদিনের জীবনে আপনার প্রতিনিয়ত অভ্যাসেই লুকিয়ে রয়েছে এমন কিছু গলদ যার ফলে দ্রুত হারে চুল ড্যামেজ হয়ে তা হারাচ্ছেন আপনি।
চলুন কারণগুলো জানি এক এক করে।
ক্র্যাশ ডায়েটিং:
- দ্রুত ওজন কমানোর চক্করে আমরা অনেকসময় হেভি ডায়েট ও এক্সারসাইজ করে ফেলি।
- আমাদের বডি সেই আকস্মিক পরিবর্তনের সাথে পরিপূর্ণভাবে মানিয়ে নিতে পারেনা অনেকসময়।
- এইসময় বডি যে শক পায় তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। ফলে স্ট্রেস থেকে হেয়ার লস শুরু হয়।
- ভিটামিন, প্রোটিন, মাংস, ডিম, হোল গ্রেন এই আইটেম গুলো ডায়েটে বাদ যায় বলে চুল তার পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়।
ভেজা চুল আঁচড়ানো:
- গোসল করার পরই অনেকের ভেজা চুল আঁচড়ে নেবার বদভ্যাস বর্তমান।
- এইসময় চুলের গোড়া নরম থাকে। তাই চুলের জটে চিরুনী লাগলে চুল সহজেই আলগা হয়ে উঠে আসে ও বেশি মাত্রায় হেয়ারফল হয়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ:
- সংসার, কাজের জায়গা সর্বত্র মানসিক চাপ কেবল মানসিক সুস্থতার উপরই কুপ্রভাব ফেলে না, তা চুল ঝরে যাওয়ার অন্যতম কারণও বটে।
- আমেরিকান জার্নাল অফ প্যাথলজি বলছে মানসিক স্ট্রেস হেয়ার ফলিকলের উপর সাংঘাতিক ক্ষতিসাধন করে।
- মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে ৭০% হেয়ার লস হয় স্ক্যাল্প এর যা টিলজেন এফ্লুভিয়াম নামে পরিচিত।
- ৩-৬ মাসের মধ্যে এটির হার সর্বোচ্চ হয়।
ওভার স্টাইলিং:
- ঘন ঘন হেয়ার ট্রিটমেন্ট নেওয়া এবং চুলকে নানা স্টাইলের ছাঁচে ফেলা চুল পড়ে যাবার অন্যতম কারণ।
- হেয়ার ব্রেইডিং, পিগটেল, হট অয়েল ট্রিটমেন্ট থেরাপি এবং কেমিকেলজাত দ্রব্যগুলি হেয়ার ফলিকলের নমনীয়তা নষ্ট করে ফেলে।
- তাই চুল রং করা বা ব্লো ড্রাই বা স্টেন না করে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে বেশি ভালো করবেন চুলের পরিচর্যায়।
ভিটামিন এর অভাব:
- চুলের পুষ্টি ভিটামিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট এর উপর সিংহভাগ নির্ভর করে।
- এগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ গেলে হেয়ারফল ত্বরান্বিত হয়।
- ভিটামিন সি এর অভাবে কোলাজেন সংশ্লেষ ঘটে না, চুলের গঠনতন্তুর বিকাশ ঠিক মতো ঘটে না। ফলে চুল পড়ার গতি বেড়ে যায়।
- আয়রন চুলের গোড়ায় হিমোগ্লোবিন পৌঁছে দিয়ে অক্সিজেন যোগায়, জিঙ্ক টিস্যু গ্রোথ ও চুলের তৈলগ্রন্থির ক্ষরণ স্বাভাবিক রাখে।
- তাই অস্বাস্থ্যকর জাঙ্কফুড বাদ দিয়ে প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ ডায়েট ফলো করুন।
জিনগত কারণ:
- বাড়ির আত্মীয়র কারোর টাক থাকলে চুল হারানোর সম্ভাবনা প্রবল ভাবে বাড়ে। একে এন্ড্রোজেনিক এলোপেশিয়া বলে।
- এর ফলে অল্পসময়ে চুল পাতলা হয়ে খুলে খুলে পড়তে আরম্ভ করে। ৪০% মেয়েদের ৫০ বছরের মধ্যে এর প্রকোপে পড়তে দেখা গেছে।
- এটি মা-বাবার থেকেই সাধারণত আসে এবং মেনোপজের পর বেশি সক্রিয় হয়।
- মিনোক্সিডিল ব্যবহার এ বর্তমানে কিছুটা কার্যকরী সুফল মিলছে বলে দাবি অভিজ্ঞমহলের।
সন্তানধারণ:
- গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় শরীরে। তাই সেইসময় চুলের ঘনত্ব বেশি দেখায়। মাথায় মনে হয় অনেক চুল আছে।
- কিন্তু ডেলিভারির ৩মাস পর হরমোনের লেভেল কমে গেলে চুলের গ্রোথ পড়ে যায় ও ভীষণভাবে হেয়ার ফল হয়।
- এইসময় ঘাবড়ে না গিয়ে সাপ্লিমেন্ট ডায়েট এ ভিটামিন বি, সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার রাখুন চুল পুনরুজ্জীবিত করতে।
অতিরিক্ত শ্যাম্পু:
- চুলের গোড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য চুলের যত্ন নিতে শ্যাম্পু আবশ্যক। চুল থেকে সিবাম তেল দূর করে শ্যাম্পু ও চুলের শুষ্কতা বাড়ায়।
- চুলে শ্যাম্পু করুন কিন্তু সপ্তাহে ২-৩বারের বেশি নয় একদমই। এতে চুলের পুষ্টি পাবার পথ বন্ধ হয়ে চুল হয় রুক্ষ।
- শ্যাম্পুতে সালফেট জাতীয় কেমিক্যাল এর পরিমাণ ক্যামন আছে তা খোঁজ নি না আমরা বেশিরভাগ জনই।
- আবার অনেকে শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার দিতেই ভুলে যাই। সেদিকেও লক্ষ রাখুন।
শক্ত করে চুল বাঁধা:
- অনেকেই এই ভুল ধারণার বশবর্তী যে শক্ত করে চুল বাঁধলে চুল ভালো থাকে। আদতে তা হেয়ার ফলিকলের প্রভূত ক্ষতি সাধন করে। নতুন চুল গজানোও রুদ্ধ হয়ে যায়।
- চুল নরমালি বেঁধে শোয়া উচিত ঘুমোনোর সময় যাতে বালিশের সাথে ঘর্ষণে চুল নষ্ট হবার চান্স একেবারে কম থাকে।
ট্রিম না করা:
- ২-৩মাস অন্তর চুল ট্রিম করা উচিত যদি লম্বা কালো ঘন চুল পাওয়া আপনার স্বপ্ন হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা এটা করতেই বেমালুম ভুলে যাই।
- চুলের আগা ফেটে গিয়ে চুল দুমুখো হয়ে যায়। ফলে চুলের বৃদ্ধি আকাঙ্খিত হারে হয়না। সেটা ঠিক করতে চুলের ডগা ছাঁটুন নিয়মিত ভাবে।
- আবার অনেকসময় উচ্চরক্তচাপ এর নানা ওষুধ যেগুলো রক্ত তরল রাখতে ব্যবহৃত হয় যেমন এলপুরিনল, বিটা ব্লকার ।
- ডোজে বা ভিটামিন এ ট্যাবলেট বেশি মাত্রায় নিলে তা চুলের পতন ডেকে আনে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তবেই এগুলোর গুনাগুন জেনে প্রয়োগ করুন।