একটি বিষয় কখনও ভেবেছেন যে আমাদের দাদী-নানীদের কিন্তু ত্বকের কোনও সমস্যা সেই অর্থে ছিলো না!
উপরন্তু তাঁরা কিন্তু সকলেই সুন্দর এবং সুস্থ ত্বকের অধিকারী ছিলেন।
এর আসল কারণ হলো তাঁরা সকলেই ঘরোয়া উপায়ে বিশ্বাসী ছিলেন।
শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে আনুষঙ্গিক একাধিক বিষয়েও গুরুত্ব দিতেন।
রইলো এমনই কিছু স্পেশাল টিপস।
১. হাতের কাছেই ন্যাচরাল ডিটক্স
আপনি যা খান, তা-ই কিন্তু আপনার ত্বকের ওপর ফুটে ওঠে।
মানে আপনি যদি অতিরিক্ত তেল-মশলা দেওয়া খাবার খান তার ফল একরকম হবে।
তেমনই আপনি যদি তেল-মশলা খেয়েও নিয়মিত ত্বক ডিটক্স করেন, তাহলে তার ফলও কিন্তু আরেকরকম।
এর জন্য তাঁদের পরামর্শ সকালে উঠে চা-কফির বদলে উষ্ণ জলে লেবু দিয়ে খান।
এটি আপনার মুখের ত্বকের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করবে।
এবং ফেসিয়াল না করেও পেয়ে যাবেন উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যবান ত্বক।
২. ফেসপ্যাকে হলুদ
হলুদ একদিকে যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এ ভরপুর, তেমনই এটি প্রকৃতির এমন একটি উপাদান।
যা ত্বককে সুন্দর ও উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে।
তাই আপনার প্রতিদিনের ফেসপ্যাকের মধ্যে মিশিয়ে নিন হলুদ, আর ত্বকে দেখবেন আলাদা ম্যাজিক।
রোজ গোসলের আগে যদি কাঁচা হলুদ মুখে মেখে রাখেন ২০ মিনিট।
আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকবে সবসময়।
৩. শসা ও লেবুর রসের প্রাকৃতিক ব্লিচ
পার্লারে গিয়ে ব্লিচ করানোর কথা ভাবলে আজই সেই সিদ্ধান্ত বদলান।
কারণ রাসায়নিক ব্লিচ সাময়িকভাবে আপনার ত্বককে উজ্জ্বল দেখালেও, আদতে কিন্তু এটি আপনার ত্বকের ক্ষতিই করে।
তাই আপনি যদি একান্তই ব্লিচ করাতে চান, তাহলে শসার রসের সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
এটি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজ করবে তেমনই ট্যান রিমুভ করতেও বিশেষ কার্যকরী।
মুখে এটি মেখে ৩০ মিনিট মত রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
সপ্তাহে তিনদিন করে করুন।
৪. আপনার লালারসই আদর্শ টোনার
শুনে একটু নাক শিঁটকাচ্ছেন?
মানে থুতু আবার নাকি বিউটি টিপস!
সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি নিজের লালারস যদি সারা মুখে মেখে নেন তাহলে ত্বকের জেল্লা পাবেন নজরে পড়ার মতো।
কারণ অনেকেই জানেন না, যে লালারসে থাকে অসাধরণ সব খনিজ উপাদান।
যা একটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসাবে কাজ করে।
পাশাপাশি লালারস কিন্তু জীবাণুনাশক এবং পিগমেন্টেশন সৃষ্টিকারী ব্যকটেরিয়াকে দ্রুত মেরে ফেলে।
সেইসঙ্গে ডার্ক সার্কেল নিরাময়েও দারুণ কাজ দেয় এই লালারস।
৫. ঠোঁটের যত্নে ঘি
ঠোঁটের যত্নে মধু ব্যবহারের কথা সকলেই জানেন। কিন্তু ঠোঁট ফাটার হাত তেকে বাঁচতে ঘি-ও কিন্তু সমান কার্যকর।
ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে ঠোঁটের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত ঠোঁটে ঘি লাগান।
এছাড়াও লাগাতে পারেন মাখন বা ফোটানো দুধও।
ঠাকুমা- দিদিমার জেল্লাময় ঠোঁটের আসল রহস্য কিন্তু এইসব ঘরোয়া সামগ্রীই।
৬. ফলের রসে রূপচর্চা
আগেকার দিনে টোনার বা ময়েশ্চারাইজার কোথায়, তখন সেসবের কাজ চালাতে ব্যবহার করা হত ফলের রস।
তাই আপনি যে ফলই খান না কেন, তার রস করে মুখে মেখে নিন।
সে কলা, শসা, তরমুজ, বেদানা, পেঁপে, আপেল যাই হোক না কেন, খেতে খেতে একটুকরো নিয়ে তা মুখে মাখুন আজ থেকেই।
৭. ফেসিয়াল হেয়ার তুলতে আটা বা ময়দা
অনেকেরই ফেসিয়াল হেয়ারের সমস্যা থাকে।
ঠোঁটের ওপর, গাল বা থুতনির কাছে সাধারণত হেয়ার গ্রোথ বেশি হয়।
এই সমস্যার ঘরোয়া সমাধান হতে পারে আটা বা ময়দা।
আটা বা ময়দা মুখে নিয়মিত রাব করুন অবাঞ্ছিত রোমের সমস্যার থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই।
কেমিক্যালজাত প্রোডাক্ট ব্যবহারে স্কিনের নানা ক্ষতি সাধন হয়।
কিন্তু এতে কোন ক্ষতি হওয়ার চান্স নেই, উপরন্তু ফায়দা রয়েছে।
৮. মধুর ফেসমাস্ক
মধুর থেকে ভালো প্রাকৃতিক ফেসমাস্ক আর কি-ই বা হতে পারে।
আগেকার দিনে চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য হল মধুর ফেসমাস্ক বা প্যাক।
মধুর মধ্যেকার প্রাকৃতিক উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে।
সপ্তাহে দু থেকে তিনদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে।
৯. গোসলের সময়ে বিশেষ যত্ন
শুস্ক ত্বকের জন্য টকদই-এর চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না।
তাই সাবানের পরিবর্তে গায়ে এবং মুখের ত্বকে মাখুন টকদই।
তবে আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে কাঁচা দুধ মাখুন।
সপ্তাহে একদিন করে গোসলের পর এই পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করুন।
এরপর কোনও ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন না।
১০. কাজ করুন আনন্দে
আগেকার দিনে বাড়িতে পরিচারিকা রাখার রেওয়াজ ছিল না।
বাড়ির মহিলারাই কিন্তু বাড়ির সমস্ত কাজ করতেন।
এখন অবশ্য সময় বদলেছে, বেড়েছে ব্যস্ততা। ত্বক সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের কথা আমরা সবসময়ই বলি।
কিন্তু আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের নারীরা জিমও করতেন না। তাহলে তারা কিভাবে তারুন্য ধরে রেখেছেন?
তাঁরা মূলত ঘরের কাজ আর দৈনন্দিন কায়িক শ্রমটাই আনন্দের সাথে করতেন।
সেটিই তাদের সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ধরে রাখার চাবিকাঠি ছিলো।
আপনিও নিয়ম করে বাড়ির যেকোনও একটা কাজ নিয়মিত করতে পারেন।