হঠাৎ করে ঘুমনোর সময় নাক ডাকতে শুরু করেছেন? যদিও যার নাক ডাকার সমস্যা রয়েছে, তিনি বিশেষ টের পান না।
যারা সেই ডাক শোনেন, তারা অনেক সময় হাসেন। মজা করেন। বিরক্তও হন কখনও কখনও।
যদি ভাবেন যে নাক ডাকা তো একটা সাধারণ ব্যাপার, তা হলে কিন্তু আপনি ভুল করছেন।
নাক ডাকা কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে জটিল রোগের ইঙ্গিতও হতে পারে।
বা যদি আপনি আগে থেকেই কোনও রোগের শিকার হন, তা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এটা আসলে নিছক হাসি-ঠাট্টা বা বিরক্তির বিষয় নয়। হতে পারে মৃত্যুর সংকেত বা বিপদঘণ্টি, বলছেন চিকিৎসকেরা।
চলতি ভাষায় যাকে নাক-ডাকা বলে, সেই শব্দটা কিন্তু নাক থেকে আসে বললে ভুল হবে।
বরং শব্দটা তৈরি হয় গলা আর নাকের মাঝখানের অংশ থেকে। সেখানে বাতাসের গতিবিধি কোনও ভাবে বাধা পেলে শব্দের সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় এর নাম ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। তবে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ মাত্রেই নাক-ডাকা, যদিও সব নাক-ডাকাই ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নয়।
অর্থাৎ ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ থাকলে নাক ডাকার সমস্যা থাকবেই।
‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, ঘুমের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
নাক ডাকার কারণ?
- নাকের ভিতরে শ্বাস চলাচলে বাধা প্রাপ্তি।
- গলার পিছন দিকে আল-জিভ বা সফ্ট প্যালেটের দিকে টিস্যু ঢিলে হয়ে গেলে ভাইব্রেশনের জন্য।
- জিভের নীচের অংশ (টাং বেস) থেকেও শব্দ হতে পারে।
- উপরের সবকটি কারণ মিলিয়েও শব্দ তৈরি হতে পারে।
- বয়সের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে।
- সাইনুসাইটিস বা পলিপের (নাকের ভিতরে মিউকাস পর্দায়) সমস্যা।
- নাসিকাগহ্বরের মধ্যে নাকের ভিতরের অংশ ফুলে ওঠা থেকে।
- শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থাকলে।
মেদ এর সঙ্গে কি সম্পর্ক রয়েছে?
‘‘ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় পদার্থের সঙ্গে নাক ডাকার সম্পর্ক রয়েছে।
কারণ, ফ্যাট ডিপোজিশন হয় অডোফ্যারিঙ্কসে, এছাড়াও পেশির নানা জায়গায়”, এছাড়াও ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’-র সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে অতিরিক্ত ওজনের।
তবে নাক ডাকা কিন্তু একটা সাধারণ সমস্যা। সে ক্ষেত্রে হাওয়া যাওয়ার পথ সরু হলে ভাইব্রেশন বেশি হয় বলে বেশি শব্দ হয়।’’
‘‘শরীরের বাড়তি ওজনের সঙ্গে নাক ডাকার সম্পর্ক রয়েছে। নাক, গলা, আল-জিভের পিছন দিয়ে অক্সিজেন শ্বাসনালিতে প্রবেশ করছে।
এর চারপাশে যে পেশির গঠন, সেখানে টিস্যুর কারণে পথ যদি সরু হয়, তখনই নাক ডাকার সমস্যা হয়।
অতিরিক্ত ওজন থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং নাক ডাকার সমস্যা-এ গুলি দেখা দেয়।’’
‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’-তে কী হয়?
মেদের কারণে বা টিস্যুর গঠনের কারণে হাওয়া চলাচলের রাস্তাটা বন্ধ করে দিচ্ছে বা আংশিক ভাবে বন্ধ করছে, তাই হাওয়া চলাচলে বাধাপ্রাপ্তি হচ্ছে।
অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারছে না।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে তাই শরীরের অক্সিজেন চলাচলে বেশি বাধা পড়লে সেটির ফলে হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে।
রক্তচাপের পরিমাণ বাড়ে, স্ট্রোক হতে পারে। ঘুমন্ত অবস্থায় দম আটকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
এক্ষেত্রে রোগীদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় ৪৬ শতাংশ।
নাক ডাকার সমস্যা কমানো যায়?
অতিরিক্ত ওজন কমালে মিলবে রেহাই।
যদি রোগা মানুষ হন, তখন নাকের ভিতরে কোনও বাধা রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা।
প্যালেটাল সার্জারি বা অস্ত্রোপচার করা হয় কোনও ক্ষেত্রে।
ডেভিয়েটেড সেপ্টামের (নাকের হাড় বাঁকা) জন্যও অনেক সময় শব্দ হতে পারে।
অল্প-স্বল্প সমস্যা থাকলে জীবনযাপনে বদল দরকার। যেমন, এক দিকে পাশ ফিরে শুলে নাক ডাকার সমস্যা অনেকটা হ্রাস পায়। তাই চিত হয়ে শোওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে।
ঘুমনোর আগে ভারী খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতের খাবার খেয়েই শুতে যাবেন না। হাতে কমপক্ষে ঘণ্টা দুয়েক সময় নিয়ে রাতের খাওয়া সারুন।
প্রতি দিন রাতে একই সময়ে ঘুমনোর অভ্যাস করুন। স্লিপ হাইজিন রক্ষা করা অত্যন্ত দরকারি।
কীভাবে নির্ণয় করা হয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’?
‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ রয়েছে কি না দেখতে রোগীর ‘পলিসমনোগ্রাফি’ করা অত্যন্ত জরুরি।
অর্থাৎ রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে দেখে নিতে হয়, শ্বাস নেওয়ায় কতটা সমস্যা হচ্ছে।
পরীক্ষা করতে হবে, কী ভাবে ডাকছে নাক। হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দনের হার, অক্সিজেনের পরিমাণ- এগুলোও দেখা হয়।’’
নাক ডাকার সমস্যা ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ সংক্রান্ত কি না জানতে সারা দিনে কোনও মানুষ কতটা ক্লান্ত বা ঝিমিয়ে থাকেন, তা দেখা হয়।
কত বার রাতে জেগে ওঠেন ঘুমের মাঝ্ খেয়াল রাখা হয় এ বিষয়েও।
সেই সঙ্গেই এটা জেনে নেওয়া হয় যে, রোগীর হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস অথবা থাইরয়েড রয়েছে কি না।
তাই নাক ডাকার সমস্যা খুব বেশি হলে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।