সারা পৃথিবী জুড়ে দু-ধরনের মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। এক ডিমপ্রেমী আর এক ডিমদ্রোহী।
ভাবছেন কী? না না মজা নয় সত্যি বলছি। একদল মানুষ ডিম না খেয়ে প্রায় থাকতে পারেন না।
আর একদল হয় ডিম পছন্দ করেন না বা হাই প্রেসার, কোলেসটরলের ভয়ে ডিম খান না।
কিন্তু আপনারা কি জানেন প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপকারি?
সস্তায় এত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার ডিম ছাড়া এ বিশ্বে আর অন্য কিছু আছে বলে মনে হয় না।
উন্নতশীল দেশে বছরে যেখানে ২৮০ থেকে ৩১০টি করে ডিম মাথাপিছু খাওয়া হয়, সেখানে আমাদের মত দেশে অপুষ্টির মোকাবিলার জন্য দিনে অন্তত ৩০ গ্রাম অর্থাৎ অর্ধেকটা করে ডিম খাওয়া উচিত। বছরে মাথাপিছু ১৮৩টি করে ডিম খাওয়ার কথা।
খাওয়ার পাতে ডিম অনেকেরই রোজের সঙ্গী। কেউ একটা খান, কারও একটাতে মন ভরে না।
ডিম আরামসে খান ভয় নেই। ডিমে আছে ভিটামিন এ , ই , ডি , বি ১২ , বি ৬।
এছাড়াও ক্যালরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, থিয়ামিন, কোলিন, আয়রন, জিঙ্ক ইত্যাদি উপাদান।
এই উপাদান সমুহ মানবদেহের জন্য খুবই জরুরি।
কেন রোজ ডিম খাবেন?
মাতৃদুগ্ধের পরই উচ্চ মার্গের প্রোটিন সম্পন্ন খাবার হলো ডিম। মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ডিমের কুসুম খুবই উপকারি।
ডিমের হলুদ অংশে কোলিন থাকে। নিয়মিত ডিম খেলে হার্টের রোগ দেখা দেয় না।
কুসুমে থাকা কোলেসটরল হল ‘ইমালসিফায়েড ফ্যাট’, ডিমের কুসুমে থাকা লেসিথিন তাকে শরীরে হজম করিয়ে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগায়।
তাই রক্তে খারাপ কোলেসটরেল কমে যায়।
কুসুমে থাকে কোলিন। যা ভ্রূণাবস্থায় ব্রেনের বিকাশের জন্য খুবই দরকার।
তাই গর্ভবতী মহিলাদের ডিম খেতে বলা হয়। এই সময় মেয়েদের শরীরে কোলিন কমে যায়।
ডিম কোলিনের সেই ঘারতি পূরণ করে থাকে সহজেই। এছাড়া বয়সকালে শরীরে কোলিনের অভাব ঘটে, ডিম এই অভাব দূর করে।
শিশুদের পুষ্টি ও বিকাশের ক্ষেত্রে ডিমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর বয়স ৮ মাস পেরলেই সে ডিম খেতে পারে।
প্রথমে সেদ্ধ ডিমের কুসুম তারপর ধীরে ধীরে গোটা ডিম খেতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন এ, ই, ডি’ র পরিমান শরীরে বাড়ে যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
ছোটবেলায় শরীর যদি পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ডি পায়, তাহলে বড়বেলায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
একজন মহিলার জন্য দিনে ৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন দরকার। পুরুষের জন্য ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। একটা গোটা ডিম খেলে ৭৫ মাইক্রোগ্রামের মত ভিটামিন পায় শরীর।
ডিমের শুধু সাদা অংশটাই খাওয়া উচিৎ?
ডিমের সাদা অংশে বেশি প্রোটিন থাকে একথা ঠিক, তা বলে ডিমের হলুদ অংশ পরিত্যাগ করবেন না।
কুসুম বা হলুদ অংশে ৯৯ শতাংশ জিঙ্ক, ৯০ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৯৫ শতাংশ ফোলেট, ৪৩ শতাংশ প্রোটিন থাকে।
যা শরীরের জন্য প্রয়োজন। অন্য দিকে ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, রাইবোফ্ল্যাভিন থাকে বেশি।
ডিমের সাদা অংশে বেশি প্রোটিন থাকে বলে কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীদের সাদা অংশই অনেকটা করে রোজ খেতে বলা হয়।
ডিম খেলে মোটা হয়ে যায় এ ধারনা সঠিক নয়। বরং কুসুম- সহ ডিম খেলে রোগা হয়, ওজন কমায়।
করোনারি হার্ট ডিজিজ অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সঞ্চালক ধমনীতে ব্যাঘাত-জনিত রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না ডিম খেলে।
এটা ডায়াবেটিকদের কোন ক্ষতি করে না। তাছাড়া ত্বকের পুষ্টি, চুলের পুষ্টির ক্ষেত্রে ডিম উপকারি। চেখের জন্য ডিমের সাদা অংশ উপকারি।
ডিম যে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
তবে আপনরা ডিমের সাদা অংশ খাবেন না হলুদ অংশ, বা দুটোই বা আদৌ খাবেন কিনা সেটা সম্পূর্ণ আপনার বিষয়।
দ্বিধা থাকলে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নিন। সিদ্ধান্ত আপনার। আমরা শুধু ডিমের উপকারিতা তুলে ধরলাম মাত্র।