হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান না, তেমনি সবার চুলের ধরণও এক না।
বিভিন্ন চুলের চাই ভিন্ন কিন্তু যুতসই পরিচর্যা।
কিন্তু বেসিক যত্নের ব্যাপারে জ্ঞান না থাকলে চুল হয়ে যায় খড়ের গাদার মত, নয়তো টাক পড়ে যায়।
তাই চুল সুন্দর রাখতে মেনে চলুন সহজ হেয়ার কেয়ার রুটিন। আর পড়ে ফেলুন এই লেখাটি।
সপ্তাহে কতদিন চুলে শ্যাম্পু করা উচিত?
চুলভেদে শ্যাম্পু করার সময় ভিন্ন হয়।
সাধারণত সপ্তাহে এক থেকে তিনদিন চুলে শ্যাম্পু করা উচিত।
কিন্তু চুল যদি হয় অতিরিক্ত অয়েলি, তখন তিনদিনের বেশি শ্যাম্পু করতে হবে।
কিছু পেশা আছে যেখানে সারাদিন কাজের ফলে স্ক্যাল্প অতিরিক্ত ঘামে বা তেল চিটচিটে হয়ে যায়।
সেসব ক্ষেত্রে প্রতিদিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়া উচিত। বেবি শ্যাম্পু হতে পারে এক্ষেত্রে চমৎকার একটি সমাধান।
স্ট্রেইট হেয়ারের জন্য
স্ট্রেইট হেয়ারে ভলিউম থাকে না, আগাগোড়া সমান হয়, ঝরেও পড়ে সমান হয়ে।
এই চুলের স্ক্যাল্প তেলতেলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আপনার চুল যদি স্ট্রেইট হয়, তাহলে অবশ্যই সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
আর কন্ডিশনারের ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল অয়েল সমৃদ্ধ দেখে কিনবেন।
জোজোবা, আরগন, কোকোনাট অয়েল সমৃদ্ধ কন্ডিশনার স্ট্রেইট চুলের জন্য ভালো।
সপ্তাহে তিনদিন শ্যাম্পু করবেন, স্ক্যাল্প বেশি অয়েলি হলে চারদিন।
ওয়েভি হেয়ারের জন্য
ওয়েভি হেয়ার হলে চুলের নিচের দিকে হালকা ঢেউয়ের মতো থাকে কিন্তু পুরোপুরি কার্লি হয় না।
এই চুলের স্ক্যাল্প অত্যধিক তেলতেলে হয়। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে তিনদিন শ্যাম্পু করা উচিত।
তবে যদি চুল মোটা হয় তাহলে সপ্তাহে দুইদিন শ্যাম্পু করলেই যথেষ্ট৷ শ্যাম্পু কেনার সময় অয়েল বা বাটার আছে এমন শ্যাম্পু এড়িয়ে যেতে হবে।
নাহলে এই জাতীয় শ্যাম্পু চুলের স্বাভাবিক ওয়েভ নষ্ট করে দেয়।
কার্লি হেয়ারের জন্য
স্ট্রেইট ও ওয়েভি হেয়ারের চাইতে কার্লি হেয়ার একদম আলাদা।
আগাগোড়া পুরোটাই কোঁকড়া হয়, দেখতে ভীষণ উসকোখুসকো আর ড্রাই লাগে।
স্ক্যাল্প অয়েলি হলেও প্রভাবটা চুলে পড়ে না। তাই কার্লি চুল দেখতেও ফ্রেশ লাগে।
এই জাতীয় চুলের জন্য দরকার ডিপ কন্ডিশনিং।
সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন চুল ধুতে হবে হাইড্রেটিং শ্যাম্পু দিয়ে, নারিকেল তেল সমৃদ্ধ হলে আরো ভালো।
অবশ্যই শ্যাম্পুটা সালফেট এবং অ্যালকোহল বিহীন হতে হবে।
কয়েলি হেয়ারের জন্য
চুল কার্লি তবে কার্লটা কয়েলের মত পেঁচানো দেখতে – এমন চুলকে কয়েলি হেয়ার বলে।
বাকিদের তুলনায় কয়েলি হেয়ার মারাত্মক শুষ্ক হয়, ভীষণ ফেটে যায় বা ভেঙে যায়।
কয়েলি হেয়ার সপ্তাহে দুইদিনের বেশি কখনোই ধোয়া উচিত না।
পাশাপাশি হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করতে হবে শ্যাম্পু করার ৩০ মিনিট আগে।
সালফেট মুক্ত শ্যাম্পুর পাশাপাশি হেয়ার মাস্ক যাতে কোকোয়া বাটার/অ্যালোভেরা/মধু/অলিভ অয়েল আছে, কয়েলি চুলকে ডিপ কন্ডিশন করবে।
চুল ধোয়ার পানি কেমন হতে হবে?
চুল যেরকমই হোক না কেন, তা ধোয়ার জন্য গরম পানি কখনোই ব্যবহার করবেন না, বিশেষ করে শীতকালে।
শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল আরামদায়ক হলেও চুলের জন্য তা ক্ষতিকর হয়ে যায়।
কারণ গরম পানি স্ক্যাল্পের লিপিড আলগা করে ফেলে।
এতে ন্যাচারাল অয়েল বেরিয়ে যায়, চুল শুষ্ক, ফ্যাসফ্যাসে এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়।
কুসুম গরম পানি বা স্বাভাবিক মাত্রার ঠান্ডা পানি সব সিজনে চুল ধোয়ার জন্য আদর্শ।
চুল ভালো রাখার জন্য কি কি খাবার খাওয়া উচিত?
সবুজ শাক, বাদাম, গাজর, ডিম, মাছ, মিষ্টি আলু, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ইত্যাদি চুলের জন্য উত্তম খাবার।
এসব খাবারে থাকা জিঙ্ক, প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে।
চুলের ভলিউম বাড়ানোর টিপস
যেকোন ভালো মানের ভলিউমাইজিং শ্যাম্পুই যথেষ্ট চুলের ভলিউম বাড়ানোর জন্য।
এছাড়াও শ্যাম্পুর আগে নারিকেল তেল দিয়ে হট অয়েল মাসাজ করে নিলে চুল বেশ ফুরফুরে থাকবে।
আবার ব্লো-ড্রাই হতে পারে আরেকটি সমাধান।
পার্টি সাজের জন্য ব্লো-ড্রাই করে চুল ফুলিয়ে স্টাইল করা যেতে পারে।
তবে ঘনঘন ব্লো-ড্রাই না করাই ভালো।
চুলের যত্নে আরো কিছু কমন টিপস
- চুলে প্রতিদিন তেল দেয়া উচিত না। যে কয়দিন শ্যাম্পু করবেন তার ১ খেকে ২ ঘন্টা আগে হট অয়েল মাসাজ করবেন শুধু।
প্রতিদিন তেল দিলে বা স্ক্যাল্পে তেল বেশিদিন জমে থাকলে চর্মরোগ, খুশকি সহ নানা ধরণের সমস্যা হবে।
তাছাড়া প্রতিদিন তেল দিলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা বাধ্যতামূলক। এতে চুলের আরো ক্ষতি হবে। - চুলের আগা ফাটার সমস্যায় প্রতি দুই থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর আগা ট্রিম করতে হবে।
অনেকে আছেন যারা প্রতি ছয় মাস অন্তর আগা ট্রিম করেন। এতে চুল অনেকটা ফেটে যায়।
চুল খুব ছোট করা ছাড়া উপায় থাকে না তখন। - শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে তার প্রভাব চুলেও পড়ে।
সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হেয়ার কেয়ার সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে।
বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট সবগুলোর মধ্যে সেরা। - দীর্ঘমেয়াদী চুল পড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন এবং হিমোগ্লোবিন চেক করে নিন।
- প্রতিদিন যদি চুলে স্টাইল করতে চান, তাহলে ব্লো-ড্রাই বা কার্লিং আয়রন প্রয়োগ করার আগে হিট প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করুন চুলে।
- ভেজা চুল আঁচড়ালে ভেঙে যায় খুব সহজে। তাই চুল কিছুটা শুকিয়ে নিন।