মেকআপ ছাড়া যেনো নারীর সৌন্দর্য অসম্পূর্ণ।
যেকোন অনুষ্ঠান বা উৎসবে মেকআপ ছাড়া নারীরা নিজেদেরকে চিন্তাই করতে পারেন না।
কিন্তু মেকআপ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে পড়তে হয় হাজারটা সমস্যায়।
তখন বেসিক মেকআপ করাটাই কঠিন হয়ে পড়ে।
পড়াশোনা হোক বা মেকআপ, সব ক্ষেত্রে সবার আগে বেসিক জানাটাই জরুরি।
বেসিক জানলে তবেই না আসল জ্ঞান আহরণ সম্ভব হয়।
মেকআপ এর বেসিক সম্পর্কে জানতে চাইলে- ত্বকের সাথে মানানসই ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, কনসিলার, সেটিং এলিমেন্ট, ব্লাশ-অন, কনট্যুর, আইশ্যাডো, আইলাইনার, এবং লিপস্টিক থাকা প্রয়োজন।
বেসিক মেকআপের প্রসেসটা একটু কঠিন, কয়েকটি ধাপে মেকআপ করতে হয়।
তবে আপনি যদি একবার শিখে নিতে পারেন, তাহলে পরবর্তীতে বেসিক মেকআপ করাটা কোন ব্যাপারই মনে হবে না।
আজকের আয়োজনে থাকছে বেসিক মেকআপের কমপ্লিট গাইডলাইন।
শুষ্ক ত্বক এবং তৈলাক্ত ত্বকের বেসিক মেকআপের মধ্যকার পার্থক্য
শুষ্ক ত্বকের মেকআপ এমন হতে হবে যাতে চেহারায় খসখসে বা ফাটা-ফাটা ভাব ফুটে না উঠে এবং মেকআপ ঝরে না যায়।
এই ধরণের ত্বকের জন্য ব্যবহৃত প্রসাধনী হতে হবে ক্রিমি বা অয়েল-বেইজড, যাতে মুখশ্রী স্বাভাবিক ও নমনীয় লাগে দেখতে।
তৈলাক্ত ত্বকে মেকআপ সামগ্রী প্রয়োগের সময় খেয়াল রাখতে হবে ত্বক যেন অতিরিক্ত তেলতেলে না হয়ে যায়।
এমনিতেই এই ত্বকের অধিকারীরা তেলের যন্ত্রণায় ভোগেন।
মেকআপটা যদি অয়েল ফ্রি না হয় তাহলে সেটা আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা করবে।
তাই এই ত্বকের জন্য প্রতিটা প্রসাধনী হতে হবে অয়েল ফ্রি, ওয়াটার বেইজড, ওয়াটারপ্রুফ, এবং ম্যাট ফিনিশড ইফেক্টের।
আর মিশ্র ত্বক বা কম্বিনেশন স্কিনের জন্য আপনি অয়েলি অথবা অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।
তখন অয়েল বেইজড প্রোডাক্ট একটু ভারী লুক এনে দিবে আর অয়েল ফ্রি মেকআপ হালকা ধরণের মেকআপের জন্য ভালো হবে।
এবারে ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাক বেসিক মেকআপ কিভাবে করবেন।
প্রথম ধাপ: মুখ ভালোমতো পরিষ্কার করে নিন
মেকআপের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কাজটাই হচ্ছে মুখ থেকে সমস্ত ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলা।
স্বাভাবিক পানি এবং ত্বকের উপযোগী ফেসওয়াশ দিয়ে ক্লিনজিংয়ের পার্টটা সেরে ফেলবেন।
তবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে ভালো হয়।
এক্সফোলিয়েশন দরকার ময়লা বের করার জন্য।
তাই ফেসওয়াশ হাতে নিয়ে অ্যান্টিক্লকওয়াইজ মোশনে ফেসওয়াশটা ব্যবহার করবেন।
এভাবে ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে সমস্ত মরা চামড়া, তেল, ধুলাবালি চলে যাবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিমি এবং তেলতেলে ত্বকের জন্য ওয়াটারি বা প্লেইন বা স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
অনেকে ক্লিনজিংয়ের আগে ফেসপ্যাক ব্যবহার করেন।
চাইলে আপনিও করতে পারেন, তবে ক্লিনজিংয়ের আগে ফেসপ্যাক এতটাও জরুরি না।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ক্লিনজিংয়ের পরে টোনিং ব্যবহার করা জরুরি।
বাড়তি তেল এবং ময়লা পুরোপুরি নির্মূল করতে অয়েল-ফ্রি টোনার তুলার বলের সাহায্যে পুরো মুখে লাগান।
এরপর শুকিয়ে গেলে পরবর্তী ধাপে যাবেন। তৈলাক্ত ত্বক না হলে টোনিং বাদ দিতে পারেন।
ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পরে বরফের টুকরা নিয়ে পুরো মুখ ৫ মিনিট ধরে ঘষবেন।
এটা করার কারণ হচ্ছে, মেকআপ যাতে দীর্ঘ সময় ধরে সেট থাকে মুখে। যাদের শুষ্ক ত্বক কিন্তু টি-জোন বেশি ঘামে, তারা টি-জোনে বেশি করে বরফ ঘষবেন।
দ্বিতীয় ধাপ: এরপরে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পালা
ফেসওয়াশ ও বরফ থেরাপির পরে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না যেন।
ময়েশ্চারাইজারের কাজ হচ্ছে মুখের আর্দ্রতা ধরে রাখা।
তাই এমন একটি ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন, যাতে মুখটায় বেশি শুকনো বা ভারী অনুভূত না হয়।
শুষ্ক ত্বক ক্লিনজিংয়ের পরে আরো বেশি শুকনো ও খসখসে লাগে।
আর এই ধরণের ত্বকের জন্য বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখে এমন ময়েশ্চারাইজার দরকার।
আপনার ত্বক শুকনো হলে এক্সট্রা হাইড্রেটিং ফর্মুলেটেড ময়েশ্চারাইজার কিনবেন।
গরমের সময় হালকা ধরণের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেও শীতে বেছে নিবেন ভারী ময়েশ্চারাইজার।
মুখের যে জায়গা বেশি শুকনো সেখানে বেশি করে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।
তৈলাক্ত ত্বকে ম্যাট লুক আনার জন্য অবশ্যই অয়েল-ফ্রি হালকা ময়েশ্চারাইজার কিনবেন।
নাহলে তেল চিটচিটে ভাব আরো বেড়ে যাবে।
আপনার ত্বকের ধরণ যেমনই হোক না কেন, সেটা ময়েশ্চারাইজ করতে হবে সাবধানে৷
প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগালে মেকআপ ঠিকমতো বসবে না। তাই পরিমাণমতো নিয়ে হালকাভাবে ব্রাশ দিয়ে ময়েশ্চারাইজার মুখে বসাবেন।
যদি দিনের বেলায় বাইরে বের হওয়ার দরকার হয়, তাহলে ময়েশ্চারাইজারের পরে সানস্ক্রিন মেখে নিবেন মুখে।
তাতে রোদ থেকেও বাঁচবেন আবার গরমেও মেকআপ নষ্ট হবে না। স্কিনের টাইপ অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন।
তৃতীয় ধাপ: প্রাইমার লাগান লুক ধরে রাখার জন্য
ময়েশ্চারাইজিংয়ের পরে প্রাইমারের ব্যবহার আপনার মেকআপকে অটুট রাখবে ঘন্টার পর ঘন্টা।
প্রসাধনী ব্যবহারের পরে প্রথম এক বা দুই ঘন্টা শাইনিং ইফেক্ট থাকলেও যত বেশি সময় যায় তত এই লুক ফিকে হতে থাকে, মেকআপ নেতিয়ে যায়।
প্রাইমার এই নেতিয়ে যাওয়াটাই ঠেকাবে।
প্রাইমারকে প্রাথমিক ফাউন্ডেশনও বলা যেতে পারে৷
বাড়ির দেয়ালে রং লাগানোর আগে প্রাইমার লাগালে যেমন রং দীর্ঘদিন ইনট্যাক্ট থাকে৷
তেমনি মেকআপের শুরুতেও প্রাইমার আপনার মেকআপ করা চেহারাকে সকাল-সন্ধ্যা একইরকম রাখবে।
একই সাথে এটি ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। চোখের জন্য আই প্রাইমারের ব্যবহার চোখের মেকআপকে সুন্দর রাখে।
মেকআপ যাতে সহজে উঠে না যায় সেজন্য ভালো মানের প্রাইমার ব্যবহার করুন।
আগেই বলেছি শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনী হতে হবে ক্রিম-বেইজড, কাজেই এখানেও তার বিকল্প নেই।
ক্রিমি প্রাইমার খসখসে ত্বকে স্মুদ এবং সুদিং ইফেক্ট এনে দিবে।
প্রয়োজন বুঝে প্রাইমার ব্লেন্ডারের সাহায্যে হালকা করে মুখে বসিয়ে নিন।
প্রাইমার না থাকলে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
অয়েলি স্কিনে ম্যাট লুক আনা চাই-ই চাই। কাজেই অয়েল ফ্রি এবং ম্যাট ফিনিশড প্রাইমার লাগান সমানভাবে।
কোন জায়গায় বেশি পড়েছে কোন জায়গায় কম – এমন যেন হয় না।
হাত দিয়ে লাগানোর চাইতে নরম ব্রাশ বা বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করুন।
আর আই প্রাইমার অল্প পরিমাণে চোখের চারপাশে লাগিয়ে নিবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা প্রাইমারের আগে মুখে, গলায় গোলাপজল স্প্রে করে নিতে পারেন।
তাহলে সারাদিন বেশ একটা তরতাজা মুডে থাকবেন, গরমে অস্বস্তি লাগবে না, মেকআপও গলে যাবে না।
অতিরিক্ত তেল ক্ষরণ ও ব্রণ নিয়ন্ত্রণে আসবে, এবং ত্বকের পি এইচ লেভেল ঠিক থাকবে।
চতুর্থ ধাপ: চাই মানানসই ফাউন্ডেশন
ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং, এবং প্রাইমিংয়ের মাধ্যমে প্রস্তুতিপর্ব শেষ।
এবারে মূল মেকআপে যাওয়ার পালা।
এই পর্যায়ে ফাউন্ডেশন হচ্ছে আপনার মেকআপের উপযুক্ত চেহারা বানানোর জন্য প্রধান উপাদান।
শুষ্ক ত্বক ও তৈলাক্ত ত্বক দুটোর জন্যই লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন।
ড্রাই স্কিনের জন্য ফাউন্ডেশন স্টিক বা পাউডার-বেইজড ফাউন্ডেশন একদমই বেমানান।
এগুলো ত্বকে আরো খসখসে লাগে, চেহারায় মেকি ভাব আসে, চুলকানি এবং চিড়চিড়ে অনুভূত হয়।
তাই ক্রিমি এবং লিকুইড ফাউন্ডেশন ড্রাই স্কিনের জন্য আদর্শ।
তেলতেলে ত্বকের জন্য লিকুইড তো বটেই সেই সাথে অয়েল ফ্রি ফাউন্ডেশন প্রয়োগ করবেন।
ভালো হয় যদি ফাউন্ডেশনটা ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয়, তাতে বাড়তি সুবিধা পাবেন।
আর যদি সেটা না হয় তাহলে ফাউন্ডেশনের সাথে একটু ময়েশ্চারাইজার মিশিয়ে নিতে পারেন।
ফাউন্ডেশন লাগানোর সময় চোখের নিচের অংশ বাদ দিবেন।
পুরো মুখে সমানভাবে ফাউন্ডেশন লাগাবেন নাহলে মেকআপ সহজে সেট হবেনা।
যদি আপনি ফাউন্ডেশন ছাড়া হালকা মেকআপ করতে চান তাহলে এর পরিবর্তে বিবি বা সিসি ক্রিম মাখতে পারেন।
ফাউন্ডেশন লাগানোর নিয়ম হল প্রথমে ফোঁটায় ফোঁটায় করে মুখ ও গলায় লাগানো।
তারপরে নরম ফাউন্ডেশন ব্রাশ বা ব্লেন্ডিং স্পঞ্জ দিয়ে ধীরে ধীরে ত্বকের সাথে সেটাকে ব্লেন্ড করা।
আঙুল দিয়ে ব্লেন্ড করতে গেলে ত্বকের সাথে মিশবে না।
আর হ্যাঁ, অবশ্যই নিজের ত্বকের টোন অনুযায়ী মিলিয়ে ফাউন্ডেশনের শেড বেছে নিবেন।
পঞ্চম ধাপ: দাগ ঢাকুন কনসিলার দিয়ে
বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে মেকআপ করার পরও যদি মুখের বিশ্রী দাগগুলো দেখা যায়, তাহলে পুরো সাজটাই বরবাদ হয়ে যায়।
এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ফাউন্ডেশনের পরে কনসিলার দিয়ে মুখের দাগগুলো ঢেকে দিন।
এখানেও দুইটি ব্যাপার লক্ষ্য করবেন – এক. কনসিলারের শেডকে চেহারার শেডের সাথে মিলতে হবে, দুই. ফাউন্ডেশন আর কনসিলারের শেড ম্যাচড হতে হবে।
কনসিলারের কাজ হল চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল, ব্রণ, মেছতা ইত্যাদির দাগকে ভ্যানিশ করে ফেলা।
ডার্ক সার্কেল বেশি গাঢ় হলে স্কিন শেডের চাইতে সর্বোচ্চ দুই শেড বেশি উজ্জ্বল কনসিলার লাগাবেন।
আর যদি ডার্ক সার্কেলে হালকা হয় তাহলে স্কিন শেডের সমান কনসিলার শেড হলেই হবে।
কনসিলার শেড একরকম কিন্তু ফাউন্ডেশনের শেড তার ধারেকাছেও যাচ্ছেনা, এমন হলে কিন্তু হবে না।
দুটো জিনিসের শেড যতটা সম্ভব কাছাকাছি রাখতে হবে। অনেকে ফাউন্ডেশনের আগে কনসিলার প্রয়োগ করে থাকেন।
আপনার ইচ্ছা হলে এরকমটা করতে পারেন।
কনসিলারটা যদি লাইটওয়েট হয় তাহলে মেকআপের ক্ষেত্রে হাই কভারেজ পাবেন।
তাই চেষ্টা করুন হালকা ধরণের কনসিলার কেনার। ত্বকের ধরণ অনুযায়ী কনসিলার বেছে নিন এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করুন।
ডার্ক সার্কেল ঢাকার জন্য চোখের চারপাশে অয়েলি বা নন-অয়েলি কনসিলার লাগিয়ে ছোট নরম ব্রাশ দিয়ে ব্লেন্ড করে দিন।
আর মুখের অন্যান্য অংশের জন্য ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন। ব্রাশ না থাকলে আঙুলও ব্যবহার করতে পারেন।
ষষ্ঠ ধাপ: মেকআপ সেট করুন স্প্রে বা পাউডার দিয়ে
পাঁচটা ধাপে মুখের মেকআপ শেষ করার পরে সেটিং স্প্রে বা পাউডার দিয়ে মেকআপ সেট করে নিন।
এবং সেটিংয়ের এই কাজটা আই এবং লিপ মেকআপের আগে করে নিতে হবে।
ড্রাই স্কিনের জন্য দরকার সেটিং স্প্রে আর অয়েলি স্কিনের জন্য কমপ্যাক্ট বা লুজ সেটিং পাউডার।
সেটিং স্প্রে ব্যবহার করার সময়ে কমপক্ষে এক হাত দূর থেকে স্প্রে করবেন।
আর যদি পাউডার ব্যবহার করেন, তাহলে ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে প্রথমে ম্যাট বা ট্রান্সলুসেন্ট পাউডারটা মুখে আর গলায় লাগিয়ে নিন।
তারপরে ভালো পাউডার ব্রাশ দিয়ে পাউডারটা ব্লেন্ড করে দিন।
ব্লেন্ড করার সময়ে মুখের ভিতর থেকে বাইরের দিকে ব্রাশটা গোল গোল করে ঘুরিয়ে আনবেন।
তবে এখানে আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো, অয়েলি স্কিনের জন্য সেটিং পাউডারের পাশাপাশি সেটিং স্প্রে-ও দরকার হয় যাতে মেকআপ গলে না যায় তার জন্য।
এবং আপনার ত্বক তৈলাক্ত হলে অয়েল ফ্রি স্প্রে ব্যবহার করবেন পুরো মেকআপ কমপ্লিট করার পরে।
সপ্তম ধাপ: ব্লাশ-অন, কনট্যুর ও হাইলাইটার ফিনিশিং টাচের জন্য
মুখের মেকআপে ফিনিশিং টাচ দেয়ার জন্য ব্লাশ-অন, কনট্যুর, এবং হাইলাইটারের তুলনা নেই।
এই দুটো জিনিস আপনার চেহারায় স্মুদ, ফ্রেশ, এবং ময়েশ্চারাইজড লুক এনে দিবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিমি এবং লিকুইড ব্লাশ-অন উপযোগী।
যেকোন সময়ের মেকআপের জন্য পিচ ও লাইট ব্রাউন ব্লাশ শেড বেছে নিন, যদি আপনার স্কিন ড্রাই হয়।
এই জাতীয় ত্বক যাদের তাদের চিকবোন বেশি শুষ্ক অনুভূত হয়।
তাই এই জায়গাটায় ব্লাশ-অন পরিমাণে অল্প নিয়ে আঙুলের ডগা দিয়ে ব্লেন্ড করতে পারেন।
আর অয়েলি স্কিনের জন্য বেছে নিন পাউডার ব্লাশ।
কারণ পাউডার ব্লাশ অয়েলি স্কিনে রেডিয়েন্ট লুক এনে দিতে সক্ষম।
কনট্যুর পুরো সাজটাকে ন্যাচারালি দেখাতে সাহায্য করে। জ-লাইন এবং চিক এই দুই জায়গাতেই কনট্যুরের প্রয়োগ বেশি জরুরি।
বাজারে পাউডার, স্টিক বা ক্রিমের আকারে কনট্যুর কিনতে পাবেন।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোন স্কিনে কোন কনট্যুর মানানসই।
তাই পছন্দমতো শেড বাছাই করে প্রয়োগ করুন এটি।
হাইলাইটারের কাজ হচ্ছে বিশেষ সময়ে মেকআপকে হাইলাইট করা। সবসময় হাইলাইটারের দরকার হয় না।
কেবলমাত্র বড় কোন অনুষ্ঠান যেখানে আপনার গর্জিয়াস লুক চাই সেখানেই হাইলাইটার ব্যবহার করবেন।
চেহারা এবং মেকআপের সাথে যায় এমন হাইলাইটার প্রয়োগ করবেন চোখের ভ্রু বা ঠোঁটের নিচের অংশে।
কেউ কেউ গালে বা কপালেও এটি ব্যবহার করে থাকেন।
ব্রাশ দিয়ে হালকাভাবে ব্লেন্ড করে নিন হাইলাইটার আর পেয়ে যান প্রাণবন্ত একটি লুক।
অষ্টম ধাপ: আই মেকআপ করুন
চোখ আর ঠোঁট বাদে চেহারার বাকি অংশের মেকআপ শেষ, এবারে চোখ সাজানোর পালা।
শুষ্ক ত্বক হলে আই প্রাইমার লাগানোর পরে কাজল দিয়ে প্রথমে চোখ এঁকে নিন এবং তারপরে পেন্সিল আইলাইনারে চোখ সাজিয়ে নিন।
যদি প্রাইমার প্রয়োগের পরেও চোখের অংশ খসখসে লাগে তাহলে লিকুইড আইলাইনার লাগাবেন।
আর আইশ্যাডোর ক্ষেত্রেও পাউডার শ্যাডোর বদলে ক্রিম-বেইজড শ্যাডো ব্যবহার করবেন।
ক্রিমি শ্যাডো পাউডার শ্যাডোর সুন্দর ব্লেন্ড হয় না। কিন্তু কথা যখন শুষ্ক ত্বকের তখন পাউডার শেড পুরোপুরি বাদ।
আর অয়েলি স্কিনের জন্য পাউডার আইশ্যাডো হলে চলবে।
আইশ্যাডো একটু ভিন্ন ভাবে প্রয়োগ করে চোখের জাদু দেখিয়ে দিতে পারেন।
প্রথমে হালকা রঙের শ্যাডো লাগিয়ে নিন ভ্রু-র ক্রিস লাইন পর্যন্ত।
তারপরে আইলাইনারে চোখ এঁকে গাঢ় রঙের শ্যাডো ব্যবহার করবেন। এরপরে পেন্সিল দিয়ে আইব্রো এঁকে নিন এবং মাশকারা লাগিয়ে নিন।
নবম ধাপ: ঠোঁট রাঙিয়ে নিন ত্বক এবং মেকআপের ধরন বুঝে
চলে এসেছি মেকআপের নবম এবং সর্বশেষ ধাপে।
ঠোঁটের জন্য লিপস্টিকের শেড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে আপনার ত্বকের ধরণ ও চোখের মেকআপের দিকে।
সাধারণত চোখের সাজ গাঢ় হলে লিপ কালার হালকা হওয়া উচিত।
চোখের মতো লিপস্টিকের শেডও গাঢ় হলে দেখতে খুবই খারাপ লাগবে।
তাই চোখের শ্যাডো গাঢ় হলে হালকা লিপস্টিক এবং শ্যাডো হালকা হলে গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করবেন।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে লিপ মেকআপ করাটা খুবই কঠিন। কারণ মুখের সাথে সাথে ঠোঁটও শুকিয়ে ফেটে যায় খুব তাড়াতাড়ি।
সেক্ষেত্রে মেকআপ শুরু করার অন্তত দুই ঘন্টা আগে ঠোঁটে লিপবাম বা চ্যাপস্টিক মেখে নিবেন।
তাহলে সাজের সময় হতে হতে ঠোঁট অনেকটা নরম ও মসৃণ হবে।
আর এই ধরণের ঠোঁটে কখনোই ম্যাট এবং লং লাস্টিং লিপস্টিক ব্যবহার করবেন না।
কারণ ম্যাট শ্যাডের লিপস্টিক শুষ্ক ও ফাটা ঠোঁটকে আরো শুষ্ক করে তোলে এবং ক্র্যাকড দেখায়।
তাই গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আর যদি ম্যাট লিপস্টিকই জরুরি হয় তাহলে দেখে নিতে হবে সেটা ক্রিমি কিনা বা তাতে আরগান অয়েল আছে কিনা।
ক্রিমি ইফেক্টযুক্ত ম্যাট লিপস্টিক না পেলে প্রথমে ঠোঁটে একটু ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
তারপরে একটু ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন এবং সবশেষে লিপস্টিক প্রয়োগ করুন। তাহলে ঠোঁটের শুষ্কতা খুব একটা ধরা পড়বে না।
তৈলাক্ত ত্বকের ঠোঁটের জন্য লিপস্টিক ব্যবহারে এতো বাধ্যবাধকতা নেই।
কারণ অয়েলি স্কিনের ঠোঁট ড্রাই স্কিনের ঠোঁটের মতো সহজে ফেটে যায় না।
আর অয়েলি স্কিনের জন্য যেহেতু ম্যাট ফিনিশড লুকই দরকার সেহেতু আপনি কোন ঝামেলা ছাড়াই ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারবেন।
যে লিপস্টিকই ব্যবহার করুন না কেন, অবশ্যই লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট আগে এঁকে নিবেন।
ব্যাস হয়ে গেলো আপনার মেকআপ রেডি
এই ৯টি ধাপ ঠিকমত খেয়াল করে ফলো করার চেস্টা করবেন। তাহলে দেখবেন মেকআপ নিয়ে আর কোনো টেনশনই থাকছে না।