ঘন, কালো, মোলায়েম, ঝলমলে চুল প্রতিটি নারীর আকাঙ্ক্ষা।
সবাই চায় যতই রোদ, বাতাস, ধুলো থাকুক, চুল যেন থাকে সবসময় জটমুক্ত আর পরিপাটি।
কিন্তু মন চাইলেই তো আর চুল চায় না। খুব সহজেই ম্যাড়মেড়ে হয়ে ঝরে যাওয়া বা ফেটে যাওয়া যেন এর স্বভাব।
চুল কেটে ছোট রাখলেও সেই জট ঠিকই পাকে চুলে।
আবার নামীদামী প্রোডাক্ট চুলকে সিল্কি করলেও উল্টোদিকে চুলের স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে যায়, চুল ভেঙে যায়।
পার্লারের ট্রিটমেন্ট তো আরেক দুঃস্বপ্ন, গাঁটের পয়সা আর এনার্জি দুটোই একসাথে বেরিয়ে যায়।
আর নয় চিন্তা, এসে গেছে সম্পূর্ণ নিরাপদ ঘরোয়া প্যাক।
জেনে নিন চুল সিল্কি করতে কি ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করবেন।
এগুলো ব্যবহারে চুলে আর ধরবেনা জট, থাকবে ২৪ ঘন্টাই সিল্কি এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
১. ডিম-মধু-লেবু-নারিকেলের হেয়ার প্যাক
উপকরণ
- ২টি ডিমের সাদা অংশ
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ১ চা চামচ লেবুর রস
- ২ চা চামচ নারিকেল তেল
ব্যবহারবিধি
একটি বাটিতে সব উপকরণ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
গোসলের ১ ঘন্টা আগে প্যাকটি পুরো চুলে মাসাজ করে লাগিয়ে নিন।
১ ঘন্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোমতো চুল ধুয়ে নিন যাতে ডিমের গন্ধ না লেগে থাকে।
সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করবেন।
উপকারিতা
এই প্যাকটি শুধু আপনার চুলকে ঘন আর সিল্কি করবে না, তার সাথে সাথে চুল পড়া বন্ধ করবে এবং রুক্ষতা দূর করবে৷
কারণ ডিমে থাকা সালফার চুলের গোড়া শক্ত করে, লেবুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
মধু চুলের আগা ফাটা রোধ করে আর নারিকেল তেল চুলকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
২. ভিটামিন ই ও লেবুর হেয়ার প্যাক
উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ রেগুলার শ্যাম্পু
- ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল
- আধা টেবিল চামচ লেবুর রস
ব্যবহারবিধি
এই প্যাকটি আপনি দুইভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
গোসলের আধা ঘন্টা আগে চুলে মাসাজ করে লাগিয়ে এরপর ধুয়ে ফেলবেন।
অথবা গোসলে চুলে শ্যাম্পু করার সময়ে শ্যাম্পুর সাথে ভিটামিন ই এবং লেবুর রস মিশিয়ে নিবেন।
যেভাবেই ব্যবহার করুন না কেন, চুলের লেংথ এবং ঘনত্ব অনুযায়ী উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিবেন।
উপকারিতা
লেবুতে আছে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড যা চুল পড়া কমিয়ে চুল ঘন করে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুলও চুল পড়া কমায় এবং চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।
তার সাথে সাথে এটি চুলের আগা ফাটা বন্ধ করে এবং চুলকে সিল্কি এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
৩. কলা ও মধুর হেয়ার প্যাক
উপকরণ
- ১টি পাকা কলা
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
ব্যবহারবিধি
পাকা কলা ব্লেন্ড করে তার সাথে মধু আর নারিকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন।
তারপর মিশ্রণটি পুরো চুলে সমানভাবে লাগিয়ে ফেলুন।
আধা ঘন্টা পরে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে দুইদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করবেন।
উপকারিতা
কলায় থাকা কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, এবং ভিটামিন চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অতি জরুরি।
চুল পড়া বন্ধ, খুশকি এবং রুক্ষতা দূর, চুল ঘন, লম্বা, মোলায়েম, ঝলমলে করতে পাকা কলা একটি অসাধারণ টনিক।
মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চুল ঘন এবং লম্বা করে।
নিয়মিত এই প্যাক ব্যবহারে চুল হবে সিল্কি এবং সুন্দর।
৪. অ্যালোভেরা ও দইয়ের হেয়ার প্যাক
উপকরণ
- ৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
- ৩ টেবিল চামচ টকদই
- ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
ব্যবহারবিধি
একটি বাটিতে সব উপকরণ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
তারপর প্যাকটা চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপরে চুলে শ্যাম্পু করে নিন।
এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করবেন।
উপকারিতা
ত্বকের সাথে সাথে চুলকেও সুন্দর রাখতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই।
এর প্রোটিয়োলাইটিক এনজাইম চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া কমায়, খুশকি কমায়, চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে, এবং চুলকে নরম রাখে।
টকদই চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা অনেকাংশেই কমিয়ে চুলকে কোমল রাখে।
অ্যালোভেরা-টকদইয়ের সম্মিলিত অ্যাকশনে চুল দেখায় ন্যাচারালি সিল্কি।
৫. ডিম-দুধ-মধু-অলিভ অয়েলের হেয়ার প্যাক
উপকরণ
- ১টি ডিম (ডিমের পরিবর্তে ৩-৪ চা চামচ টকদই দিতে পারেন)
- ৩ চা চামচ কাঁচা দুধ
- ২ চা চামচ অলিভ অয়েল
- ২ চা চামচ মধু
ব্যবহারবিধি
উপকরণগুলো বাটিতে মিশিয়ে নিন।
ডিমের সাদা অংশ আলাদা করা লাগবেনা, পুরো ডিমটাই ফেটিয়ে নিবেন।
মিশ্রণ বানানো হয়ে গেলে আঙুলের সাহায্যে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। ৩০-৪০ মিনিট মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপরে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করবেন
উপকারিতা
কাঁচা দুধ চুলের প্রোটিনের অভাব দূর করে, আগা ফাটা রোধ করে, রুক্ষতা-শুষ্কতা কমিয়ে চুলকে করে তোলে সিল্কি।
অলিভ অয়েলে আছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায়, চুল ভাঙা ও ফাটা কমায়।
যখন চুল থাকে ভেতর থেকে সুন্দর, তখন চুল দেখায় সিল্কি ও শাইনি।
৬. চালের হেয়ার প্যাক
উপকরণ
- ১ কাপ চাল
- ১ বাটি পানি
- ২ চা চামচ অ্যালোভেরার জেল
ব্যবহারবিধি
চাল সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এভাবে ভিজিয়ে রাখলে চালের পুষ্টিগুণ অনেকটাই পানিতে চলে আসবে।
সকালে চাল ঝরিয়ে সরিয়ে রাখুন। এবার এই পানিতে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন।
মিশ্রণটি পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চাইলে এই মিশ্রণ শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
সপ্তাহে দুইদিন করলে ভালো হবে।
উপকারিতা
চাল ধোয়া পানিতে যে পুষ্টিগুণ থাকে তা চুলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে৷
এটি চুলকে করে প্রাণচঞ্চল ও ঝলমলে।
তাছাড়া চুলের বৃদ্ধি ঘটাতেও চালের পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সাথে অ্যালোভেরা জেলের যোগ থাকলে চুল অল্প সময়ের মধ্যে সিল্কি ও শাইনি হয়।